E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১ সংখ্যা / ১৩ আগস্ট, ২০২১ / ২৭ শ্রাবণ, ১৪২৮

কাশ্মীর কী পেল ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির দুই বছরে

গৌতম রায়


কাশ্মীরের গুপকার জোটের নেতৃত্বের সাথে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ।

ভারতে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তির মূল প্রতিনিধি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং তাদের বর্তমান রাজনৈতিক সংগঠন ভারতীয় জনতা পার্টি চিরদিনই ভারতের সংবিধানের ৩৭০নং এবং ৩৫এ ধারা ঘিরে আপত্তি জানিয়ে এসেছে। এই দু’টি ধারার অবলুপ্তি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি দ্বিতীয় দফায় একক গরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করবার পর, সংসদের প্রথম অধিবেশনেই ভারতের সংবিধান থেকে এই দু’টি ধারার অবলুপ্তি ঘটায়। এই ঘটনার পর দু'টি বছর অতিক্রান্ত। যে রাজনৈতিক অভিপ্রায় নিয়ে কার্যত সংবিধান কার্যকর হওয়ার সময় থেকে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি এই ধারা দু'টির বিরোধিতা করে আসছে, ধারা দু'টির অবলুপ্তির সময়কালে বা পরবর্তী দুই বছরে সেই রাজনৈতিক অভিপ্রায় হিন্দুত্ববাদীদের বেশ অনেকটাই বদলে গিয়েছে। তাদের কাছে এখন এই ধারা দু’টির অবলুপ্তিজনিত পরিস্থিতি জম্মু এবং কাশ্মীরে বিজেপি’র শাসন কায়েম করবার নামান্তরেই পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে আরএসএস-বিজেপি চিরদিন ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ অবলুপ্তির কথা বলে এসেছে। এই ধারা বলে কাশ্মীরের মুসলমানেরা বিশেষ সুযোগ পাচ্ছে - এই অপপ্রচার ছিল হিন্দুত্ববাদীদের একমাত্র অস্ত্র। সেই অস্ত্র তারা ভারতজুড়ে মুসলমান সমাজের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নগ্নভাবে ব্যবহার করে গিয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের নাগরিকদের সিংহভাগ যেহেতু মুসলমান, তাই সংবিধানের এই ধারাগুলির সুযোগ নিয়ে ভারতীয় মুসলমান, বিশেষ করে কাশ্মীরের মানুষদের তথাকথিত পাকিস্তান প্রীতির একটা কল্পিত গল্পগাথা ছিল হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রচারের প্রধান কৌশল। এই প্রচারকে কাজে লাগিয়ে দেশজুড়ে তীব্র মুসলমান বিরোধিতার পরিবেশ, মুসলমান বিদ্বেষের আবহাওয়া কায়েম করা ছিল আরএসএস-বিজেপি’র একমাত্র লক্ষ্য। দীর্ঘদিনের গোয়েবলসীয় প্রচারে এই বিভাজনের লক্ষণরেখা নির্মাণে হিন্দু সাম্প্রদায়িক- মৌলবাদী শক্তি বেশ খানিকটা সফলও হয়েছিল।

রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত করার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই ধারাগুলি অবলুপ্তির পর গোটা কাশ্মীর ও জম্মু উপত্যকায় ঘুরিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি’র কর্তৃত্ব কায়েম করা হয়েছে। সেই কায়েমরাজই সেখানে বজায় রয়েছে গত দুই বছর জুড়ে। ফলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তো দূরের কথা, চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে গোটা উপত্যকায় ধারাবাহিকভাবে। কোভিড পরিস্থিতির আগে থেকেই এই ৩৭০ ধারা অবলুপ্তিজনিত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে কাশ্মীর জুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কার্যত বন্ধ। কাশ্মীরের বেশিরভাগ মানুষই অর্থনৈতিকভাবে এতটাই খারাপ অবস্থায় আছেন যে, অনলাইন পড়াশোনার সুযোগ নিতে তাঁরা একান্তই অপারগ। ফলে একটা প্রজন্মকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে প্রথাগত শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করে চলেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি।

