৫৯ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা / ১৩ মে, ২০২২ / ২৯ বৈশাখ, ১৪২৯
বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী পার্থ ঘোষ-এর জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাচিক শিল্পী পার্থ ঘোষ। বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ৭ মে শনিবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিট নাগাদ হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পার্থ ঘোষ। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। পার্থ ঘোষের প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে সংস্কৃতি মহলে। ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট জীবনাবসান হয় তাঁর স্ত্রী বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী গৌরী ঘোষের। তাঁদের একমাত্র পুত্র অয়ন ঘোষ। পার্থ ঘোষের জীবনাবসানে শোক জ্ঞাপন করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
১৯৪০ সালের ৩১ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম। আকাশবাণী কলকাতার উপস্থাপক হিসাবে পেশাজীবনের সূত্রপাত। ছাত্র সংগঠন বিপিএসএফ’র সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি ছাত্রজীবনে। পরবর্তীতে বামপন্থার প্রতি অটুট থেকেছে তাঁর বিশ্বাস। ১৯৬৪ সালে কলকাতা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। শিশু ও কিশোরদের জন্য আকাশবাণী কলকাতার ‘গল্পদাদুর আসর’ পার্থ ঘোষের পরিচালনায় অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। গল্প দাদুর আসর পরিচালনা করে দীর্ঘ সময় তিনি ছিলেন শিশু কিশোরদের ‘গল্প দাদু’। আবৃত্তি শিল্পী হিসাবে তিনি সমাদৃত হয়েছেন দেশে বিদেশে সর্বত্র। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থা থেকেই তাঁর দুর্বার গতি আবৃত্তির জগতে। শখ ছিল পুতুল সংগ্রহের। দেশ বিদেশের নানা পুতুল ছিল তাঁর সংগ্রহে।
বেতার উপস্থাপনার পাশাপাশি আবৃত্তিকার হিসেবেও তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। সত্যজিৎ রায়ের জীবনাবসানের পর নন্দন থেকে শোক জ্ঞাপনের ধারাবিবরণী দিয়েছিলেন তিনি। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের বেতারে তিনি অননুকরণীয় ভঙ্গিতে শোকাবহ পরিবেশের উপযোগী শব্দ চয়নের মধ্যদিয়ে প্রয়াত পরিচালকের প্রতি সাধারণ মানুষের আবেগের মুহূর্তগুলির ধারাবিবরণী পৌঁছে দিয়েছিলেন রেডিয়ো শ্রোতাদের কাছে।
১৯৬৯-এ বিবাহ করেন গৌরী ঘোষকে। তারপর দীর্ঘ পথ চলা যুগলের। দীর্ঘদিন তাঁরা আকাশবাণী কলকাতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ‘কর্ণ-কুন্তী সংবাদ’-এর সুবাদে তাঁরা প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের ‘শেষ বসন্ত’ ‘দেবতার গ্রাস’, ‘বিদায়’ প্রভৃতি অসংখ্য আবৃত্তি ও উপস্থাপনা পার্থ ঘোষের কণ্ঠে বিশেষ সমাদৃত হয়েছিল। এছাড়া স্ত্রী গৌরীর সঙ্গে বেশ কিছু শ্রুতিনাটক যেমন ‘প্রেম’, ‘জীবন বৃত্ত’, ‘স্বর্গ থেকে নীল পাখি’ শ্রোতাদের হৃদয়ে আজও অম্লান হয়ে রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের রাজ্য সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায় এক শোক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পার্থ ঘোষের প্রয়াণে আবৃত্তি জগতে একটা যুগের অবসান হলো। ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের রাজ্য সম্পাদক দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় শোক প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি ছিলেন প্রগতিশীল মানসিকতার মানুষ। গণনাট্য সঙ্ঘের অনেক শিল্পীর সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র ছিল। বাচিক শিল্পী সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক চন্দন মজুমদার ও শেখর দে বলেন, এক সঙ্কটের মুহূর্তে আমরা অভিভাবক হারা হলাম।
হাসপাতাল থেকে তাঁর মরদেহ দমদমের এস পি মুখার্জি রোডের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রবীন্দ্রসদনে নিয়ে আসা হয়। রবীন্দ্রসদনে শেষ শ্রদ্ধা জানান সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব, মৃদুল দে, অভিনেতা দেবদূত ঘোষ, প্রণতি ঠাকুর, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, অলোক মুখোপাধ্যায়, তরুণ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। কেওড়াতলা শ্মশানে সন্ধ্যায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।