৬০ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ১৪ জুলাই, ২০২৩ / ২৮ আষাঢ়, ১৪৩০
‘দেখে নেবো’ বলে চলা মানুষের সংখ্যা কিন্তু দ্রুত কমবে
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
টিয়ামুখো গিরগিটির মন আশঙ্কায় দোদুল্যমান। পোকা ছেড়ে তাকে কি শেষে কাঁচালঙ্কা খেতে হবে? এ অবশ্য নিতান্তই আবোল তাবোলীয় সুকুমারী পর্যবেক্ষণ। যেখানে ব্যাকরণ না মেনে ‘হাঁসজারু’, ‘হাতিমি’ অথবা ‘বকচ্ছপ’ - যে কোনো কিছুই হয়ে যাওয়া যেত। আসলে ব্যাকরণ না মানলে সন্ধি থেকে প্রত্যয় - কোনো কিছুই আর ঠিকঠাক থাকে না। গুলিয়ে যায় সবই। সেই গুলিয়ে যাওয়া থেকেই বালি খাবো, নাকি কয়লা খাবো, নাকি চাকরি খাবো ভাবতে ভাবতে, দোদুল্যমানতায় ভুগতে ভুগতে প্রথমেই ব্যালট খেয়ে নিতে হয়। কারণ বালি, কয়লা, চাকরি - যাই খেতে চাওয়া হোক না কেন, প্রথমে ব্যালট গিলে হজম না করতে পারলে পরেরগুলো আর খাওয়া যাবে না। অতএব ব্যালটই সই। আর ‘শ্যামবাবুদের গয়লা’কে নিয়ে আলোচনা করেও বিশেষ লাভ নেই। তাই আপাতত মুলতবি থাক সবকিছু।
পশ্চিমবঙ্গের রক্তাক্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্ব প্রায় শেষ লগ্নে। কারণ ছোটো গল্পের মতো এবারের নির্বাচন এখনও ‘শেষ হয়ে হইল না শেষ’। প্রায় শেষ লগ্নে কারণ, ১২ জুলাই আদালতের পর্যবেক্ষণের পর বিষয়টা ২০ জুলাই পর্যন্ত ঝুলে গেছে। যদিও এতে খুব একটা আশান্বিত হবার মতো বিষয়বস্তু নেই, তবু চাষা তো চিরকাল আশাতেই মরে। মনোনয়ন পর্বেও মরেছে, প্রচার পর্বেও মরেছে, ভোট পর্ব বা গণনা পর্বেও মরা ছাড়া বিশেষ কিছু না মেলারই সম্ভাবনা প্রবল। কারণ রাজ্য সরকার, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার গত ৯ জুন থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে আদালতের প্রতিটি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, তোয়াক্কা না করে নির্বাচন পরিচালনা করতে হয়। এজন্য অবশ্যই তাদের একটা স্যালুট প্রাপ্য!
বুধবার, ১২ জুলাই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এই মামলার ভবিষ্যতের উপর জয়ী প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। নির্বাচন কমিশনকেও জয়ী প্রার্থীদের একথা জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাইকোর্ট-এর পক্ষ থেকে। আদালত নিজেদের পর্যবেক্ষণে জানায়, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেও যে সব ঘটনা ঘটছে আদালত তা দেখে বিস্মিত। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে - যে সন্ত্রাস, হিংসা চলছে রাজ্য তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মানুষের জীবনধারণের স্বাধীনতার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে। পুলিশ নিরীহ মানুষকে সাহায্য করছে না বলে অভিযোগ। এটিকে গুরুতর বিষয় হিসাবে আদালত নথিবদ্ধ করবে। শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি যাতে বিঘ্নিত না হয় তা দেখার দায়িত্ব রাজ্যের। অথচ তাতে ব্যর্থ রাজ্য, এই অভিযোগ গুরুতর। এই বিষয়ে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে গত ৯ জুন থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত ৩৫ দিনে রাজ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। ভোট-পরবর্তী বা ফলাফল-পরবর্তী সংঘর্ষে আরও কয়েকজনের যে মৃত্যু হবেনা, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ যে হিংসা এবার পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে তা অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এবারের পঞ্চায়েত ভোটে কী হতে পারে তার আগাম ইঙ্গিত দিয়েছিল রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। ৭ জুন দায়িত্ব নেবার একদিনের মধ্যেই ৮ জুন পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা করেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। জারি হয়ে যায় বিজ্ঞপ্তি এবং ৯ জুন থেকে শুরু হয় মনোনয়ন পর্ব। যদিও মনোনয়নের প্রথম দিনেই দেখা গেছে আদৌ প্রস্তুত নয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কারণ মনোনয়নের প্রথম দিন বিকেল পর্যন্ত বহু কেন্দ্রেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পৌঁছায়নি।