৩৭০ ধারা যখন দুই বছর আগে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার অবলুপ্তি ঘটায় এবং কাশ্মীরকে প্রশাসনিক দিক থেকে ভেঙে দুই টুকরো করে, তখন সেখানকার সাধারণ মানুষদের প্রভাবিত করতে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। মূলত পর্যটন শিল্পের উপর অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডটি নির্ভরশীল ছিল কাশ্মীরের মানুষদের। সেই সঙ্গে সামান্য বাগিচা শিল্প (আপেল, আখরোট ইত্যাদি) আর শাল ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল ছিল সেখানকার অর্থনীতির মূলস্রোত। ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির সময়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই সময়ে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল তিনমাসের ভিতরে সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্র মিলিয়ে সেখানে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কার্যত গত দুই বছরে সরকারি বা বেসরকারি - কোনো ক্ষেত্রেই এই সংখ্যার ধারেকাছে কোনো কর্মসংস্থান হয়নি।

৩৭০ ধারার অবলুপ্তির পর বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থানের জোয়ার বয়ে যাবে গোটা জম্মু এবং কাশ্মীরে - এটাই ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচার, বিজেপি’রও প্রচার। এই প্রচারকে আরএসএস একদম তুঙ্গে পৌঁছে দিয়েছিল। ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির ফলে গোটা দেশের কী কী উপকার হয়েছে - সেই গল্পকথার অবসরে এই ৩৭০ ধারা আমাদের সংবিধানে থাকার সুবাদে কতোখানি বাড়াবাড়ি করতে পেরেছিল মুসলমানেরা - এটা গত দুই বছর ধরে দেশের কোণায় কোণায় ছড়ানোর চেষ্টা করেছে আরএসএস। এই ধারাটি থাকবার ফলে দেশের বড়ো বড়ো বিনিয়োগকারীরা কাশ্মীরে কিছু বিনিয়োগ করে উঠতে পারেনি এতকাল ধরে, আর সেই কারণেই সেখানে এতো দারিদ্র্য এবং বেকারি - একদম পরিকল্পিতভাবে জম্মুর হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলসহ ভারতজুড়ে গত দু’বছর ধরে প্রচার করেছে হিন্দুত্ববাদী শক্তি। যদিও তাদের এই প্রচার সত্ত্বেও গত দু’বছরে বিজেপি’র ঘরের লোক আদানি-আম্বানিরা পর্যন্ত কাশ্মীরে একটি পয়সা বিনিয়োগ করেনি। কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বিনিয়োগের অছিলায় এককালে বিজেপি ঘনিষ্ঠ যেসব বড়ো বড়ো শিল্পপতি জমি কিনতে চাইতো, গত দু’বছর ধরে বিজেপি সেই কাশ্মীরে রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করে সাধারণ মানুষের জীবনকে যে পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে, তাতে সাহস করে সেখানে জমিই কিনতে এগোয়নি। শিল্প করা তো দূরের কথা, বিনিয়োগ তো আরও দূর অস্ত। ফলে শিক্ষিত এবং প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া বেকার মানুষেরা কাশ্মীরে গত দু’বছরে একটা প্রাণান্তকর অবস্থার ভিতরে চলে এসেছে। সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তানের উসকানি আরও তাঁদের জীবনকে সঙ্কটাপন্ন করে দিয়েছে।

