E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ১৩শ সংখ্যা / ১৩ নভেম্বর ২০২০ / ২৭ কার্ত্তিক ১৪২৭

শেষ কথা কে বলল?

প্রসঙ্গঃ বিহার বিধানসভা নির্বাচন

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


‘হিলসা’ শুনলেই বাঙালির জিভে জল আসে। তবে এ হিলসা সে হিলসা নয়। আমি ইলিশ মাছের কথা বলছি না। কাজেই রসনা লকলকিয়ে ওঠার কোনো কারণ নেই। বরং সবটা শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে। এ হিলসা হলো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের হোম ডিস্ট্রিক্ট নালন্দার এক বিধানসভা কেন্দ্র। যে কেন্দ্রে জেডি(ইউ) প্রার্থী জিতেছেন মাত্র ১২ ভোটে। যা নিয়ে এখন চূড়ান্ত বিতর্ক। এই কেন্দ্রে পরাজিত আরজেডি-র দাবি তাদের প্রার্থীকে ৫৪৭ ভোটে জয়ী বলে ঘোষণা করেছিলেন রিটার্নিং অফিসার। জয়ের সার্টিফিকেটের জন্য অপেক্ষা করার সময় অফিসারের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর ফোন আসে এবং পোস্টাল ব্যালট বাতিল করে জেডি(ইউ)-কে ১২ ভোটে জয়ী ঘোষিত করা হয়। বিতর্ক যতই থাকুক, নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এবারের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ যে ১২৫ আসনে জয়ী হয়েছে তার অন্যতম এই হিলসা।

গত সপ্তাহে বিহার বিধানসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে লেখাটা যেখানে শেষ করেছিলাম সেখান থেকেই না হয় শুরু করি। বিহার নির্বাচনে মানুষ কথা বলল, নাকি গণনা প্রক্রিয়া, বিজেপির কৌশল, নাকি নরেন্দ্র মোদীর ক্যারিশমা, জাতপাতের রাজনীতি নাকি মানুষের রুটি রুজির লড়াই - তা নিয়ে আগামী কয়েকটা দিন টানাহ্যাঁচড়া চলবে। তারপর সময়ের নিয়মেই চাপা পড়বে। আমরা আবারও মেতে উঠব অন্য কোনো বিষয় নিয়ে। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরের এই যাত্রাপথে বহু পথ হাঁটা এখনও বাকি। ‘মাইলস টু গো, বিফোর আই স্লিপ’।

যেহেতু এবারের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে চিরাগ পাসোয়ানই বিজেপি’র চিরাগ নতুন করে জ্বালিয়ে দেবার সলতে পাকিয়েছেন, তাই প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলেকে নিয়ে দু’চার কথা শুরুতেই বলে নিতে হবে। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর ১১ নভেম্বর, বুধবার চিরাগ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন –‘‘অন্যান্য দলের মতো আমিও যথাসম্ভব বেশি আসনে জিততে চেয়েছিলাম। কিন্তু এই নির্বাচনে আমার লক্ষ্য ছিল রাজ্যে বিজেপি-কে আরও শক্তিশালী করা। সেই লক্ষ্য নিয়ে যতটা কাজ করতে পেরেছি তাতে খুশি আমরা।’’ অবশ্য এই কাজ এলজেপি’র কাছে নতুন কিছু নয়। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ এর আগেও করেছে এলজেপি। সে কথা এখন থাক। এবারও মাত্র একটি আসনে জিতে তাই চিরাগ বেজায় খুশি। কারণ, তাঁর কারণেই বিজেপি ২০১৫-র ৫৩ থেকে এবার পৌঁছেছে ৭৪ আসনে। জেডি(ইউ) ৭১ থেকে নেমেছে ৪৩-এ। খুশি বিজেপি-ও। চিরাগকে বোড়ে করে নীতীশ কুমারের ডানা ছেঁটে দেওয়া গেছে। আপাতত আরও একবারের জন্য নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী হলেও এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রীসভার নিয়ন্ত্রণ কতটা তাঁর কাছে থাকবে বা আদৌ কতদিন তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন তার জন্য কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে। আজই প্রধানমন্ত্রীকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানানো নীতীশ কুমার হয়তো আবারও একবার শিবির বদলাতে বাধ্য হবেন! আর বিহারবাসী যদি সত্যি করেই বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন বা ১৯ লক্ষ চাকরির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হাতে কলমে বুঝে নিতে রাস্তায় নেমে পড়ে তাহলে তো নীতীশ কুমার আরও বিপাকে পড়বেন।

