৬১ বর্ষ ১০ সংখ্যা / ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ / ২৫ আশ্বিন, ১৪৩০
ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মাতৃভূমি রক্ষার লড়াই
(তৃতীয় ও শেষ পর্ব)
সুব্রত দাশগুপ্ত
নতুন মুখোশ - ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’
ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি হলো অরএসএস’র পার্লামেন্টারি শাখা, যা পূর্বে পরিচিত ছিল জনসংঘ নামে (১৯৫১ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত)। এই জনসংঘেরই প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সভাপতি হিন্দুমহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি (১৯৫১-৫২)। হিন্দুমহাসভায় থাকাকালীন, দেশ বিভাগের এক বছর আগে (২২ এপ্রিল, ১৯৪৬) বাংলা ভাগের পক্ষে সওয়াল করে দিল্লির এক জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে এই শ্যামাপ্রসাদবাবুই বলেছিলেন - ‘পাকিস্তান যদি গঠিত নাও হয়, তাহলেও বাংলাকে বিভাজিত করে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের জন্য আলাদা প্রদেশ গঠন করতে হবে।’ যার অর্থ হলো ‘হিন্দুত্ব’ রক্ষার্থে বাঙালির হৃৎপিণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করতেও এদের কিছু যায় আসে না। যাইহোক, আরএসএস নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনা, সে নিজের পরিচয় ব্যক্ত করে সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠন রূপে। তার হয়ে স্বাধীনতার পর ভোটে লড়তো জনসংঘ, এখন লড়ে বিজেপি। উল্লেখ করা যায় যে, ১৯৭৭ সালে দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে সংগঠন কংগ্রেস, ভারতীয় লোকদল, সোশ্যালিস্ট পার্টি এবং জনসংঘ মিশে গিয়ে ‘জনতা পার্টি’ গঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে মোরারজি দেশাইয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বে ‘জনতা সরকার’ তৈরি হয়। আবার ১৯৮০ সালে ‘জনতা পার্টি’র মধ্যে থাকা জনসংঘের সদস্যরা আরএসএস-এ তাদের দ্বৈত সদস্যপদ (Dual Membership) থাকা নিয়ে বিতর্কের কারণে জনতা পার্টি থেকে ইস্তফা দেয়। ‘জনতা সরকার’-এর পতন ঘটে। কিন্তু তাদের পক্ষে জনসংঘকে আর নতুন করে সংগঠিত করার পরিস্থিতি ছিলনা। তখন আবার নতুন মুখোশ আর্বিভূত হলো ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ নামে। ফলে এই বিজেপি যে আরআরএস’র নির্দেশেই চলবে এতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে? আর শুধুই কি আরএসএস? সরকারের উপর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের চাপও কি বিজেপি অস্বীকার করতে পারবে?
‘মুখোশ’-এর উপর ‘মুখ’-এর চাপ
১৯৯৮ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকার তৈরি হবার পরও যখন একটা অংশের শরিকদের চাপে সেই সরকার ‘রামমন্দির নির্মাণ’ অ্যাজেন্ডা থেকে সরে আসে, তখন বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতাদের উক্তিগুলি কি আমরা ভুলে যেতে পারি? সেই সময়কার ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও প্রতিবেদনগুলির দিকে নজর রাখলেই সবটা পরিষ্কার হয়ে যায়। ‘রাম মন্দির নির্মাণ’-কে কার্যকর না করতে পারার জন্য বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতা গিরিরাজ কিশোর খোদ অটল বিহারী বাজপেয়ীকে আক্রমণ করেছিলেন ‘সিউডো হিন্দু’ (মেকি হিন্দু) বলে (দ্য হিন্দু, ১ জানুয়ারি, ২০০৩)। আর এক নেতা অশোক সিংঘল লালকৃষ্ণ আদবানিকে অভিযুক্ত করেছিলেন বিশ্বাসঘাতক বলে (ওই, ২৫ মে, ২০০৩)। এই মে মাসেই আরএসএস এবং শাখাসংগঠনগুলির সমন্বয় বৈঠকে অশোক সিংঘল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীকে মুখোমুখি বসে হুংকার দিয়েছিলেন যে, রামমন্দির নির্মাণের জন্য আইন প্রণয়ন করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী যেন পদত্যাগ করেন। ওই সভাতেই প্রবীণ তোগারিয়া অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আদবানিকে ক্ষমতার স্বাদে প্রমত্ত হয়ে ওঠা ব্যক্তি বলে চিহ্নিত করেন (‘দ্য হিন্দু, ১৬ অক্টোবর, ২০০৩)। বিজেপি নেতারা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতাদের এই আচরণ বন্ধ করার জন্য আরএসএস’র কাছে আবেদন জানালেও তার কোনো ফল হয়নি। ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দেশব্যাপী জনগণের রায়ে বিজেপি ক্ষমতাচ্যুত হয়। বামপন্থীদের সমর্থনে কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রে ইউপিএ-১ সরকার তৈরি হয়। ফলে রামমন্দির নিয়ে এদের দাপাদাপি কিছুটা কমে। কিন্তু উপরোক্ত ঘটনাবলি থেকেই তো এটা পরিষ্কার যে, বিজেপি আসলে একটি মুখোশ, তার পিছনে মুখ হলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সহ খোদ আরএসএস। নরেন্দ্র মোদির জমানাকেও কি কেউ অন্য কিছু বলে ভাবছেন?
ক্ষমতা দখলের প্রয়োজনীয়তা
আরএসএস আমাদের ভারতরাষ্ট্রকে কীভাবে পুনর্গঠিত করতে চায় সেকথা আমরা আগেই আলোচনা করেছি। বহুত্ববাদী ধারণার অবসান, আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে মূল্যহীন করে দেওয়া, সামরিক জাতীয়তাবাদ গড়ে তোলা, গণতন্ত্রকে অস্বীকার করে একনায়কতন্ত্রী প্রশাসন গড়ে তোলা, ধর্মের ভিত্তিতে ভারতরাষ্ট্রের নাগরিকদের মান (প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির) নির্ণয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির বিরাষ্ট্রীয়করণ, দেশের প্রথম শ্রেণির শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সংঘপন্থীদের কবজায় নিয়ে আসা, চূড়ান্ত উদার অর্থনীতি অনুসরণ, প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দাদাগিরির মনোভাব এবং বৃহৎ পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির সঙ্গে সমঝোতা - এই হলো তাদের লক্ষ্য। গত সাড়ে নয় বছরের বিজেপি শাসন এই পথে আমার প্রিয় মাতৃভূমিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির দিকে তাকালে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক নীতিগুলিকে বিশ্লেষণ করলেই এই কথার সত্যতা প্রতিপন্ন হয়।
বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে আরএসএস তথা সংঘ পরিবার তাদের লক্ষ্যপূরণে দ্রুত অগ্রসর হতে পারবে এটা তো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রশাসনের অভ্যন্তরে সংঘ পরিবারের অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে জনতা সরকারে জনসংঘীদের অংশগ্রহণ করার সময়কাল থেকে। বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রীত্বকালে হস্তক্ষেপের সুযোগ আরও বৃদ্ধি পায়, আর ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তো সব কিছু খুল্লমখুল্লা শুরু হয়ে গেছে। এই সরকার ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করার দিকে এগোচ্ছে। সংসদকেই মান্যতা দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই কার্যত এড়িয়ে চলছেন সংসদের অধিবেশন। এই সময়কালে কট্টর সংঘপন্থী লোকেরা আইনসভায় শুধু প্রবেশাধিকার পেয়েছে তাই নয়, সরাসরি তারা ঘৃণার ভাষণ প্রদান করছে, জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির পরিবেশকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, ফ্যাসিবাদী কায়দায় ক্ষমতার কেন্দ্রীভবনের হুঙ্কার দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি (Centre of Excellence)-র মাথায় চাপিয়ে দিচ্ছে সংঘপন্থী লোকদের, এমনকী প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও। গণমাধ্যমগুলিকে নিজেদের প্রচারযন্ত্রে পরিণত করা, ঐতিহাসিক স্থান সমুহের নাম পরিবর্তন, সুচতুর পদ্ধতিতে সিলেবাস থেকে কিছু কিছু অধ্যায় ও বিষয়বস্তুকে বাদ দেওয়া এবং এমনকী বিচারব্যবস্থাকে পর্যন্ত নিজেদের তাঁবে নিয়ে আসার অপচেষ্টা চলছে প্রতিদিন। সারা দেশেই এক অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে, দাঙ্গার পরিস্থিতিকে আবাহন করা হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদির সরকার দেশবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয়েছে। কালাধন উদ্ধার হয়নি, কারও অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা জমা