৫৯ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা / ১৩ মে, ২০২২ / ২৯ বৈশাখ, ১৪২৯
“বাধা দিলে বাধবে লড়াই...”
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
মনে পড়ে যাচ্ছে ‘শিব্রাম’-এর ‘আমার সম্পাদক শিকার’-এর কথা। প্রথম গল্প লেখার সূত্রপাতেই যাঁর ধারণা হয়ে গেছিল তিনি দোলগোবিন্দবাবুর মতো লিখতে পেরেছেন। যিনি দোলগোবিন্দবাবুকে রবীন্দ্রনাথের সমকক্ষ মনে করতেন। কারণ একই কাগজে দু’জনের নাম একই টাইপে ছাপা হয়েছিল। এমনকী অনেক সময়ে তিনি দোলগোবিন্দকে রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড়ো লেখক বলেও বিবেচনা করতেন। ‘তার লেখা কেমন জলের মতো বোঝা যায়, অথচ বোঝার মতন মাথায় চাপে না! কেন যে তিনি নোবেল প্রাইজের জন্য চেষ্টা করেন না!’ যদিও পরে তাঁর উপলব্ধি, হয়তো ‘রাঁচীতে তার পরামর্শ দেবার কেউ ছিল না বলেই’। যাঁর লেখা দেখে অন্য এক সম্পাদক বলেছিলেন, ‘খাসা কবিতা লেখেন আপনি; বরবটির সঙ্গে চটপটির মিলটা মন্দ না।’ কৃষি সম্পর্কীয় এক কাগজের সম্পাদকীয়তে যিনি লিখেছিলেন, ‘মূলো জিনিসটা পাড়বার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কখনই টেনে ছেঁড়া উচিত নয়, ওতে মূলোর ক্ষতি হয়। তার চেয়ে বরং একটা ছেলেকে গাছের ওপরে পাঠিয়ে দিয়ে ডালপালা নাড়তে দিলে ভাল হয়। খুব কসে নাড়া দরকার। ঝাঁকি পেলেই টপাটপ মূলোবৃষ্টি হবে, তখন কুড়িয়ে নিয়ো ঝাঁকা ভরো।’ সরষে বীজ ছড়িয়ে ধানের ফলনের চেষ্টার অথবা এই সম্পাদকীয় - দু’য়ের বড়ো মিল।
আপাতত আকাদেমি নিয়ে হট্টগোল। এই ডামাডোলের বাজারে মুখরোচক কিছু একটা মার্কেটে ছড়িয়ে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতে পারলেই হলো। না হলেই মানুষ তো আবার ‘ঘেউ ঘেউ’ শুরু করবে। সে বড়ো চাপ। অতএব আকাদেমিই সই। শুভাপ্রসন্ন গোছের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের মনে হতেই পারে ‘রবীন্দ্রনাথ এঁদের মতো ঈর্ষাকাতর ছিলেন না’। ‘রবীন্দ্রনাথ থাকলে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এসে মমতাকে সংবর্ধনা দিতেন’। যেহেতু রবীন্দ্রনাথকে চোখে দেখিনি, তাই সরকারে এসেই ট্রাফিক সিগন্যালে টাঙিয়ে দেওয়া রবীন্দ্রনাথ এই বিষয়ে কী ভাবতেন, বা কী করতেন সে সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণা নেই। তবে মনে হয়, এই পরিস্থিতিতে পড়লে তিনি খুব অস্থিরচিত্তে পায়চারি করতেন আর হয়তো বা বলতেন, ‘আদর ক’রে মেয়ের নাম/ রেখেছে ক্যালিফর্নিয়া,/ ...ভাটের দল চেঁচিয়ে মরে/ নামের গুণ বর্ণিয়া’।
ভাটের চর্বিত চর্বণ থাক। নজর ঘোরানোর আকাদেমি প্রাপ্তি নিয়ে চর্চা করে বিশেষ লাভ নেই। দু’দিন পরে অন্য ইস্যু চলে আসবে। বিগত দশ বারো বছরে কেন্দ্রে বা রাজ্যে এরকমের নজর ঘোরানো হাজারো ইস্যুর কথা এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলা যায়। তার চেয়ে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ডিএ না পাওয়া অথবা এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা অনেক বেশি ভয়ংকর। অনেক বেশি ভয়ংকর ক্রমশ রাজ্যের ঘাড়ে চেপে বসা পুঞ্জীভূত ঋণের বোঝা। ‘রাজ্য দেনার দায়ে ডুবতে বসেছে’ বলে প্রচার করে ক্ষমতায় আসা বর্তমান শাসকদলের আমলে পুঞ্জীভূত ঋণ কতগুণ বেড়েছে তা নিয়ে আলোচনা অনেক বেশি জরুরি। অনেক বেশি জরুরি কয়লা পাচার, বালি পাচার, নিয়োগ দুর্নীতি থেকে তোলাবাজি - বিভিন্ন ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের একাধিক নেতা নেত্রীর নাম