৫৮ বর্ষ ১৩শ সংখ্যা / ১৩ নভেম্বর ২০২০ / ২৭ কার্ত্তিক ১৪২৭
সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা ব্যর্থ
বিহারবাসীকে অভিনন্দন বামপন্থী দলগুলির
অজয়কুমার
সত্যেন্দ্র যাদব
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিহারের সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে নজরকাড়া ফল করেছে বামপন্থীদলগুলি। মোট ২৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বামপন্থী দলগুলি ১৬টিতে জয়ী হয়েছে। এর মধ্যে সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ১২, সিপিআই(এম) ২ এবং সিপিআই ২টি আসন পেয়েছে। এই নির্বাচনে মহাগটবন্ধন সহ বামপন্থী প্রার্থীদের বিপুল সমর্থনের জন্য বিহারবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছে তিনটি বামপন্থী দল। ১১ নভেম্বর সিপিআই(এম), সিপিআই এবং সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিহারবাসীর এই অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্যই শাসক বিজেপি-জনতাদল (ইউ) এবং সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হয়েছে মহাগটবন্ধন। যুব সম্প্রদায়ের পাশাপাশি জনগণের সমর্থন পাওয়া গিয়েছে মূলত গোটা প্রচারে মানুষের জীবন-জীবিকা এবং কর্মসংস্থানের কথা তুলে ধরার জন্যই।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত লোকসভা ভোটের তুলনায় ১২ শতাংশ কম ভোট পেয়েছে বিজেপি জোট। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের দল জনতাদল (ইউ) এবারের নির্বাচনে ৪৩টি আসন পেয়েছে। গত বিধানসভা ভোটে এই দল পেয়েছিল ৭১টি আসন। অন্যান্য বিষয়গুলির পাশাপাশি মহাজোট ছেড়ে নীতিশ কুমারের মাঝপথে বিজেপি-র হাত ধরাকে এবার প্রত্যাখ্যান করেছেন বিহারবাসী। এই ভোটে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী জোরকদমে সাম্প্রদায়িক প্রচার চালিয়েছিলেন। চেয়েছিলেন ভোটারদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটাতে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উলটোদিকে মহাগটবন্ধনের নেতৃবৃন্দ সক্রিয়ভাবে প্রচারে লকডাউনের জন্য মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং মহামারীর পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব প্রতিরোধে বিজেপি এবং তার জোট শরিকদের সার্বিক ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। এরইসঙ্গে বামপন্থী দলগুলি ভোট গণনার শেষপর্বে ব্যাপক বেনিয়মের অভিযোগ জানিয়েছে। তারা মনে করেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত নির্বাচন কমিশনের।
পরিশেষে বলা হয়েছে, বিধানসভায় উপস্থিতিকে শ্রমজীবী মানুষের জীবন-জীবিকার সমস্যাকে তুলে ধরার কাজে ব্যবহার করা হবে। একইসঙ্গে কর্মসংস্থান এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও তুলে ধরবেন বামপন্থী বিধায়করা। এই লক্ষ্য পূরণের সংগ্রাম নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যাবেন বামপন্থীরা।
বামপন্থীদের জয়ী ১৬টি আসনের মধ্যে বিভূতিপুর কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থী অজয়কুমার ৪০,৪৯৬ ভোটের ব্যবধানে জেডি (ইউ) প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। অজয়কুমার পেয়েছেন ৭৩,৮২২ ভোট। এছাড়া মানঝি কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থী সত্যেন্দ্র যাদব বিজেপি প্রার্থীকে ৪০,৪৯৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। এই কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থী পেয়েছেন ৫৯,৩২৪ ভোট।
এছাড়া পিপড়া ও মটিহানি কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থীরা বিপুল অংশের মানুষের সমর্থন পেলেও, জয় অর্জন করতে পারেননি। পিপরা কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থী রামমঙ্গল প্রসাদ পেয়েছেন ৮০,৪১০ ভোট। তিনি বিজেপি প্রার্থীর কাছে ৮,১৭৭ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। মটিহানি কেন্দ্রে পার্টির প্রার্থী রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিং পেয়েছেন ৬০,৫৯৯ ভোট। এই কেন্দ্রে অত্যন্ত অল্প ভোটে পিছিয়ে পার্টির অবস্থান তৃতীয়।
অপরদিকে সিপিআই প্রার্থী বখরি কেন্দ্রে ৭৭৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৭২,১৭৭ ভোট। এছাড়া তেঘরা কেন্দ্রে সিপিআই প্রার্থী ৪৭,৯৭৯ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। এই কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী পেয়েছেন ৮৫,২২৯ ভোট। এছাড়া সিপিআই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অপর চারটি আসনে জয়ী হতে পারেনি। এই কেন্দ্রগুলি হলো - বছওয়াড়া, হরলাখি, ঝঞ্ঝারপুর এবং রুপোলী। এই কেন্দ্রগুলিতে সিপিআই প্রার্থীরা ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ৫৪,২৫৪, ৪২,৮০০, ৫৩,০৬৬ এবং ৪১,৯৬৩।
সিপিআই (এমএল) লিবারেশন দল ১২টি আসন পেয়েছে। তার মধ্যে জিরাদেই কেন্দ্রে ২৫,৫১০ ভোটে, ফুলুওয়াড়ি কেন্দ্রে ১৩,৮৫৭ ভোটে, বলরামপুর কেন্দ্রে ৫৩,৫৯৭ ভোটে, আরওয়াল কেন্দ্রে ১৯,৯৫০ ভোটে, দারাউলি কেন্দ্রে ১২,১১৯ ভোটে, তারারি কেন্দ্রে ১১,০১৫ ভোটে, কারাকাট কেন্দ্রে ১৮,১৮৯ ভোটে, সিকতা কেন্দ্রে ২,৩০২ ভোটে, ঘোসি কেন্দ্রে ১৭,৩৩৩ ভোটে, পালিগঞ্জ কেন্দ্রে ৩০,৯১৫ ভোটে, আগিয়াওন কেন্দ্রে ৪৮,৫৫০ ভোটে এবং দুমরাঁও কেন্দ্রে ২৪,৪১৫ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন।
নির্বাচনে বামপন্থীদের এই সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, এই ফলাফল দেখিয়ে দিচ্ছে বামপন্থীদের নস্যাৎ করা যাবে না। ভারতের গণতন্ত্রের স্বার্থেই প্রয়োজন বামপন্থীদের। বিজেপি’র বিরুদ্ধে মহাজোটের লড়াইকে আরও বৈধতা দিয়েছে বামপন্থীরা। আমরা জনগণের স্বার্থে ধারাবাহিক সংগ্রাম করেছি। নির্বাচনী ফলাফল যাই হোক না কেন, লালঝান্ডা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছেন, বামপন্থীরা ধারাবাহিকভাবে সরব থেকেছেন সামন্ততন্ত্র ও সাম্প্রদায়িকতাবাদ বিরোধী, দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে। নির্বাচনে তার প্রতিফলন পড়েছে।