৬০ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ১৪ জুলাই, ২০২৩ / ২৮ আষাঢ়, ১৪৩০
ভারতীয় দর্শন প্রসঙ্গে (উনিশ)
শ্রীদীপ ভট্টাচার্য
● বহু বহু বছরের স্থবির সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষায় পুরোহিত ও মৌলবির দল সচেষ্ট হয়। একদিকে হিন্দু ধর্মীয় নেতৃত্ব কর্মফলবাদ, বর্ণব্যবস্থা ও নানা ধরনের কুসংস্কারের প্রসারে মগ্ন। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় নেতৃত্ব সর্বশক্তিমান আল্লার কাছে আত্মসমর্পণের বার্তা প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। সাধারণ মানুষ অসহায় দর্শক। সাধু, সন্ন্যাসী ও ফকিরের গোষ্ঠীগুলি আত্মা অনুসন্ধানের নামে পলায়নবাদী ধর্মচর্চা করছিলেন।
● এই পরিস্থিতিতে ধর্মচিন্তায় ও সামাজিক রীতিনীতি ও তার সংস্কারে আধুনিক চিন্তা ও দর্শন নিয়ে এলেন রাজা রামমোহন রায়। তাঁর জন্ম ১৭৭২ সালে ও মৃত্যু ১৮৩৩ সালে। কলকাতা শহর সেই সময়ে ছিল ভারতে পেটি বুর্জোয়া শ্রেণির বিকাশের অন্যতম কেন্দ্র। রাজা রামমোহন রায়কে ভারতের উদীয়মান পুঁজিপতি (বুর্জোয়া) শ্রেণির আদি পথিকৃৎ বলা যায়। রামমোহন রায়, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমূলে বিনষ্ট করে ভারতে একটি আধুনিক বুর্জোয়া ব্যবস্থা গড়ে তোলার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, ব্রিটিশরা ভারতে বুর্জোয়া সমাজের বিকাশে তাঁর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে। তবে তিনি যেটা বুঝতে পারেননি যে ব্রিটিশরা ভারতের প্রকৃত বিকাশে আগ্রহী নয় বরং ভারতকে তারা তাদের উপনিবেশ হিসাবে গড়ে তুলতে আগ্রহী।
● রামমোহন রায় ব্রাহ্ম সমাজ-এর প্রতিষ্ঠাতা। বলা যেতে পারে, ব্রাহ্ম সমাজ ছিল ভারতের সামাজিক-ধর্মীয় সংস্কারবাদী আন্দোলন। তাঁকে যেমন বাংলার রেনেসাঁ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ বলা হয়, আবার, আধুনিক ভারতের অন্যতম প্রাণপুরুষ হিসাবে অভিহিত করা হয়। ভারতে সামাজিক সংস্কারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ভয়ংকর সতীপ্রথা যা তৎকালীন হিন্দু সমাজে বিরাজ করছিল, তাকে বাতিল করার ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ঐতিহাসিক ভূমিকা সম্পর্কে সকলেই অবহিত। একইসাথে বাল্যবিবাহের এক কুপ্রথার অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি অত্যন্ত পণ্ডিত মানুষ যেমন ছিলেন এবং একজন স্বাধীন চিন্তাবিদ্ ছিলেন। রামমোহন বেদান্তবাদী ছিলেন, কিন্তু মায়াবাদে আস্থাশীল ছিলেন না। তিনি মনে করতেন বিশ্বজগৎ বাস্তব, ঈশ্বর এই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু সৃষ্টির পরে এই জগতের বিকাশে ঈশ্বরের কোনো ভূমিকা নেই। তিনি কর্মফলবাদ, অদৃষ্ট ও পুনর্জন্মে বিশ্বাসী ছিলেন না। আচার অনুষ্ঠানের তীব্র বিরোধিতা করে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, পশুবলির মতো বর্বর প্রথা বেদান্ত দর্শনে কোথাও নেই। বর্ণব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি জানিয়েছিলেন, ব্রাহ্মণদের মাংস খাওয়া ও শূদ্রদের সংস্কৃত শেখার অধিকার থাকা উচিত। রামমোহন রায় যুক্তিপূর্ণ আলোচনা ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসাকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করতেন। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বাল্যবিবাহ ও সতীপ্রথার বিরোধিতা করার সাথে সাথে পর্দাপ্রথারও চরম বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে লিঙ্গ সমতার পক্ষে ছিলেন। নারীদের জন্য সম্পত্তির সমান অধিকার ও নারীদের পুনর্বিবাহের অধিকার দাবি করেন। তিনি অত্যন্ত আধুনিক মননের ব্যক্তি ছিলেন। ভারতবাসীর জন্য প্রাচীন শিক্ষার পরিবর্তে আধুনিক বিজ্ঞান, শারীরবিদ্যা, গণিত, ভূগোল, আইনশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানচর্চার কথা প্রচার করেছিলেন, সওয়াল করেছিলেন।
● ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮২৩ সালে। ব্রাহ্ম সমাজের মঞ্চ থেকে রামমোহন রায়ের ধারাবাহিক আন্দোলনেই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। তাঁর সংস্কারমূলক কাজে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজপতিদের প্রবল বিরোধিতা ছিল। কিন্তু কোনো বিরোধিতাই তাঁকে সংস্কারের কাজ থেকে টলাতে পারেনি। দার্শনিক দিক দিয়ে বেদান্তবাদী হলেও, তৎকালীন ভারতীয় সমাজে সামাজিক সংস্কারের আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত অগ্রণী ছিলেন। তাঁর পরিচালিত সামাজিক সংস্কার আন্দোলনগুলি আজকের মতো করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের।
সংস্কারবাদী নবজাগরণ
● ব্রিটিশদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিস্তারের বিরুদ্ধে উচ্চবর্ণের শিক্ষিত পেটি বুর্জোয়া শ্রেণি গর্জে উঠেছিল। শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সমাজের এই গর্জে ওঠা রূপ তিনটি ভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল, আধুনিক ভাবনা অনুসারে ভারতীয় সমাজকে পুনর্গঠিত করা। স্মরণে রাখতে হবে, এই সময়ে ভারতীয় সমাজে অধঃপতিত ও অনমনীয় বর্ণবাদ বিরাজ করছিল। ব্রিটিশদের আগমনের মধ্য দিয়ে আধুনিক চিন্তা-ভাবনার প্রসার ঘটল। স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায় সম্পর্কিত ধারণাগুলির ব্যাপক প্রভাব পড়ল ভারতীয় সমাজে। সংস্কারবাদী নবজাগরণ এরই পরিণতি। প্রথমটি ব্রাহ্ম সমাজের দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অক্ষয়কুমার দত্তের নেতৃত্বে। রামমোহন রায়ের পাশ্চাত্যের প্রভাব ও সর্বধর্ম সমন্বয়ের ধারণা থেকে তাঁরা সরে আসেন। তাঁরা হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের কথা সোচ্চারে ঘোষণা করেন। বিদেশি খ্রিস্টিয় ধর্ম থেকে হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে গিয়ে হিন্দু মৌলবাদী মতাদর্শের বীজ রোপিত হয়। ব্রাহ্ম সমাজ ও নবজাগরণের আন্দোলনে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অক্ষয়কুমার দত্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অক্ষয়কুমার দত্ত ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের মতপ্রচারে তারা পত্রিকা, পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলেন। নারী শিক্ষা, হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ, বাল্য বিবাহের বিরোধিতা, বহুবিবাহের বিরোধিতা তাঁদের আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। আবার বেদ, উপনিষদ নতুন করে মুদ্রণ ও প্রকাশনার ক্ষেত্রেও তাঁরা (বিশেষকরে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর) ভূমিকা পালন করেছিলেন।
● দ্বিতীয় ধারা যা দেখা দিল তার উদ্ভব ঘটল থিওসফিকাল সোসাইটির মাধ্যমে। এই সোসাইটি শুরু হয়েছিল ১৮৭৫ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে। অ্যানি বেসান্তের নাম এই ধারার সঙ্গে বেশিভাবে যুক্ত হলেও থিওসফিকাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন মাদাম ব্লাভাট্স্কি এবং কর্নেল অলকট্। পরে ১৮৮০ সালে এর সদর দপ্তর ভারতে স্থানান্তরিত হয়। ১৮৯৩ সালে অ্যানি বেসান্তের ভারতে আগমনের পর এর কর্মকাণ্ড বাড়ে। থিওসফিকাল সোসাইটি সকল ধর্মের সমতা ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করে। এই সংগঠন স্বনির্ভরতা, স্বায়ত্তশাসন (হোম রুল আন্দোলন নামে পরিচিত) ও স্বদেশী আন্দোলনের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছিল। সামাজিক সংস্কার ও নারী শিক্ষার পক্ষে এবং বাল্যবিবাহ, বর্ণবৈষম্যের বিপক্ষে মতামত প্রচার করেছিল। থিওসফিকাল সোসাইটি আত্মা, পুনর্জন্মবাদ, পরলোকের অস্তিত্বে বিশ্বাস করত। আত্মা এক শরীর থেকে নির্গত হয়ে অন্য শরীরে প্রবেশ করে - এইরকম ধারণা সহ প্রাচীন ঐতিহ্যের নামে নানা কুসংস্কারের ধারণাকে সমর্থন করত, প্রচার করত। প্রাচীন হিন্দু, বৌদ্ধ ও জরাস্ট্রিয়ান দর্শনের চর্চা এরা উৎসাহিত করত।
● তৃতীয়টির নেতৃত্বে ছিল দয়ানন্দ সরস্বতী (১৮২৪-১৮৮৩) প্রতিষ্ঠিত আর্য সমাজ। ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আর্য সমাজ সংগঠন গুজরাট, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, বিহার ও উত্তর প্রদেশে প্রভাব বিস্তার করেছিল। আর্য সমাজ মূর্তিপূজা, বহুদেববাদ, আচার অনুষ্ঠান, যাজকত্ব (পুরোহিততন্ত্র), পশুবলি, বাল্যবিবাহ এবং বর্ণ ব্যবস্থার বিরোধী ছিল।
● হিন্দুত্বের অহঙ্কার ও ঐতিহ্যের পরম্পরার মাধ্যমে ভারতের পিছিয়ে-পড়া জনগণের বিকাশ সম্ভব - এই ধারণার বলিষ্ঠ প্রবক্তা ছিলেন দয়ানন্দ সরস্বতী। তাঁর স্লোগান ছিল “BACK TO THE VEDAS” (বেদের দিকে ফিরে চলো)। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, একমাত্র এভাবেই ভারতীয় জনগণকে একত্রিত করা সম্ভব। ভারতীয় ভাষায় বেদের অনুবাদ করে তিনি শূদ্রদেরও বেদ চর্চায় উৎসাহ দিতেন। তাঁর রচিত দার্শনিক গ্রন্থ ‘সত্যার্থ প্রকাশ’-এ তিনি ব্রাহ্মণ, আত্মা ও প্রকৃতি - এই তিন উপাদান নিয়ে বিশ্ব সৃষ্টির কথা বলেন। ১৮৭৫ সালে ‘সত্যার্থ প্রকাশ’ প্রকাশিত হয়েছিল। জনসাধারণকে অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোতে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে এই পুস্তক - নামকরণে একথাই ব্যক্ত হয়েছে। আর্য সমাজের স্লোগান ছিল, ‘সমগ্র বিশ্ববাসীকে উন্নত চরিত্রসম্পন্ন করে গড়ে তোলো’।
● দয়ানন্দ সরস্বতী ও তাঁর আর্য সমাজ মূর্তি পূজা, পশুবলি, বর্ণবৈষম্য ও অন্যান্য সামাজিক কুসংস্কারের বিরোধিতা করতেন। আর্য সমাজ উদ্যোগ নিয়ে ‘শুদ্ধি’ নামক একটি অনুষ্ঠান করত। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুনরায় হিন্দুধর্মে ফিরে আসা যেত। সংস্কৃত ভাষাকে তিনি ইংরেজি ভাষার বিকল্প ভাষা হিসাবে প্রচার করেছিলেন। তবে এটাকে অস্বীকার করা যাবে না যে, সংস্কারবাদী আন্দোলন ও ব্রিটিশ বিরোধিতা যেমন আর্য সমাজ পরিচালিত আন্দোলনে ছিল, আবার এগুলির আড়ালে আর্য সমাজ ধর্মীয় মৌলবাদ প্রচারেও ভূমিকা পালন করেছিল।
