৫৮ বর্ষ ১৩শ সংখ্যা / ১৩ নভেম্বর ২০২০ / ২৭ কার্ত্তিক ১৪২৭
জম্মু ও কাশ্মীরঃ জনগণের অধিকারের ওপর আক্রমণ সমানে চলেছে
মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি
একতরফা জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন যা গত বছর ৩১ অক্টোবর অগণতান্ত্রিক এবং অন্যায়ভাবে জম্মু-কাশ্মীরে চালু করা হয়েছিল, তার এক বছর পরেও জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের গণতান্ত্রিক এবং বুনিয়াদি অধিকার নিরবচ্ছিন্নভাবে ধ্বংস করে চলেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
একটি বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন রাজ্য, যার জনগণের মতামতের কোনো তোয়াক্কা না করেই, তাকে ভাগ করা হলো এবং বিশেষ মর্যাদা থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হলো যা সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদের নির্লজ্জ উল্লঙ্ঘন। এপ্রিল মাসে প্রজ্ঞাপিত হওয়া নয়া বাসস্থান বিধিসমূহের ন্যায় ২৭ অক্টোবর প্রজ্ঞাপিত নয়া জমি আইনসমূহও জনবিন্যাসগত পরিবর্তন প্রসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের উদ্বেগকে বিবেচনায় আনার কোনো সুনিশ্চয়তা দেয়নি। এর পরিবর্তে বিজেপি সরকার জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে এই বার্তাই দিতে চায় যে, তাদের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার এক বছর আগের পরিকল্পনাকে তাঁরা সম্পূর্ণভাবে প্রাসঙ্গিক মনে করে।
এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের পূর্বদিকে এখন কারা জমি কিনবেন। নয়া ভূমিআইন সমূহ বৃহৎ জমি হাঙর এবং কর্পোরেটদের তাদের খেলা শুরু করার অনুমতি দিয়েছে যা কৃষকসমাজ এবং তাদের সন্তানদের দশকব্যাপী ঘটানো লাভ এবং উন্নয়নকে ধ্বংস করবে।
বহিরাগতদের জন্য কেন্দ্র জম্মু-কাশ্মীরের জমি অবারিত করে দেবার কয়েকদিন পরেই, জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন ২৪হাজার কানাল জমি শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরকে তথাকথিত বিনিয়োগের জন্য হস্তান্তর করে। অাবার বনদপ্তরের প্রায় একই পরিমাণ জমি ৬৫টি বড়ো কর্পোরেট হাউস-এর ইউনিট স্থাপনের জন্য ক্লিয়ারেন্স দিতে বিজ্ঞাপিত করা হবে।
জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান বাতিল করা এবং আর্টিকেল ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ প্রত্যাহার করার উদ্দেশ্য ছিল জম্মু-কাশ্মীরের জনবিন্যাস বদল করা। এই ধরনের আইনগুলি প্রণয়ন করার মধ্য দিয়ে এখন সবটাই আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে। ৫ আগস্ট ২০১৯ থেকে জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে তাদের ঔদ্ধত্য ফুটে বেরিয়ে এসেছে। যেন তারা বলছে, আমরা এটা করি এটা করব তার কারণ আমরা এটা করতে পারি। এতে কিছু নির্বাচনে বিজেপি জয় পেতে পারে, কিন্তু এটা কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমূহের সমাধান নয়।
এমনকি সংসদে আইন পাশ করাবার পর এক বছর তিন মাস কেটে গেলেও জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে দেশের নাগরিক হিসেবে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বিজেপি এবং তাদের বিভিন্ন সংগঠনগুলি ছাড়া অন্য কাউকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ করতে দেওয়া হচ্ছে না। কাশ্মীরের কণ্ঠস্বরকে বলপূর্বক অবদমিত করা হচ্ছে।
কেন্দ্রের ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে তেইশটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। মার্চ মাসে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের উচিত হবে তাদের কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবে কার্যকর করার পরিবর্তে আদালতের রায় ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
গতবছর বিজেপি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মবার্ষিকীকে বেছে নিয়েছিল জম্মু এবং কাশ্মীরকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার জন্য। ওই তারিখটি বেছে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে সরকার অমিত শাহ’র ইতিহাস তৈরি করা এবং সত্যকে মুছে ফেলার ফর্মুলাকে ঢুকিয়ে দেবার জায়গা করে দিয়েছে। প্যাটেলের স্মৃতিকথা সহ নথিতেও এই বিষয়টা রয়েছে যে, তিনি শুধু অংশই ছিলেন না, আর্টিকেল ৩৭০-এর খসড়া প্রস্তুত করার কাজেও কিন্তু যুক্ত ছিলেন।
১৯৪৯ সালের ১৫ এবং ১৬ মে তাঁর বাড়িতেই নেহরু, শেখ মহম্মদ আবদুল্লাহ এবং তাঁর মধ্যে জম্মু এবং কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত আলোচনা হয়। এর পাশাপাশি প্যাটেলই গোপালস্বামী আয়েঙ্গারের সঙ্গে খসড়াটি সুত্রায়িত করেন, যা চূড়ান্ত হয়েছিল ৩৭০ অনুচ্ছেদ হিসেবে। আবার এই প্যাটেলই নেহরুর অনুপস্থিতিতে, তিনি তখন আমেরিকায় ছিলেন, সংবিধান পরিষদে ৩৭০ অনুচ্ছেদ পেশ করেন।
এই বছরে ওই একই দিনে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাটে বক্তব্য রাখার সময় ৩৭০ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দাবি করেন, গত বছর থেকে কাশ্মীর ভারতের উন্নয়নে যোগ দিয়েছে - যা ডাহা মিথ্যা।
সিপিআই(এম) ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার এবং জম্মু-কাশ্মীরের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার বিষয়টিকে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে এসেছে বারবার। সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে দেশের নাগরিকদের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে এবং তাঁদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে অস্বীকার করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং মোদী সরকারের মিথ্যা প্রচারকে প্রত্যাখ্যান করতে।