জড়িয়ে পড়া এবং বারবার বিভিন্ন অজুহাতে সিবিআই এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা। এই যেমন গতকাল রাতেই আবারও হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন গোরু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত সিবিআই-এর তলব পাওয়া এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। লক্ষণীয়, এবার আর সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএম নয়। অনেক বেশি জরুরি দেশের বর্তমান বেকারি, চরম অর্থনৈতিক সংকট, বেসরকারিকরণ নিয়ে আলোচনা এবং যা থেকে নজর ঘোরাতে কর্ণাটক থেকে দিল্লি হয়ে রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ - সর্বত্র সাম্প্রদায়িকতায় সুড়সুড়ি দেওয়া, তা নিয়ে।
আপাতত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বোধহয় রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ। যে পর্যবেক্ষণে জোর ধাক্কা খেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাষ্ট্রদ্রোহ আইন প্রসঙ্গে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ এ ধারায় সরকার বিরোধিতায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনার উল্লেখ রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনকালে তৈরি এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের দমনপীড়ন। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এই আইনের অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। একাধিক আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলা দায়ের করে তাঁদের দিনের পর দিন জেলে রাখা হয়েছে। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রমাণ দেখাতে পারছে না সরকার। এই অবস্থায় এই আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা দায়ের করা হয় সুপ্রিম কোর্টে।
গত ১০ মে প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা-র নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রের তরফ থেকে আদালতে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতাকে বলে, ‘‘সরকারের কাছ থেকে এই বিষয়ে মত নেওয়ার জন্য আমরা আপনাকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত সময় দেব। বর্তমানে ঝুলে থাকা মামলা এবং ভবিষ্যতের মামলাগুলো নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আইন পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত সরকার কীভাবে এইসব মামলার দেখাশোনা করবে তা ভাবাচ্ছে আমাদের। আইনটি পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত এই আইনের অধীনে চলা বর্তমান মামলাগুলো স্থগিত রাখা যায় কিনা সেই বিষয়েও সরকারকে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।’’ এর আগে শীর্ষ আদালতের কাছে এই আইনের অপব্যবহার সম্পর্কে পর্যালোচনা করার জন্য বেশি সময় চেয়েছিল কেন্দ্র। এর জবাবে প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রকে তিরস্কার করে বলেন, ‘‘রাজ্যগুলি বলছে তারা আইনটি পুনর্বিবেচনা করছে। আমরা অযৌক্তিক হতে পারি না। বিবেচনার জন্য কতটা সময় দেওয়া যেতে পারে আমাদের তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কেউ কি মাসের পর মাস জেলে থাকতে পারে? আপনাদের হলফনামায় বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নাগরিক স্বাধীনতা, মানবাধিকার নিয়ে সচেতন। সেই স্বাধীনতা এইভাবে রক্ষা করছেন আপনারা?’’
আর ১১ মে এই মামলায় প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা জানিয়েছেন, ‘‘ভারত সরকার আইনটি পুনর্বিবেচনা করবে। আবেদনকারীরা বলছেন আইনের অপব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যাটর্নি জেনারেলও একই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন হনুমান চালিশা মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাই আমাদের মনে হচ্ছে পুনর্বিবেচনা না হওয়া পর্যন্ত এই আইনের ব্যবহার না করাই সঠিক হবে। আমরা আশা করছি আইনের পুনর্বিবেচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র এবং রাজ্য ১২৪ এ ধারার অধীনে কোনো এফআইআর নথিভুক্ত করবে না।’’ শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর আটক হওয়া সাংবাদিক সিদ্দিকি কাপ্পানের স্ত্রী রাইহানাথ। ৭ অক্টোবর, ২০২০-তে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের দায়ের করা এফআইআর অনুসারে, সাংবাদিক কাপ্পানের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪এ (রাষ্ট্রদ্রোহ), ১৫৩এ (শত্রুতা প্রচার) এবং ২৯৫এ (ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষমূলক কাজ যা ধর্মীয় অনুভূতি ক্ষুব্ধ করার উদ্দেশ্যে) ধারার অধীনে অভিযোগ আনা হয়েছে। উল্লেখ্য, গ্রেপ্তার হওয়ার দিন কাপ্পান হাথরস যাচ্ছিলেন এক দলিত কিশোরীকে নৃশংস গণধর্ষণ ও হত্যার খবর সংগ্রহ করতে।
এই ঘটনার পাশাপাশি ১১মে-তেই আরও এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। যে ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে দেশজুড়ে। এলআইসি-র আইপিও-র প্রতিবাদ জানিয়ে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বাতিল করার দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করেছে এনজিও পিপল ফার্স্ট। এলআইসি-র পলিসি হোল্ডারদের আনা এই রিট পিটিশনে দাবি করা হয়েছে, ভারত ইউনিয়ন এবং এলআইসি - জীবনবিমা কর্পোরেশন আইন, ১৯৫৬-এর সংশোধিত ধারা ৪, ৫, ২৪ এবং ২৮ এর ভিত্তিতে এলআইসি’র বর্তমান ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং (আইপিও) বা তার অগ্রগতির জন্য কোনও পদক্ষেপ যেন না নেওয়া হয়। এছাড়াও রিট পিটিশনে আবেদনকারীদের দাবি, লাইফ ইন্সিয়োরেন্স কর্পোরেশন অ্যাক্ট, ১৯৫৬ (লাইফ ইন্সিয়োরেন্স কর্পোরেশন (সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা সংশোধিত)-এর ধারা ৫-কে অকার্যকর ঘোষণা করতে আদেশ জারি করুক সুপ্রিম কোর্ট। যে রিট পিটিশন গ্রহণ করেছে শীর্ষ আদালত। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির নিপুণ পরিকল্পনা রুখতে এই পদক্ষেপ অবশ্যই উল্লেখযোগ্য।
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। আপাতত সামনে যে কটা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আছে তার মধ্যে আছে গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, কর্ণাটক, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম, রাজস্থান এবং তেলেঙ্গানা আছে। যার মধ্যে গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশে নির্বাচন হবে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। মধ্যপ্রদেশে ২০২৩-এর ৭ জানুয়ারির মধ্যে। রাজস্থানে ২০ জানুয়ারি, ২০২৩-এর মধ্যে। মেঘালয়, ত্রিপুরা, কর্ণাটকে ২০২৩-এর মার্চ এর মধ্যে। কর্ণাটকে ২৮ মে, ২০২৩-এর মধ্যে। তেলেঙ্গানা এবং ছত্তিশগড়ে ১০ ডিসেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে। আর ২০২৪-এ সিকিম, অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, ওডিশা, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনের