৬০ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ / ৩০ চৈত্র, ১৪২৯
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডে শহিদদের স্মরণে
শংকর মুখার্জি
তেরোই এপ্রিল শিখ নববর্ষ। নববর্ষের দিন বৈশাখী উৎসবে মিলিত হন পাঞ্জাবের মানুষ। ১৯১৯ সালের ওই দিনেই ঘটেছিল জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড। ভারতে দুশো বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই হত্যাকাণ্ডের নায়ক ছিলেন জেনারেল ডায়ার।
চারদিকে উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রবেশ ও প্রস্থানের একমাত্র পথটি খুবই সংকীর্ণ। নববর্ষের দিন বিকেলে কয়েক হাজার মানুষ ওই ময়দানে জমা হয়েছিল প্রতিবাদ জানাতে। শহরের প্রশাসন এই জমায়েতের ব্যাপারে অবগত ছিল। কোনো নিষেধাজ্ঞাও জারি করেনি তারা। রাউলাট আইন-বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনে ১০ এপ্রিল থেকে অমৃতসরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডায়ারকে।
১৩ এপ্রিল বিকেলে সভা তখন সবে শুরু হয়েছে। হনস রাজ নামে এক স্থানীয় নেতা সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছেন। মাঠও প্রায় ভরতি। পঞ্চাশ জনের মতো ইয়োরোপীয় ও দেশীয় সেনা নিয়ে সেসময়ে জালিয়ানওয়ালাবাগে হাজির হয় ডায়ার। সমাবেশে জমায়েত হওয়া মানুষ ডায়ার ও তার সেনাদের দেখে ভাবেনি যে তারা গুলি চালাবে। কিন্তু গুলি চালানোর নির্দেশ দিল ডায়ার। গুলি নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ চালাল সেনারা। ১৬৫০ রাউন্ড গুলি চলেছিল। গুলির হাত থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে মাঠ থেকে বেরনোর কোনো উপায় নেই। মাঠের মাঝে একটা কুয়ো, তাতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করলেন কিছু জন। আর বাকিরা, গুলির সামনে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রতিবাদে নাইট উপাধি ত্যাগ করলেন। তবে গান্ধী মনে হয়, এব্যাপারে সহমত ছিলেন না। উপাধি ত্যাগ করার কথা জানিয়ে বড়লাটকে দেওয়া রবীন্দ্রনাথের চিঠি প্রসঙ্গে গান্ধী বলেছিলেনঃ “পাঞ্জাবের বীভৎসতায় কবি একটা অগ্নিবর্ষী চিঠি লেখেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটা অকাল পরিণতি। কিন্তু এর জন্য তাঁকে দোষারোপ করা যাবে না।’’ জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের সময় ভগৎ সিংয়ের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। পরে তিনি জালিয়ানওয়ালাবাগে আসেন, এখান থেকে এক মুঠো মাটি তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন। এই হত্যাকাণ্ড তাঁর কিশোর মনে বিরাট প্রভাব ফেলেছিল।
কত জন সেদিন শহিদ হয়েছিলেন সেই সংখ্যা আজও সঠিক জানা যায় না। এই হত্যাকাণ্ডের লোকদেখানো তদন্তে ব্রিটিশ সরকার হান্টার কমিটি গড়েছিল। তাদের হিসেবে সংখ্যাটা ছিল ৩০০ জনের মতো। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের তদন্ত কমিটি বলেছিল এক হাজারের বেশি। অমৃতসরের পার্টিশন মিউজিয়ম দীর্ঘ তথ্যানুসন্ধান করে সেদিনের হত্যাকাণ্ডে শহিদদের একটা তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় রয়েছে ৫৪৪ জন শহিদের নাম। তবে এটা সম্পূর্ণ তালিকা বলে তারাও দাবি করে না। শহিদদের মধ্যে শিশু ও মহিলারাও ছিলেন। আহত হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ। আসলে কোনো সরকারি অফিসার সেদিন মাঠে এসে খোঁজ নেয়নি কজন মারা গিয়েছিল গুলিতে। তাই সরকারের কাছে মৃত মানুষের সংখ্যার কোনো হিসাব ছিল না।