এরপরেই শুরু হয় জেলায় জেলায় বিরোধীদের মনোনয়নে বাধাদানের প্রক্রিয়া। যদিও নির্বাচন ঘোষণার সময় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল প্রতিটি মনোনয়ন কেন্দ্রের ১ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। সেই নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই বিরোধীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়া শুরু হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাপক হিংসার খবর আসতে শুরু করে। বার বার অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনও সদর্থক ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি কমিশনকে। এই পর্বেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ১৯ জনের। কেন্দ্রীয় বাহিনী বা নিরাপত্তা কর্মীর বিষয়ে বারবার হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করে যতটা সময় নষ্ট করেছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার বা প্রশাসন তার সিকিভাগ গুরুত্ব দেয়নি বিরোধী প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে। সবশেষে রাজ্যের মানুষ দেখেছে আদালতের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজেরা যা ভেবেছে (অথবা যেরকম নির্দেশ এসেছিল?) সেই কাজই করেছে নির্বাচন কমিশন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই পর্বে তৃণমূল বাহিনী বাম, কংগ্রেস বা আইএসএফ প্রার্থীদের আটকাতে যতটা সক্রিয় ছিল তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি বিজেপি প্রার্থীদের আটকাতে। তাই বিজেপি প্রার্থীরা প্রায় নির্বিঘ্নে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছেন ৩৮,৪৭৫ আসনে। যেখানে সিপিআই(এম) জমা দিতে পেরেছে ৩৫,৪১১ আসনে। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষেত্রে বিজেপি মনোনয়ন জমা দিয়েছে ৭,০৩২ আসনে সিপিআই(এম) ৬,৭৫২ আসনে। জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে বিজেপি যেখানে প্রার্থী দিয়েছে ৮৯৭ আসনে সেখানে সিপিআই(এম) দিয়েছে ৭৪৭ আসনে। মনোনয়ন পর্বেও কারা কাদের আটকেছে সেটা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। মনোনয়ন পর্বে যে ক’টা হিংসার ঘটনার মিডিয়ার দৌলতে সামনে এসেছে সেখানেও সিংহভাগ কিন্তু বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সংঘর্ষের। বিজেপি-কে তৃণমূল মনোনয়ন দিতে আটকেছে - দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এরকম খুব একটা শোনা যায়নি।
নির্বাচনের দিন অধিকাংশ বুথেই ছিলনা কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনী বা নিরাপত্তা রক্ষী। রাজ্যের প্রতি বুথে বাহিনী দেবার মতো পুলিশ রাজ্য সরকারের হাতে ছিল না। আদালতের নির্দেশ ছিল ভোটে নিরাপত্তা রক্ষার কাজে সিভিক ভলান্টিয়ার ব্যবহার করা যাবেনা। সেই নির্দেশকেও থোড়াই কেয়ার করেছে নির্বাচন কমিশন। এই বিষয়ে গত ১০ জুলাই এক ট্যুইট করেছিলেন মহম্মদ সেলিম। যেখানে পূর্ব বর্ধমানের এসপি-র সই করা এক চিঠির ছবি তিনি পোস্ট করেন। মেমো নং ২৩৯৭/অ্যাকাউন্ট/ইলেক/ই, তারিখ ৭.৭.২০২৩। রাজ্য পুলিশের আইজি-কে লেখা ওই চিঠিতে এস পি পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজে নিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য খরচ বাবদ টাকা চেয়েছেন। তাঁর হিসেব অনুসারেই শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল ৩,৮৩৬ জন সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ভোট গণনার কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল ৩,৭৮৪ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে। ভোট এবং গণনা পর্বে তাঁদের ভাতা, টিফিন খরচা বাবদ দাবি করা হয়েছে মোট ৫৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬শো টাকা। কার আদেশ, কে মানে?