হয়নি, নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়নি, বরং লক্ষ লক্ষ কর্মরত মানুষ কাজ হারিয়েছেন, ফুলে ফেঁপে উঠেছে হাতে গোনা কিছু পরিবার। করপোরেটদের সঙ্গে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে সরকারের আঁতাত। জ্যামিতিক প্রগতিতে বাড়ছে করপোরেটদের মুনাফা। কোভিড এবং লকডাউনের পরিস্থিতিতে যখন কোটি কোটি মানুষের জীবন জীবিকা বিপর্যস্ত হয়েছে সেই সময়ে শুধুমাত্র আম্বানিরাই আয় করেছে প্রতি ঘণ্টায় ৯০ কোটি টাকা। দেশের সমস্ত স্তরের দরিদ্র-সাধারণ মানুষের কাছে কোভিড পরিস্থিতি সর্বনাশ ডেকে আনলেও, মোদি সরকারের বদান্যতায় করপোরেটদের কাছে সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মুনাফা লোটার পৌষ মাস। সরকার গলার শিরা ফুলিয়ে বলছে উন্নয়ন হচ্ছে, অথচ দেশে কর্মসংস্থান নেই। ভারতীয় স্টেটব্যাঙ্ক, জীবনবিমা নিগম প্রভৃতি লাভদায়ক রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থাগুলির মজুত তহবিলকে ব্যবহার করা হচ্ছে বেসরকারি ব্যক্তিমালিকদের আর্থিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর কাজে। ২০২১-২২ অর্থ বর্ষে ১৩,৫৬১ কোটি টাকার রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে ‘ধান্দার পুঁজি’র মালিকদের কাছে। গরিব মানুষের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে বৃহৎ মালিকদের কর ছাড় শুধু নয়, সুদসহ ঋণ মকুব করে দেওয়া হচ্ছে। গত বছর করপোরেট ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হয়েছে ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী ও সরকার অবৈধ উপায়ে তাদের অতি নিকটের কিছু পুঁজিপতির সম্পদকে বাড়িয়ে দিতে সচেষ্ট কোনো নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই। কর্মসংস্থান বিহীন ‘প্রসাধনী উন্নয়ন’-এর পটভূমিকায় এই ধান্দার পুঁজির বিকাশকে কার্যত সরকারের অর্থনৈতিক নীতিতে পরিণত করা হচ্ছে, এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এর সপক্ষে গীত গাইছেন। আবার আদানি-আম্বানিদের এই হীন, অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদের তর্জনী তুললেই দেশদ্রোহীর তকমা আঁটা হচ্ছে প্রতিবাদীর গায়ে। সরকারি সাহায্যপুষ্ট এইসব ধান্দাবাজ তাঁবেদার পুঁজিপতিরা বা ক্রোনি ক্যাপিটালিস্টরা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে সরকারের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধালাভের বিনিময়ে কাছা খুলে নেমে পড়েছে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনে সরকারের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডাকে নিজেদের অ্যাজেন্ডা হিসেবে দেশের বুকে প্রতিষ্ঠা দেবার কাজে। সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিস্তারে এরা সরকারের পরম মিত্রের ভূমিকা পালন করছে। এভাবেই প্রশস্ত হচ্ছে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পথ। অর্থনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে দুর্দশা বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ফলে ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে, বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যেই। বাড়ছে জনগণ বনাম রাষ্ট্র পরিচালক ও তার তাঁবেদার বাহিনীর দ্বন্দ্ব। মানুষের এই ধূমায়িত ক্ষোভকে প্রশমিত করার খেলা শুরু করার জন্য, এই ক্ষোভকে ভিন্ন পথে চালিত করার জন্য বসে আছে সংঘ পরিবার। দিনক্ষণ-সময় মেপে আরএসএস ব্লু প্রিন্ট নামাবে নরেন্দ্র মোদির পক্ষে।
রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্ত শাখাপ্রশাখাগুলিকে সম্পূর্ণরূপে করায়ত্ত করার জন্য আরএসএস’র পক্ষে অতি প্রয়োজন কেন্দ্রীয় সরকারে বিজেপি’র পুনরাগমন। এর জন্য যে কোনো ধরনের প্লট তৈরি করতে তারা প্রস্তুত। এমনকী যে কোনো ঘটনা সংঘটিত করে, তা সে যতই নিষ্ঠুর ও অমানবিক হোক না কেন, দেশের মানুষকে উগ্র জাতীয়তাবাদ কিংবা উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রচারে ডুবিয়ে দিয়ে ভোটে ফায়দা তুলতেও ওরা পিছপা হবেনা। এরা এতটাই কুটিল এবং নৃশংস যে, পরের দিন কী ঘটনা ঘটাতে পারে তা আগের দিন পর্যন্ত দেশের মানুষ আন্দাজই করতে পারবে না। কে বা কারা কোন ঘটনার শিকার হবে তা আপনার বা আমার কারও পক্ষেই বুঝে ওঠা সম্ভব হবেনা। অমিত ক্ষমতার অধিকারী আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার। তাই তাকে দখলে রাখার গুরুতর প্রয়োজনীয়তা সংঘ পরিবার প্রতি পলে অনুভব করে।
চাই জানকবুল লড়াই
আগামী বছর ভারতের লোকসভার নির্বাচন। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী দেশের জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু তাঁর সেই ক্ষমতা, যতটুকু অবশিষ্ট আছে ততটুকুও থাকবে কিনা, সেটা নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনের ফলাফলের উপর। এই নির্বাচনে লড়াই তো ঝাঁ চকচকে করপোরেট ভারত বনাম দারিদ্র্য-ক্ষুধা-অশিক্ষা-অপুষ্টি-অনাহার-আশ্রয়হীনতায় জর্জরিত ভারত-এর। লড়াই ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান’-এর কেন্দ্রীভূত সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্নতাসম্পন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতির বিকাশের। ব্রাহ্মণ্যবাদী, মৌলবাদী ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে সকল ধর্মমত, এমনকী নাস্তিকতার অধিকার আদায়ের। এবং লড়াই ফ্যাসিবাদী ধরনের শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে রক্ষার। এই লড়াইয়ে সার্বভৌম জনশক্তিকে এককাট্টা করে, লড়াইয়ের মঞ্চটাকে আরও প্রসারিত করে, জানকবুল করে লড়তে পারলে তবেই মাতৃভূমিকে রক্ষা করা যাবে। আগ্রাসী ফ্যাসিবাদী ধরনের শক্তির হিংস্র আগ্রাসন থেকে দেশ রক্ষার লড়াই আজ, পরীক্ষা দেশপ্রেমের। পথ বন্ধুর, হাজারো প্রশ্ন, বাঁকে বাঁকে শয়তানের ফাঁদ, বিশ্বাসঘাতকতার আশংকা - তবুও পৌছাতে হবে গন্তব্যে, রক্ষা করতে হবে প্রিয় মাতৃভূমিকে। মাঠ-ঘাট পেরিয়ে আসছে তারই আহ্বান। প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থেকেই এই সংগ্রামের বিশ্বস্ত, নির্ভরযোগ্য সঙ্গী বামপন্থীরা। ওই বর্বর অসভ্য শক্তি এবং ওদের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে আসন্ন সংগ্রামের রণডঙ্কা বেজে উঠুক গ্রাম-নগরের প্রতিটি জনপদে।
তথ্যসূত্রঃ
● হিন্দুত্ববাদ-ফ্যাসিবাদ যোগসাজশ - মারিয়া কাসোলরি
● সাভারকর ও হিন্দুত্ব - এ জি নুরানি
● সঙ্ঘ পরিবারের ভিতরের কথা – সত্যজিৎ বন্দোপাধ্যায়
● আরএসএস-বিজেপি এবং সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং - গৌতম রায়
● ফ্যাসিজম - সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর
● দেশপ্রেম, বাংলাভাগ ও তারপর - ড. সুজন চক্রবর্তী
● What is Hinduism – Mahatma Gandhi