৫৯ বর্ষ ১ সংখ্যা / ১৩ আগস্ট, ২০২১ / ২৭ শ্রাবণ, ১৪২৮
‘যেথায় মিথ্যা ভণ্ডামি ভাই করব সেথায় বিদ্রোহ!’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
পচাত্তর। যতবারই চন্দ্রবিন্দু বসিয়ে লিখতে চেষ্টা করলাম প্রতিবারই শুরুটায় কিবোর্ড ‘পচা’ লিখলো। টেকনোলজির দোষ নয়। এ নিতান্তই আমার অক্ষমতা। আঙুলের ডগা থেকে চন্দ্রবিন্দু উধাও। হয়তো শেষ দেড় বছরে দেশজুড়ে বহু ব্যবহারে ক্লান্ত হয়েই মুখ লুকোনো। তবু হাতে গোনা ঠিক দু’দিন পরেই বাৎসরিক। লালকেল্লায় তেরঙ্গা। আশেপাশে ধপধপে সাদা কুর্তা পাঞ্জাবির ভিড়ে চাপা পড়ে যাওয়া মলিন মুখ। রাজ্যে রাজ্যে প্যারেড। বিস্মৃতির পাতায় চলে যাওয়া প্রভাতফেরির যুগ পেরিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ডিজে। দিনভর ‘হ্যায় মেরে বতন কি লোগো’। কবি প্রদীপের লেখা ১৯৬৩-তে প্রকাশিত এই গানের সঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের কোনো সম্পর্ক নেই। তবুও। আর অন্ধকার গাঢ় হলে ‘দো ঘুঁট মুঝে ভি...’। পঁচাত্তর বছরে পা দিয়ে নোনতা হয়ে যাওয়া গতানুগতিক স্বাধীনতার ক্লান্তি। হাত কচলাতে কচলাতে চাপা পড়ে যাওয়া, অনুল্লিখিত, অনুচ্চারিত, অপ্রাপ্তি, অসুখ মিলিয়ে মিশিয়ে বেশ উৎসব উৎসব ভান। ছদ্ম যাপন। ‘বুকের ভিতর ছ-পাই ন-পাই’...
উনিশশো সাতচল্লিশ। শেষ সেনসাস হয়ে গেছে একচল্লিশে। পরবর্তী হবে একান্নয়। এই দুয়ের মোটামুটি মাঝামাঝি সময় তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর দেশে অর্ধ উলঙ্গ শরীরে স্বাধীনতার স্বপ্ন মাখামাখি করে প্রায় তেত্রিশ কোটি জনদেবতা। প্রতি মানুষ পিছু গড়ে একজন করে দেবদেবীর কেউ কাউকে সামলে ওঠার আগেই রাম, নানকের নামে বাহাত্তর লক্ষ উনপঞ্চাশ হাজার আর আল্লার নামে বাহাত্তর লক্ষ ছাব্বিশ হাজার মানুষের মাটি বদল। ঠিকানা বদল। দেশের নাম বদল। মানচিত্রের কাটাছেঁড়ায় কাঁটাতারের এপার ওপার। ঠাই নাড়ার হাহাকার। যন্ত্রণা। কান্না। কারো কাছে বা ‘বিষম উৎপাত’। কার্গিল শহিদদের কফিন বেচে কাটমানির বাঁটোয়ারা বুঝে নেওয়াদের সেদিনও জনদেবতার অস্ফুট কালশিটেতে কিছু যায় আসেনি। বাঁচতে তো শুধু ‘নীতা’ একা চায়নি। আজও হয়তো কান পাতলে...