কেউ মানুক বা না মানুক, রাজ্যের মানুষের সামগ্রিক উপলব্ধি এটাই যে, প্রায় নিরাপত্তাহীন ভাবেই অধিকাংশ বুথে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবুও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেই বহু মানুষ চেষ্টা করেছেন ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে, নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে। যদিও শাসকদলের মস্তান বাহিনীর বাধায় অধিকাংশ জায়গাতেই তা সম্ভব হয়নি। মনোনয়ন পর্বে প্রহসনের পর, ভোটগ্রহণ পর্বেও প্রহসন চলেছে। ব্যালটবক্স নিয়ে শাসকদলের এক অতি উৎসাহী কর্মীর মরণপণ দৌড়ের ভিডিয়ো তো এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। সারাদিন তৃণমূল-বিজেপি বাইনারির খেলা খেলে যাওয়া মেইনস্ট্রিম মিডিয়াও বাধ্য হয়েছে ভোট জালিয়াতির ছবি দেখাতে। যদিও যে অনুপাতে রাজ্য জুড়ে ভোট লুঠ হয়েছে সেই অনুপাতে খবর মিডিয়া দেখিয়ে উঠতে পারেনি। এরপর গণনার দিনেও যেভাবে বিভিন্ন গণনাকেন্দ্রে শাসকদলের বিধায়ক, সাংসদ, মস্তান বাহিনীর দাপট দেখা গেছে তাতে রাজ্যের গণতন্ত্র আদৌ কতটুকু অবশিষ্ট আছে তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেছে।
গণনার দিন একাধিক জায়গায় জোর করে বাম, কংগ্রেস এবং আইএসএফ প্রার্থীদের জোর করে হারানো হয়েছে শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতে। গণনায় বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ প্রার্থীদের জয়ের পর প্রার্থীকে মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে গণনাকেন্দ্র থেকে। কেন্দ্রের ভেতরেই বেধড়ক মারধোর করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ব্যালটে কালি ছিটিয়ে দেওয়া, জল ঢেলে দেওয়া, বিরোধীদের ব্যালট ছিঁড়ে ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি জয়ের পরেও সার্টিফিকেট না দেওয়ার মতোও ঘটনা ঘটেছে। এমনকী বামেদের জয় আটকাতে উত্তর ২৪ পরগণার হাবড়ার ভুরকুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী মহাদেব মাটি গণনাকেন্দ্রে বসেই বিরোধী প্রার্থীর ব্যালট খেয়ে ফেলেছেন। ব্যালট খেয়ে নেওয়ার নামে গণতন্ত্রকে গিলে ফেলার এই চেষ্টা গোটা ভোট পর্বেই করে গেছে শাসকদলের বাহিনী।
ভোটের ফলাফল প্রকাশিত। প্রত্যাশিতভাবেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল অন্যান্য রাজনৈতিক দলের থেকে আসনসংখ্যার বিচারে অনেক এগিয়ে। যদিও এত কিছুর পরেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২০২১-এর নির্বাচনী ফলাফলের নিরিখে এককভাবে বামেদের এবং সম্মিলিত বিরোধীদের ভোট বেড়েছে অনেকখানি। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪৭.৯৪ শতাংশ, বিজেপি’র প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৩৮.১৩ শতাংশ এবং বাম জোটের ভোটের হার ছিল ১০ শতাংশের কিছু বেশি। যদিও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি’র ভোট কমে হয়েছে ২২ শতাংশ। অর্থাৎ এক ধাক্কায় ভোট কমেছে ১৬ শতাংশের কাছাকাছি। অন্যদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম কংগ্রেস-আইএসএফ-এর মোট ভোটের শতকরা হার প্রায় ২১ শতাংশ। অর্থাৎ ভোট বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। যে ফলাফলের সঙ্গে এবিপি-সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষার কতটা মিল আছে তা সমীক্ষকরাই ভালো বলতে পারবেন। একথা ঠিক যে, নির্বাচনের প্রতিটি পর্বে লাগামছাড়া সন্ত্রাস না হলেও তৃণমূল হয়তো হেরে যেত না। কিন্তু এই ফলাফল যে অনেকটাই অন্যরকম হতে পারত তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। নির্বাচনী ফলাফল সম্পূর্ণ প্রকাশিত হলে এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। যদিও