E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা / ১৩ মে, ২০২২ / ২৯ বৈশাখ, ১৪২৯

এলআইসি’র রাষ্ট্রায়ত্ত চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখাই ট্রেড ইউনিয়ন ও বিমা কর্মচারী আন্দোলনের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ

শংকর মুখার্জি


এলআইসি’র ইনিশিয়াল পাবলিক অফার (আইপিও)-এ বিপুল সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে। সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই আবেদনের পরিমাণ নির্ধারিত সংখ্যার তিনগুণ বেশি। সরকার এলআইসি’র ৩.৫ শতাংশ শেয়ারের বিলগ্নিকরণ করতে চেয়েছে। সেই শেয়ারের সংখ্যা ১৬.২ কোটি। শেয়ার কেনার জন্য জমা পড়া আবেদনের সংখ্যাটা হলো ৪৮ কোটি। এলআইসি’র বিলগ্নিকরণ থেকে সরকারের ২১ হাজার কোটি টাকা তোলার লক্ষ্য ছিল। সরকার তাতে সফল। এটা এখনও পর্যন্ত দেশে সর্ববৃহৎ আইপিও। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিলগ্নিকরণ থেকে আয়ে সরকারের লক্ষমাত্রা হলো ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এই লক্ষ্যপূরণে এলআইসি’র বিলগ্নিকরণ এক সফল পদক্ষেপ। এলআইসি’র আইপিও’তে বিপুল সাড়ায় তাই স্বাভাবিকভাবেই মোদি সরকার খুব খুশি।যখন কিনা গত কয়েক বছর বিলগ্নিকরণ থেকে আয়ের নিজেদের ঠিক করা লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি তারা। সরকারের বিলগ্নিকরণ শাখা ‘দিপম’র সচিব তুহিন কান্ত পান্ডে আরও একধাপ এগিয়ে এই আইপিও-এ ব্যাপক সাড়াকে দেশের জনগণের কাছে এক ‘আত্মনির্ভর’ বিষয় বলে বর্ণনা করেছেন। কেননা এলআইসি পলিসিহোল্ডার, কর্মচারী, দেশের খুচরো শেয়ার ক্রেতারা এবং দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বিরাট সংখ্যায় আইপিও-তে অংশ নিয়েছে।

শুধু এলআইসি কিংবা ব্যাঙ্ক নয়, দেশের অর্থনীতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলির শক্তিশালী অস্তিত্ব বজায় রাখতে বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন, কর্মচারী সংগঠন এবং বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলির অবদান বিশাল। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তারাই পথিকৃৎ। ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে নরসিমা রাওয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের সময় ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে উদারনীতির পথে চলতে শুরু করে। তখন থেকেই উদারনীতির বিরোধিতার সাথেই, এই নীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য যে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদের বেসরকারিকরণ সে কথাও দেশবাসীর সামনে বামপন্থীরাই প্রথম তুলে ধরে। তারজন্য তাদের প্রচুর বিরোধিতা ও সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। দেশের মূলস্রোতের গণমাধ্যমের বড়ো অংশ বামপন্থীদের এই নীতিগত অবস্থানের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিল। উদারনীতির প্রবর্তনের তিন দশক পরেও বামপন্থীরা যেমন তাদের নীতিতে অটল রয়েছে, একইভাবে দেশের গণমাধ্যমেরও সেদিনের নেওয়া অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা এখন বেসরকারিকরণের নীতির আরও উগ্র সমর্থক হয়েছে। তা সত্ত্বেও সংসদের ভিতরে-বাইরে বামপন্থীরা দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে এবং দেশবাসীর মধ্যে বেসরকারিকরণের নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে অনেকটাই সক্ষম হয়। বামপন্থী সংগঠন সারা ভারত বিমা কর্মচারী সমিতি গত ২৭ বছর ধরে এলআইসি’র বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংগঠন হলো বিমা ক্ষেত্রে সর্ববৃহৎ। এই লড়াই-সংগ্রামে শুধু এলআইসি'র কর্মচারীরাই শামিল হননি, বিস্তৃত জনসমর্থনও মিলেছে। যেদিন আইপিও খুললো সেদিনও এই সংগঠনের ডাকে বিমা কর্মচারীরা দেশজুড়ে ধর্মধট-বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

