E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ / ৩০ চৈত্র, ১৪২৯

নির্বাচনী গণতন্ত্রঃ বিরোধহীন গণতন্ত্রের নীল নকশা

নীলোৎপল বসু


সমকালীন ভারতের ক্রমশ প্রকাশিত ঘটনাবলি দেখতে দেখতে অনেকদিন আগে দেখা একটা সিনেমার কথা মনে পড়ে গেল। ফরাসি চিত্রপরিচালক ফ্রাঁসোয়া ক্রফো’র ফারেনহাইট ৪৫১। একজন দমকলকর্মী আর বইপ্রেমী এক তরুণীর মধ্যেকার অন্তর্দৃষ্টি- নির্ভর একটি ফ্যান্টাসি’র রূপকধর্মী চিত্রনাট্য। দমকল কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো ফারেনহাইট ৪৫১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়ে যাওয়া ধ্বংসের অগ্নিনির্বাপণের প্রেক্ষাপটে। আসলে এটা সেই তাপমাত্রা যা কাগজ এবং স্বভাবতই বইপত্র পুড়িয়ে দেয়।

চলচ্চিত্রটির মূল উপজীব্য কীভাবে ফ্যাসিস্তরা জ্ঞান এবং যুক্তির বিরুদ্ধে অভিযান সংগঠিত করে সমস্ত মুদ্রিত বই পুড়িয়ে দিতে। আর তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটা অনবদ্য চিত্রকল্প - একটি সমগ্র উপনিবেশ যার অধিবাসীরা এক একজন একটা পুরো বই মুখস্ত করে নিজেদের মধ্যে বিনিময় করছে।

এত অর্থবহ এবং ফ্যাসিবাদের এত প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্রায়ন - ভাবা যায় না। ফ্যাসিবাদের প্রধান নিশানাই যুক্তি এবং জ্ঞান। এবং অবশ্যই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের নির্যাস। ইতিহাস আর ইতিহাসের পাঠ। ক্রফোর এই ছবি অবশ্যই ধ্রুপদি ইয়োরোপীয় ফ্যাসিবাদের পটভূমিতে নির্মাণ। আমাদের সমসাময়িক বাস্তবতায় ফ্যাসিবাদী প্রবণতার অবশ্যই নিজস্ব আঙ্গিক এবং বাচনভঙ্গি রয়েছে। কিন্তু স্পষ্টতই এই প্রবণতার নিশানা যুক্তি, বৈজ্ঞানিক চেতনা এবং ইতিহাস।

ভারতে গণতন্ত্রের ওপর স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণ নিয়ে দেশে-বিদেশে যে ক্রমবর্ধমান চর্চা হচ্ছে, সেখানে আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে একটি নতুন শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হচ্ছে - ‘নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র’। নির্বাচিত সরকারের বহিরঙ্গের মর্মবস্তু যখন স্বৈরতান্ত্রিক। আন্তর্জাতিকভাবে যে বিভিন্ন তুলনামূলক সূচক ব্যবহার করা হচ্ছে স্বাধীনতার বা গণতন্ত্রের, সেখানে ভারতের ক্রমাগত তীক্ষ্ণ অধোগতি সমকালীন বিশ্লেষকদের বাধ্য করছে এই নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রের শব্দবন্ধের ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি করতে। আর আমাদের এখানে আরএসএস-বিজেপি’র যে রাজনৈতিক অভিযান শুরু হয়েছিল কংগ্রেস মুক্ত ভারতের স্লোগানকে সামনে রেখে, এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, এখন সেটা পর্যবসিত হয়েছে কার্যত সমস্ত বিরোধীমুক্ত একটি পরিস্থিতি নির্মাণে।

নতুন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপঃ উগ্র দক্ষিণপন্থার উত্থান