বিজেপি বা এনডিএ শিবির যাই দাবি করুক না কেন এই নির্বাচনের ফলাফলে বিজেপি’র উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিহারের ৪০ আসনের মধ্যে এনডিএ শিবিরের প্রাপ্ত আসন ছিলো ৩৯। সেই হিসেব বজায় থাকলে বিজেপি’র যে ল্যান্ডস্লাইড ভিক্ট্রি হবার কথা ছিল তার ধারেকাছ দিয়েও যায়নি ভোট শতাংশের হিসেব। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিহারে এনডিএ পেয়েছিল ৫০.৩ শতাংশ ভোট। এবারে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮.২ শতাংশে। অর্থাৎ মাত্র ১৭ মাসে ভোট কমেছে ১২.১ শতাংশ। শুধু বিহার নয়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর যে যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে তার প্রতিটিতে ভোট কমেছে এনডিএ-র।

মহারাষ্ট্রে ২০১৯-এ এনডিএ-র ভোট ছিল ৫০.৯ শতাংশ। মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ৮.৭ শতাংশ কমে সেই ভোট দাঁড়ায় ৪২.২ শতাংশে। হরিয়ানাতে ২০১৯-এ ভোট ছিলো ৫৮ শতাংশ। যা ২১.৫ শতাংশ কমে বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়ায় ৩৬.৫ শতাংশে। ঝাড়খণ্ডে ২০১৯-এ এনডিএ-র ভোট ছিল ৫৫.৩ শতাংশ। যা বিধানসভায় ২১.৯ শতাংশ কমে হয়েছে ৩৩.৪ শতাংশ। দিল্লিতে এনডিএ-র ভোট ছিল ৫৬.৬ শতাংশ। যা বিধানসভায় ১৬.৬ শতাংশ কমে হয়েছে ৪০ শতাংশ।

এ তো গেল লোকসভা ভোটের নিরিখে হিসেব। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে শুধুমাত্র বিহার বিধানসভার হিসেব ধরলে বিজেপি’র প্রাপ্ত ভোট ৮২,০১,৪০৮ ভোট বা ১৯.৪৬ শতাংশ। গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ভোট কমেছে ৪.৯৬ শতাংশ। জেডিইউ পেয়েছে ৬৪,৮৪,৪১৪ ভোট বা ১৫.৪ শতাংশ। ভোট কমেছে ১.৪৪ শতাংশ। হ্যামের প্রাপ্ত ভোট ৩,৭৫,৫৬৪ বা ০.৮৯ শতাংশ। ভোট কমেছে ১.৪১ শতাংশ। ভিআইপি পেয়েছে ৬,৩৯,৮৪০ ভোট বা ১.৫২ শতাংশ। যেহেতু একেবারে আনকোরা দল তাই কমা বাড়ার হিসেব নেই।

অন্যদিকে মহাজোটের আরজেডি পেয়েছে ৯৭,৩৬,২৪২ ভোট বা ২৩.১১ শতাংশ। ভোট বেড়েছে ৪.৭৯ শতাংশ। কংগ্রেস পেয়েছে ৩৯,৯৫,০০৩ ভোট বা ৯.৫ শতাংশ। ভোট বেড়েছে ২.৮২ শতাংশ। সিপিআই(এমএল) পেয়েছে ১৩,২২,১৪৩ ভোট বা ৩.১৪ শতাংশ। ভোট বেড়েছে ১.৫৮ শতাংশ। সিপিআই পেয়েছে ৩,৪৯,৪৮৯ ভোট বা .৮৩ শতাংশ এবং সিপিআই(এম) পেয়েছে ২,৭৪,১৫৫ ভোট বা .৬৫ শতাংশ। সিপিআই-এর ভোট কমেছে .৫৭ শতাংশ এবং সিপিআইএম-এর ভোট বেড়েছে .০৫ শতাংশ।

প্রাথমিক পাটিগণিত বলছে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ জোটের মোট প্রাপ্ত ভোট ১,৫৭,০১,২২৬ (৩৭.২৬%) এবং মহাজোটের মোট প্রাপ্ত ভোট ১,৫৬,৭৭,০৩২ (৩৭.২১%)। অর্থাৎ দুই প্রধান জোটের মোট প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ২৪,১৯৪(০.০৫%)। এবারের নির্বাচনেই একাধিক কেন্দ্র আছে যেখানে জয় পরাজয়ের মীমাংসা হয়েছে ৫০০-র কম ভোটে। আর হিলসা-র কথা তো আগেই বলেছি। কাজেই সাফল্যের ঢাক যতই বাজাক এনডিএ এই নির্বাচনী পরিসংখ্যানে তাদের মিথ্যে প্রচার ধোপে টিকছে না।

