৫৮ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা / ১৪ মে, ২০২১ / ৩০ বৈশাখ, ১৪২৮
মানিক সরকার সহ বামপন্থী নেতৃবৃন্দের উপর বিজেপি’র হামলার বিরুদ্ধে ত্রিপুরা জুড়ে ধিক্কার
তীব্র নিন্দা পলিট ব্যুরোর
হারাধন দেবনাথ
ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণের শিকার ত্রিপুরা। আক্রান্ত মানুষের সাথে কথা বলতে গিয়ে দক্ষিণ ত্রিপুরার শান্তিরবাজারে ১০ মে বিজেপি’র দুর্বৃত্তবাহিনীর হাতে আক্রান্ত হলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বর্তমান বিরোধী দলনেতা, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর অন্যতম সদস্য মানিক সরকার। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্যজুড়ে নিন্দা-ধিক্কারের ঝড় উঠেছে। তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। এই ঘটনার পরদিন বিভিন্ন প্রভাতী পত্রিকায় বিজেপি’র হিংস্রতা তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন আক্রমণের নিন্দা-ধিক্কার জানিয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছেন এ কোন্ ত্রিপুরা? আইনের শাসন কোথায়? বিজেপি-কে জনবিচ্ছিন্ন করে ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণ ঠেকানোর আওয়াজ উঠেছে। কাজ-খাদ্য সঙ্কটে দিশেহারা মানুষ, অধিকার বঞ্চিত মানুষের লড়াইয়ের সাথি সিপিআই(এম) কর্মী-সমর্থকদের উপর আক্রমণ চলছে। মানুষকে সন্ত্রস্ত করে রাখতে বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের প্রশ্রয়ে একটির পর একটি আক্রমণ চলছে। লাশ উদ্ধার, নারী নির্যাতনের নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। সভ্যতা, গণতন্ত্র ভুলুণ্ঠিত। প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের কাজে তিতিবিরক্ত ক্ষুব্ধ জনতার কণ্ঠস্বর দাবিয়ে দিতে এই আক্রমণ - বলছেন মানুষ। তা না হলে সিপিআই(এম)’র যোগেন্দ্রনগর অফিসে কেন সাতবার আক্রমণ হলো? ৭ মে রাতের অন্ধকারে সিপিআই(এম)’র দুটি অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। কমলপুরে যুবকর্মীকে রক্তাক্ত, সিমনায় সিপিআই(এম) অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা একই দিনে ঘটেছে। বাড়ছে সাংবাদিকদের উপর আক্রমণ। পুলিশকে ‘দলদাসে’ পরিণত করা হচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যমের চোখে
বিভিন্ন পত্রিকা নিজেদের মতো করে সংবাদ পরিবেশ করেছে। সংবাদ পড়ে মনে হয়েছে বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের এই আক্রমণ নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং সমর্থনের স্পষ্ট ইঙ্গিতই মিলেছে। একটি পত্রিকা লিখেছে ‘প্রকাশ্যে হামলার শিকার মানিক সরকার, বাদল চৌধুরী।’ শান্তিরবাজার থানার ওসি বললেন ‘আমি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ’।
একটি পত্রিকা লিখেছে ‘শিষ্টাচার হারাল শাসকদল... অকাতরে ডিম, ঝাড়ু, জুতা, বোতল ছুড়ল কর্মীরা। বিগত দিনে বিরোধী দলনেতার উপর আক্রমণের নজির নেই এই রাজ্যের ইতিহাসে।’ বর্তমান রাজ্য মন্ত্রীসভার হেভিওয়েট সদস্য রতনলাল নাথ এক দশক বিরোধী দলনেতা ছিলেন। তিনি এমন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন? প্রশ্ন তুলেছে পত্রিকাটি। একটি পত্রিকা লিখেছে ‘সন্ত্রাসের ঘটনা দেখতে গিয়ে আক্রান্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।’
একটি পত্রিকা নিবন্ধে উল্লেখ করেছে ‘রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে যা ঘটে গেল তা নিন্দনীয়। হিংসার রাজনীতিতে আর যাই থাকুক সরাসরি শারীরিক আক্রমণ ঘোর অপরাধ।’