শুরু হয়েছিল গত শতাব্দীর সত্তর দশকের প্রায় শুরুর দিকেই বিশ্বায়ন। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, এই বিশ্বায়নকে কার্যকর করতে গিয়ে প্রতিটি দেশ তৎপর হয় নির্দিষ্ট নয়া উদারবাদী নীতি এবং রাষ্ট্র নির্মাণে। এর অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজি- তাড়িত একটি যাত্রাপথ - যার মূল লক্ষ্য আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির কেন্দ্রীভবন। স্বভাবতই এই নতুন প্রবণতার ভিত্তি একদিকে যেমন কেন্দ্রীভবন, অন্যদিকে তেমন চূড়ান্ত গতিশীল যাত্রাপথ। জাতীয় ভৌগোলিক সীমাকে লঙ্ঘন করেই এই নতুন প্রক্রিয়া। ফলে নয়া উদারবাদ আন্তর্জাতিক লগ্নির চাহিদা মেনেই তৈরি করেছিল এক‍‌টি সর্বসম্মত অলিখিত বিধি - লগ্নিপুঁজির বাজারের চাহিদার সার্বভৌমত্ব।

ফলে পুরনো জাতি রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিটাই প্রতিস্থাপিত হলো নাগরিকের বদলে বাজারের চাহিদাকে স্বীকৃতি দিয়ে। সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকল না যে সাধারণ মানুষ - বিশেষত শ্রমজীবীদের অধিকার এবং চাহিদাকে উপেক্ষা করাই এই নতুন প্রবণতার মূল উপজীব্য। কিন্তু দু-তিন দশকের মধ্যেই এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিও সামনে এলো। তীক্ষ্ণ অর্থনৈতিক বৈষম্য, কর্মহীনতা আর দারিদ্র্যের আকাশছোঁয়া বৃদ্ধি।

এই পর্যায়ের বিস্ফোরণ হলো ২০০৮ সালে বিশ্বজোড়া আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে। স্পষ্ট হয়ে গেল প্রচলিত নয়া উদারবাদ একটা কানাগলির মধ্যে ঢুকে পড়েছে সমকালীন সমাজ অর্থনীতির সমস্যা এবং সংকট থেকে বেরিয়ে আসার কোনো রাস্তাই আর কাজ করছে না।

অতঃপর নয়া উদারবাদী আঙ্গিকের মধ্যেও নতুন মাত্রা যুক্ত হলো। ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতন্ত্র (অলিগোর্কি)। কিন্তু এই ধরনের সঙ্কীর্ণ একটি শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে শান্তিপূর্ণ সুস্থির শাসনতন্ত্র পরিচালনা করা সম্ভবপর নয়। তাই উগ্র দক্ষিণপন্থা। এইরকম ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর শাসনকে টিঁকিয়ে রাখতে গণতন্ত্রকে প্রতিস্থাপিত করা হলো সংখ্যাগুরুবাদ বা বিভিন্ন পরিচিতিসত্তার আগ্রাসী রাজনীতি এবং মতাদর্শ দিয়ে। সাম্প্রতিক অতীতে ব্রাজিলের বোলসোনারো, মার্কিন দেশের ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রিটেনের বরিস জনসন বা তুরস্কের এরদোগান - এই দুনিয়াব্যাপী উগ্র দক্ষিণপন্থার মুখ। ২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি-আরএসএস’র শাসন এই উগ্র দক্ষিণপন্থার ভারতীয় অধ্যায়।

লগ্নিপুঁজিঃ করপোরেট সাম্প্রদায়িক আঁতাত

আসলে করপোরেট পুঁজি সমকালীন পৃথিবীতে মূলত লগ্নিপুঁজির পথ ধরেই এগিয়েছে। তারই অনিবার্য পরিণতি নয়া উদারবাদ। আর ধান্ধার পুঁজিতন্ত্র। সরকার এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা - এই পুঁজির সহজাত বৈশিষ্ট্য। উলটোদিকে আর্থিক বৈষম্য, বেকারি আর দারিদ্র্যের তীক্ষ্ণ ঊর্ধ্বমুখী গতি। এই সব কিছু আড়াল করবার একমাত্রিক বিবরণী জিডিপি’র সংখ্যাবৃদ্ধিতেই। পরিসংখ্যানের এত নির্মম গরিব এবং শ্রমজীবী-বিরোধী ভাষ্য আর হতে পারে না।