ওই দিন রাত্রি আটটা থেকে শহরে জারি হয় কারফিউ। আহতদের ময়দান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এপ্রিল মাসের পাঞ্জাবের প্রখর রোদে বহু আহত মানুষ মাঠেই প্রাণ হারান। প্রতক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন, সেদিন চিল-শকুন-শেয়ালে মরা মানুষের মাংস খেয়েছিল। পরেরদিন অমৃতসর শহরে গণঅন্ত্যেষ্ঠিক্রিয়া হয়।
।। দুই ।।
অমৃতসরের ঘটনায় লাহোর, গুজরানওয়ালা অশান্ত হয়ে ওঠে। অমৃতসর, লাহোরে ১৫ এপ্রিল, গুজরানওয়ালায় ১৬ এপ্রিল এবং পাঞ্জাবের আরও তিন জেলায় ২৪ এপ্রিল থেকে সামরিক আইন জারি হয়। ৯ জুন পর্যন্ত সামরিক আইন চলেছিল।
সামরিক আইনে পাঞ্জাবের মানুষের ওপর এক বর্বর নির্যাতন চলে। গোটা অমৃতসর শহরটাকেই কারাগার বানিয়ে ফেলেছিল সামরিক বাহিনী। যত্রতত্র মানুষকে চাবুক মারা হতো, করা হতো গ্রেপ্তার। প্রহারে অজ্ঞান হয়ে গেলেও চাবুক মারা বন্ধ হতো না। যেখানে ইয়োরোপিয়ান ডাক্তার শেরউড নিগৃহীত হয়েছিলেন (পরে ঘটনার বিবরণ আছে), সেখান দিয়ে যেতে হলে নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে মাটিতে বুক-পেট ঘষে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে বাধ্য করা হতো। তখন চলত সেনাদের ভারি বুটের লাথি, আর বন্দুকের বাট দিয়ে মার।
অমৃতসরে যেমন জেনারেল ডায়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তেমনি লাহোরকে শায়েস্তা করার ভার পড়েছিল কর্নেল জনসনের ওপর। কাশুরে জনগণের ওপরে সামরিক নির্যাতন চালিয়ে কুখ্যাতি কুড়িয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কে ডোভটন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল ম্যাকরে। লাহোরে একটি কলেজের সামনে সরকারি পোস্টার খুলে দেবার অপরাধে ৩০০ ছাত্র এবং অধ্যাপককে মে মাসের গরমে তিন মাইল হাঁটানো হয়েছিল। লাহোরেই এমন সামরিক কোর্ট তৈরি করা হয়েছিল, যারা কোনো বিচার ছাড়াই চাবুকমারা, জরিমানা ও গ্রেপ্তারের বিধান দিত। কাশুরে সামরিক শাসনের বশ্যতা মেনে নেওয়ার প্রতীক হিসেবে হাজার হাজার মানুষকে রাস্তায় কপাল ঠেকাতে বাধ্য করা হতো। এখানে এক ১১ বছরের ছেলের বিরুদ্ধে রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
পাঞ্জাবে জারি হওয়া সামরিক আইনে বিভিন্নভাবে ২৯৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। শাস্তি হয় ২১৮ জনের। শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৫১ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৪৬ জনের যাবজ্জীবন, ২ জনের ১০ বছরের জেল, ৭৯ জনের ৭ বছরের জেল, ১০ জনের ৫ বছরের জেল, ১৩ জনের ৩ বছরের জেল এবং ১১ জনের কম সময়ের জেল হয়। লাহোর থেকে প্রকাশিত ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদক কালীনাথ রায়েরও দেড় বছরের জেল হয়েছিল রাজদ্রোহমূলক সম্পাদকীয় লেখার অপরাধে। তিন মাস পত্রিকা প্রকাশে নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়। বিখ্যাত পাঞ্জাবী ঔপন্যাসিক নানক সিং ‘খুনি বৈশাখী’ নামে এক দীর্ঘ কবিতা লিখেছিলেন। সরকার বেআইনি ঘোষণা করেছিল এই কবিতাকে।
