E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১ সংখ্যা / ১৩ আগস্ট, ২০২১ / ২৭ শ্রাবণ, ১৪২৮

দেশজুড়ে ‘ভারত বাঁচাও দিবস’ পালিত


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ৯ আগস্ট, ১৯৪২ ঐতিহাসিক ভারত ছাড়ো আন্দোলনের দিনটিকে স্মরণে রেখে এবারে ওই দিনটিতে বিজেপি’র জনবিরোধী, কর্পোরেট তোষণ নীতির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ‘ভারত বাঁচাও দিবস’ পালন করলেন শ্রমিক-কৃষকরা। এদিন এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে শামিল হয় বামপন্থী সহ অন্যান্য গণসংগঠন। লকডাউন ও কোভিড বিধি মেনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অগণিত শ্রমজীবী মানুষ শামিল হন এই কর্মসূচিতে। ‘মোদী সরকার হটাও’, ‘কর্পোরেট লুট বন্ধ করো, দেশ বাঁচাও’ সহ বিজেপি বিরোধী নানা স্লোগান তুলে এদিন শ্রমজীবী মানুষ অংশ নেন মিছিল, বিক্ষোভ, ধরনা, পিকেটিং,কাজের মাঝে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতিতে বিক্ষোভ ইত্যাদিতে। এদিন বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক-কৃষকরা প্রতিবাদী ব্যাজ লাগিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন।

এদিন মূলত শ্রমিক-কৃষকরা এই কর্মসূচির ডাক দিলেও ছাত্র, যুব, মহিলারাও বিজেপি’র জনবিরোধী নীতি, আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। এদিন ১৯৪২-এর এই দিনে ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’-এর স্লোগানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনকে স্মরণ করে বিজেপি’র হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর শপথ নেন বামপন্থীরা। এদিন এই আন্দোলন রাজধানী দিল্লি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড সহ ২৫টি রাজ্যে। এদিন এআইকেএস, সিআইটিইউ, এআইএডব্লিউইউ, এআইডিডব্লিউএ, ডিওয়াইএফ‌আই,এসএফআই শামিল হয় এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে। এদিনের এই কর্মসূচি সাফল্যের সাথে রূপায়িত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চ শ্রমিক-কৃষকদের অভিনন্দন জানায়। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, লক্ষাধিক এলাকায় ‘ভারত বাঁচাও দিবস’ পালিত হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের আমলে অর্থাৎ ২০১৪ সালের মে মাস থেকে মারাত্মক তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে শ্রমিক-কৃষক সহ সমস্ত অংশের সাধারণ মানুষের। একের পর এক শ্রমিক বিরোধী, কৃষক বিরোধী সর্বোপরি জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে সরকার। এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এই সরকার শ্রমিক, কৃষক এবং সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে কোনোরকম আত্মত্যাগ করবে না। কর্পোরেটদের সুবিধা করে দিতে সবদিক থেকে পিষে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সাত বছর ধরে বেকারত্ব বেড়ে চলেছে, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে। অনাহার, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষাহানি, কোভিডের ওষুধ সহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে পরপর মৃত্যুর সাক্ষী দেশ। মহামারীর মধ্যেই শ্রমিক-কৃষক বিরোধী আইন প্রণয়ন হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষ যখন দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন আম্বানি-আদানি এবং অন্যান্য পুঁজিপতিরা প্রতি মিনিটে ২ কোটি টাকা করে আয় করছেন। সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রকে বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংসদে পেগাসাস নিয়ে তদন্ত সম্পর্কে কোনোরকম জবাব না দিয়ে জনবিরোধী বিল পাশ করিয়ে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ‘ভারত বাঁচাও দিবস’-এর ডাক দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল।

