E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২২ সংখ্যা / ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ / ২৯ পৌষ, ১৪২৮

সিপিআই(এম) কর্ণাটক রাজ্য ২৩তম সম্মেলন


এসএফআই কর্মী অঞ্জুলিকে রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে সংবর্ধিত করছেন প্রকাশ কারাত।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সিপিআই(এম) কর্ণাটক রাজ্য ২৩তম সম্মেলন গত ২-৪ জানুয়ারি কোপ্পালের গঙ্গাবতীতে কমরেড কে বরদারাজন-কমরেড বালাপ্পা নগরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলন ঘোষণা করেছেঃ করপোরেট লুট, দুর্নীতি এবং সাম্প্রদায়িকতাবাদ মুক্ত সমৃদ্ধশালী নয়া কর্ণাটক গড়ে তোলার লক্ষ্যেই আগামীদিনে পার্টির সমস্ত সাংগঠনিক-রাজনৈতিক কাজ পরিচালিত হবে। সম্মেলন উদ্বোধন করেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত। প্রতিনিধি অধিবেশনে রাজ্যের ২৪টি জেলা থেকে ২৪৬ জন প্রতিনিধি এবং ৪৬ জন দর্শক উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী ভাষণে প্রকাশ কারাত বলেন, মোদির নয়া ভরতে তিন স্তম্ভ হলো হিন্দুত্ববাদ, করপোরেট এবং সাম্রাজ্যবাদ। তাই জরুরি হচ্ছে, নয়াউদারবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবাদের সমর্থনকারী দলগুলির বিরুদ্ধে বাম এবং গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলা। এই প্রেক্ষিতে পার্টির স্বাধীন শক্তির বৃদ্ধি ঘটানোটাই প্রধান কাজ। পলিট ব্যুরো সদস্য বি ভি রাঘভুলু এবং এম এ বেবি সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বি ভি রাঘভুলু।

পার্টির রক্তপতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে সম্মেলনের সূচনা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন রাজ্য পার্টির প্রবীণ নেতা ভি জে কে নায়ার। পতাকা উত্তোলন এবং শহিদ বেদিতে মাল্যদানের অনুষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। সিপিআই(এমএল-লিবারেশন) নেতা ভরদ্বাজ এবং প্রগতিশীল অর্থনীতিবিদ ডঃ টি কে চন্দ্রশেখর উদ্বোধনী অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন কক্ষের নামকরণ করা হয় দুই ট্রেড ইউনিয়ন ও পার্টিনেতা কমরেড বি মাধব এবং আর শ্রীনিবাসের নামে। এঁদের দুজনেরই রাজ্য ২২তম সম্মেলনের পরবর্তী সময়ে জীবনাবসান ঘটে। প্রসঙ্গত, কমরেড শ্রীনিবাস মিথ্যা মামলায় ১৬ বছর কারাগারে ছিলেন। প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় কমরেড মারুতি মানপাডে মঞ্চে।

প্রতিনিধি অধিবেশনে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করছেন বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক ইউ বাসবারাজ।

প্রতিনিধি অধিবেশনে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক ইউ বাসবারাজ। ৭৪ জন প্রতিনিধি প্রায় ৮ ঘণ্টা এই প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেন।প্রতিনিধিদের আলোচনা শেষে জবাবী ভাষণ দেন বাসবারাজ। প্রতিবেদনটি সম্মেলনে সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। এছাড়াও ৪০টি প্রস্তাব সম্মেলনে গৃহীত হয়েছে।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ৩ জানুয়ারি পরাধীন ভারতে নারী শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ও সমাজ সংস্কারক সাবিত্রীবাই ফুলে এবং ফতিমা শেখকে শ্রদ্ধা জানায় প্রকাশ কারাত, বি ভি রাঘভুলু, এম এ বেবি সহ পার্টি নেতৃত্ব এবং প্রতিনিধিরা। প্রসঙ্গত, ৩ জানুয়ারি ছিল সাবিত্রীবাই ফুলে’র ১৯১তম জন্মদিবস।

সম্মেলন থেকে ৩৪ সদস্যের রাজ্য কমিটি সর্বসম্মতিতে নির্বাচিত হয়েছে।রাজ্য কমিটিতে একটি স্থান শূন্য আছে। সম্মেলন মঞ্চে অনুষ্ঠিত নবনির্বাচিত রাজ্য কমিটির প্রথম সভায় ইউ বাসবারাজ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। ১২ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী ওই সভা থেকে গঠিত হয়েছে।

সম্মেলনে পাঁচটি বই প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ ডঃ কে প্রকাশ রচিত “হিস্ট্রি অফ কমিউনিস্ট মুভমেন্ট ইন কর্ণাটক” এবং কন্নড় ভাষায় হান্নান মোল্লা রচিত “হিস্ট্রি অফ এআইকেএস”।

সম্প্রতি স্থানীয় কিছু মোড়ল গোছের লোক মিড ডে মিলে ডিম দেওয়ার বিরোধিতা করে। রাজ্যের বিজেপি সরকারও এই বিরোধিতা মেনে নিয়ে মিড ডে মিলে ডিম দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নামে এসএফআই। যেখানে সম্মেলন হয়েছে সেই গঙ্গাবতী অঞ্চলের এসএফআই কর্মী অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অঞ্জুলি। সে স্থানীয় এক ওইরকম মোড়লের বাড়িতে গিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, এবং তাকে বলে, সে যদি মিড ডে মিলে ডিম খাওয়ায় বাধা দেয় তাহলে ছাত্রছাত্রীরা তার বাড়িতে এসে ডিম খাবে। এই প্রতিবাদের দৃশ্য রাজ্য ও জাতীয় স্তরে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এটা ব্যাপক প্রভাব ফেলে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের চাপে সরকার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়। সেই অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এসএফআই কর্মী অঞ্জুলিকে সিপিআই(এম) কর্ণাটক রাজ্য কমিটি রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে সংবর্ধনা জানায়। অঞ্জুলিকে সংবর্ধিত করেন প্রকাশ কারাত।