E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২২ সংখ্যা / ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩ / ২৮ পৌষ, ১৪২৯

সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সম্মেলনের আহ্বান

দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতা ও অর্জিত অধিকার রক্ষার লড়াইকে তীব্র করতে হবে

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ● তিরুবনন্তপুরম


সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে বলছেন পিনারাই বিজয়ন।

সাম্যের পক্ষে একতার লড়াইয়ের প্রশ্নে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনে আরও বেশি বেশি করে বিভিন্ন অংশের মহিলাদের জড়ো করতে হবে। করপোরেট ও সাম্প্রদায়িক শক্তির অশুভ জুটি এবং তার পৃষ্ঠপোষক মনুবাদী আরএসএস-বিজেপি’কে পরাস্ত করতে হবে। রক্ষা করতে হবে সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং নারী আন্দোলনের মধ্যদিয়ে অর্জিত অধিকার। কেরালার তিরুবনন্তপুরমে আয়োজিত সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ত্রয়োদশ সম্মেলন থেকে উচ্চারিত হলো এই আহ্বান।

সম্মেলন থেকে সর্বভারতীয় সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন পিকে শ্রীমতী, সাধারণ সম্পাদিকা হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন মরিয়াম ধাওয়ালে। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন এ পূণ্যবতী। নির্বাচিত হয়েছেন ৩৪ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী, ১০৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি। কমিটিতে তিনজনকে আমন্ত্রিত হিসেবে রাখা হয়েছে।

সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করছেন মালিনী ভট্টাচার্য।

৬ জানুয়ারি সকালে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির বিদায়ী সভানেত্রী মালিনী ভট্টাচার্য। এরপর শহিদস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নেত্রীবৃন্দ। শ্রদ্ধা জানানোর পর টেগোর থিয়েটার হলে প্রতিনিধি অধিবেশন পর্ব শুরু হয়।

উদ্বোধনী ভাষণ

বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী এবং সমাজকর্মী মল্লিকা সারাভাই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, মন্দির বা মসজিদে নয়, কোনো গণতান্ত্রিক পরিসরে এত মহিলাকে একসাথে দেখে আমার মন ভরে গেল। গুজরাটের বাসিন্দা হিসেবে তার উপলব্ধি, গত কুড়ি বছর ধরে দমবন্ধ করা পরিস্থিতি রয়েছে সেখানে। তিনি বলেন, আমাকে মানুষ প্রশ্ন করেন যে, একজন শিল্পী হয়েও কী করে গুজরাটে গণহত্যার বিরুদ্ধে আমি প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলাম। আমি তার উত্তরে বলি, আমি একজন শিল্পী বটেই কিন্তু একজন মানবীও। তাই আমি চাই না যে অন্য কোনো মানুষ বা পশু বা ধরিত্রী মাকে কেউ সংহার করুক, ধ্বংস করুক। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর সব মানুষের বেঁচে থাকার, বিকশিত হবার, মত প্রকাশের সমান অধিকার রয়েছে, সেকথা আপনারাও বিশ্বাস করেন। আমরা যদি আমাদের রাজনীতি এবং ব্যক্তি জীবনকে একই পথে না চালাই তাহলে আমরা যেমন পৃথিবী চাই তা কোনোদিনই অর্জন করতে পারব না। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে আমি যদি মেনে নিই যে, অন্য মহিলাদের সঙ্গে আমার প্রতিযোগিতা রয়েছে, সে আমার থেকে কিছু কেড়ে নেবে, তাহলে আমরা সেই পৃথিবী যেখানে আমরা পৌঁছতে চাই সেখানে কোনোদিন পৌঁছতে পারব না। এই ধনতান্ত্রিক পিতৃতান্ত্রিক সমাজে তাই লড়াইটা নিজের সঙ্গেও লড়তে হয়।

তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাম্প্রতিক স্লোগান সম্পর্কে শ্লেষের সুরে বলেন, মুখে বলা হচ্ছে ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’, কিন্তু তার পরিধিটা ক্রমশ সংকুচিত করা হচ্ছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি যে আদর্শের কথা বলে সেই আদর্শে কাজে এবং মনে পূর্ণ বিশ্বাসী হয়ে উঠতেই হবে, তবেই আমরা যা চাইছি তা পাব। লাল সেলাম।

উদ্বোধনী পর্বে বিশিষ্ট নেত্রী বৃন্দা কারাত সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদ্‌যাপনের এই সময়ে পৌঁছুতে ভারতীয় নারীরা বহু বাধা পেরিয়েছেন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। তাঁরা জাতিবাদের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করে চলেছেন। কিন্তু বাড়তে থাকা অসমতার শিকার হচ্ছেন তারা শ্রেণিগতভাবে, সামাজিকভাবে এবং নারী-পুরুষের সম্পর্কগতভাবেও। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি তার আন্দোলনের চার দশক পেরিয়ে এলো এ বছর। দেশে যে পুঁজিবাদ পিতৃতান্ত্রিকতার সঙ্গে সমঝোতা করে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে মহিলারা সামনের সারিতে রয়েছেন।

তিনি বলেন, নয়া উদারবাদ যত তীব্র আক্রমণ নামিয়ে আনছে তত লিঙ্গ বৈষম্য এবং অসাম্য বাড়ছে দেশে। এবং বাড়ছে করপোরেটদের বিত্ত। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে লড়াই চলছে। গ্রামীণ মহিলাদের কাজ না পাওয়া এবং ঋণে জর্জরিত পরিস্থিতি রয়েছে। দেশের নারীদের এবং দলিতদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের তীব্র নিন্দা করে তিনি বলেন, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধীদের মাত্র সাতাশ শতাংশের শাস্তি হচ্ছে, যেখানে দলিতদের ক্ষেত্রে তা আরও কম। ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বিলকিস বানুর ধর্ষকদের। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সম্মতির ভিত্তিতে বিয়ে করলেও আইন করে বাধা দেওয়া হচ্ছে, জেলে পাঠানো হচ্ছে। দেশের সংবিধান এবং ধর্মনিরপেক্ষতা আক্রান্ত। আরএসএস চাইছে সংবিধানের ভিত্তি হোক মনুস্মৃতি। মহিলারা যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন দেশকে স্বাধীন করেছেন, সেই স্বাধীনতা আজ আক্রান্ত। দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে চাই গণ প্রতিরোধ, নারীদের প্রতিরোধ। করপোরেট-সাম্প্রদায়িকতার জমানা রুখতে গড়তে হবে বিকল্প ভাবনার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

উদ্বোধনী পর্বে সংগঠনের সভানেত্রী মালিনী ভট্টাচার্য বলেন, দেশে এই মুহূর্তে আমরা এক অভূতপূর্ব বিপদের সম্মুখীন। দলিত মহিলা আদিবাসী মহিলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের এই জমানায় ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করা হচ্ছে। হিজাব এবং ইউনিফর্ম সিভিল কোড-কে প্রগতিশীল পদক্ষেপ বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে সংঘ পরিবারের পক্ষ থেকে। এই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমাদের পূর্বসূরিদের স্বাধীনতার সময় থেকে অর্জিত অধিকার রক্ষা করতে এবং সামাজিক সমতার অভিমুখে যাত্রার জন্য আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। শিশু কন্যাদের অবহেলা, গার্হস্থ্য হিংসা রুখতে এবং সামাজিক বৈষম্য জাত ব্যবস্থা, পণপ্রথার সঙ্গে কোনো সমঝোতা না করেই এগোতে হবে সে পথে। এজন্য সংবিধান আমাদের যে অধিকার দিয়েছে তা রক্ষা করতে হবে। সমাজ বদলের মধ্য দিয়ে সার্বিক সমতার দিকে অগ্রসর হতে আমাদের গণতান্ত্রিক মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ এবং মহিলাদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের রণনীতি তৈরি করতে হবে। আমরা চাই সেই লড়াইয়ে প্রথম সারিতে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি থাকবে জয় অর্জিত হওয়া পর্যন্ত।

সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে চে গেভারার কন্যা অ্যালাইদা গেভারা বলেন, দেশের বৃদ্ধি এবং উন্নয়নকে ধরে রাখতে গেলে মহিলাদের অংশগ্রহণ জরুরি। আমরা যা অর্জন করেছি তা আমাদের রক্ষা করতে হবে। আগামী লড়াইয়ে এই অর্জিত সাফল্য রসদ জোগাবে। আগামী দিন আরও উজ্জ্বলতর হোক। আগামী পৃথিবী আরও সুন্দরতর হোক। এই আশা রাখি। আমাদের দেশের ফেডারেশন অফ কিউবান ওমেন ১৯৬০ সালে গঠিত হয়েছে। সেখানে সাড়ে চার মিলিয়ন মহিলা অর্থাৎ কিউবানদের ৯২শতাংশ ১৪ বছরের বেশি বয়সি মেয়েরা যুক্ত রয়েছে।

খসড়া রিপোর্ট পেশ

সম্মেলনের খসড়া রিপোর্ট পেশ করে সাধারণ সম্পাদিকা মরিয়ম ধাওয়ালে বলেন, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের পক্ষে আরও বেশি সংখ্যায় মহিলাদের পথে নামাতে হবে। সরকারের নীতিকে প্রভাবিত করা গেলেও এখনো পর্যন্ত তা বদল করতে বাধ্য করা যায়নি। তাই বিভিন্ন অংশের মহিলাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে, গড়ে তুলতে হবে আরও জীবন্ত যোগাযোগ। সবাই এক্ষুনি আসবেন না কিন্তু তাদের কাছে আমাদের বিভিন্ন সাধারণ ইস্যুতে বক্তব্য পৌঁছে দিতে হবে। মূল্যবৃদ্ধি, রেশনের খাদ্যদ্রব্যের মান, পরিমাণ, মনরেগার কাজে বায়োমেট্রিক উপস্থিতি থেকে জনবিরোধী নীতির প্রশ্নে আরও বেশি বেশি করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে যে মহিলারা পথে নেমেছিলেন তাদের সংগঠনের মধ্যে আনতে হবে। রাজনৈতিক অভিমুখী করতে হবে তাঁদের। পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর বিরুদ্ধে মহিলাদের নানা অভিযোগের প্রশ্নে তাঁদের পাশে থাকতে হবে। রেশন কার্ড না পেলে তা নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় আমাদের সংগঠন কমজোর, তা শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে। কাজের অধিকারের প্রশ্নে মহিলারা বেশি সংখ্যায় কাজ পাচ্ছেন কিনা, তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বেতন বৃদ্ধি করা গেছে কিনা, এসব অগ্রাধিকার দিয়ে দেখতে হবে। মনরেগায় যুক্ত মহিলাদের বক্তব্য-অভিযোগ শুনতে হবে, মনরেগা’র সাইটে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে নজরদারি করতে হবে।

তিনি বলেন, ভিন জাতে বা ধর্মে বিয়ের ক্ষেত্রে অত্যাচারিতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এক্ষেত্রে স্কুল-কলেজে প্রচার বৃদ্ধির প্রশ্নের ডিওয়াইএফআই-এসএফআই সংগঠনের সহায়তা নিতে হবে। অনার কিলিং-এর প্রশ্নেও আইন গড়ে তুলতে জনমত তৈরির জন্য প্রচার করতে হবে।

সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পক্ষে এসএফআই’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস, এআইকেএস’র পক্ষে সাধারণ সম্পাদক বিজু কৃষ্ণান।

এছাড়া সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী তিস্তা শীতলবাদ।

সম্মেলনে ছ’টি বিষয়ে কমিশনভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন এবং নারীরা; জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ মহিলাদের সমতার জন্য আন্দোলনের পক্ষে এক আঘাত; কন্যা সন্তানের অধিকার; ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মহিলাদের আন্দোলন; মহিলাদের অধিকার এবং সমতার প্রশ্ন; বেকারি এবং মহিলা।

প্রতিনিধিদের আলোচনা

বিজেপি শাসিত হোক বা না হোক একমাত্র কেরালা ছাড়া দেশের সমস্ত রাজ্যগুলিতেই গণতান্ত্রিক অধিকারের পাশাপাশি সার্বিকভাবে মহিলারা আক্রান্ত। কাশ্মীর থেকে তামিলনাডু পর্যন্ত বিস্তৃত সংগঠনের সদস্যদের খসড়া প্রস্তাব এর উপর আলোচনা থেকে উঠে এসেছে এই বিষয়গুলি।