৩৭০ ধারা অবলুপ্তির তথাকথিত যুক্তি হিসেবে জম্মু এবং লাদাখের উন্নতির কথা খুব গলাবাজি করে বলেছিল হিন্দু সাম্প্রদায়িক শিবির। জম্মুর মানুষদের জীবনজীবিকার ক্ষেত্রে এতটুকু অদলবদল কি গত দুই বছরে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পরে ঘটেছে? জম্মুর হিন্দু পণ্ডিতদের ঘিরে আরএসএস-বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই নানারকমের ভাবাবেগ তৈরির চেষ্টা করে। বিজেপি তো দাবি করেছিল, ৩৭০ নম্বর ধারা এবং ৩৫এ ধারা অবলুপ্তির ফলে কাশ্মীরের পাশাপাশি জম্মুতেও প্রচুর বিনিয়োগ হবে। সেখানকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুবর্ণ সুযোগ আসবে। এসেছে কী? গত দুই বছরে জম্মুতে কি একটিও বিনিয়োগ এসেছে? দশটি শিক্ষিত বা প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া বেকারের কি সেখানে কর্মসংস্থানের এতটুকু সুযোগ এসেছে? নাকি কোভিডের কারণে সেখানে কর্মরতদের ভিতরে ছাঁটাইয়ের শিকারের হার ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে? মেয়েদের আর্থিক স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রটি কোভিডের দোহাই দিয়ে কেবল সঙ্কুচিত হয়েই চলেছে। গোটা কাশ্মীর উপত্যকায় গত দুই বছরে কোনো নির্বাচিত সরকার না থাকার ফলে অপরিকল্পিত লকডাউনের কারণে মেয়েরা হাসপাতালগুলিতে প্রসবকালীন পরিষেবাও অনেকক্ষেত্রেই পান নি। অপরিকল্পিত লকডাউন এবং নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণে প্রশাসনিক অব্যবস্থার দরুন কাশ্মীর উপত্যকা জুড়েই বিগত দু’বছর ধরে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে চলেছে চরম অব্যবস্থা এবং অরাজকতা। জম্মু, লাদাখ, কাশ্মীর - সব জায়গার মানুষই এই অব্যবস্থার শিকার হচ্ছেন।

গত দুই বছরে গোটা কাশ্মীর উপত্যকায় নাগরিকেরা কার্যত স্বাভাবিক জীবনযাপনই করতে পারেননি। কেন্দ্রীয় সরকারের তল্পিবাহক প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে - এটা বোঝাতেই তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। পুলিশ আর সেনার একদিকে জবরদস্তিতে দোকানপাট খোলা থেকেছে। কিন্তু এই পুলিশ আর সেনা পথেঘাটে যেভাবে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করেছে, তার জেরে সাধারণ মানুষের পক্ষে দোকানে কেনাকাটি করাটাও দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে পড়েছে। দোকানদারেরা পুলিশ আর সেনার চাপে দোকান খোলা রাখতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু বেচাকেনা না হওয়ার ফলে তাঁদের ভিতরেও নেমে এসেছে চরম হতাশা।

গোটা উপত্যকার অ-বিজেপি রাজনৈতিক নেতারা গত দুই বছরের ভিতরে প্রায় সতের, আঠারো মাসই গৃহবন্দি ছিলেন। লোকসভার সদস্য হয়েও ডাঃ ফারুক আবদুল্লাকে অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্যে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে এই সময়ে। সিপিআই(এম) নেতা ইউসুফ তারিগামি সহ অন্যান্য অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলের নেতারা এই দু’বছরে কেউ কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে পারেননি। এমকী এই লকডাউনের সময়কালেও প্রশাসন অ-বিজেপি নেতাদের সাধারণ মানুষদের ত্রাণটুকু পর্যন্ত দিতে দেয়নি। রাজনৈতিক কর্মীদের অসুস্থ সহনাগরিকদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রেও নানা ধরনের বাঁধার সৃষ্টি করা হয়েছে পুলিশ এবং সেনার পক্ষ থেকে।

