E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১ সংখ্যা / ১৩ আগস্ট, ২০২১ / ২৭ শ্রাবণ, ১৪২৮

কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দের শ্রদ্ধা

স্মৃতি পুরস্কার প্রদান


নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ৫ আগস্ট ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের (কাকাবাবু) জন্মদিবস প্রতি বছরের ম‍তো এবারেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। সেই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যান্য বছরের মতো এবারেও তাঁর স্মৃতিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবারে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর লিখিত ‘প্রাগিতিহাস: ভারতবর্ষে পরিযান ও জাতিগোষ্ঠী গঠন’ শীর্ষক বইয়ের জন্য। একইসঙ্গে সাংবাদিক স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য এই পুরস্কার পেয়েছেন তাঁর রচিত ‘মিশন বেঙ্গল: এ স্যাফ্রন এক্সপেরিমেন্ট’ বইটির জন্য।

প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ স্মৃতি পুরস্কার কমিটির সভাপতি মৃদুল দে এই বই দু’টি সম্পর্কে বলেন, অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় ভারতবর্ষে জাতিগোষ্ঠীর বিকাশের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়। ধারাবাহিকভাবে মানব সভ্যতার বিকাশ এবং তার বর্তমান সমাজবদ্ধ রূপে উঠে আসার যে প্রকৃত ইতিহাস, তা বহু ক্ষেত্রেই সময়ের অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে। তারপরেও তাকে সাধারণ পাঠকের সামনে তুলে আনার যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন লেখিকা তা বর্তমান সময়ে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বইটিতে মানব জীবাশ্মের সঠিক পর্যায়কাল নির্ণয় করার পদ্ধতিগত বর্ণনাও উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আরএসএস আর্য পরিযান তত্ত্বের বিরোধিতা করেছে আদর্শগত কারণে। তথ্যনিষ্ঠ এবং বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করে অনৈতিহাস চর্চাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বর্তমান ভারতে। সেই সময়কালে মানবসভ্যতার প্রগতিকে সঠিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা এবং তার চর্চার মাধ্যমেই আরএসএস-এর বৌদ্ধিক আগ্রাসনের মোকাবিলা করা সম্ভব।

মৃদুল দে অপর বইটি সম্পর্কে বলেন, সাংবাদিকের দৃষ্টিকোণ থেকে স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য এতে তুলে ধরেছেন, কীভাবে পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূলের বদান্যতায় আরএসএস-বিজেপি’র আগ্রাসন ঘটছে। তৃণমূল বাহিনীর বিরোধী খতম অভিযানের মুখে পড়ে প্রভূত সাংগঠনিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয় সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী দল এবং জাতীয় কংগ্রেসকে। সেই রাজনৈতিক শূন্যস্থানকে ব্যবহার করেই পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রূপরেখা তৈরি করে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার। ২০১৪ সালে কেন্দ্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকে নামে এবং বেনামে বাংলায় বিপুল অর্থ ঢালে বিজেপি। সেই টাকার জোরে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের গবেষণাগারে পরিণত হয় বাংলার বেশ কিছু অঞ্চল। একইসঙ্গে এই বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামপন্থীদের সরিয়ে বিজেপি কীভাবে দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজে‍দের প্রতিষ্ঠা করে। সেই কাজে স্বাভাবিকভাবেই সহায়কের ভূমিকা পালন করে তৃণমূল। একইসঙ্গে তিনি তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন ২০১১ সালের পর থেকে প্রশাসনিক ঢিলেঢালা মনোভাবের সুযোগে সৃষ্টি হওয়া একাধিক দাঙ্গা পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে কীভাবে ভোটবাক্সে ফায়দা তুলেছে বিজেপি। বিজেপি সুকৌশলে তৃণমূলী সন্ত্রাসে নির্যাতিত সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে সফলভাবে প্রচার করেছে তৃণমূলকে হারাতে পারে একমাত্র বিজেপি। সেই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। এর উলটো দিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, যারা তৃণমূলী অত্যাচারের শিকার, তাদেরকেও বিজেপি’র জুজু দেখিয়ে নিজেদের দিকে টেনেছে তৃণমূল। ফলে এই বর্তমান সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পরিস্থিতির লাভ উভয় দলই সমপরিমাণে আস্বাদন করেছে।

এদিন পুরস্কার প্রাপক মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যের হাতে স্মৃতি পুরস্কার কমিটির পক্ষে ১০ হাজার টাকার চেক, মানপত্র, সম্মাননা, পুষ্পস্তবক, কাকাবাবুর লেখা বই সহ অন্যান্য পুরস্কার তুলে দেন বিমান বসু, সূর্য মিশ্র এবং মহম্মদ সেলিম। মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থ গণশক্তি তহবিলে প্রদান করেন।

এদিন প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে কাকাবাবুর ১৩৩ তম জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু। বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র এবং পালিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। বর্তমানে তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কট, মহামারীর বিপদের মধ্যে মানুষের অসহায়তা, অন্যদিকে নির্বাচনে বামপন্থীদের বিপর্যয়, তৃণমূলের জয় এবং বিজেপি’র শক্তিবৃদ্ধির ফলে যে জটিল ও কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তার উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাকাবাবুদের সংগ্রাম থেকে ‍‌শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে বৃহৎ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

সভায় বিমান বসু বলেছেন, পরিস্থিতি কঠিন বলে বামপন্থীরা ঘরে বসে থাকতে পারে না। কঠিন সময় উত্তরণের জন্য কাকাবাবুদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে জনগণের ঐক্য ও সম্প্রীতি সুদৃঢ় করে, তরুণ প্রজন্মকে আরও অনেক সংখ্যায় সমবেত করে লড়াই-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সূর্য মিশ্র বলেন, যারা তৃণমূলের মধ্যে বৈপ্লবিক সত্তা দেখতে পাচ্ছেন, কিংবা তৃণমূলকে দিয়ে বিজেপি-কে রুখতে চাইছেন, তারা আসলে বিজেপি’রই সুবিধা করে দিচ্ছেন। বেকারি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে মানুষ যে সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন, তাতে মানুষ বিকল্প চাইছেন। মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সাময়িকভাবে হয়তো সেটা চাপা দেওয়া গেছে, কিন্তু বামপন্থীরা যদি সেটাকে গণআন্দোলনে ব্যবহার না করতে পারে তাহলে বিজেপি সেকাজটাই করবে এবং লাভবান হবে। উলটো দিকে বিজেপি-কে দিয়ে তৃণমূলকে হটানোর কথাও বিপদের, তাতে রাজ্যে আরও বিপদ বাড়বে।

তৃণমূল আর বিজেপি’র মধ্যে মেরুকরণকে কীভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে তার উল্লেখ করে মহম্মদ সেলিম বলেন, হয় তৃণমূলের পক্ষে, নয় বিজেপি’র পক্ষে - এভাবেই মিডিয়া সবাইকে দেখাতে চাইছে। তিনি বলেন, আরএসএস-কে জন্মলগ্ন থেকেই আমরা চিনি। কমিউনিস্টদের শেষ করাই ওদের লক্ষ্য। তিনি রেড ভলান্টিয়ারদের স্বেচ্ছাশ্রমকে সেলাম জানিয়ে বলেন, এভাবেই অঙ্কুরোদ্গম হবে। কিন্তু শুধু সেবামূলক কাজ আমাদের লক্ষ্য নয়। বৈপ্লবিক পরিবর্তনই আমাদের লক্ষ্য। মানুষ যখন অসন্তোষে রয়েছেন, প্রতিবাদ করতে চাইছেন, তখন সেটাকে সংগঠিত করাই আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ।