৫৯ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা / ১৩ মে, ২০২২ / ২৯ বৈশাখ, ১৪২৯
তৃণমূল জমানার যাবতীয় অপকীর্তির বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মুখরিত হচ্ছে
বগটুই গণহত্যার বিচার চেয়ে রামপুরহাটে মহামিছিলে মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম সহ নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ তৃণমূল জমানায় ক্রমশ বেড়ে চলা খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা, তোলাবাজি, সিন্ডিকেটরাজ থেকে চিট ফান্ড দুর্নীতি সহ গোরু পাচার, বালি পাচার ইত্যাদি নানা অপকীর্তির বিরুদ্ধে সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী দল ও বিভিন্ন গণসংগঠনের বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। রাজ্যের বুকে ঘটে যাওয়া এই সমস্ত জঘন্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ-মিছিল-পথসভা-বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন অগণিত মানুষ। অতি সম্প্রতি রামপুরহাটে বগটুই গণহত্যার বিচারের দাবিতে সিপিআই(এম)’র ডাকে সুবিশাল মিছিল তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
রাজ্যের মানুষের অভিজ্ঞতায় রয়েছে সাম্প্রতিককালে সিউড়ি জেলার রামপুরহাট সংলগ্ন বগটুই গ্রামে শাসকদল তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে তোলাবাজি, সিন্ডিকেটরাজ ও এলাকার দখলদারিকে কেন্দ্র করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। তৃণমূলের এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা, পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন। সেই খুনের বদলা নিতে বীভৎস গণহত্যার ঘটনা ঘটে সেখানে। একের পর এক বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে, কেরোসিন, পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারা হয় একের পর এক মহিলা,পুরুষ সহ শিশুকেও। তৃণমূলের দুই নেতা বাণীরুল শেখ ও মিহিলাল শেখের বাড়ি থেকে আগুনে পোড়া কালো মণ্ডে পরিণত হওয়া সাতটি লাশ উদ্ধার হয়। এই নারকীয় ঘটনায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০।
এমনই একটি জঘন্য নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারের কোনো সদর্থক ভূমিকা দেখা যায়নি। এ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী শুধু ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করে দায়িত্ব এড়িয়েছেন। আর শাসকদল মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে নির্বাক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কিন্তু রাজ্যের মানুষ এই ঘটনায় যেমন শিউরে উঠেছেন, তেমনি এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন।
গত ৮ মে কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে সুবিশাল প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়েছে রামপুরহাট শহরে। প্রখর দাবদাহের মধ্যে এদিন দীর্ঘ মিছিলে অবরুদ্ধ হয়েছিল রামপুরহাটের বিভিন্ন অঞ্চল। অগণিত মানুষ পথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদী মিছিলকে প্রত্যক্ষ করেছেন। মিছিল শেষে পৌর ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। এদিনের এই মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচিতে অংশ নেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ, সিপিআই(এম) নেত্রী কনীনিকা ঘোষ, শ্যামলী প্রধান, পার্টির মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা প্রমুখ।
জুলপিয়ার সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মহম্মদ সেলিম।
এদিন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বগটুই থেকে আনিস খান, গোরু পাচার থেকে বালি পাচার, চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি থেকে ধর্ষণ - সবের শেষ দেখে ছাড়ব। আদালতে বিচার না পেলে, জনতার দরবারে হবে বিচার। মোদি-মমতার সেটিংয়েও কিছু হবে না। কেউ পার পাবে না। রাজ্যের পুলিশ যেমন পাবে না, তেমনি সিবিআইও পাবে না। তিনি বলেছেন, সিবিআই যে যে মামলার তদন্ত করছে তার যদি দ্রুত নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে সিবিআই দপ্তরও ঘেরাও করা হবে।
এদিন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সহ নেতৃবৃন্দ দুর্গাপুরে তৃণমূলী দুর্বৃত্তবাহিনীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হওয়া গরিব ফুচকাওয়ালা রামপ্রসাদ সরকারের বাড়িতেও যান। সেখানে মহম্মদ সেলিম বলেন, গরিব মানুষ খুন হয়েছেন রাজ্যের শাসকদলের দুষ্কৃতীদের হাতে। পুলিশ কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। এই দুষ্কৃতীদের শাস্তির দাবিতে কেন্দ্রের শাসকদল নয়, কেবল লাল ঝান্ডাই লড়াই করছে। গরিব মানুষের পাশে আমাদের পার্টি কর্মীরাই রয়েছেন।
এদিন মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম, কনীনিকা ঘোষ, দুর্গাপুরের পার্টি নেতা পঙ্কজ রায় সরকার, সিদ্ধার্থ বসু, সলিল বোস সহ পার্টি কর্মীরা লাল পতাকা হাতে শ্রমিক নগর কলোনিতে মৃত রামপ্রসাদ সরকারের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তাঁর মা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন নেতৃবৃন্দ। নিহত রামপ্রসাদ দুর্গাপুর স্টেশন এলাকায় ফুচকা বিক্রি করতেন। গত ১৮ এপ্রিল তৃণমূলের দলীয় দপ্তরের সামনে তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। হাসপাতালে পরদিন তাঁর মৃত্যু হয়। এদিন পার্টি নেতৃবৃন্দ নিহতের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
দুর্গাপুরে পার্টি দপ্তরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম বলেন, আনিস খান খুন হলো, তুহিনার মৃত্যু হলো, হাঁসখালির ঘটনা ঘটলো। রামপ্রসাদ খুন হলেন, চরম নৈরাজ্য চলছে রাজ্যে। তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এর আগের দিন ৭ মে বিষ্ণুপুর থানার পীরখালি গ্রামের বাসিন্দা সিপিআই(এম) কর্মী, যুব নেতা কমরেড বিদ্যুৎ মণ্ডলের খুনের প্রতিবাদে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে এক সভায় বক্তব্য রাখেন মহম্মদ সেলিম। প্রসঙ্গত, কমরেড বিদ্যুৎ মণ্ডলের নিথর দেহ উদ্ধার হয় ৩০ মার্চ। এই নৃশংস হত্যার ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এদিন বিষ্ণুপুরের জুলপিয়া কয়ালের মোড়ে সিপিআই(এম)’র ডাকা প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, জলুপিয়ায় কমরেড বিদ্যুৎ মণ্ডল খুন হয়েছেন ৩৭ দিন আগে। বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেবার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা অপরাধীদের শাস্তি চাই। পুলিশ যদি খুনিদের গ্রেপ্তার না করে তাহলে আমরাও চুপ করে বসে থাকব না। থানায় পুলিশের নামে এফ আই আর করা হবে, দরকার হলে পুলিশের সুপারের অফিসে এমনকী ভবানী ভবনে গিয়ে প্রতিবাদ হবে।
এদিন মহম্মদ সেলিম ছাড়াও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী, প্রভাত চৌধুরী, মোনালিসা সিনহা প্রমুখ।
সভায় মহম্মদ সেলিম বলেছেন, তৃণমূলের রাজত্বে পরিবর্তনের নামে ১১ বছরে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তাতে রাজ্যের কারোর নিরাপত্তা নেই। মুখ্যমন্ত্রী অপরাধ দমনের পরিবর্তে অপরাধীদের আশকারা দিচ্ছেন। কখনও বলছেন ছোটো ঘটনা, কখনও বলছেন সাজানো ঘটনা, কখনও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পরিবর্তে নিজেই পুলিশকে কেস সাজাতে বলছেন। পুলিশের সাহায্যে অপরাধীরা রাজত্ব চালাচ্ছে। তিনি বলেন, কমরেড বিদ্যুৎ মণ্ডল যুব নেতা ছিলেন। মানবদরদি ছিলেন, এভাবে মানুষের পাশে থেকে কাজ করলে তাঁকে টিকে থাকতে দেয় না এরাজ্যের সরকার। লুট-ঝুটের সরকার চলছে রাজ্যে।
সুজন চক্রবর্তী বলেন, কমরেড বিদ্যুৎ মণ্ডল খুনের ঘটনায় এতদিন পরেও অপরাধীদের চিহ্নিত করা গেল না। বিচার হলো না। কীসের রাজত্ব চলছে? দুষ্কৃতীরা মনে করছে এটা আমাদের সরকার, প্রশাসন আর মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি গুন্ডা কন্ট্রোল করেন।
শমীক লাহিড়ী বলেন, রাজ্যজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ এই ঘটনার ধামাচাপা দিচ্ছে। কিন্তু আইন আদালত আছে। আমরা রাস্তায় লড়াই চালাব। আদালতেও যাব।