।। তিন ।।
দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা পরিষদে ১৯১৯ সালের ১৮ মার্চ পাশ হয় অ্যানারিক্যাল অ্যান্ড রেভোলিউশনারি ক্রাইমস অ্যাক্ট ১৯১৯; এটাই রাউলাট আইন নামে পরিচিত। এই আইনে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র জনগণের নাগরিক অধিকারসমূহকে সম্পূর্ণভাবে খর্ব করে। যে কোনো ভারতীয়কে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি এবং গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয় পুলিশকে। এমনকী এই আইনবলে দুবছর পর্যন্ত অভিযুক্তকে জেলেও পুরে রাখা যেত কোনো বিচার ছাড়াই। অন্যদিকে অভিযুক্ত বা অপরাধীর বিচার করতে পারবে শুধুমাত্র প্রাদেশিক সরকারের মনেনীত তিনজন হাইকোর্টের বিচারক। অভিযুক্তদের জবানবন্দি করা হতো গোপনে। কোনো জুরি থাকবে না। থাকবে না অভিযুক্তদের উকিল নিয়োগের অধিকার। সংখ্যাগরিষ্ঠ শেতাঙ্গ সদস্যদের ভোটে বিল পাশ হয় এবং এই আইন তৈরি হয়। শঙ্করণ নায়ার ছাড়া কোনো ভারতীয় এই বিলে সমর্থন দেননি। পরে নায়ারও পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর আগে মহম্মদ আলি জিন্না এবং মজহর-উল-হক কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। তিন বছরের জন্য এই আইন বলবৎ থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। প্রসঙ্গত, ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়। এর ছমাস পরেই ভারতরক্ষা আইনের মেয়াদ শেষ হবার কথা ছিল। তাই বৈপ্লবিক ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ দমনের লক্ষ্যে ভারত সরকার এই দানবীয় আইন প্রণয়ন করেছিল।
এই কুখ্যাত আইনের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের ডাক দেন গান্ধীজি। ৬ এপ্রিল হরতাল হয়। পাঞ্জাবের জেলাগুলিতে হরতালে ব্যাপক সাড়া পড়ে। প্রথমে ঠিক ছিল হরতাল হবে ৩০ মার্চ। পরে দিন পরিবর্তন হয়। সে খবর দেশের সব জায়গায় পৌঁছায় না। ৩০ মার্চ দিল্লি, অমৃতসরে হরতাল হয়ে যায়। হরতালে অমৃতসর শান্ত থাকলেও দিল্লিতে পুলিশ জনতার সংঘর্ষ হয়। এখানে কয়েকজনের মৃত্য হয়, বহু মানুষ আহত হয়। ব্রিটিশ নার্সরা আহতদের শুশ্রূষা করতে অস্বীকার করে। ৪ এপ্রিলের ঘটনার প্রতিবাদে জামা মসজিদে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের এক বিশাল জমায়েত হয়। ১০ ও ১১ এপ্রিল হরতাল হয় বোম্বে শহরে। কলকাতায় হরতাল হয় ১১ এপ্রিল। হরতালের দিন কলকাতায় হিন্দু ও মুসলিম মানুষদের জমায়েত হয় নাখোদা মসজিদে। ১২ এপ্রিল পুলিশ-সেনার সাথে জনগণের সংঘর্ষ হয়, ৯ জন শহিদ হয় কলকাতায়। এর আগে ৯ এপ্রিল ছিল রামনবমীর দিন। ওইদিন অমৃতসরে বিশাল মিছিল হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উল্লখযোগ্য নজির সৃষ্টি করেছিল এই মিছিল। হান্টার কমিটির রিপোর্ট বলছেঃ “মুসলমানরা বিশাল সংখ্যায় যোগ দিয়েছিল... হিন্দু-মুসলমান ঐক্যে অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক আশ্চর্য নমুনা - নানান মতের মানুষ এক পাত্র থেকে জল, খাবার খেয়েছে।’’
