৫৮ বর্ষ প্রথম সংখ্যা / ১৪ আগস্ট ২০২০ / ২৯ শ্রাবণ ১৪২৭
কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর জীবনাবসানে পলিট ব্যুরো’র শোকপ্রকাশ
কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর জীবন ও কাজের উল্লেখ করে পলিট ব্যুরো বলেছে, ১৯৬০-র দশকের গোড়ায় ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ অর্জন করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৮১ সালে রাজ্য বিধানসভার সদস্য হয়েছিলেন। আরও তিনবার তিনি বিধায়ক হন, পরিবহণ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রাজ্যসভারও সদস্য ছিলেন একটি মেয়াদে। শ্রমিকদের বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। সিআইটিইউ’র বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতিও ছিলেন। ১৯৭৮সালে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন ২০০২ সালে। তিনি কারাবাস করেছেন, আত্মগোপনেও ছিলেন। তাঁর কন্যা ও পশ্চিমবঙ্গের পার্টি সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।
কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, শ্রমিকশ্রেণির অধিকারের সপক্ষে জোরালোভাবে লড়াই করতেন তিনি, ছিলেন দক্ষ সাংসদও। শোক জ্ঞাপন করেছেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত। পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত বলেছেন, ছাত্র ফ্রন্ট থেকে যখন পার্টিতে যোগ দিই তখন কলকাতা জেলা থেকে শ্যামলদা ছিলেন প্রথম পার্টির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। আমার পার্টিজীবনের গোড়ার দিকে তিনি যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা আমি সব সময়ে মনে রাখব। প্রিয় কমরেড শ্যামলদার মৃত্যুর খবরে খুবই বেদনাহত বোধ করছি। পলিট ব্যুরো সদস্য হান্নান মোল্লা বলেছেন, তাঁর মৃত্যু গণতান্ত্রিক ও শ্রমিকশ্রেণির আন্দোলনের বড়ো ক্ষতি। পার্টি এক বড়ো মাপের নেতাকে হারালো। আমার সঙ্গে ৬০ বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটল, যা ব্যক্তিগত ক্ষতিও বটে। পলিট ব্যুরো সদস্য এম এ বেবি, জি রামকৃষ্ণান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পলিট ব্যুরো’র সদস্য মানিক সরকার বলেছেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকে ত্রিপুরার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়। পর্যায়ক্রমে তা আরও গভীর ও নিবিড় হয়। ত্রিপুরার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিসরে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। পার্টির বিহার, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, ওডিশা রাজ্য কমিটির পক্ষে গভীর শোক জানানো হয়েছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক এন রাম বলেছেন, অনেকদিন ধরেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। ছিলেন এক দৃঢ়চেতা কমরেড।
সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেছেন, কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর মৃত্যুতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন এক বরিষ্ঠ নেতাকে হারালো। খুবই কম বয়সে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ছাত্র আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার পরে তিনি শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সহ সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহণ, বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তিনি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। এইসব ক্ষেত্রের জাতীয় ফেডারেশনের নেতৃত্বের দায়িত্বেও ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ছিলেন। ১৯৯১-এ তিনি সিআইটিইউ জাতীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হয়েছিলেন, পঞ্চদশ সম্মেলন পর্যন্ত ছিলেন সহ সভাপতি। যৌথ আন্দোলন গড়ার ক্ষেত্রে এবং গণসংগঠনগুলিকে নিয়ে জনগণের জীবনজীবিকার প্রশ্নে তাঁর লড়াই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সারা ভারত কৃষক সভা গভীর শোক জ্ঞাপন করেছে। এসএফআই’র সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা অর্পণ করেছেন।
কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর প্রয়াণে রাজ্যের রাজনৈতিক ও বিভিন্ন মহল থেকে গভীর শোকপ্রকাশ করা হয়েছে। সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এবং সিআইটিইউ’র পশ্চিমবঙ্গ কমিটির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। সিআইটিইউ’র পশ্চিমবঙ্গ কমিটির পক্ষ থেকে শোক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যের বেদনাহত শ্রমিকশ্রেণীর প্রতি আমাদের আহ্বান শোক বিহ্বলতার ঊর্ধ্বে উঠে আজীবন সংগ্রামী শ্যামল চক্রবর্তীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই মুহূর্তে রাজ্য ও দেশ যে গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলেছে তার বিরুদ্ধে সংগ্রামে শামিল হোন। সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটি কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করছে এবং তাঁর কন্যা ও সকল পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনাজ্ঞাপন করছে। সিআইটিইউ তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার সংকল্প ঘোষণা করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন, রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনের পক্ষ থেকে কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য ও অধীর চৌধুরী শোকপ্রকাশ করে বলেছেন, শ্যামল চক্রবর্তী আন্তরিকভাবে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য লড়াই করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শ্রমিক আন্দোলনে শূন্যতার সৃষ্টি হলো।
যৌথ শ্রমিক আন্দোলন ও বাম আন্দোলনে কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর অবদানের উল্লেখ করেও বহু সংগঠনের নেতা শোকপ্রকাশ করেছেন। আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য ও রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী শোকপ্রকাশ করেছেন তাঁর জীবনাবসানে। শোক জানিয়েছেন সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআইএম-এল(লিবারেশন), এনসিপি, পিডিএস সহ ১৬টি বামপন্থী ও সহযোগী দলের নেতৃবৃন্দও।
শোক প্রকাশ করেছেন এআইসিসিটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু, পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রমিক কর্মচারী ও শিক্ষকদের যুক্ত আন্দোলনে মঞ্চ ১২ই জুলাই কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সমীর ভট্টাচার্য ও তপন দাশগুপ্ত, রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় শঙ্কর সিনহা, পিয়ারলেস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চ্যাটার্জি, ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই ওয়ার্কমেন্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তরুণ ভরদ্বাজ, পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আধিকারিক সমিতির সম্পাদক সুবীর চক্রবর্তী ও সভাপতি অসীম ঘোষ সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সারা ভারত বীমা কর্মচারী সমিতি, বিইএফআই এবং বিইএফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের পক্ষ থেকেও শোকজ্ঞাপন করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
তদানীন্তন পুর্ব পাকিস্তানের খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমার গোয়ালমাঠ গ্রামে ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর জন্ম। পিতা সুশীল চক্রবর্তী, মাতা অন্নপূর্ণা দেবী। পাঁচ ভাই ও তিন বোন। উদ্বাস্তু হয়ে তাঁদের পরিবার প্রথমে নদীয়ার চাকদহে কিছুদিন ছিল। তারপর দমদম নলতা স্কুল রোড এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। উদ্বাস্তু পরিবারে শ্যামল চক্রবর্তীর ছোটোবেলা খুবই দারিদ্র্যের মধ্যে কেটেছে। ১৯৫১ সালে তিনি দমদম রায়বাহাদুর বৈদ্যনাথ ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে ডাবল প্রোমোশন পেয়ে ১৯৫৪ সালে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল। তিনি বার্ষিক ম্যাগাজিনে লেখা দিতেন, দেওয়াল পত্রিকায় লেখার কাজ করতেন। ১৯৫৯ সালে তিনি স্কুল ফাইনাল পাশ করেন। তারপর দমদম মতিঝিল কলেজে ভর্তি হন। মতিঝিল কলেজে পড়ার সময় কমরেড সুভাষ চক্রবর্তী ও কমরেড রবীন মণ্ডল প্রমুখের সঙ্গে ছাত্র ফেডারেশন ও ছাত্র সংসদ পরিচালনায় যুক্ত হন। এখান থেকেই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ১৯৬২ সালে এবং এরপর বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে তিনি স্নাতক হন। বিদ্যাসাগর কলেজে তিনি বিপিএসএফ’র একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র-সংসদের নির্বাচনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
স্কুলে পড়ার সময়েই কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। ছাত্র আন্দোলন থেকে যুক্ত হন কমিউনিস্ট পার্টিতে। পুলিশি অত্যাচার ও বিনাবিচারে কারারুদ্ধ ছিলেন দীর্ঘ সময়। পশ্চিমবঙ্গে ছয় ও সাতের দশকের উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির নেতৃত্বে ছিলেন কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী। সেই সময় বিপিএসএফ’র শীর্ষ নেতা হিসেবে দীনেশ মজুমদার-বিমান বসু-সুভাষ চক্রবর্তী-শ্যামল চক্রবর্তীর নাম একসাথেই উচ্চারিত হতো। বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থী বিচ্যুতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ৬ ও ৭ এর দশকের ছাত্র আন্দোলনে বিপিএসএফ এবং পরবর্তীকালে এসএফআই’র ভিত্তি সুদৃঢ় ও প্রসারিত করতে গুরুত্বপূ্র্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে এসএফআই গঠিত হলে তার রাজ্য নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে শিবপুর সম্মেলনে তিনি এসএফআই’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বারাকপুর রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত এই দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। এসএফআই-র সর্বভারতীয় স্তরেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। দীর্ঘদিন সর্বভারতীয় যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন।
কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন ১৯৫৯ সালে। ১৯৭৮ সালে শিশির মঞ্চে অনুষ্ঠিত রাজ্য সম্মেলন থেকে তিনি পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৫ সালের রাজ্য সম্মেলনের পর তিনি পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। বিগত রাজ্য সম্মেলনে তিনি রাজ্য কমিটির সম্মানিত সদস্য হন। ২০০২ সালে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে শ্যামল চক্রবর্তী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
ছাত্র আন্দোলনের পর কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী শ্রমিক আন্দোলনে অংশ নেন। পরিবহণ শিল্প, বিদ্যুৎ শিল্প সহ কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি সর্বভারতীয় স্তরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি হিসেবেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে গ্রামীণ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবীদের সংগঠনে নিয়ে আসার প্রশ্নে তিনি উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই প্রশ্নে একটি প্রচার পুস্তিকাও তিনি লিখেছিলেন। ২০১৭ সালে সিআইটিইউ’র রাজ্য সম্মেলনে তিনি পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। সিআইটিইউ’র সর্বভারতীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। গত সর্বভারতীয় সম্মেলনে সংগঠনের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন।
রাজ্যের প্রথমে ছাত্র আন্দোলন এবং পরে মহিলা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী কমরেড শিপ্রা ভৌমিকের সঙ্গে শ্যামল চক্রবর্তীর বিবাহ হয়। কমরেড শিপ্রা ভৌমিক ১৯৮২ সালে প্রয়াত হন। তাঁদের একমাত্র কন্যা উষসী চক্রবর্তী অধ্যাপনা করেন। তিনি অভিনয় জগতের সঙ্গেও যুক্ত।
মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক সুহৃদ মল্লিক চৌধুরীর জীবনাবসান হলে ১৯৮১ সালের জুন মাসে উপনির্বাচনে শ্যামল চক্রবর্তী এই কেন্দ্রে বামফ্রন্টের পক্ষে সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালের বিধানসভার সাধারণ নির্বাচনেও এই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন তিনি। ১৯৮৭ সালে পুনরায় বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পরে রাজ্যের পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী হন তিনি। ১৯৯১ সালেও তিনি মানিকতলা থেকে বিধানসভায় জয়ী হন। তবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জয়ী হতে পারেননি।
কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী রাজ্যসভা সদস্য হন ২০০৮ সালের ৩ এপ্রিল। সাংসদ ছিলেন ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত। সাংসদ হিসেবেও রাজ্যের স্বার্থে এবং দেশের শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
শ্যামল চক্রবর্তী ছিলেন একজন সুবক্তা ও সুলেখক। সাবলীল ভাষায় লেখার জন্য তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। বহু পুস্তক ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন ‘৬০-৭০ ছাত্র আন্দোলন’ শীর্ষক বইয়ে। এটি প্রথম খণ্ড। দ্বিতীয় খণ্ড রচনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সংগ্রহ করছিলেন তথ্য।
তাঁর প্রকাশিত বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, কাশ্মীর-অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ, ১৯৯৮; সমাজতন্ত্র কী এবং কেন, ১৯৭৮; তিন প্রসঙ্গ, ২০০১; গরু ও ত্রিশূল, ২০০১; আর্যরা কি ভারতের আদিম অধিবাসী, ২০০২; ঝড়ের খেয়া, ২০০৮; ভারতীয় সমাজ বিকাশের ধারা ইত্যাদি।