ওই সময় বা তারও বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই কেউ কেউ বিশ্বাস করতেন ‘ফুলের টবে গম ফলানো আমাদের কাজ নয়’। ‘আমাদের কর্তব্য হলো আগাছা উপড়ে ফেলা’। যদিও বিশ্বাসে মিলায় বস্তুর দেশে তর্কে বহুদূর পথ হাঁটতে রাজি থাকা মানুষের সংখ্যা চিরকালই কম। আসলের থেকে ‘ঝুটা’র কদরই সেখানে এগিয়ে। মেডইজিতে সাফল্য খুঁজে নিয়ে ‘এই বেশ ভালো আছি’র কালঘুমে দিন কাটানোর আনন্দ অনেক বেশি। দিন যায়। মাস যায়। বছর যায়। যুগ যায়। রজত জয়ন্তী, সুবর্ণ জয়ন্তী, হীরক জয়ন্তী, প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী পেরিয়ে যায়। সবুর করে করেও মেওয়া ফলে না। ‘দোহাই তোদের! এবার তোরা সত্যি করে সত্য বল! ঢের দেখালি ঢাক ঢাক আর গুড় গুড়, ঢের মিথ্যা ছল।’
উনিশশো একান্ন। আত্মনির্ভর কনসেপ্ট তখনও খাতায় কলমে আসেনি। সদ্য স্ব অধীন। শিশু ভারতের সেনসাস জানাচ্ছে শেষ দশ বছরে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে চার কোটি চব্বিশ লক্ষ সাতাশ হাজার পাঁচশো দশ। মোট জনসংখ্যা ছত্রিশ কোটি দশ লক্ষ অষ্টআশি হাজার নব্বই। প্রচুর মানুষ এপার ওপার করতে বাধ্য হবার পরেও। বৃদ্ধির হার ১৩.৩১শতাংশ । পথ চলা শুরু বিরাশি শতাংশ নিরক্ষর, গড়ে বত্রিশ বছরের ‘লাইফ এক্সপেকটেন্সি’ নিয়ে। আরও কয়েক বছর পর উনিশশো ছাপ্পান্ন সাতান্ন সালে এসে মিনহাস জানাবেন দেশে ৬৫ শতাংশ মানুষ আছেন, যাঁরা দারিদ্র্য সীমারেখার নিচে বসবাস করেন। হিসেব অনুসারে বছরে খরচ করতে পারেন ২৪০ টাকা বা তারও কম। অর্থাৎ মাসে ২০ টাকা। সেই অভাবী খাতায় আলাদা করে লেখা নেই কোনো ধর্ম। আছে শুধু মানুষ, মানুষ এবং মানুষের কথা। যে দেশের ৮৪.১ শতাংশ হিন্দু। স্বাধীনতার আগের তিয়াত্তর শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠী স্বাধীনতার পরেই চুরাশি শতাংশ পেরিয়েছে। সঙ্গে ৯.৮ শতাংশ মুসলিম, ২.৩ শতাংশ খ্রিস্টান এবং আরও কিছু শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মাবলম্বী দেশবাসী। বহু পরিকল্পনা, সূচক, তথ্য, সেমিনার, ভাষণের ভিড়ে নাবালকত্ব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব পেরিয়ে পঁচাত্তরের বৃদ্ধ আজও নাবালক। রাম-রহিম, আদানি-আম্বানি, মেহুল-নীরব, নাকি মানুষ - এখনও মীমাংসা হয়নি দেশটা কার! কাদের! আগে বিতর্ক মিটুক। শিল্পীরা অবয়ব গড়বেন নাহয় তারও পরে। ততদিন লুঠ চলুক জল জমি জঙ্গল অন্ন বস্ত্র বাসস্থান জীবনে। ‘স্ব-স্বরূপে দেশকে ক্লীব করছে এরা দিনকে দিন’...
এখন পঁচাত্তর। জরুরি অবস্থার নজরদারির সময় পেরিয়ে এখন পেগাসাস নজরদারির যুগ। এখন সময় মন কি বাতের। সময় আত্মনির্ভরতার। এখন রমরমা সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের নামে ডোল রাজনীতির। এখন সময় দেশের মানুষের টাকা লোপাট করে রাতারাতি বিদেশের নাগরিকত্ব নেবার। এখন সময় গোড়ালি জলে দাঁড়িয়ে হাঁটুজল মাপার ছল করার। এখন সময় মগজে হানাদারির। নাম বদল, ইতিহাস বদল, ভাবনা বদলের ছকবাজির। এখন সময় মোগলসরাইকে দীনদয়াল করার। ফিরোজাবাদকে চন্দ্রনগর, আগ্রাকে অগ্রবন করার চেষ্টার। বিরোধীদের পাত্তা না দিয়ে বিল পাশ করানোর। অবাধে সরকারি সম্পদ বেচার। এখন সময় ‘দেশ কে গদ্দারোকো, গোলি মারো শালোকো’র। এখন সময় ‘মুল্লে কাটে যায়েঙ্গে, রাম রাম চিল্লায়েঙ্গে’র। আল্লা ভগবান নিজেদের মধ্যে কখনও লড়াই না করলেও তাঁদের স্বঘোষিত চ্যালাচামুণ্ডাদের লড়াই আজও বহমান। পঁচাত্তরে পা দিয়েও টুকরো টুকরো গোষ্ঠী লড়াই। মানুষের দাবিতে গলা ফাটানোর সময় কোথায় ! ওসব তো দেশদ্রোহীরা করে থাকে! ‘ধর্ম-কথা প্রেমের বাণী জানি মহান উচ্চ খুব, কিন্তু সাপের দাঁত না ভেঙে মন্ত্র ঝাড়ে যে বেকুব!’...
