৫৯ বর্ষ ২২ সংখ্যা / ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ / ২৯ পৌষ, ১৪২৮
‘ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা,...’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
নতুন বোতলে পুরোনো মদ। কথাটা বাজার চলতি। সেই হিসেবে নতুন বছরে পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটা যেতেই পারে। আরে বাবা। বছরটাই তো পাল্টেছে। একুশ বাবু বাইশ হয়েছেন। আর কিছু থোড়িই পাল্টেছে। সবই যথাপূর্বম। যেহেতু বছর জুড়ে বেশ কিছু রাজ্যে ভোট, তাই আইশ বাইশ খেলার নিয়ম মেনে এবছর আমাদের সঙ্গী হতে চলেছে বেশ কিছু ‘ধাপ্পা’। ছোটোবেলা মনে পড়ে তো? নাকি! হঠাৎ করে লুকিয়ে থাকা হাতে পিঠের মধ্যে দুম করে এক কিল! পিঠে কিল হজম আর কানে ধাপ্পা। এ নিয়েই তো ছিল আইশ বাইশ। কাজেই ২০২২টা কতটা কিল হজমের আর কতটা ধাপ্পা হজমের হবে তা সময় বলবে। আপাতত নাহয় অপেক্ষাই সার হোক।
‘এন্ডলোসাং’। শব্দটা জার্মান। আমি যেহেতু জার্মান ভাষাটা আদৌ জানিনা তাই ইউটিউব শুনে শুনে মোটামুটি একটা উচ্চারণ উদ্ধারের চেষ্টা করেছি মাত্র। তবে এর একটা ইংরেজি আছে। ‘ফাইনাল সলিউশন’। ইতিহাস বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে ইয়োরোপে প্রায় সাড়ে ৯ মিলিয়ন ইহুদির বাস ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে সেই সংখ্যা নেমে আসে সাড়ে ৩ মিলিয়নে। অর্থাৎ প্রায় ৬ মিলিয়ন ইহুদি সাবাড়। আর এই মহান ‘ফাইনাল সলিউনশন’ নামক কর্মটি ‘যার’ মস্তিস্কপ্রসূত ‘তার’ নাম সবাই জানেন। সকাল সকাল শুধু শুধু সেই নাম স্মরণ করবার কোনো বাসনা আমার নেই। তাই ও নামটা নেবনা। তার কাজকর্মকে ফ্যাসিবাদ ট্যাসিবাদ কীসব যেন বলে। আমি অথবা আমরা যেহেতু এখনও ফ্যাসিবাদ বিষয়টা নিয়ে দড়ি টানাটানির মধ্যে আটকে আছি, তাই এখনই ওইসব শব্দ উচ্চারণ করাও ঠিক হবে না। দেখা যাক। ভবিষ্যতে যদি কখনও মনে হয় তখন নাহয় বলা যাবে।
‘ফাইনাল সলিউশন’ নামক ঘটনাবলি চারের দশকে ঘটলেও এর বীজ লুকোনো ছিল আরও অন্তত বছর কুড়ি আগে। সময়ের হিসেবে আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে। ১৯২২। সাংবাদিক জোসেফ হেল জানিয়েছেন, এই ‘ফাইনাল সলিউশন’-এর ইচ্ছা ‘ক্ষমতালোভী বেঁটে শয়তান’টা মনের মধ্যে পুষে রেখেছিল প্রায় ২০ বছর। ১৯২২-সালেই নাকি সে জানিয়ে দিয়েছিল, ‘যখন আমি সত্যি করেই ক্ষমতায় আসব, আমার প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে ইহুদিদের শেষ করে দেওয়া।’ আর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ১২ ডিসেম্বর, ১৯৪১। ইউনাইটেড স্টেটস হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের ইতিহাসবিদ এলিজাবেথ হোয়াইট লিখেছেন, “এক পর্যায়ে আমি মনে করি, হত্যাকেন্দ্রগুলির বিকাশের সাথে সাথে, [নাৎসিরা] অনুভব করেছিল যে জার্মানি [যুদ্ধে] জয়ী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরিবর্তে তাদের সামনে এখনই একটি ইহুদি-মুক্ত ইয়োরোপ গঠন করার উপায় এবং সুযোগ রয়েছে।” এইসব ইতিহাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটা ক্রোনোলজি তৈরি করা যেতেই পারে। ১৯৯২, ২০০২, ২০২২...। না না। ভুল বুঝবেন না। ২০২২-এ এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনো হা হুতাশ করার মতো ঘটনা ঘটেনি। সলতে হয়তো পাকানো চলছে কোথাও না কোথাও। সেটা হরিদ্বার হতে পারে, দিল্লি হতে পারে, ভূপাল হতে পারে, মথুরা হতে পারে, রায়পুর হতে পারে, আলিগড় হতে পারে...। লাভা তো ফুটছেই। অগ্ন্যুৎপাত হতে কতক্ষণ? তবে অত টেনশন নেবার মতো এখনও কিছু হয়নি। হলে তখন নাহয় সদলবলে বসে মাথা কপাল চাপড়ানো যাবে।
ফ্ল্যাশব্যাক অনেক হলো। এবার একটু কাট টু করে সমসময়ে আসি। ২০২১। উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর এক ‘ধর্ম সংসদ’-এর আয়োজন করা হয়েছিলো। যে অনুষ্ঠানে বেশ কিছু স্বঘোষিত ধর্মগুরুর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদল বিজেপি'র বেশ কিছু ‘হর্তা কর্তা বিধাতা’। যে ধর্ম সংসদের বেশ কিছু ভিডিয়ো ক্লিপিংস ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সমাবেশ থেকে সমস্ত হিন্দু জাতিকে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘সাফাই অভিযান’ শুরু করার আহ্বান জানানো হয় হিন্দু নেতৃত্বের পক্ষে।
ধর্ম সংসদের আয়োজক, হিন্দু রক্ষা সেনা সংগঠনের সভাপতি এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামী ঘনিষ্ঠ স্বামী প্রবোধানন্দ গিরি ওই অনুষ্ঠানে বলেন, মায়ানমারে হিন্দুদের যেভাবে রাস্তার ওপরে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল, আমাদের এখানে এখন সেই অবস্থা। আপনারা দেখেছেন দিল্লি সীমান্তে হিন্দুদের মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সময় নেই। হয় আপনি মরার জন্য প্রস্তুত হোন, নয়তো মারার জন্য প্রস্তুত হোন। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এখানকার প্রত্যেক হিন্দু, রাজনীতিবিদ, পুলিশকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে হবে এবং সাফাই অভিযান শুরু করতে হবে।
ধর্ম সংসদের অপর এক আয়োজক যতি নরসিংহনন্দ বিশ্বজুড়ে সমস্ত জিহাদিদের হত্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন। হিন্দু জাতিকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বলেছেন তিনি। অন্য এক ভিডিয়োতে স্বামী ধরমরাজ মহারাজকে বলতে দেখা গেছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন সংসদে বলেছিলেন জাতীয় সম্পদের ওপর সংখ্যালঘুদের প্রথম অধিকার, আমি যদি তখন সেখানে উপস্থিত থাকতাম তাঁকে গুলি করে হত্যা করতাম। রিভলবারের ছ'টা গুলিই তাঁর বুকে ঢুকিয়ে দিতাম। আমাদের প্রত্যেকের নাথুরাম গডসে হওয়া উচিত।’’
ধর্ম সংসদে সাধ্বী অন্নপূর্ণা, যিনি আগে পূজা শকুন পান্ডে নামে পরিচিত ছিলেন, তিনি বলেন, “আমাদের ১০০ এরকম সৈন্যের প্রয়োজন, যারা ২০ লাখ মুসলমানকে হত্যা করতে পারবেন। যদি আপনি তাদের শেষ করতে চান, তাহলে তাদের হত্যা করুন।”
প্রায় এই সময়েই, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্র জেলার স্কুলের ছাত্রদের ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ করার শপথগ্রহণের ভিডিয়ো ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ঘটনার ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যে ভিডিয়োতে দেখা গেছে স্কুলের ইউনিফর্ম পরিহিত ছাত্ররা স্কুলের সময় শেষে পার্কে জড়ো হয়েছে। কিছু ছাত্র তাদের বাবা-মায়ের সাথেই পার্কে আসে এবং শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এই শপথে বলা হয়ঃ “আমরা ভারতকে একটি হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি ও বজায় রাখার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমরা এর জন্য লড়াই করব, এর জন্য মরব এবং প্রয়োজনে হত্যা করব। কিন্তু যাই হোক না কেন, আমরা বলিদান দিতে এক মুহুর্তের জন্যও পিছপা হব না। আমাদের পূর্বপুরুষ, শিক্ষক, ভারত মাতা আমাদের পর্যাপ্ত শক্তি দিন যাতে আমরা আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করতে পারি। তারা আমাদের বিজয় দান করুক।”