●  ●  ●

গত তিন দশকের অভিজ্ঞতা বলছে বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়া দেশি-বিদেশি করপোরেটদের কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদের বেপরোয়া লুটের একটা হাতিয়ার ছাড়া আর অন্য কিছু নয়। মূলত, শাসক-রাজনীতিক, আমলাদের সঙ্গে আঁতাত করেই এই লুট চালাচ্ছে করপোরেটরা। এলআইসি’র মতো ব্লু-চিফ সংস্থার ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা যে আরও বেশি থাকবে তা আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। বাজারে শেয়ার ছাড়ার আগেই দীর্ঘমেয়াদি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির কাছে শেয়ার বেচেছে এলআইসি। এই সংস্থাগুলি মূলত নরওয়ে এবং সিঙ্গাপুরের। তাদের জন্য শেয়ারের দাম ধার্য করা হয়েছিল মাত্র ৯৪৯ টাকা। কোনো বিমা সংস্থা মূল্যায়নের যে পদ্ধতি সারা বিশ্বে অনুসরণ করা হয় তা হলো ‘এমবেডেড ভ্যালু' নির্ণয় পদ্ধতি। শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হওয়ার সময়ে বিমা সংস্থার মোট মূল্য ঠিক করা হয় ওই এমবেডেড ভ্যালুর একটা গুণিতকের ওপর। সাধারণত দেখা যায় এমবেডেড মূল্যের আড়াই থেকে চারগুণ হয় বিমা সংস্থার মোট মূল্য। এলআইসি’র এমবেডেড ভ্যালু হয় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা। আর শেয়ার বাজারে ভ্যালু ঠিক করা হয়েছে ৬ লক্ষ কোটি টাকা। চলতি নিয়ম অনুসারে যা হওয়া উচিত ছিল নিদেনপক্ষে ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর সর্বাধিক ২১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। ৬ লক্ষ কোটি টাকা দাম ঠিক হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এলআইসি’র প্রতি শেয়ারের দাম কমে গেছে। অর্থনীতিবিদ সি পি চন্দ্রশেখর, প্রভাত পট্টনায়ক, আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ,অবসরপ্রাপ্ত আমলা ই এ এস শর্মা, কেরলের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাকদের দ্বারা গঠিত ‘ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিষয়ক জনগণের কমিশন’ এলআইসি’র শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়াটা খতিয়ে দেখেছে। কমিশনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এলআইসি’র শেয়ারের দাম হওয়া উচিত ছিল ন্যূনতম পক্ষে ২,১৩২ টাকা। এই দামে এলআইসি’র ৩.৫ শতাংশ শেয়ার বেচে সরকারের আয় হতো ৪৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সরকারের আয় হচ্ছে ২১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ক্ষতির পরিমাণ ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এলআইসি’র মূল্য এমবেডেড ভ্যালুর চার গুণ হলে হতো ২১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা।তখন প্রতি শেয়ারের মূল্য দাঁড়াতো ৩,৪১২ টাকা। সরকারের আয় হতো ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো। অর্থাৎ ক্ষতির পরিমাণ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। ভারত সরকার আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির চাপের কাছে নতিস্বীকার করেই এই ক্ষতিকে মেনে নিয়েছে। তবে এই হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি নিয়ে মোদি সরকার একেবারেই স্পিকটি নট।

