৫৯ বর্ষ ২২ সংখ্যা / ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ / ২৯ পৌষ, ১৪২৮
দেশে দ্রুত গতিতে বাড়ছে সংক্রমণ সাপ্তাহিক সংক্রমণের শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ কেন্দ্র ও রাজ্য
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশে করোনার দৈনিক সংক্রমণ সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী প্রায় দু’লক্ষ ছুঁয়ে ফেলেছে। গত ১২ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে সংক্রমণ ১৫.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ১.৯৪ যেমন হয়েছে, তেমনি অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা গত ২১১ দিনের রেকর্ড ভেঙেছে। এখন এই সংখ্যা ৯.৫৫ লক্ষ!
লক্ষণীয় ঘটনা হলো, দেশে কোভিড সংক্রমণের দু’বছর হতে চললো। কিন্তু কেন্দ্রের ক্ষমতায় বসেও বর্তমান উপযোগী স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে মোদি সরকার। আরও স্পষ্টত বললে, নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী কোনো উদ্যোগই নেননি। সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের পর সংক্রমণ আরও মারাত্মক প্রাণঘাতী হয়ে উঠলেও তিনি নির্লিপ্ত থেকেছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হেলায় উড়িয়ে দিয়েছেন। এখন ওমিক্রনের প্রভাবে তৃতীয় ঢেউ আসায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তিনি পর্যালোচনা বৈঠক করে দায় চাপিয়েছেন রাজ্যগুলির ঘাড়ে। সাম্প্রতিক সেই বৈঠকে তিনি ‘সতর্ক’ ও ‘সাবধান’ হওয়ার নানা পরামর্শ বিলিয়েছেন। এদিকে সংক্রমণ-পরিস্থিতির প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিলেও দেশে করোনায় মৃত্যুর আসল পরিসংখ্যান চাপা দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র।
এদিকে সাপ্তাহিক সংক্রমণের হারে দেশে শীর্ষে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ। এই হার বর্তমানে ৩২.১৮ শতাংশ, আর সমস্ত জেলার মধ্যে কলকাতার স্থান প্রথম স্থানে - ৬০.২৯ শতাংশ। এই সময়ে রাজ্যে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৪.০১ গুণ। এই নিরিখেও শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ। ৬ থেকে ১২ জানুয়ারির এই পরিসংখ্যানের সূত্রে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। প্রশ্ন উঠেছে, এখনই পরিস্থিতি এমন হলে, লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগমে গঙ্গাসাগর মেলার পর তা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে? তাদের আশঙ্কা এই মেলা বড়োসড়ো বিপদ ডেকে আনতে পারে।
এমনই একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কলকাতার বাবুঘাটে ১২ জানুয়ারি তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানিয়ে ধ্বনি তুলেছেন, “গঙ্গাসাগর মেলা জিন্দাবাদ”! অথচ পরিস্থিতির বিচার করে এই মেলা বন্ধের জন্য রাজ্যের বিশিষ্ট চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞরা বার বার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কর্ণপাত করেননি মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সরকার।
করোনা সংক্রমণের তীব্রতার মধ্যে পৌর নির্বাচন নিয়ে বিরোধীরা বার বার প্রশ্ন তোলা সত্ত্বেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত রাখার কথা বলেনি। এদিকে গত কয়েকদিন আগে রাজ্যের শাসকদলের সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাজ্যের পরিস্থিতি সাপেক্ষে নির্বাচন সহ সব কিছুই আগামী দু’মাস পিছিয়ে দেবার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বা শাসকদলের কোনো উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে আগের মতোই প্রকৃত তথ্য গোপন করছে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের তীব্রতার মধ্যে রাজনৈতিক প্রচার চালাতে পারছেন না প্রার্থীরা। নির্বাচনের রাজনৈতিক বিষয় ছাপিয়ে কোভিডজনিত সমস্যা বড়ো হয়ে দেখা দিচ্ছে। মহামারীর সময়কালের দায়িত্ববোধ থেকে বামফ্রন্ট কর্মীরা কোভিডবিধি যথাযথভাবে মান্য করেই প্রার্থীকে নিয়ে প্রচার সারছেন। কিন্তু তৃণমূল এবং বিজেপি’র সেসব মান্য করার বালাই নেই। তারা প্রচুর সংখ্যক লোকজনকে নিয়ে কোভিডবিধি পরোয়া না করেই প্রচার করে যাচ্ছে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, সংক্রমণের এই ভয়াবহতা সত্ত্বেও কিছু শর্ত আরোপ করে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিয়েছে হাইকোর্ট। এদিকে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে ৫টি আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু হাইকোর্ট যতই সুরক্ষাবিধির শর্ত দিক এবং মুখ্যমন্ত্রী মুখে করোনাবিধি মেনে চলার কথা বলুন, গঙ্গাসাগরে অবধারিতভাবেই হাজার হাজার সাধুকে অবলীলায় বিধি লঙ্ঘন করতে শুরুতেই দেখা যাচ্ছে।এর পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটাই এখন উদ্বেগের!