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। বুল্লি বাই এবং সুল্লি ডিল নামক দুটি অ্যাপে বেশ কিছু মুসলিম মহিলার ছবি দিয়ে তাঁদের নীলামে তোলা হয়। ওই অ্যাপে কয়েকশ’ মুসলিম মহিলার নাম ও ছবি প্রকাশ করে তাঁদের ‘নিলাম’-এর জন্য তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে ‘বুল্লি বাই’ নামক একটি অ্যাপের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন সাংবাদিক ইসমত আরা। আইটি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে ট্যাগ করে ট্যুইটারে বিষয়টি নিয়ে সরব হন শিবসেনা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীও। তাঁদের অভিযোগ, মহিলাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এবং তাঁদের সাম্প্রদায়িক লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে।
২৬ ডিসেম্বর ছত্তিশগড়ের রায়পুরে হওয়া একটি ধর্ম সংসদে বিতর্কিত মন্তব্য করেন সন্ত কালীচরণ মহারাজ। ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধেও উসকানিমূলক মন্তব্য করেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিয়োতে কালীচরণ মহারাজকে বলতে দেখা গেছে, “মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী দেশকে ধ্বংস করেছেন। নাথুরাম গডসেকে অভিবাদন, যিনি গান্ধীকে হত্যা করেছিলেন।” তিনি আরও বলেন, রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে দখল করতে চাইছে মুসলিমরা। হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করতে আমাদেরও একজন কট্টর হিন্দু নেতা নির্বাচন করা উচিত।
যদিও এইসব ‘ফাইনাল সলিউশন’-এর সলতে পাকানো মানুষজনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যে একেবারেই হচ্ছেনা সেরকমটা মোটেও নয়। যেমন রায়পুরে যে মঞ্চ থেকে কালীচরণ এইসব ডাক ফাক দিয়েছিলেন সেই মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন অপর এক ধর্মীয় নেতা মহন্ত রামসুন্দর দাস। তিনি কালীচরণের এই বক্তব্যের পরেই মঞ্চ ত্যাগ করেন এবং উদ্যোক্তাদের বলেন, ‘‘এই মঞ্চ থেকে মহাত্মা গান্ধীকে গালাগালি দেওয়া হয়েছে। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি। ধর্ম সংসদের মতো প্ল্যাটফর্মে এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়। আমি সংগঠককে জিজ্ঞেস করতে চাই, এইধরনের শব্দ যখন ব্যবহার করা হচ্ছিল, তখন আপনারা আপত্তি তোলেননি কেন? এই দেশে ৩০ কোটি মুসলমান, ১৫ কোটি খ্রিস্টান বসবাস করে, আপনি বললেই এটা ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হয়ে যাবে নাকি? আমি আর এই অনুষ্ঠানে থাকবো না।’’
এর পাশাপাশি ধর্মীয় সমাবেশ থেকে মুসলিম গণহত্যার ডাক দেওয়া হিন্দুত্ববাদী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ২৬ ডিসেম্বর দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমানাকে চিঠি লেখেন সুপ্রিম কোর্টের ৭৬ জন আইনজীবী। চিঠিতে নেতাদের নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়েরের অনুরোধ করেছেন আইনজীবীরা। প্রশান্ত ভূষণ, বৃন্দা গ্রোভার, সালমান খুরশিদ, দুষ্মন্ত দাভে সহ বিশিষ্ট আইনজীবীদের স্বাক্ষর সংবলিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া এই বক্তৃতাগুলি কেবল নিছক ঘৃণাত্মক বক্তৃতা নয়, একটা গোটা সম্প্রদায়কে হত্যা করার জন্য খোলাখুলি আহ্বানের সমতুল্য। এই ধরনের বক্তৃতা শুধু আমাদের দেশের ঐক্য এবং অখণ্ডতার জন্যই মারাত্মক হুমকি নয়, দেশের লক্ষ লক্ষ মুসলিম নাগরিকের জীবনকেও বিপন্ন করে।
