৫৯ বর্ষ ২২ সংখ্যা / ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ / ২৯ পৌষ, ১৪২৮
কমরেড অনিল ভট্টাচার্য-র জীবনাবসান
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অধ্যাপক আন্দোলনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় নেতা কমরেড অনিল ভট্টাচার্যের জীবনাবসান হয়েছে। দীর্ঘদিন তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে অসুস্থ ছিলেন। কয়েক দিন আগে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। ৯ জানুয়ারি হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তাঁর স্ত্রী বর্তমান।
কমরেড অনিল ভট্টাচার্য একসময়ে রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বৃহত্তম সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বা ওয়েবকুটা’র সাধারণ সম্পাদক এবং অধ্যাপকদের সর্বভারতীয় সংগঠন এআইফুকটো’র সভাপতির দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। তিনি বিশ্ব শিক্ষক সংস্থারও অন্যতম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কমরেড অনিল ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে এদিন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে তাঁকে আমি চিনতাম। দাবি-দাওয়ার আন্দোলনের সঙ্গে অধ্যাপকদের সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে তিনি দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছিলেন।’’ কমরেড অনিল ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্রও।
কমরেড অনিল ভট্টাচার্যের আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদে। ১৯৪৪ সালে তাঁর জন্ম। মুর্শিদাবাদ কেএন কলেজে তাঁর পড়াশোনা। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি বামপন্থী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন। পড়াশোনার পর প্রথমে তিনি জলপাইগুড়ি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। সেখান থেকে নিউ বারাকপুর এপিসি কলেজে চলে আসেন। এই কলেজ থেকেই তিনি অবসর নেন। বারাসতে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কমরেড অনিল ভট্টাচার্যের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল এবং ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি দু’বার ওয়েবকুটা’র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি অধ্যাপকদের সর্বভারতীয় সংগঠন এআইফুকটো’র সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৯৮ সালে।
একজন দক্ষ সংগঠকের পাশাপাশি কমরেড অনিল ভট্টাচার্যের ক্ষুরধার লেখনী পাঠকমহলে সমাদৃত ছিল। ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের রচনা সংকলন ছয় খণ্ডে তিনি সম্পাদনা করেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই ছয় খণ্ড প্রকাশ করা হয়েছিল। তিনি ওয়েবকুটা’র দায়িত্বে থাকাকালীন তাঁর সম্পাদনায় ২০০২ সালে দুই খণ্ডে ‘অধ্যাপক সমিতির ইতিহাসের উপাদান’, ২০০৪ সালে ‘এপিসি পেট্রিয়ট অব এ ম্যান’, কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ‘কী পড়বে, কোথায় পড়বে’ প্রকাশিত হয়েছিল। শিক্ষা প্রসঙ্গে তাঁর লেখা ‘ইন সার্চ অব অ্যান অলটারনেটিভ এডুকেশন’ পাঠক মহলে সমাদৃত হয়েছিল।
অধ্যাপক অনিল ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করে ওয়েবকুটা’র সভাপতি শুভোদয় দাশগুপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘অনিলদার কাছ থেকে সংগঠনের অনেক কাজ আমরা শিখেছি। ওয়েবকুটা’র মধ্যে নানা রাজনৈতিক মতের অধ্যাপক যেহেতু রয়েছেন, তাই সবাইকে কীভাবে একজোট করে রাখতে হয়, তা অনিলদা আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন।’’