‘ভারত বাঁচাও দিবস’-এর মূল দাবিগুলি ছিল - শ্রমিকবিরোধী শ্রম কোড এবং কৃষকবিরোধী তিন কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার, ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের অবসান ঘটিয়ে নতুনকাজের সুযোগ তৈরি করা ও প্রতিবছর শূন্যপদ পূরণ, রেগায় বরাদ্দ বাড়ানো, শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন প্রণয়ন, যে সব পরিবার কর দেয় না, সেই পরিবারগুলিকে প্রতিমাসে সাড়ে সাত হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা করা, আগামী ছ’মাসের জন্য প্রতিমাসে মাথাপিছু বিনামূল্যে ১০ কেজি খাদ্যশস্য বণ্টন, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, কর্পোরটমুখী টিকাকরণ নীতি বাতিল করে বিনামূল্যে সর্বজনীন টিকাকরণ সুনিশ্চিত করা, মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি সহ প্রথম সারির সমস্ত কর্মী ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা, রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ বন্ধ করা, প্রকল্প কর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা, আইএলও কনভেনশন ৮৭, ৯৮, ১০৯-এ গৃহীত প্রস্তাবের অনুমোদন।

এদিনের এই কর্মসূচি উপলক্ষে রাজধানী দিল্লিতে মান্ডি হাউসে জমায়েত করে সংসদ অভিযান শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু মিছিল শুরু হতেই পথ আটকে দেওয়া হয়। মান্ডি হাউসেই বিক্ষোভ দেখান প্রতিবাদকারীরা। উপস্থিত ছিলেন সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, এআইটিইউসি’র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কাউর, এইচএমএস’র সাধারণ সম্পাদক হরভজন সিং, ইউটিইউসি’র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

দিল্লির সিঙ্ঘু সীমান্তে সহস্রাধিক কৃষক ‘ভারত বাঁচাও‘ স্লোগান তুলে আন্দোলনে শামিল হন। এরা প্রত্যেকেই তামিলনাড়ুর কৃষক - যারা গত ৫ আগস্ট থেকে সিঙ্ঘু সীমান্তেই রয়েছেন। পাঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকরাও দেশ বাঁচানোর দাবি তুলে মিছিল করেন। সারা ভারত কৃষক সভার সভাপতি অশোক ধাওয়ালে, যুগ্ম সম্পাদক বিজু কৃষ্ণাণ, এসএফআই-র সর্বভারতীয় সভাপতি ভি পি শানু সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। দিল্লির কনট প্লেসে বিজেপি-আরএসএস সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হন মহিলারা। এদিন এআইডিডব্লিউএ, এনএফআইডব্লিউ সহ একাধিক মহিলা সংগঠন বিক্ষোভ দেখায়। মরিয়ম ধাওয়ালে, আশা শর্মা, মাইমুনা মোল্লা, সর্বানী সরকার সহ একাধিক মহিলা নেত্রী ছিলেন পুরোভাগে। এদিনের এই ‘দেশ বাঁচাও’ আন্দোলন কর্মসূচিতে গাজিয়াবাদ ও নয়ডার শতাধিক মহিলা যোগ দেন।

সুরাটে চকে বিবেকানন্দ মূর্তি থেকে জেলা দপ্তর পর্যন্ত মিছিল করে ডেপুটেশন দেন শ্রমিকরা। এই কর্মসূচিতে কংগ্রেসও শামিল হয়েছিল। ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুর সহ কোরবা সরগুজা, সুরজপুর, বস্তার, বিলাসপুর, রাজনন্দগাঁও সহ ২০টিরও বেশি জেলা জুড়ে এদিন বিক্ষোভ-আন্দোলনে শামিল ছিলেন শ্রমিক-কৃষকরা। নয়ডার জেলা শাসকের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ দেখান শ্রমিক-কৃষকরা। তাঁরা ধরনায় বসেন। এখানে অসংখ্য মহিলাও যোগ দেন। দেরাদুনে ‘ভারত বাঁচাও দিবস’ উপলক্ষে শ্রমিক-কৃষকরা সমবেত হন এবং নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগের দাবি তোলেন।

এদিকে দিল্লির যন্তর মন্তরে কৃষক সংসদ কর্মসূচি ৯ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, সংসদে বাদল অধিবেশন চলাকালীন যন্তর মন্তরে প্রতিদিন কিষান সংসদ কর্মসূচি সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়েছিল সংযুক্ত কিষান মোর্চা। তিন কালা কৃষি আইন বাতিল না করায় এই কিষান সংসদ থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করিয়ে নেওয়া হয়। কিষান সংসদ প্রধানমন্ত্রী মোদীর পদত্যাগের দাবি তোলে। এছাড়া দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের আন্দোলনের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমতিও পুলিশের কাছ থেকে আদায় করে নেয় কৃষক নেতৃবৃন্দ।