এর পরের দিন মাইকেল ও’ডায়ারের (ইনি জেনারেল ডায়ার নন) প্রশাসন পাঞ্জাবের দুই জনপ্রিয় নেতা ডাক্তার সত্যপাল এবং ডক্টর সৈফুদ্দিন কিচলুকে অজ্ঞাতস্থানে নির্বাসিত করেন। এই সময়ে গান্ধীজিকে পাঞ্জাবে প্রবেশ করতে না দেবারও খবর আসে। এর বিরুদ্ধে অমৃতসর শহরে মিছিল হয় ১০ এপ্রিল। নিরস্ত্র মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। জনতার হাতে পাঁচ ইয়োরোপীয় নিহত হয়। উত্তেজিত জনতা ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এবং চার্টার ব্যাঙ্ক (নিহতদের মধ্যে এই ব্যাঙ্কের তিন জন ছিলেন), টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, টাউন হল, চার্চ পুড়িয়ে দেয়। টেলিগ্রাফ তার ছিঁড়ে দেয়, দুটি রেলস্টেশনে আক্রমণ চালায়। শেরউড নামে এক মহিলা ডাক্তারও উত্তেজিত জনতার হাতে আক্রান্ত হয়। পুলিশের গুলিতে প্রায় ৩০ জন আন্দোলনকারী মারা যায়। ১১ এপ্রিল মৃতদেহ নিয়ে অমৃতসর শহরে শোকযাত্রা বের হয়। এরপরই ১৩ তারিখে হত্যাকাণ্ড ঘটে।
জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার আগে অশান্ত হয়েছিল আমেদাবাদও। ১৪ এপ্রিল আমেদাবাদ আসেন গান্ধীজি। আমেদাবাদে জনগণের হিংসাত্মক কার্যকলাপের তিনি নিন্দা করেন, এবং এর প্রায়শ্চিত্তে তিন দিনের অনশনে বসেন। উপবাস ভাঙার পর ১৮ এপ্রিল গান্ধীজি সাময়িকভাবে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের স্থগিত ঘোষণা করলেন। এই আন্দোলন শুরু করাকে “এক হিমালয়প্রমাণ ভুল” (a blunder of Himalayan miscalculation) বলে বর্ণনা করলেন তিনি।
।। চার ।।
এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ডায়ারের কোনো শাস্তি হয়নি। তাকে শুধু সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডস-এ ডায়ারের সমর্থনে প্রস্তাব পেশ হয়। সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ রক্ষণশীল পত্রিকা ‘মর্নিং পোস্ট’। তারা ডায়ারের জন্য একটা তহবিল তৈরি করে। এই তহবিলে ২৬ হাজার পাউন্ড উঠেছিল। এমনকী ‘দ্য জঙ্গল বুক’-এর লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিং-ও এই তহবিলে টাকা দিয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের খবর তৎকালীন ইংরেজ মালিকানাধীন ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় ভিতরের পাতায় ছোটো করে বেরিয়েছিল ১৪ এপ্রিল। আর ইংল্যান্ডে আট মাস পর ডিসেম্বর মাসে বেরিয়েছিল এই খবর ‘ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান’ এবং ‘অবজারভার’ পত্রিকায়।
গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ কেউই মাইকেল ও’ডায়ার এবং জেনারেল ডায়ারের শাস্তির জন্য উদগ্রীব ছিলেন না। গান্ধী বলেছিলেনঃ “আমরা ডায়ারের শাস্তি চাই না। আমাদের প্রতিশোধ নেবারও কোনো ইচ্ছা নেই। আমরা চাই এই ব্যবস্থার পরিবর্তন, যে ব্যবস্থা ডায়ারের জন্ম দেয়।” রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেনঃ “পীড়ন যতই কঠিন হউক সহিব, কিন্তু আত্মাবমাননা কিছুতেই সহিব না - পাঞ্জাবে এইরূপ পৌরুষের বাণী শুনিবার আশা করেছিলাম।...”।
জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে কংগ্রেস। তবে এই নির্মাণকে রবীন্দ্রনাথ সমর্থন করতে পারেননি। ‘শান্তিনিকেতন’ পত্রিকায় কবি লেখেনঃ ‘‘কোনও চিহ্নের দ্বারা পাঞ্জাবের এই ঘটনা চিরস্মরণীয় করা আমাদের পক্ষে গৌরবের নহে। বীরত্বই স্মরণের বিষয়, কাপুরুষতা নৈব নৈব চ।... যেখানে পীড়নকারী ও পীড়িত কোনও পক্ষেই বীর্য্যের কোনও লক্ষণ দেখা গেল না, সেখানে কোন্ কথাটা সমারোহপূর্ব্বক স্মরণ করিয়া রাখিব?”