E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১৩শ সংখ্যা / ১৩ নভেম্বর ২০২০ / ২৭ কার্ত্তিক ১৪২৭

এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও জনসমর্থন বেড়েছে মহাজোটের


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিহার বিধানসভা নির্বাচনে তুমুল লড়াই শেষে সামান্য ব্যবধানে জয়ী হয়েছে এনডিএ। অন্যদিকে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিপুল জনসমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও বিরোধী মহাজোট প্রয়োজনীয় আসন ছুঁতে পারেনি। ১০ নভেম্বর দিনভর ওঠানামা করেছে ভোট গণনার ফলাফল। ভোট গণনা নিয়ে বেনিয়মের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অবশেষে মোট ২৪৩ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেয়ে যায়। এই জোটে বিজেপি পেয়েছে ৭৪, জনতাদল (ইউ) ৪৩, হিন্দুস্থানি আওয়ামি মোর্চা ৪, বিকাশশীল ইনসান পার্টি ৪টি আসন - সব মিলিয়ে জোটের পক্ষে গেছে মোট ১২৫টি আসন।

অপরদিকে বিরোধী মহাজোটের মধ্যে রাষ্ট্রীয় জনতাদল ৭৫, কংগ্রেস ১৯, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ১২, সিপিআই (এম) ২ এবং সিপিআই’র ২টি আসন সহ মোট সংগৃহীত আসনের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১০।

এছাড়া দুই জোটের বাইরে এআইএমআইএম ৫, লোকজনশক্তি পার্টি ১, বহুজন সমাজপার্টি ১টি আসন পেয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই নির্বাচনে এনডিএ জোট জিতলেও যে বড়োরকমের ধাক্কা খেয়ে‍‌ছে, তা প্রতিফলিত হয়েছে ভোটের ফলাফলে। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪০টি আসনের মধ্যে ৩৯টিই দখল করেছিল এনডিএ। ভোটের হার ছিল ৫৩ শতাংশ। এবারের নির্বাচনে সেই হার নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশে। প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট কমেছে এনডিএ-র।

এবারের ফলাফলে আরও যে গুরুত্বপূর্ণ দিক স্পষ্ট হয়েছে, তা হলো মোট প্রদত্ত ভোটের নিরিখে এনডিএ মাত্র ১২,৭৬৮ ভোটের ব্যবধানে সরকার গড়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। যা শতাংশের হিসাবে দাঁড়ায় মাত্র ০.০৩ শতাংশ। এনডিএ পেয়েছে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ ১২২৬ ভোট। শতাংশের হিসাবে ৩৭.২৬। অপরদিকে মহাজোট পেয়েছে ১ কোটি ৫৬ লক্ষ ৮৮ হাজার ৪৬৮ ভোট। শতাংশের হিসাবে এনডিএ-র প্রায় কাছাকাছি ৩৭.২৩ শতাংশ।

আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো, নির্বাচনে যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, তার প্রমাণ রেখে ১১টি আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে ১ হাজারের কম ভোটে। ২১টি আসনে নামমাত্র ভোটে জিতেছেন এনডিএ প্রার্থীরা। একইভাবে আরজেডি ১০ আসনে, কংগ্রেস ৫ আসনে, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন এবং সিপিআই ১টি করে আসনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছে।

এবারের বিহারের নির্বাচনে নীতীশকুমার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা প্রকট হতে দেখা গেছে। এরই পাশাপাশি করোনা মোকাবিলা সহ সরকারের নানা ব্যর্থতা, রাজ্যে ক্রমবর্ধমান বেকারি, বন্যার প্রকোপে মানুষের দুরবস্থা, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি নিদারুণ অবহেলা-অবজ্ঞা ইত্যাদির কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তীব্র হয়েছে, ভোটপর্বে তারই প্রতিফলন লক্ষ করা গেছে। এই সমস্ত জ্বলন্ত ইস্যু নিয়েই আরজেডি-র তরুণ নেতা তেজস্বী যাদবের জনসভাগুলিতে আমজনতার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি সাড়া ফেলেছে। এই প্রচারের তীব্রতায় বিপাকে পড়া নীতীশকুমার সরকারকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রমুখ ভোট প্রচারে তীব্র সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের ইন্ধন জুগিয়েছেন। আবার বিজেপি জোটের বাইরে থাকলেও আসাদউদ্দিন ওয়াইসির নেতৃত্বাধীন এআইএমআইএম-র প্রচার ধর্মীয় মেরুকরণকেই ইন্ধন দিয়েছে। এই প্রচারে প্রভাবিত হয়ে মুসলিম ভোটের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ গেছে আসাদউদ্দিনের ঝুলিতে। এছাড়াও বিশেষভাবে লক্ষ করা গেছে, মোদী-নীতীশকুমারের মতো রাজনীতিতে প্রবীণ ও ‘অভিজ্ঞ’রাও প্রচারে তরুণ তেজস্বীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ শানিয়েছেন।

কিন্তু তেজস্বী যাদব মোদী-নীতিশকুমারের মতো অসহিষ্ণুতা না দেখিয়ে গরিব, সাধারণ মানুষের রুটি-রুজি, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পথঘাট, পরিকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি মৌলিক বিষয়গুলিই ভোট প্রচারে তুলে ধরে বিপুল জনসমর্থন আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন।

অন্যদিকে, বামপন্থীরা জনগণের স্বার্থে বিভিন্ন জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ দাবি নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যে ধারাবাহিক লড়াই-আন্দোলন জারি রেখেছেন এবং নির্বাচনের প্রচারে অর্থনৈতিক, সামাজিক ন্যায়বিচার, বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান প্রভৃতি মৌলিক বিষয়গুলির পাশাপাশি জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা তুলে ধরেছেন নির্বাচনের প্রচারে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনী ফলাফলে।