স্বামী বিবেকানন্দ (১৮৬২-১৯০২)
● রামকৃষ্ণ পরমহংসের (১৮৩৬-১৮৮৬) সার্বজনীন ধর্মের ভাবনা সক্রিয়ভাবে প্রচার করেছিলেন তাঁর শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ। হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা বেশ কয়েকটি দার্শনিক বই তিনি ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ করে পাশ্চাত্যের দেশগুলির কাছে তুলে ধরেছিলেন। বিশেষকরে বেদান্ত ও যোগদর্শন প্রচারে তিনি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। অল্প বয়সে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। ১৮৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকাগো শহরে ‘ধর্ম সংসদ’-এ তাঁর ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তাঁরই উদ্যোগে নিউ ইয়র্ক ও সানফ্রান্সিসকো শহরে ‘বেদান্ত সোসাইটি’ স্থাপিত হয়। রামকৃষ্ণ মঠ তাঁরই উদ্যোগে স্থাপিত হয়। লক্ষ্য ছিল সন্ন্যাসী ও গৃহীভক্তদের আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ। রামকৃষ্ণ মিশন দাতব্য কাজ, সামাজিক কাজ ও শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে গড়ে ওঠে। সমসাময়িক ভারতে স্বামী বিবেকানন্দ একজন যথেষ্ট প্রভাবশালী দার্শনিক ও সমাজসংস্কারক ছিলেন। সংস্কার আন্দোলনে তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ব্রিটিশ শাসিত ভারতে জাতীয়তাবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
● ভারতীয় পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণির দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিবেকানন্দের দার্শনিক ভাবনায় প্রকাশিত হয়েছিল। ভারতের পেটি বুর্জোয়া শ্রেণি পরাধীনতার সেই সময়কালে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এক সার্বিক দ্বন্দ্বে যেমন প্রবেশ করতে পারেনি, আবার সামন্ত শক্তির বিরুদ্ধেও লড়াই করার মতো শক্তি অর্জন করেনি। ওই সময়কালে ব্রিটিশ পণ্য ও নীতির আক্রমণে গ্রামভিত্তিক অর্থনীতির ধ্বংসকেও রক্ষা করা যায়নি। বিবেকানন্দের দর্শন নতুন একটি ব্যবস্থার পক্ষে উপযুক্ত ছিল না। ভারতীয় পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণি সমসাময়িক নানা দ্বিধা ও দ্বন্দ্বে হস্তক্ষেপ করার প্রয়াস গ্রহণ করেছিল। সমাধানের তুলনায় খ্যাতির লক্ষ্য ছিল। বিবেকানন্দের দার্শনিক ভাবনায় এরই প্রতিফলন ঘটেছিল। দর্শনে মৌলিক দ্বন্দ্বের প্রশ্ন তুলে বিবেকানন্দ ভাববাদ ও বস্তুবাদের সংমিশ্রণের ভাবনা উপস্থিত করেছিলেন। তাঁর মতে বিভিন্ন দর্শন পরস্পর বিরোধী নয়। বলা যেতে পারে, সত্যের সন্ধানে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে নিচ থেকে উপরে যাওয়া, এইভাবেই বিভিন্ন দর্শন পরস্পর সম্পর্কিত। পদার্থ ও চেতনা প্রতিস্থাপনযোগ্য। এই প্রস্তাব স্বামী বিবেকানন্দ করেছিলেন। তাঁর মতে, কখনো কখনো পদার্থ চেতনায় পরিণত হতে পারে, আবার চেতনাও বস্তুরূপ গ্রহণ করতে পারে। বিবেকানন্দ অদ্বৈতবাদী হলেও ঘোষণা করেছিলেন যে, ভাববাদীরা যাকে ব্রহ্ম বলে, বস্তুবাদীরা তাকেই পদার্থ বলে।
(ক্রমশ)