তা কবে পাওয়া যাবে, বা আদৌ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় আছে। কারণ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ফলাফল ঘোষণার দিন দুপুর থেকে যেভাবে বসে যায় তাতে কমিশন কতটা তথ্য সাধারণ মানুষকে জানতে দেবেন তাও এখন বড়ো প্রশ্ন। নজিরবিহীনভাবে গণনার দিন বেশ কিছুক্ষণের জন্য নাকি বিদ্যুৎ সংযোগই ছিল না রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের দফতরে। এর আগে কখনও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে পড়েনা।
এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে প্রথম থেকেই মানুষের প্রতিরোধের সুর অনেকটাই চড়া ছিল। তা বোঝা গেছিল মনোনয়ন পর্ব থেকেই। এরপর প্রচার পর্ব এবং ভোটদানের দিন রাজনৈতিক দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ আরও প্রবল আকার ধারণ করেছে। একইভাবে ভোট গণনার দিনেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিরোধের চেষ্টা আগামী দিনে রাজ্যে শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আরও বাড়িয়ে তুলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ক্ষুব্ধ মানুষ শত বাধা সত্ত্বেও যেভাবে শাসকের বাহিনীর হুমকির সামনে সরাসরি রুখে দাঁড়িয়েছেন তাতে আগামীদিনে এই মস্তান বাহিনীকে পিঠ দেখাতে হবেই।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম খুব স্পষ্টভাবেই গত ১১ জুলাই এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, “লড়াই এখানেই শেষ নয়। লুটেরাদের তাড়িয়ে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লড়াই, গণতন্ত্র রক্ষার, প্রতিষ্ঠা করার লড়াই চালিয়ে নিয়ে যেতে সিপিআই(এম) বদ্ধপরিকর। এ লড়াই চলবে। এ এক লাগাতার সংগ্রাম। রক্তাক্ত, আক্রান্ত, বাড়ি ছাড়া হলেও এই লড়াই চলবে। বাঙলার মানুষ এই মাফিয়া রাজ থেকে রাজ্যকে উদ্ধার করবেই।”
তবুও সব কিছুর শেষে একটা কথা থেকেই যায়। জেলা পরিষদ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত, তিন স্তরেই ফলাফলে (ভোট যতই প্রহসন হোক না কেন) তৃণমূলের দাপট দেখে এটা স্পষ্ট যে, রাশি রাশি দুর্নীতির অভিযোগের পরেও এখনও অনেক মানুষই আস্থা রেখেছেন তৃণমূলে। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কয়লা-গোরু পাচার, একশো দিনের কাজ থেকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, তৃণমূল ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে কোটি কোটি নগদ টাকা উদ্ধার, একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে লাগাতার শাসকদলের উদ্দেশ্যে বিরোধীরা আক্রমণ চালালেও তা কতটা কাজে এলো? তবে কী দুর্নীতি গা সওয়া হয়ে গেল সাধারণ মানুষের? দুর্নীতিকেই কি মান্যতা দিচ্ছেন রাজ্যবাসী? রাজ্যে পালাবদলের পর গত ১২ বছর ধরে মানুষের মূল্যবোধ, সংস্কৃতির ওপর যে পরিকল্পিত আঘাত আরএসএস-তৃণমূলের মদতে প্রতিদিন করা হচ্ছে এ কি তারই ফল? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও কিন্তু জরুরি।
এক রায়কে দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম। মানুষের রায় আংশিক প্রতিফলিত হওয়ার পর শেষ করি আরও এক রায়কে দিয়ে। তিনি তারাপদ। ‘দেখে নেবো’ কবিতায় তিনি লিখেছিলেন, “ভর সন্ধেবেলা যারা গলির মোড়ে পথ আটকিয়ে ‘দেখে নেবো’ বলে চলে গিয়েছিল, তারা আর দেখা করতে আসেনি”... “বারবার এসে শাসিয়ে গেল, ‘দেখে নেবো’।” “তারা কেউ আর দেখা করতে এলো না।” গ্রাম বাঙলা কিন্তু এবার এই কথাটা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। আগামী দিনে রাজ্যে ‘দেখে নেবো’ বলে চলা মানুষের সংখ্যা কিন্তু দ্রুত কমবে। মানুষই কমিয়ে দেবে। কারণ মানুষই ইতিহাস রচনা করে...