৫৯ বর্ষ ২২ সংখ্যা / ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ / ২৯ পৌষ, ১৪২৮
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’কে পরাস্ত করাই প্রধান রাজনৈতিক কাজ
কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে ইয়েচুরি
সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি এবং তাম্মিনেনি বীরভদ্রম।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিজেপি-কে পরাস্ত করাই প্রধান লক্ষ্য। পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী ভোট এক জায়গায় আনার কৌশলই নেবে সিপিআই(এম)। কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিট ব্যুরোতে রাজনৈতিক লাইনের প্রশ্নে ঐকমত্য রয়েছে। হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির ৩ দিন ব্যাপী বৈঠক হায়দরাবাদের সুন্দরাইয়া বিজ্ঞান কেন্দ্রমে ৭ থেকে ৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পলিট ব্যুরো সদস্য মানিক সরকার।
৯ জানুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, এই বৈঠকে আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাব চূড়ান্ত করার জন্য এবং পাঁচ রাজ্যের আগামী বিধানসভা নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। ২৩তম পার্টি কংগ্রেস, যা আগামী এপ্রিল মাসের ৬ থেকে ১০ তারিখে কেরালার কান্নুরে অনুষ্ঠিত হবে, আমাদের পার্টিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী ২ মাস আগে এই খসড়া প্রকাশিত হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিট ব্যুরোতে রাজনৈতিক লাইনের প্রশ্নে ঐকমত্য রয়েছে।
দেশের পাঁচটি রাজ্যের আসন্ন ভোটে নির্বাচনী কৌশল প্রসঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, বিজেপি-কে পরাস্ত করাই প্রথম লক্ষ্য। মোদি সরকার দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, কার্যত দেশে মন্দা চলছে। পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি’ই বড়ো পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। জনগণের সম্পদ লুট চলছে। বিজেপি বিরোধী ভোট সর্বোচ্চ এক জায়গায় কীভাবে আনা যায় সেই কৌশলই নেবে সিপিআই(এম)। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের দেশের এক এক রাজ্যে এক এক রকম পরিস্থিতি রয়েছে। সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হয়।
উত্তরপ্রদেশ এবং পাঞ্জাব প্রসঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, সিপিআই(এম) উত্তরপ্রদেশ সমাজবাদী পার্টিকে সমর্থন করবে। ওই রাজ্যে সমাজবাদী পার্টি বৃহত্তম শক্তি। অন্য কোনো শক্তিকে নিয়ে সমঝোতা করে নির্বাচন লড়া যায় কিনা তা দেখার উদ্যোগ নিতে হবে। পাঞ্জাবে কংগ্রেস বড়ো শক্তি। সিপিআই(এম) পাঞ্জাবে প্রথমত বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। তারপর বিজেপি-কে হারানোর লক্ষ্যে লড়াই করবে। রাজ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জাতীয় স্তরে কোনো ফ্রন্ট হবে এমন ভাবা ঠিক নয়। একেক রাজ্যে এক এক রাজনৈতিক শক্তির বিন্যাস রয়েছে। এই বাস্তবতা বুঝে নির্বাচনী কৌশল নিতে হবে। অতীতেও আমরা দেখেছি কেন্দ্রীয় স্তরের জোট তৈরি হয়েছে নির্বাচনের পরে, আগে নয়।
বিজেপি’র দুর্নীতি প্রসঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, রাজনৈতিক দুর্নীতিকে আইনি বৈধতা দিয়েছে বিজেপি। এবারের নির্বাচন পর্বের আগে আবার নির্বাচনী বন্ড কেনার ঘোষণা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ। দেখা যাচ্ছে বিজেপি এই বন্ডের ৮০ শতাংশের বেশি টাকা পাচ্ছে। কেন্দ্রের শাসকদল হাজার হাজার কোটি টাকা নির্বাচনে খরচ করে। এই অর্থ শক্তি অবাধ নির্বাচনের পথে বাধা। নির্বাচন কমিশনকে দেখতে হবে যেন সকলের জন্য সমান সুযোগ থাকে।
তিনি বলেন, বিজেপি বিপদ গুণছে বলে এবারের নির্বাচনে তারা নানা পথ নেবে। পাঞ্জাবে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ তীব্র। এই কারণেই মেরুকরণের চেষ্টা করছে বিজেপি। উত্তরাখণ্ডে ভোট। সেখানে হরিদ্বারে ধর্ম সংসদের নামে ঘৃণা ছড়ানোর কাজ হয়েছে। দেশে গৃহযুদ্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। এসব করা হচ্ছে ভোটের কথা মাথায় রেখে। নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের অধিকার যেন রক্ষা করা হয়, আচরণবিধির বাইরে কেউ যেন যেতে না পারেন - কমিশনকে তা গ্যারান্টি করতে হবে। অন্যথায় কমিশন তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে।
তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় কংগ্রেসের সম্পর্কে অবস্থান প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, টিআরএস প্রধানকে বিজেপি’র সম্পর্কে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। পার্টির তেলেঙ্গানা রাজ্য সম্পাদক তাম্মিনেনি বীরভদ্রম এ প্রসঙ্গে বলেন, এখনও পর্যন্ত টিআরএস’র পক্ষ থেকে বিজেপি-কে পরাস্ত করার আহ্বান জানানো হয়নি। টিআরএস সরকারও জনবিরোধী নীতি নিয়ে চলছে, যার বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই জারি রয়েছে।