শাহীনবাগের আন্দোলনের প্রশ্নে অবস্থান এবং অধিকার এর জন্য লড়াই, দলিত মানুষের মধ্যে সংগঠন বৃদ্ধি, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরায় ফ্যাসিবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির আক্রমণ উল্লেখিত হয়েছে। মনরেগায় কাজের অধিকার মজুরির প্রশ্ন, কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অধিকার আদায়, আন্দোলনের কারাবরণ সহ একাধিক বিষয় উল্লেখ করেছেন প্রতিনিধিরা। রিপোর্টের উপর মোট ৭৪ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেছেন।

সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের ১০ বছর তৃণমূল মাওবাদী চক্রান্তে জেল খাটা ফুল্লরা মণ্ডল সহ মোট পাঁচজনকে প্রতিরোধের প্রতীক বলে অভিহিত করে সম্মানিত করা হয়েছে।

জবাবি ভাষণে মারিয়াম ধাওলে বলেন, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকা মানুষের কাছে আরও বেশি করে নিয়ে যেতে হবে। যেখানে বাম আন্দোলন দুর্বল সেখানে মহিলাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। সাম্প্রদায়িক চেষ্টার বিরুদ্ধে যে কোনো ঘটনার বিরুদ্ধে ছোটো ছোটো জমায়েত করে হলেও প্রচার চালাতে হবে। মানুষের দরজায় পৌঁছতে না পারলেও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালাতে হবে। হিম্মতের সঙ্গে রাস্তায় নেমে লড়াই করতে হবে অধিকারের প্রশ্নে বা যেকোনো ইস্যুতেই আমাদের অবস্থান আমাদের নিজেদের জেনে নিয়ে তা সমস্ত স্তরে জানাতে হবে। তিনি বলেন ও অবসরকালীন ভাতা যদি মনরেগায় কেরালা দিতে পারে তাহলে অন্যরা কেন দিতে পারবে না এটাও দাবি করতে হবে বিভিন্ন রাজ্যে। সংখ্যালঘুরে আক্রান্ত হলে শুধু সংখ্যালঘু মহিলাদের নিয়েই শুধু নয় সব ধর্মের বিভিন্ন অংশের মহিলাদের নিয়ে জড়ো করতে হবে তার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে। আরো বেশি বেশি মহিলাদের কাছে পৌঁছাতে হবে আমাদের মতাদর্শকে হাতিয়ার করে।

সম্মেলনের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত প্রকাশ্য সমাবেশে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেন, সাম্যের পক্ষে একতার লড়াইয়ের যে স্লোগান সামনে রেখে মহিলারাই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি তার বিরোধী। মানুষে-মানুষে ঐক্য ভেঙে দেয়ার ছক কষে চলেছে তারা অনবরত মহিলাদের সুরক্ষা দিতে প্রতিপদে ব্যর্থ মোদি সরকার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই আরএসএস বিজেপি নির্যাতিতাদের কাঠগড়ায় তুলছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে হবে।

প্রকাশ্য সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত সভানেত্রী পি. কে. শ্রীমতী, বৃন্দা কারাত, মরিয়ম দাওয়ালে প্রমুখ।

সম্মেলনে নারী নির্যাতন থেকে নদী ভাঙন সহ বিভিন্ন বিষয়ে মোট ২৪টি প্রস্তাব পাস করা হয়।

২৫টি রাজ্য এবং একাধিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিস্তৃত সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সংগঠন থেকে এই সম্মেলনে মোট ৮১৬ জন প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে মণিপুরের ২১বছরের সাধিকা সর্বকনিষ্ঠা এবং প্রবীণতম প্রতিনিধি তামিলনাড়ুর ৮০ বছর বয়সি জানকী। বিভিন্ন আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন এমন ৩৭৪ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে কারাবরণ করেছেন ১২৭ জন। সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন তপশিলি জাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ১৫৮ জন, অন্যান্য পিছিয়ে পড়া অংশের ৩১০ জন প্রতিনিধি, মুসলিম প্রতিনিধি ছিলেন ৩০ জন। ধর্ম উল্লেখ করেননি ৫৫ জন। সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হয়েছেন ৫৩ জন। পরিচিতি কমিটির রিপোর্টে উল্লিখিত ও অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে, ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করেছেন এমন ২১৫ জন প্রতিনিধি ছিলেন সম্মেলনে।