পাশাপাশি আছে দেশের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। নির্বাচন তো হবে কমিশনের সময়সূচি মেনে। যদিও আসল ক্রোনোলজিটা এখানে নয়। নির্বাচনি কৌশলীয় ক্রোনোলজিটাও একটু বুঝে নিতে হবে এবং যে কৌশল শুরু হয়েছে নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই। যে প্রচারের মূল লক্ষ্য আর্থিক সামাজিক সমস্যার কথা দূরে সরিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে আরও তীব্র করে তোলা। আর সেই লক্ষেই রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়ে যাবে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগেই।
দিনদুয়েক আগে এক সাংবাদিক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন কভার করে আসা ওই বন্ধু জানাচ্ছিলেন অখিলেশের পক্ষে হাওয়া ছিল একথা সত্যি। বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে কার্যত সরিয়ে নিয়ে বিজেপি’র সুবিধা করে দেওয়ার ঘটনাতেও কোনো মিথ্যে নেই। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই নির্বাচনে বিরোধীপক্ষ যতই রুটি রুজির সমস্যার কথা, কৃষক আন্দোলনের কথা, লখিমপুর খেরির কথা, হাথরসের কথা তুলে আনতে চেয়েছেন সেই প্রচারের উলটোদিকে বিজেপি’র প্রচারের মূল এবং একমাত্র বিষয় ছিল রামলালা। বিজেপি শুধু প্রচার করেছে ‘আমরা রামমন্দির করে দিয়েছি, কথা রেখেছি’। খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তব, যে রোটি কাপড়া মকানের সমস্যায় ভোগা, লকডাউনে, নোটবাতিলে চরম বিপর্যস্ত মানুষ আস্থা রেখেছেন রামেই। রুটি রুজির লড়াইকে পেছনে ফেলে দিয়েছে রাম। তাই সেই লড়াইতে জয়ী হয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ।
একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে গত কয়েক মাস ধরেই বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ঘটনায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। প্রথমে শুরু হয়েছিল কর্ণাটক দিয়ে। হিন্দু মন্দিরে মুসলমান ব্যবসায়ীদের ব্যবসা না করতে দেওয়া সহ একাধিক ইস্যু তৈরি করা হয়েছে বারেবারে। যে বিতর্ক থামাতে রাজ্য সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বলা যেতে পারে রাজ্যের বিজেপি সরকারের ভূমিকাও প্রশ্নাতীত নয়। এরপর সেই সমস্যা চলে যায় দিল্লিতে। জাহাঙ্গিরপুরীর হালের ঘটনা সকলেরই জানা। এক ধর্মীয় মিছিলকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ। এরপর দিল্লি থেকে ঘটনা চলে যায় রাজস্থান। সেখানে মন্দির ভাঙা, মূর্তি ভাঙা ইত্যাদি ঘিরে সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ। কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ। সাম্প্রদায়িক হানাহানির ত্রিভুজ অথবা চতুর্ভুজ অথবা বৃত্ত তৈরি করার এই যে অপচেষ্টা তা যে আসন্ন বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। যে হানাহানির সামনে তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধি, বেকারি, বিলগ্নিকরণের মতো জ্বলন্ত ইস্যু। আর এই সব ঘটনাতেই সামনে থেকে দাঁড়িয়ে বারবার লাগাতার প্রতিরোধ গড়ে তুলছে একমাত্র বামপন্থীরাই।
এবার বোধহয় সাম আপ করার সময় এসে গেছে। লেখার এবং বর্তমান অবস্থারও। আবারও বোধহয় এই লগ্নে স্মরণ করা যেতে পারে তাঁকে, শরণ নেওয়া যেতে পারে রবীন্দ্রনাথের। যিনি লিখে গেছেন, “বাধা দিলে বাধবে লড়াই, মরতে হবে।/ পথ জুড়ে কী করবি বড়াই, সরতে হবে।/ লুঠ-করা ধন ক'রে জড়ো কে হতে চাস সবার বড়ো -/ এক নিমেষে পথের ধুলায় পড়তে হবে। নাড়া দিতে গিয়ে তোমায় নড়তে হবে।”