এদিন পার্টির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা এবং এসএফআই’র প্রাক্তনীদের তরফে সংগৃহীত ১২,৩৫০ টাকা শহিদের মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে এই ধরনের হামলা, খুন, শাসকদলের দলীয় স্তরে লুঠের বখরা ও এলাকার দখলদারি নিয়ে হানাহানির ঘটনা প্রায় প্রতিদিন চলছে। শাসকদলের চাপে পুলিশ-প্রশাসনের নির্বাক ভূমিকায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটছে। এই অবস্থায় রাজ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, নারী লাঞ্ছনার ঘটনা। সাম্প্রতিককালে হাঁসখালি, ময়নাগুড়ি, ডায়মন্ডহারবার, ইংলিশবাজার, শান্তিনিকেতন, ডেবরা, পিংলা, বারুইপুর, বাদুড়িয়া সহ কোচবিহারের তুফানগঞ্জ মহকুমায় ধর্ষণের ঘটনাগুলি রাজ্যকে কালিমালিপ্ত করেছে। প্রায় প্রতিটি ঘটনার সঙ্গেই শাসকদলের নেতা-মাতব্বর সহ দলের দুষ্কৃতীদের যোগসূত্র মিলছে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই পুলিশকে উপযুক্ত ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে হাঁসখালিতে যেভাবে স্থানীয় তৃণমূল নেতার ‘প্রতাপশালী’ পুত্র নাবালিকাকে নির্মম অত্যাচার চালিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে, তা ভয়াবহ। শুধু তাই নয়, স্থানীয় পুলিশকে কবজা করে জোর করে নাবালিকার মৃতদেহ অসহায় পরিবারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেভাবে কেরোসিন ও পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে, তা বর্বরতার সমস্ত সীমাকে লঙ্ঘন করেছে।
এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ বিভিন্ন মহলে ধ্বনিত হওয়া সত্ত্বেও আশ্চর্যজনকভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গেল এই ভয়ঙ্কর অপরাধকে আড়াল করতে নিহত নাবালিকা সম্পর্কেই নানা অসম্মানজনক মন্তব্য করতে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের আচরণে অপরাধীরা বাড়তি উৎসাহ পেয়ে নির্বিবাদে অপরাধমূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেভাবে রাজ্যে অপরাধ বেড়ে চলেছে, তা নানা চেষ্টা সত্ত্বেও আড়াল করা যাচ্ছে না। তাই সম্প্রতি নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, সরকারের মুখ পুড়ছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ পুলিশের হাতে নেই। তিনি নারী নির্যাতন থেকে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির দায় পুলিশের ওপরই চাপিয়ে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু এড়িয়ে গেছেন যে, রাজ্যের পুলিসমন্ত্রীর দায়িত্ব রয়েছে তাঁরই হাতে, আর সেই পুলিশের হাতে এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার লেশমাত্র নিয়ন্ত্রণ নেই।
রাজ্যে যখন আইন-শৃঙ্খলার এই অবস্থা, তখন দেখা যাচ্ছে গোরু পাচার, কয়লা পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল সিবিআই, ইডি’র সমন বারবার এড়িয়ে নিয়ে কখনো শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে পিজি হাসপাতালের বেডে, আবার কখনও কলকাতার বিলাসবহুল আবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন। দলের অন্যতম শীর্ষনেতা ও মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জিকে তাঁর পূর্বতন শিক্ষা দপ্তরে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির দায়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেপ্তারি এড়াতে আদালতের রক্ষাকবচ নিতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাবী মুখ্যমন্ত্রী বলে দলীয় স্তরে ঘোষিত যুবনেতা, মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি এবং তাঁর স্ত্রীও গোরু ও কয়লা পাচার চক্রের সঙ্গে যোগ এবং অনৈতিকভাবে বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়ার অভিযোগে সিবিআই-ইডি’র ঘেরাটোপ এড়াতে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছেন। দেখা যাচ্ছে দলের শীর্ষস্তর থেকে একেবারে নিচুতলা পর্যন্ত দুর্নীতি-কেলেঙ্কারির পাঁকে জড়িয়ে গেছে গোটা তৃণমূল দল।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ক্রমশ দানা বাঁধছে। সিপিআই (এম) সহ অন্যান্য বামপন্থী দল এবং এসএফআই-ডিওয়াইএফআই, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের ডাকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদী মিছিল, সমাবেশ, ধরনা-বিক্ষোভ ইত্যাদি ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে।