৫৯ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা / ১৩ মে, ২০২২ / ২৯ বৈশাখ, ১৪২৯
বিশিষ্ট সন্তুর শিল্পী শিবকুমার শর্মা প্রয়াত
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিশিষ্ট সন্তুর বাদক পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার জীবনাবসান হয়েছে। ১০ মে সকালে মুম্বাইতে পালি হিলের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর জীবনাবসান হয়। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তাঁর স্ত্রী ও দুই পুত্র রয়েছেন।
শিবকুমার শর্মার জন্ম হয় ১৯৩৮ সালের ১৩ জানুয়ারি জম্মুতে। কাশ্মীরের লোকজ বাদ্যযন্ত্র সন্তুরকে শিবকুমার শর্মাই শাস্ত্রীয় বাদ্যযন্ত্রে উন্নীত করেন। বছর পাঁচেক বয়স থেকেই বাবার কাছে সঙ্গীতে তালিম নেওয়া শুরু করেন শিবকুমার। প্রথমে শেখেন তবলা। শিবকুমারের বাবা উমা দত্তশর্মা চেয়েছিলেন, শিল্পী হিসেবে ছেলের স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি হোক। সুফি সঙ্গীতে ব্যবহৃত যন্ত্র ‘সন্তুর’ যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্রের মর্যাদা লাভ করতে পারে, তা কল্পনা করেছিলেন উমা দত্তশর্মা। সেই ভাবনা থেকে ছেলেকে সন্তুর শেখানোর কথা মাথায় আসে তাঁর। এরপর আঞ্চলিকতার গণ্ডি পেরিয়ে সন্তুর শিবকুমারের একার হাত ধরেই আন্তর্জাতিক মর্যাদা পায়। সানাইয়ের ক্ষেত্রে অনুরূপ কাজ করেছিলেন ‘ভারতরত্ন’ বিসমিল্লা খান।
সন্তুরের মতো লোকজ বাদ্যযন্ত্রকে শিবকুমার শর্মা একেবারে সেতার সরোদের মতো শাস্ত্রীয় যন্ত্রের পাশাপাশি বাজানোর জায়গায় পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। নিজের সঙ্গীত ভাবনাকে প্রকাশ করার মাধ্যম হিসাবে তিনি সন্তুর যন্ত্রটিকে ব্যবহার করেছেন। সেটাই শিবকুমার শর্মার সব থেকে বড়ো অবদান। বলা হয়, কাশ্মীরিয়াৎ বা কাশ্মীরের মানুষের আদব-কায়দা ফুটে উঠত শিবকুমার শর্মার সঙ্গীতের মাধ্যমে। বাজনা শুনলেই মনে হতো যেন জলের মধ্যে দিয়ে আওয়াজ বেরিয়ে আসছে। হিমালয়ের কোলে জন্ম বলেই হয়তো তাঁর সুরে লেগে থাকত পাহাড়িয়া রাগের রেশ। স্বরবিন্যাস ছিল শান্ত অথচ রোম্যান্টিক। উপত্যকায় বেড়ে ওঠা বলেই হয়তো তিনি বাজনায় এক লহমায় তুলে আনতে পারতেন পাহাড়-নদী-মেঘগর্জন-ঝর্নার শব্দ।
শিবকুমার শর্মা সঙ্গীত পরিচালনা করেন বেশ কিছু সিনেমাতেও - তাঁর সঙ্গী ছিলেন প্রখ্যাত বাঁশি শিল্পী হরি প্রসাদ চৌরাসিয়া। শিব-হরি জুটির সন্তুর আর বাঁশির এই যুগলবন্দি যেমন ছিল সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়, তেমনই এই দুই শিল্পী ছিলেন অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। আবার দুজনেই পণ্ডিত রবিশঙ্করের খুব প্রিয় ছিলেন। আবার দিকপাল তবলা শিল্পী জাকির হুসেইনের সঙ্গেও শিবকুমার শর্মার যুগলবন্দি সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে ছিল খুবই লোভনীয় উপস্থাপনা।
সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমিসহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কার পেয়েছেন শিবকুমার। ২০০১ সালে পান পদ্মবিভূষণ। এ ছাড়াও আমেরিকার সম্মাননীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় তাঁকে।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, আমজাদ আলি খান, জাকির হোসোন, শাবনা আজমি সহ বিশিষ্ট জনেরা। সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর জীবনাবসানে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমরা পণ্ডিত শিবকুমার শর্মাকে আর পাব না কিন্তু তাঁর সঙ্গীত চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।