●  ●  ●

বিভিন্ন মহল থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে যে, এই ক্ষতির বিষয়টা ধারণাগত। যার অর্থ এটা হতেও পারে আবার নাও পারে। কিন্তু এলআইসি’র সম্পদের দিকে চোখ বোলালে বোঝা যাবে, এলআইসি’র এই ‘ভ্যালু’ মোটেই অতিরঞ্জিত নয়। তার যথেষ্ট বাস্তব ভিত্তি রয়েছে। বর্তমানে এলআইসি’র পরিচালনায় যে সম্পদ রয়েছে তার বাজারমূল্য ৩৮ লক্ষ কোটি টাকা। এর থেকে প্রতিবছর ৪-৫ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগযোগ্য তহবিল তৈরি হয়। দেশে বিমা ক্ষেত্র দেশি-বিদেশি সংস্থার কাছে উন্মুক্ত করা হয়েছে ২০ বছর হলো। বর্তমানে দেশে ২৩টি বেসরকারি বিমা কোম্পানি কাজ করছে। এই বিরাট প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও দেশের বিমা বাজারে প্রিমিয়াম সংগ্রহের ৬৬ শতাংশ এবং পলিসি সংখ্যার ৭৫ শতাংশ এলআইসি’র দখলে। ২০২১-২২ আর্থিক বছরে নতুন ও পুরাতন বিমা পলিসি থেকে এলআইসি আয় করেছে ৪ লক্ষ ২ হাজার কোটি টাকা এবং বিনিয়োগ থেকে আয় হয়েছে ২লক্ষ ৭২ হাজার কোটি টাকা। আরও অন্যান্য খাত সহ এলআইসি’র শেষ বছরে মোট আয় হয়েছে ৬ লক্ষ ৮২ হাজার কোটি টাকা। ওই বছরে বিমা মীমাংসা বাবদ এলআইসি ব্যয় করেছে ২ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা। যেকোনো বিমা কোম্পানির ভাবমূর্তি তৈরিতে বিমা মীমাংসায় তার ট্রাক রেকর্ড একটা বিশেষ মানদণ্ড। এক্ষেত্রে সারা বিশ্বে এলআইসি’র স্থান একেবারে ওপরদিকে। শেয়ার বাজারেও এলআইসি’র বিরাট অর্থ বিনিয়োগ আছে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আইটিসি,লারসেন টুবরো, টিসিএস, এসবিআই, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই'র মতো ব্লু-চিফ কোম্পানির বিপুল সংখ্যক শেয়ার আছে এলআইসি’র হাতে। যার আর্থিক মূল্য২০২২ সালের মার্চ মাসের হিসাব অনুযায়ী ৯ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রিলায়েন্সের ১ লক্ষ ৮ হাজার কোটি টাকার, টিসিএসে'র ৫০ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকার এবং আইটিসি’র ৪৮ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে। এলআইসি’র এই আর্থিক তথ্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণেই বোঝা যাচ্ছে ‘রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিষয়ক জনগণের কমিশনে’র হিসাব কতোটা সঠিক।

●  ●  ●

বিরাট আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এলআইসি’র গড়ে ওঠায় ভারত সরকারের বিনিয়োগ একেবারেই যৎসামান্য। ১৯৫৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সংসদে আইনের মাধ্যমে এলআইসি তৈরি হয়। তখন ভারত সরকার তাতে বিনিয়োগ করেছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা। তার পর ছদশকেরও বেশি সময়ে এলআইসি ভারতীয় জনগণের কাছে বিমা বেচে এই সম্পদ তৈরি করেছে। পরে মালহোত্রা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এলআইসি’র মূলধন ১০০ কোটি টাকা করা হয়। এই অতিরিক্ত মূলধনের টাকাও এলআইসি তার অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে সংগ্রহ করেছে। এই কমিটিই সুপারিশ করেছিল, এলআইসি’র ৫০ শতাংশ বিলগ্নিকরণের। বাজপেয়ী সরকারের সময় থেকে এলআইসি’র বিলগ্নিকরণের চেষ্টা শুরু হয়। এই সরকারই প্রথম দেশের বিমা ক্ষেত্রকে বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে উন্মুক্ত করে দেয়। পরের কেন্দ্রীয় সরকারগুলিও এলআইসি’র বিলগ্নিকরণের চেষ্টা থেকে বিরত থাকেনি। বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন এবং বিমা কর্মচারী সংগঠনের লাগাতার আন্দোলনে কোনো কেন্দ্রীয় সরকারই একাজে সফল হয়নি।

দেশের জনগণের কাছে বিমাপত্র( পলিসি) বেচে যে সম্পদ এলআইসি তৈরি করেছে তার সিংহভাগই বিনিয়োগ হয়েছে দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে। গত ৬৪ বছরে এলআইসি মোট বিনিয়োগের করেছে ৩৬ লক্ষ কোটি টাকা, যার ৮২ শতাংশই বিনিয়োগ হয়েছে সরকারি ক্ষেত্রে।এলআইসি’র প্রতিবছর যে উদ্বৃত্ত হয় তার ৫ শতাংশ সরকারকে এবং ৯৫ শতাংশ পলিসিহোল্ডারদের বোনাস হিসেবে দেওয়ার নিয়ম ছিল। বর্তমানে এটা পরিবর্তন করে যথাক্রমে ১০ শতাংশ এবং ৯০ শতাংশ করা হয়েছে।অর্থাৎ পলিসিহোল্ডাররা এখন বোনাস বাবদ কম অর্থ পাবে। এপর্যন্ত সরকারকে এলআইসি ডিভিডেন্ড বাবদ দিয়েছে মোট ২৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।

এলআইসি’র বিলগ্নিকরণে দেশের অর্থনীতি কিংবা দেশের জনগণের যে কোনো স্বার্থ জড়িয়ে নেই তা ওপরের বিবরণ থেকেই বোঝা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে আর্থিক ঘাটতিকে মেটাতে বিলগ্নিকরণ থেকে আয় বাড়ানো। এই আর্থিক ঘাটতি তৈরি হচ্ছে কোনো জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য নয়ঃ কিন্তু, তা হচ্ছে, করপোরেট সংস্থা এবং ধনীদের আয়কর ও কোম্পানি করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ছাড় দেবার ফলে।

●  ●  ●

এলআইসি’র এই বিরাট সম্পদ তৈরিতে পলিসি হোল্ডারদের বিনিয়োগকৃত অর্থেরই মূল ভূমিকা রয়েছে। তাই এই সংস্থা বাঁচাতে তাদের বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা বিশেষ জরুরি। দেশের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ও বিমা কর্মচারী আন্দোলনের কাছে এ এক গুরুদায়িত্ব। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই বিলগ্নিকরণের পর এলআইসি’র উদ্বৃত্তে পলিসিহোল্ডারদের অংশ হ্রাস পাবে। বিনিয়োগকৃত অর্থের নিরাপত্তা, বিমার মেয়াদ শেষে বোনাস বাবদ পাওয়া অর্থ হ্রাস সহ সামগ্রিকভাবে এই বিলগ্নিকরণ পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থের বিপরীতেই কাজ করবে। তাই পলিসিহোল্ডারদের সচেতন করা, তাদের ঐক্যবদ্ধ করা এসময়ে খুবই জরুরি।

অন্যদিকে, বিমা পলিসি বেচে অর্থ সংগ্রহের মূল কাজটা করে এলআইসি’র এজেন্টরা। এদের সংখ্যা ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় ১৪ লক্ষ। এদের মধ্যেও বামপন্থীদের সংগঠন আছে। এরাও এলআইসি’র বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে রাস্তায় রয়েছেন। এদের আরও ঐক্যবদ্ধ করে এই আন্দোলনে শামিল করা দরকার। এলআইসি বাঁচানোর জন্য যেমন এটা জরুরি তেমনই একান্তভাবেই জরুরি এজেন্টদের কাজ বাঁচানোর স্বার্থেও। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, বর্তমানে কাজের আকালের বাজারে সুস্থ ও সম্মানজনকভাবে বাঁচার একটা পথ কিন্তু এলআইসি’র এজেন্টের কাজ। দেশের সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ও বিমা কর্মচারী আন্দোলন অবশ্য এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং যথেষ্ট দায়িত্বশীল।

বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে দুর্বল করতে পলিসিহোল্ডার ও এজেন্টদের নানা প্রলোভন দেখানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। যেমন পলিসিহোল্ডারদের কমদামে শেয়ার কেনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই শেয়ারের সংখ্যা মোট বিলগ্নিকৃত শেয়ারের ১০ শতাংশের বেশি। এলআইসি রাষ্ট্রায়ত্ত থাকলেই পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ ১০০ শতাংশ সুরক্ষিত থাকবে। বিলগ্নিকরণ, বেসরকারিকরণ হলে সবচেয়ে বেশি স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে পলিসি হোল্ডারদের। সেটা ওই সামান্য সংখ্যক শেয়ারের মালিক হয়ে কথনই পূরণ করা সম্ভব নয়। এটা পলিসিহোল্ডারদের মনে রাখা দরকার। তাহলেই বিলগ্নিকরণ-বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শক্তিশালী হবে, গতি পাবে।

এলআইসি’র আইপিও সংস্থার বেসরকারিকরণের দিকে অগ্রসরের শাসকশ্রণির প্রথম পদক্ষেপ। তাই সব দিককে বিচার বিবেচনায় এনে সমস্ত দুর্বলতাগুলিকে কাটিয়ে তুলতেই হবে। যেকোনো মূল্যে এলআইসি’র রাষ্ট্রায়ত্ত চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখাই আজ দেশের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন এবং বিমা কর্মচারী আন্দোলনের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ। এলআইসি’র রাষ্ট্রায়ত্ত চরিত্র বজায় রাখতে বিমা কর্মচারীরা এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। এই সংকট মুহূর্তেও তারা সেই ভূমিকায় অবিচল থাকবেন তাতে সন্দেহ নেই।