বিবরণ বিবরণ বিবরণ। অবিরাম বিবরণ দিয়ে দিয়েও বিবর্ণতা থেকেই যায়। ধারাবিবরণী দিতে তাই ইদানীং ক্লান্তি গ্রাস করে। আর ভালো লাগে না। বলতে গেলে তো কতকিছুই বলা যায়। পঁচাত্তর বছর মানে তো সাতাশ হাজার তিনশো পঁচাত্তর দিন। ছ’লক্ষ সাতান্ন হাজার ঘণ্টা। তিন কোটি চুরানব্বই লক্ষ কুড়ি হাজার মিনিটের হিসেব। ভাবসম্প্রসারণ তো দূরের কথা। সারসংক্ষেপ লিখতে বসলেও পনেরোশো শব্দ যথেষ্ট নয়। আমার, আমাদের কাছে না হলেও বৃথা সে চেষ্টা থেকে দূরত্ব অবলম্বন করে বাঁচাই শ্রেয় অনেকের কাছে। আশেপাশে থিকথিক করা অরাজনৈতিক রাজনীতিবিদদের ভিড়ে চোকসি আর গ্রামসি অথবা রাম রহিমের সঙ্গে রুটির ফারাক বোঝায় কোন্ হরিদাস পাল ! বিশ্বাসে মিলায়ে বস্তুর শিকড়ের চারপাশে ঘন আগাছার জঙ্গল। কাটে সাধ্য কার। গ্রামের সেই শিক্ষিত আর অশিক্ষিত মাস্টারমশাইয়ের গল্পের মতো। যেখানে ‘আই ডোন্ট নো’ বাক্যের সঠিক মানে ‘আমি জানি না’ বলেও শিক্ষিত মাস্টারমশাইকে গ্রামের অবুঝ মানুষের মুখ থেকে শুনতে হয় - ‘এ বাবা, মাস্টার জানে না’।
তবে আড়াই পা গিয়েই সব ভুলে যাবার অভ্যেস বড়ো সহজে ছাড়ে না। বারবারই মনে পড়ে যায় ‘আমাদের কর্তব্য হলো আগাছা উপড়ে ফেলা’। এই পঁচাত্তরে পা দেবার বছরেই তো সংসদের বাদল অধিবেশনে কত কত ঘণ্টা সময় বিরোধীদের হট্টগোলে নষ্ট হয়েছে সেই খতিয়ান দিতে দিতে বেমালুম চেপে দেওয়া হয় এই কাজ না হওয়ার মাঝেই নয় নয় করে কুড়িটির বেশি বিল পাশ হয়ে যাওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের দু’দিন আগেই শেষ করে দেওয়া লোকসভার অধিবেশন প্রসঙ্গে সরকারের বক্তব্য অনুসারে - কয়েকদিনে মাত্র ২১ ঘন্টা ১৪ মিনিট অধিবেশন বসতে পেরেছে। যদিও আলোচনা এবং অন্যান্য কাজের জন্য বরাদ্দ ছিল ৯৬ ঘণ্টা। যার মধ্যে ৭৪ ঘণ্টা কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। অথচ বিরোধীদের দাবি ছিল পেট্রোপণ্যের লাগাতার দাম বৃদ্ধি, কৃষি আইন, মুদ্রাস্ফীতি, ভ্যাকসিনেশন নিয়ে সংসদে আলোচনা। যে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। যদিও মাত্র ৭ থেকে ৮ মিনিট সময় নিয়ে এক এক করে বিল পাশ করানো হয়েছে।
কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রকের ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সচিব সম্প্রতি ট্যুইট করে জানিয়েছেন, বেসরকারিকরণ আবার সঠিক পথে ফিরছে। এবছরে বিক্রি করা হবে এয়ার ইন্ডিয়া ও ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। এবারের তালিকায় রয়েছে আরও ৩৫ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। নিলামে তোলার কাজ এই বছরই শেষ হবে। মোট ১৭১টি রাষ্ট্রায়ত্ত লাভজনক সংস্থা বিক্রি করা হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, শেয়ার বিক্রি করে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা তোলা হবে বলে স্থির হয়েছে। নীতি আয়োগের তালিকায় মোট ১৭১টি সংস্থা লাভজনক। নীতি আয়োগ জানিয়েছে, বিক্রি করতে হলে লাভজনক সংস্থাই বিক্রি করতে হবে। লোকসানে চলা কোনো সংস্থাকে কেউ কিনবে না। তাই লাভে চলা মোট ৩৫টি সংস্থা আগে বিক্রি করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। গত ৯ আগস্ট সংসদে এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে কেন্দ্রীয় অর্থ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ ভগত কৃষ্ণরাও কারাড জানিয়েছেন, দেশে কেন্দ্রের অধীনে আছে ১০ মহারত্ন, ১৪ নবরত্ন এবং ৭৩ মিনিরত্ন সংস্থা।
পঁচাত্তরে পা দেবার বছরের টাইমলাইনটা এক নজরে দেখে নিলে ক্রোনোলজিটা বুঝতে সহজ হবে। এই বছরের মার্চ মাসের শুরুতে ডিপার্টমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘সরকারের দায়িত্ব হলো দেশের শিল্পসংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়ানো, তাদের সাহায্য করা। কিন্তু কোনো শিল্পসংস্থার মালিক হওয়া বা ব্যবসা করা সরকারের কাজ নয়। একটা সময় ছিল যখন বিভিন্ন প্রয়োজনে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। জনকল্যাণমূলক ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া উচিত সরকারের।’
এই বছরের ২০ মার্চের হিসেব অনুসারে, গত পাঁচ বছরে আটটি লাভজনক সংস্থা পুরোপুরি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ঘরে এসেছে ৬৬ হাজার কোটি টাকা। কর দেওয়ার পরও ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির লাভ ছিল গড়ে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা করে। গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে - বিমা, ব্যাঙ্ক এবং সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করলে সরকারের আয় হবে ১ লক্ষ কোটি টাকা। বাকি ৭৫ হাজার কোটি টাকা আয়ের জন্য কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ কেন্দ্রকে জানিয়েছে নীতি আয়োগ। গত ৩ আগস্ট এবারের কাজ না হওয়া সংসদের অধিবেশনে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে বিল পাশ হয়ে গেছে লোকসভায়। বিরোধীদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই বিল পাশ করানো হয়। এতদিন নিয়ম ছিল বিমা সংস্থাগুলোয় সরকারের অংশীদারি থাকবে ৫১ শতাংশ। কিন্তু সেই নিয়ম তুলে নেওয়া হয়েছে। আর তার ফলে সরকার এবার নিজের শেয়ার বেসরকারি খাতে বিক্রি করতে পারবে।
কেন্দ্রের এই বেসরকারিকরণ নীতির তীব্র সমালোচনা করে সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, দেশের মহারত্ন, নবরত্ন, মিনিরত্ন-সহ ১৭১টি সংস্থা যখন ২০১৯-২০ সালে লাভ করেছে, তাহলে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে কেন? এর অর্থ হলো জাতীয় সম্পদ লুট করা হচ্ছে এবং জনগণের থেকে অর্জিত সম্পদ মুনাফাকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আশেপাশে যা যা হচ্ছে আমিও তার বাইরে নয় একদমই। যেহেতু এই পরিবেশেই ওঠা বসা খাওয়া ঘুম ভাব ভালোবাসা ঝগড়া অপ্রাপ্তি - প্রভাব তো পড়ে বটেই। ঠান্ডাশীতল মাথায়, অভিব্যক্তিশূন্য ভাঁজবিহীন মুখে মানুষের মৃত্যু পরোয়ানা লিখে চলাদের সঙ্গে মতের অমিল হওয়াই স্বাভাবিক। পথ আলাদা। অন্য। লড়াই শুরুতেও ছিল। আজও আছে। আগামীতেও থাকবে। নজরুল ইসলামের বিদ্রোহীর বাণী থেকে এই লেখায় একাধিক উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছি। শেষও করি বিদ্রোহী কবিকে দিয়েই - ‘যেথায় মিথ্যা ভণ্ডামি ভাই করব সেথায় বিদ্রোহ! ধামা-ধরা! জামা-ধরা! মরণ-ভীতু! চুপ রহো! আমরা জানি সোজা কথা, পূর্ণ স্বাধীন করব দেশ! এই দুলালাম বিজয়-নিশান, মরতে আছি - মরব শেষ।’