প্রতিমুহূর্তে আমরা এর বাস্তব মর্মন্তুদ চেহারা দেখছি। মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যহীনতা, বেকারি। কোভিড মহামারিতে প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক উৎপাদনের পটভূমিতেও রেকর্ড সংখ্যায় বেড়েছে বিলিওনেয়ারদের সংখ্যা। ২০১৪ সালের পৃথিবীর ধনীদের তালিকায় ৬০৯-এ থাকা গৌতম আদানি ২০২২-এ দু’নম্বরে উঠে এসেছে। গত দু’মাস ধরে যেভাবে দেশের পার্লামেন্টকে স্তব্ধ করে দিল শাসকদল শুধুমাত্র আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক কী - এই প্রশ্ন এড়াতে তার থেকে তো বুঝতে অসুবিধা থাকে না এই নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ক্ষুদ্র গোষ্ঠীতন্ত্র এবং ধান্দার পুঁজিবাদের অনিবার্য পরিণতি করপোরেট সাম্প্রদায়িক আঁতাত। ২০০২ সালে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া গুজরাটের সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হিংসায় মোদি-আদানির বিশেষ সখ্যের প্রেক্ষাপট। আর এই আঁতাতের অর্থনৈতিক সামাজিক চালচিত্র।

আসলে যে সঙ্কীর্ণ শাসকতন্ত্রের আমরা সাক্ষী, বিক্ষোভ বিরোধিতা এবং প্রতিরোধের সামনে তাকে অক্ষত রাখতে আধিপত্যবাদী সংখ্যাগুরুতন্ত্র এবং ভারতের বহুমাত্রিক পরিচিতিসত্তাগুলির বিভাজনমূলক রাজনীতির কোনো বিকল্প নেই। ভারতে সমসাময়িক রাজনীতিকে শুধু এই অলিগোর্কিক করপোরেটতন্ত্রই নয়, ১৯২৫ সালে তৈরি হওয়া আরএসএস’র ভূমিকাও অবিচ্ছেদ্য উপাদান।

ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে উগ্র দক্ষিণপন্থার তাই একটি উপাদান যদি শাসক ঘনিষ্ঠ অলিগোর্কি হয়, তবে অন্যটি অবশ্যই আরএসএস-এর নেতৃত্বে পরিচালিত হিন্দুত্ববাদী শক্তি। ২০১৪ সালের সময় থেকেই এই করপোরেট-সাম্প্রদায়িক আঁতাতে সমাসন্ন পদধ্বনি শোনা গেছিল।

সমকালীন পৃথিবীতে উগ্র দক্ষিপন্থার যে বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায়, ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সমস্ত বৈশিষ্ট্যই আরএসএস’র কার্যকলাপে স্পষ্ট। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার যে পরিপ্রেক্ষিত আমাদের গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের ভিত্তি, সমান নাগরিকত্বের স্বীকৃতিতে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের মূল সুরটি সামাজিক ন্যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের নীতিগুলি প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা পেয়েছে, আরএসএস সেই প্রতিটি মৌলিক ধারণার বিরুদ্ধে কঠোরতম অবস্থানে দৃঢ়।

সংবিধানের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতঃ একটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা

চূড়ান্ত কমিউনিস্ট বিরোধী মিথ্যাচার করেও যেটা লোক চক্ষুর আড়াল করা যাচ্ছে না, তা হলো আরএসএস’র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে শুধু অনুপস্থিত থাকাই নয়, বরং তার সক্রিয় বিরোধিতাই আরএসএস এবং হিন্দুত্ববাদীদের উত্তরাধিকার। স্বভাবতই স্বাধীনতা আন্দোলনে অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার যে লক্ষ্য তাকে সম্পূর্ণ করার প্রয়াসে দেশের সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায় বা যুক্তরাষ্ট্রবাদের মতো মৌলিকভিত্তিগুলির বিরোধিতা যে তারা করবে তা নিয়ে বিতর্কের কারণ নেই।

আসলে এ দেশের জাতীয়তাবাদ পাশ্চাত্যের জাতীয়তাবাদের ধারণার থেকে ভিন্ন। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা এর মূল ঊৎস। আরএসএস’র স্বাধীনতা আন্দোলন বিরোধী অবস্থানের মূল যুক্তি ছিল - জাতীয়তাবাদের ভিত্তি মূলত সাংস্কৃতিক। প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেও যে হিন্দুত্ব কোনও ধর্মীয় মতবাদ না, কিন্তু সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের নামে যে নতুন সংজ্ঞা তারা সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ও জাতীয়তাবাদের বিকল্প হিসেবে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা করল, তা কিন্তু মূলত ব্রাহ্মণ্যবাদ কেন্দ্রিক। স্বভাবতই এই জাতীয়তাবাদ সংখ্যালঘু-বিরোধী বর্ণাশ্রম সমর্থক এবং সাম্রাজ্যবাদ অনুসারি।