দেশে ক্রমবর্ধমান ঘৃণাত্মক বক্তৃতা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মুখ খোলার অনুরোধ জানিয়ে ৭ জানুয়ারি খোলা চিঠি লেখেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (IIM)-এর ছাত্র এবং ফ্যাকাল্টি পরিষদের ১৮৩ জন সদস্য। চিঠিতে লেখা হয়, “আমাদের দেশে সর্বত্র এখন ভয়ের পরিবেশ বিরাজমান। সম্প্রতি গির্জা সহ একাধিক উপাসনালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের মুসলিম ভাই-বোনের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। যাঁরা এই ধরনের মন্তব্য করছেন তাঁদের মধ্যে কোনো ভয় কাজ করছে না। এই ধরনের ঘৃণাত্মক বক্তৃতা এবং ধর্ম/বর্ণ/পরিচয়ের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আহ্বান গ্রহণযোগ্য নয়।” চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নীরবতা এই ঘৃণা-ভরা কণ্ঠগুলিকে আরও উৎসাহিত করছে এবং আমাদের দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি, আমাদের বিভক্ত করতে চায় এমন শক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ান।”
এইসমস্ত ঘৃণাসূচক বক্তব্য প্রভৃতি বিষয়ে সম্প্রতি এনডিটিভি একটা সমীক্ষা চালিয়েছে। ২০০৯ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘৃণাসূচক মন্তব্য এই সমীক্ষার অন্তর্গত। গত ১২ জানুয়ারি এই সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে এনডিটিভি জানিয়েছে, ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এবং নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হবার পর থেকে পূর্বতন ইউপিএ-২ সরকারের তুলনায় দেশে ঘৃণাসূচক মন্তব্য বেড়েছে ১১৩০ শতাংশ। যার মধ্যে শেষ সাড়ে তিন মাসে বিজেপি’র ভিআইপি নেতৃত্বের করা ঘৃণাসূচক মন্তব্যের হার বেড়েছে ১৬০ শতাংশ। যদিও এই তালিকায় মহিলাদের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য এবং যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যকে ধরা হয়নি। এনডিটিভি-র সমীক্ষা অনুসারে ২০০৯ থেকে ২০১৪ - প্রথম সারির নেতৃত্ব ঘৃণাসূচক মন্তব্য করেছিলেন ১৯ বার। যেখানে ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে ৩৪৮ বার বা প্রতি মাসে গড়ে ৩.৭ বার করে। ৩৪৮ টি ঘৃণাসূচক মন্তব্যের মধ্যে বিজেপি করেছে ২৯৭ বার। কংগ্রেস ১০ বার। তৃণমূল ৬ বার। আরএসএস ৪ বার। বিএসপি এবং সমাজবাদী পার্টি ৪ বার করে। আরজেডি ৩ বার। কী বলেন? ফাইনাল সলিউশনের সলতে পাকানো তাহলে চলছে তো?
২০২২-এর প্রথম লেখা শেষ করি কর্ণাটকের এক মায়ের কথা বলে। কর্ণাটকের তুমাকুরুর এই দলিত মহিলার বাড়িতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা হামলা চালায় ২৫ ডিসেম্বর। বড়োদিনের উৎসবকে কেন্দ্র করে। ওইদিন তুমাকুরুর কুনিগাল তালুকের বিলিদেবালয় গ্রামের রামচন্দ্রের বাড়িতে জোর করে ঢুকে পড়ে বজরঙ দলের কিছু সদস্য। বজরঙ দলের সদস্যরা বাড়ির মহিলাদের জিজ্ঞাসা করে তাঁরা সিঁদুর পরেন নি কেন? এর উত্তরে এক মহিলা বলেন, ‘‘আপনি কে আমাদের এইধরনের প্রশ্ন করার? আমি চাইলে আমার মঙ্গলসূত্রও খুলে দিতে পারি। এটা আমাদের ব্যাপার। বেরিয়ে যান এখান থেকে।’’ ওই মহিলার প্রতিরোধের সামনে পিছু হটে বজরঙ দলের সদস্যরা।
আমি তো নিমিত্ত মাত্র। এখান থেকে ওখান থেকে ধারধোর করে একটা লেখা দাঁড় করানোর চেষ্টা করি। আর কীভাবে যেন আমার সবকিছুতেই কোথা থেকে রবীন্দ্রনাথ এসে পড়েন। তাই শেষে তিনিই থাকুন। থাকুক বলাকা। “দুঃখেরে দেখেছি নিত্য, পাপেরে দেখেছি নানা ছলে;/ অশান্তির ঘূর্ণি দেখি জীবনের স্রোতে পলে পলে;...”। শপথ থাকুক, “বলো অকম্পিত বুকে-/ “তোরে নাহি করি ভয়,/ এ সংসারে প্রতিদিন তোরে করিয়াছি জয়।/ তোর চেয়ে আমি সত্য, এ বিশ্বাসে প্রাণ দিব, দেখ্...”