বিহারে আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের মহাজোট যে বিজেপি তথা এনডিএ শিবিরের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল তা দিল্লিতে বিজেপি’র বিজয় উৎসব দেখেই বোঝা গেছে। কোনো রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন জয়ের পর দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে এই নজিরবিহীন উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিয়েছে বিজেপি’র কাছে চাপটা ঠিক কোন্‌ মাত্রার ছিল। যে সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন – বিজেপি-ই একমাত্র দল যেখানে গরিব, দলিত, বঞ্চিতদের প্রতিনিধিত্ব আছে। একমাত্র বিজেপি-ই দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের চাহিদা বুঝতে পারে। সমস্ত শহর এবং গ্রামাঞ্চলের মহিলা ভোটাররা বিজেপি’র পক্ষে নিঃশব্দ ভোট দিয়েছে। এই নির্বাচনের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে আমরা সঠিকভাবে করোনা মহামারী পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছি।

যদিও জয়ের উল্লাস থেকে নরেন্দ্র মোদী যাই বলুন না কেন, বিহারের নির্বাচনী ফলাফলে টায়েটুয়ে পাশ করে গেলেও এই ফলাফলের হিসেবনিকেশ বিজেপি’র পক্ষে আদৌ স্বস্তিদায়ক নয়, তা আগেই বলেছি। একথা বিজেপি’র থেকে ভালো আর কেউ জানেনা। তবু উচ্ছ্বাস এবং প্রচার দিয়ে সেই ক্ষত ঢাকার চেষ্টার কোনো ত্রুটি বিজেপি রাখছে না। ঠিক এভাবেই বিগত কয়েক বছরে শুধু বিজ্ঞাপনের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিজেপি বারবারই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করেছে। ভেতরের খড়ের গাদন ঢাকতে গেলে ওপরের চিকনচাকন তো দেখাতেই হবে।

নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তব্যের উত্তরে সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন - বিহার প্রসঙ্গে মোদীর প্রতিটি বক্তব্য সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে আরও তীক্ষ্ণ করে। এই বক্তব্যে কোথাও মহামারীজনিত কারণে লকডাউনের সময় মানুষের দুর্দশা নিয়ে কোনো কথা নেই। এখন তিনি মানুষের সমর্থন পেয়েছেন বলে দাবি করছেন। প্রতারণামূলক এই প্রচার কার্যকর হবেনা। অপরিকল্পিত লকডাউন এবং অর্থনীতি ধ্বংসের কারণে কোটি কোটি মানুষের জীবনের দুর্দশা নিয়ে মোদী কোনো কথা বলতে অস্বীকার করেছেন। বিহারের কোথাও তিনি মানুষের বেকারত্ব, ক্রমবর্ধমান ক্ষুধা, যন্ত্রণা, সঙ্কটের কথা বলেননি। তিনি আরও জানিয়েছেন, মোদীর কোনো বক্তব্যে বিজেপি শাসনে বিহারে গণধর্ষণ, মহিলাদের হত্যা, ঘৃণ্য অপরাধ নিয়ে কোনো কথা নেই। তবুও তিনি দাবি করছেন বিহারে মহিলাদের সমর্থন পেয়েছেন। মিথ্যেবাদীরা সবসময়েই প্রতারণাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়। যা খুবই লজ্জার। ইয়েচুরি আরও জানিয়েছেন - আমাদের হিসেবে বিহারে জিতছিল মহাজোট। শেষ দু’তিন ঘণ্টায় গণনায় এমন কিছু হয়েছে যে বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাব। আমরা চাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হোক।

বিহার জয়ের পর বিজেপি’র আপাতত লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। সেকথা ঠারেঠোরে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বারবারই বুঝিয়ে দিচ্ছেন। শুরু হয়ে গেছে আনাগোনা। ২০০ আসন জয়ের হুঙ্কার। দলিত বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়া। ব্রাহ্মণ বাড়িতে বিশেষ সাক্ষাৎকারে যাওয়া। বিভীষণ হাঁসদা থেকে অজয় চক্রবর্তী। জাতপাতের সমীকরণ বজায় রেখে ভোটে জেতার চালু ছকের যে ছবিগুলো বড়ো চেনা। ভোট এলেই যে ঘটনাগুলো পরপর ঘটে যেতে থাকে। ভোট বড়ো বালাই হলে ভোটের জন্য দলিত খুঁজতে হয়, ব্রাহ্মণ খুঁজতে হয়। হাথরস দগদগে হয়েই থেকে যায়।

হাথরসের দলিত যুবতীর গণধর্ষণ ও হত্যা, প্রশাসনিক মদতে পরিবারের বিনা অনুমতিতে রাতের অন্ধকারে মৃতদেহ পুড়িয়ে দেবার পরেও তা নিয়ে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনো শব্দ খরচ করেছেন বলে জানা নেই। সেই তাঁরাই যখন পশ্চিমবঙ্গে এসে পাত পেড়ে খাবার জন্য দলিত বাড়ি খোঁজেন তখনই মেকি দলিত প্রেমের আসল ছবিটা সামনে চলে আসে।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান তো এটাই বলে যে, দেশে দলিতদের সবথেকে খারাপ অবস্থা বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতেই। দেশে দলিতদের বিরুদ্ধে যত অপরাধ সংগঠিত হয় তার ৮৪ শতাংশ ঘটনা ঘটে ৯টি রাজ্যে। শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই দেশে দলিতদের বিরুদ্ধে প্রায় ৪৬ হাজার অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। যা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেড়েছে। শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ। ঘটনার সংখ্যা ১১,৮২৯। রাজস্থানে ৬,৭৯৪। বিহারে ৬,৫৪৪। মধ্যপ্রদেশে ৫,৩০০। মহারাষ্ট্রে ২,১৫০। তেলেঙ্গানায় ১,৬৯০। কর্ণাটকে ১,৫০৪। গুজরাটে ১,৪১৬। হরিয়ানায় ১,০৮৬। যে রাজ্যগুলোর মধ্যে রাজস্থান, তেলেঙ্গানা ছাড়া সবগুলোই বিজেপিশাসিত। মহারাষ্ট্রে তো হালে সরকার বদল হয়েছে। এই পরিসংখ্যান যে সময়ের তখন মহারাষ্ট্রও বিজেপি শাসিত ছিল। অতএব নির্বাচনের মুখে বিজেপি’র এই হঠাৎ জেগে ওঠা দলিত প্রেম যে শুধুই ভোটের জন্য তা নিয়ে কোনো সংশয় থাকার কথা নয়।

গীতা মাহালির কথা আমরা অনেকেই হয়তো ভুলে গেছি। নকশালবাড়ির দক্ষিণ কোটিয়া জোতে এই রাজু মাহালি-গীতা মাহালির বাড়িতে ২০১৭ সালের এপ্রিলে খেয়েছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথম সারির সংবাদপত্রের পাতায় সেই খাদ্য বিবরণ গল্প উপন্যাসকেও হার মানায়। সেবার প্রথমে যদিও ঠিক ছিল তিনি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সাধনা মণ্ডলের বাড়িতে খাবেন। কিন্তু তাঁর পাকা বাড়ির কারণে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে রাজু মাহালি-গীতা মাহালির দরমা বেড়ার বাড়িকে বেছে নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি সেবার তিনি ঘুরতে গেছিলেন পাশেই সাবিরুদ্দিনের বাড়িতে। আর ২০২০তে বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লকের চতুরডিহি গ্রামের বিভীষণ হাঁসদা-মণিকা হাঁসদার বাড়ি। দেশের বিজেপিশাসিত রাজ্যে দলিতদের অবস্থা যাই হোক, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ ভোটের তাগিদে পাত পেড়ে খাবার জন্য দলিত বাড়ি ঠিক মিলে যায়। আর পি আর ইভেন্ট হয়ে যাবার পর গীতা মাহালি, মণিকা হাঁসদারা কেমন আছেন সে খবরে কার কী দরকার! যে ঘটনা প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেছেন - বাজারে জিনিসপত্রের দাম যখন অগ্নিমূল্য, সঙ্কটগ্রস্ত নিরন্ন মানুষ যখন খাবার চাইছেন, তখন অমিত শাহের পাত পেড়ে খাওয়ার নাটকীয় প্রদর্শন চলছে। দক্ষিণপন্থীরা বরাবর মানুষের প্রয়োজন চাহিদাকে সরিয়ে ভোটের প্রয়োজনকে বাজারজাত করে। অমিত শাহের সফরে খাওয়া নিয়ে চলছে নির্লজ্জ মিডিয়া এক্সারসাইজ।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে। মানুষের রুটি রুজির সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে দলিত, মতুয়া, ব্রাহ্মণ, মুসলমান ঘিরে ভাগাভাগির খেলা। যা রাজ্যের ঐতিহ্যবিরোধী। যদিও বিহার নির্বাচনে এনডিএ-র এই খেলার পাল্টা মহাজোটের বেকারি, অর্থনীতির দুরবস্থা, মানুষের রুটি রুজির সমস্যা সামনে তুলে আনা যে অনেক বেশি নজর কেড়েছে তার প্রমাণ মাত্র ২৯ আসনে লড়াই করে বামেদের ১৬ আসনে জয় ছিনিয়ে আনা। তৃণমূল বিজেপি-কে ঠেকাতে বিকল্প পথের সন্ধানে লড়াই তাই রুটি-রুজির, মানুষের বেঁচে থাকার দৈনন্দিন সংগ্রামকে হাতিয়ার করেই।