২০১৪ সালে শপথ নেবার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মোদি ঘোষণা করেছিল যে, সে হিন্দু জাতীয়তাবাদী। আর এখন তো আমরা প্রতিমুহূর্তে শুনছি, যে যারাই মোদি-বিরোধী তারাই জাতীয়তা-বিরোধী। এমনকী, আদানি ব্যবসায়ের সাম্রাজ্যের যারা বিরোধিতা করছে তারাও নাকি ভারত-বিরোধী ধান্ধার ধনতন্ত্রের সমর্থক না হলে জাতীয়তাবাদী হবার মর্যাদা পাওয়া যাবে না।

সুতরাং, সংবিধানকে অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল করাটাই লক্ষ্য। জাতি রাষ্ট্রের যে তিনটে স্তম্ভ - প্রশাসন, আইনসভা এবং বিচারব্যবস্থা তার ওপরে তীক্ষ্ণ আক্রমণ এই সময়ের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। বিগত বাজেট অধিবেশনে কার্য বিবরণীর বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করেছেন, এই অধিবেশনেই সবচেয়ে কম কাজ হয়েছে লোকসভায় এবং কার্যত এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে ট্রেজারি বেঞ্চ।

একইভাবে আমরা লক্ষ করছি, কীভাবে সরকার সুপ্রিম কোর্ট সহ বিভিন্ন আদালতে বিচারক নিয়োগে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে। এটাও সমকালীন ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। এর জাজ্বল্যমান উদাহরণ ইজরায়েলের ঘটনাবলি।

সাংবিধানিক মূল কাঠামো এবং তার স্তম্ভগুলিকে পর্যুদস্ত করতে গিয়ে সমস্ত অন্যান্য স্বাধীন সংস্থাগুলিও চূড়ান্ত আক্রমণের সম্মুখীন। নির্বাচন কমিশন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, ইডি, সিবিআই সবই শাসকদলের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছে। এটাই নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রের অনিবার্য লক্ষণ।

ক্ষতবিক্ষত বুনিয়াদ

সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞান, ইতিহাস, যুক্তিবাদের উপরে আক্রমণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এটা তা শুধুমাত্র এনসিআরটি পাঠ্যবইতে মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস বা গান্ধীহত্যায় আরএসএস’র ভূমিকা বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ নয়, আসলে গূঢ় লক্ষ্য হচ্ছে ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাটাকেই নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। সংকীর্ণ ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রের নির্মাণ। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রামের ফলশ্রুতি যে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের কাঠামো তার নির্যাসকে ধ্বংস না করে এই নতুন নির্মাণ সম্ভব নয়।

আজকের স্বৈরচারের সাম্প্রতিকতম অভিযানের এটাই মর্মবস্তু। সুতরাং যদি ভারতীয় সমনাগরিকত্বের নির্মাণ না করা যায় তাহলে এই হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রনির্মাণ সম্ভব নয়।

প্রতিরোধের আহ্বান

যে চূড়ান্ত জনবিরোধী করপোরেটমুখী অর্থনীতি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে, তা সত্ত্বেও সমস্ত নাগরিকের প্রতিবাদের বিস্ফোরণ কেন ঘটছে না, কেন নির্বাচনগুলিতে এখনও বিজেপি বেশ কিছুটা সমর্থন বজায় রাখতে পারছে এবং তার ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তি চূড়ান্ত আধিপত্যবাদী আগ্রাসনকে টিঁকিয়ে রাখতে পারছে, তার উত্তর বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে প্রতিরোধের মর্মবস্তু রূপান্তরের মধ্যেই। দৈনন্দিন জীবন-জীবিকার সংগ্রাম, ঐক্যের সংগ্রাম, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে রক্ষা করার সংগ্রাম - এইসব উপাদান এবং মাত্রাগুলিকে সূত্রবদ্ধ করে আরএসএস-বিজেপি’র নেতৃত্বে চলা করপোরেট সাম্প্রদায়িক আঁতাতের বিরুদ্ধে ব্যাপকতম গণসমাবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে।