E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ প্রথম সংখ্যা / ১৪ আগস্ট ২০২০ / ২৯ শ্রাবণ ১৪২৭

দেশহিতৈষী’র নববর্ষঃ আমাদের অঙ্গীকার

অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়


১৬ আগস্ট, ২০২০ দেশহিতৈষী তার যাত্রা শুরুর ৫৭ বছর পার হয়ে এসে ৫৮ বছরে পদার্পণ করতে চলেছে। একটা মার্কসবাদী পত্রিকা হিসেবে এই সুদীর্ঘ পথ চলা কখনই সহজ সরল মসৃণ ছিল না, যেমন আজও নেই।

একদিকে দেশব্যাপী ভয়ঙ্কর সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িক শক্তির সর্বব্যাপী ভয়াল আক্রমণ, অপরদিকে রাজ্যে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শক্তির দুঃশাসন - এর বিরুদ্ধে শ্রমজীবী জনগণের সাহসী সংগ্রামের হাতিয়ার হয়ে দেশহিতৈষী সর্বদা পাশে থাকার লড়াই করে চলেছে। এর সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে মানবদেহে কোভিড-১৯ নামের এক অচেনা মারাত্মক অনুজীবীর আক্রমণ। যা অতিমারীর আকার নিয়ে অজস্র মানুষের প্রাণ নিয়ে চ‍‌লেছে এবং জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। এই অতিমারী রুখতে জনগণের সচেতনতা তৈরির কর্তব্য পালনের ভূমিকাও এই মুহূর্তে দেশহিতৈষী সাধ্যমতো গ্রহণ করে চলেছে। শ্রেণিশত্রু ও শাসকদের অজস্র আক্রমণ ও রাজনৈতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বিগত ৫৭ বছরে দেশহিতৈষী’র প্রকাশ কখনও বন্ধ হয়নি; কিন্তু এই অতিমারীরকালে ১২টি সপ্তাহ দেশ‍‌হিতৈষী’র প্রকাশ সম্ভব হয়নি। এই অচলাবস্থা আমরা দীর্ঘস্থায়ী হতে দিই নি। দেশহিতৈষী’র পাঠক, গ্রাহক ও অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষীর সহায়তায় দেশ‍‌হিতৈষী ১৯ জুন থেকে পুনরায় প্রকাশিত হচ্ছে ডিজিটাল সংস্করণসহ।

দেশহিতৈষী শুধু সংবাদ সাপ্তাহিক নয়, পার্টির মতাদর্শ প্রচারের হাতিয়ারও বটে। মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মতাদর্শ, আমাদের পার্টির কর্মসূচি, সময়ে সময়ে গৃহীত রাজনৈতিক প্রস্তাবই দেশহিতৈষী’র চালিকাশক্তি এবং নির্দেশিকা। আমরা সচেতন যে, তীব্র মতাদর্শগত সংগ্রাম এবং চর্চা ছাড়া পার্টির কর্মীবাহিনী এবং অনুগামী জনগণকে সংগ্রামী প্রেরণায় উজ্জীবিত এবং বিপ্লবী চেতনায় শানিত করা যায় না। জনগণকে বুর্জোয়া মতাদর্শের এবং সামন্তবাদী কুসংস্কারের প্রভাব থেকে মুক্ত করে লড়াইয়ের ময়দানে টেনে আনতে হলে পার্টির কর্মীদের মতাদর্শের ভিতকে আগে মজুবত করতে হবে। সেই কথা মনে রেখেই দেশহিতৈষী মতাদর্শগত প্রচারের ওপরেই শুরু থেকে জোর দিয়ে এসেছে। দেশহিতৈষী’র সুদীর্ঘ ইতিহাস একথা প্রমাণ করে। গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহ থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে শাসকশ্রেণিসমূহ তাদের নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলিকে আমাদের পার্টি, বামপন্থী আন্দোলন সম্পর্কে অপপ্রচার, বিকৃত তথ্য প্রচারে ব্যবহার করে, কমিউনিস্টবিরোধী প্রচারের হাতিয়ার হিসেবেই বাজার চলতি সংবাদমাধ্যমগুলি ব্যবহৃত হয়। সুতরাং, জনগণের স্বার্থবিরোধী, কমিউনিস্টবিরোধী সমস্তরকম প্রচারের মুখোশ খুলে দিয়ে জনগণের স্বার্থের বিষয়গুলি, কমিউনিস্ট মতাদর্শের বিষয়গুলিকেই দেশহিতৈষী প্রাধান্য দেবার চেষ্টা করে থাকে। শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুখপত্র - এই পরিচয়ে দেশহিতৈষী গর্ব অনুভব করে।

চরম দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের পর হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি তাদের চরম প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শ রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রে জোর করে চাপিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান, রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক কাঠামো সবকিছুই আজ প্রতিক্রিয়াশীল আক্রমণের মুখে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে তারা তাদের হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে পদক্ষেপ করতে চাইছে। শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নন, গণতান্ত্রিক চেতনার মানুষও আজ বিপন্নতার শিকার। কমিউনিস্ট মতাদর্শ, কমিউনিস্ট পার্টিকেই তারা তাদের পথের বাধা, সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে। তাই মতাদর্শের ওপর আক্রমণের সাথে সাথে হিন্দুত্ববাদী শক্তি কমিউনিস্টদের ওপর দৈহিক আক্রমণ চালাতেও দ্বিধা করছে না। তারা জানে কমিউনিস্ট পার্টিকে দুর্বল করে দিতে পারলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, মেহন‍‌তি মানুষদের জীবন-জীবিকার আন্দোলনও দুর্বল হয়ে পড়বে। এই চরম দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী শক্তি এবং তাদের মতাদর্শের বিরুদ্ধে দেশহিতৈষী তার মতাদর্শগত লড়াই অব্যাহত রেখে চলেছে। আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিক শাখা বিজেপি-সহ সঙ্ঘ পরিবারের ভয়ঙ্কর চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের বিষয় দেশহিতৈষী নিয়মিত উন্মোচন করে চলেছে। এই বিপদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার সর্বোচ্চ প্রয়াস জারি রেখেছে।

কেন্দ্রের শাসকদলের মতো একইভাবে রাজ্যের শাসকদলেরও সাধারণ শত্রু বামপন্থী মতাদর্শ, আমাদের পার্টি। এই দুই শাসকদলের আক্রমণ শুধু আমাদের পার্টির ওপর নয়, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেতে তারা গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সংসদীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ, মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন - সব কিছুর ওপরই স্বৈরাচারী আক্রমণ জোরদার করছে। বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস একই লক্ষ্যে একই স্বার্থে পরস্পরের পরিপূরক হয়ে কাজ করছে। এই বোঝাপড়ার নানা‍‌দিক দেশহিতৈষী পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে সদা সচেষ্ট থাকে।

নয়া-উদারবাদী অর্থনীতি এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে এবং পরিবেশ রক্ষার সপক্ষে শ্রমিক-কৃষক-সহ সমস্ত মেহনতি মানুষ যে লড়াই-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তাকে মূর্ত করে তুলতে দেশহিতৈষী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যে সংগ্রাম এবং কঠোর দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষ দিনযাপন করছে দেশহিতৈষী’র পাতায় তার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা দেশহিতৈষী জারি রেখে চলেছে।

মানবমুক্তির জন্য শ্রেণিসংগ্রামকে শক্তিশালী করতে মতাদর্শগত বিষয়ে এবং পরিস্থিতির বৈজ্ঞানিক মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বিশ্লেষণ করে আমাদের বিপ্লবী প্রত্যয় আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তাই জনগণের প্রকৃত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক চাহিদা উত্থাপন করে চলবে দেশহিতৈষী। পার্টিকে সংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ ও মতাদর্শে শানিত করার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে চলবে দেশহিতৈষী। দেশ‍‌হিতৈষী’র নববর্ষে এ আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।