এইসবই হয়েছে কিন্তু ফারুকের ন্যাশনাল কনফারেন্স, গোলাম নবি আজাদের জাতীয় কংগ্রেস, ইউসুফ তারিগামির সিপিআই(এম) বা মেহবুবা মুফতির দলকে ঘিরে। বিজেপি নেতাদের এই দুই বছরে সব ধরণের ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিজেপি নেতাদের ক্ষেত্রে পুলিশ বা সেনা, কেউই এতোটুকু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে নি। একজন বিজেপি নেতাকেও বিগত দুই বছরে একদিনের জন্যেও অন্তরীণ করে রাখা হয় নি। কোভিডজনিত লকডাউনকে কেন্দ্র করে ত্রাণ বিলির নাম করে বিজেপি যে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালিয়েছে, তাতে বাঁধা দেওয়া হয় নি। নানা সমাজসেবী সংগঠনের আড়ালে কাশ্মীরে, জম্মুতে, লাদাখে আরএসএস ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির সুফল সাধারণ মানুষকে বিনাবাঁধায় বোঝাবার সুযোগ পেয়েছে। জম্মু উপত্যকায় যেসব হিন্দু পরিবার কাশ্মীরের মুসলমানদের সম্পর্কে এখনো ততোটা বিদ্বেষমূলক মানসিকতা নিয়ে চলতে রাজি ছিলেন না, সেই পরিবারগুলিকে কার্যত নানা ধরনের উপঢৌকন এবং ভোকাল টনিকের মাধ্যমে প্রশাসনের বদান্যতায় মুসলমান বিদ্বেষে পরিপূর্ণ করেছে গত দুই বছর ধরে আরএসএস। যুব সমাজের ভিতর থেকে দুই একজন আরএসএসে’র বিভিন্ন শাখা সংগঠনের এই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের খেলার প্রতিবাদ করা হলে, সেই সমস্ত প্রতিবাদীদের পুলিশ এবং সেনা দিয়ে হেনস্তা করা হয়েছে। নানা ধরনের মামলা দিয়ে তাঁদের জর্জরিত করে দেওয়া হয়েছে বিজেপি নেতাদের প্রত্যক্ষ অঙ্গুলি হেলনের দ্বারা।

নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই যখন তড়িঘড়ি ভারতের সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বাতিল করেন (৫ আগস্ট, ২০১৯), তখন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সংসদে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, দুই বছরের ভিতরেই গোটা কাশ্মীর উপত্যকায় রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।কেন্দ্রীয় সরকার তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, দুই বছরের ভিতরেই রাজ্য সরকার যাতে সেখানে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চালাতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হবে।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তাদের নিজেদেরই দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতির ধারপাশ দিয়ে গত দুই বছরে হাঁটেনি। নির্বাচিত রাজ্য সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যে উপত্যকায় যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালানো গত দু’বছর ধরে দরকার ছিল, কেন্দ্রের তল্পিবাহক রাজ্যপাল বা উপরাজ্যপাল তা করেননি। সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকারকে কার্যত রুদ্ধ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার পুলিশ আর সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে গোটা কাশ্মীর উপত্যকাকে বিশ্বের কাছ থেকে একদম পৃথক করে দিয়েছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।

দু’বছর পর যখন একদিকে কোভিডের কারণে অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে গোটা দেশের অর্থনীতি কার্যত বেহাল অবস্থায় পৌঁছেছে, তীব্র বেকারি, ছাঁটাই, পেট্রোল-ডিজেল-কেরোসিন সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আগুন দাম, এনআরসি, সিএএ-এর আতঙ্কে দেশবাসী, বিশেষকরে সহনাগরিক মুসলমান সমাজের ভিতরে চরম অনিশ্চয়তা, সর্বনাশা কৃষি আইন প্রণয়নের জেরে কৃষক আন্দোলনে মোদী সরকারের ভিত প্রায় কেঁপে গিয়েছে - এমন সময়ে কাশ্মীরে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু না করে, ঘুরিয়ে নাক দেখাতে সেখানে ডিলিমিটেশনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে কেন্দ্র। বিজেপি’র এই ডিলিমিটেশন বা নির্বাচনী এলাকা পুনর্গঠনের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো,জনসংখ্যার দোহাই দিয়ে কাশ্মীর অঞ্চল থেকে বিধানসভার আসন কমানো। আর সেই কমানো আসন জম্মু উপত্যকাতে বাড়ানো। জম্মুতে যেহেতু হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই সেখানে আসন বাড়িয়ে ঘুরপথে ক্ষমতা দখলই হলো ৩৭০ অবলুপ্তির দ্বিতীয় বর্ষের সময়কালে আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’র একমাত্র উদ্দেশ্য।