হিংস্র আক্রমণ
গত ৫ মে গেরুয়া সন্ত্রাসে আক্রান্ত শান্তিরবাজারের সিপিআই(এম) কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়াতে গেলে ১০ মে দুপুরে সেখানে মানিক সরকার সহ বিরোধী দলের উপনেতা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাদল চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হন। ভাঙচুর করা হয়েছে চারটি গাড়ি। আহত হয়েছেন দুই পার্টিনেতা। সব মিলিয়ে বিজেপি দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাসের আরও একটি বীভৎস চেহারা দেখলো শান্তিরবাজার।
যে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের নেতা, উপনেতারা প্রকাশ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন, তখন বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের শাসনে একটিও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেনি বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ডাহা মিথ্যা বক্তব্যে আখেরে তারই দলের দুর্বৃত্তরা উৎসাহিত হচ্ছে।
গত ৫ মে ছিল মহান দার্শনিক কার্ল মার্কসের ২০৪তম জন্মদিন এবং ত্রিপুরা তপশিলি জাতি সমন্বয় সমিতির প্রতিষ্ঠা দিবস। বিজেপি-র হুমকি উপেক্ষা করে সিপিআই(এম) নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা সকালে শান্তিরবাজার মহকুমা অফিসের সামনে গিয়ে ফুল-মালায় শ্রদ্ধা জানান। কর্মসূচি শেষ করে বাড়ি ফেরার পর বেশ কয়েকজন পার্টি কর্মীর বাড়িতে হামলা চালায় শাসকদলের দুর্বৃত্তরা। ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। দৈহিকভাবে আক্রমণ করা হয়। কয়েকজনকে হাসপাতালে নিতে হয়। বিজেপি দুর্বৃত্তদের হুমকির মুখে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে আসতে হয়েছে আহতদের।
আহতদের দেখতে তাদের বাড়িতে এদিন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের নেতৃত্বে বাম বিধায়ক দল এবং সিপিআই(এম) নেতৃত্ব যাওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়। আগের দিন বিরোধী দলনেতার অফিস থেকে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে লিখিতভাবে এই কর্মসূচি আগাম জানানো হয়। সফরকারী দলে মানিক সরকার, বাদল চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন অপর বিধায়ক সুধন দাস। এছাড়াও ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ কর, দক্ষিণ জেলা সম্পাদক বাসুদেব মজুমদার, বিলোনিয়া মহকুমা সম্পাদক তাপস দত্ত, রাজ্য কমিটির সদস্য পরীক্ষিৎ মুড়াসিং প্রমুখ।
সফরকারী দল এদিন দুপুরে শান্তিরবাজার ডাকবাংলো পেরোনোর সময় রাস্তার দু’দিকে দাঁড়ানো বিজেপি’র দুর্বৃত্তরা ‘মানিক সরকার গো ব্যাক, বাদল চৌধুরী গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকে। দুর্বৃত্তরা হুজ্জতি শুরু করে। বিরোধী দলনেতাসহ নেতৃবৃন্দের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করে। শান্তিরবাজার থানার ওসি’র নেতৃত্বে কিছু পুলিশ ছাড়া জেলা পুলিশের কোনো আধিকারিক কিংবা অতিরিক্ত বাহিনী ছিল না ঘটনাস্থলে। কিছুক্ষণ পর দুর্বৃত্তদের তুমুল হুজ্জতির মধ্যে বিরোধী দলনেতাসহ নেতৃবৃন্দকে গত ৫ মে আহত সিপিআই(এম) কর্মী নরেন্দ্র দাসের বাড়িতে সফরকারী দলকে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানেও দুর্বৃত্তরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। জাতীয় সড়ক থেকে নেমে গলি পথে সেই বাড়িতে যেতে হয়। বাড়িতে ঢুকে মানিক সরকার, বাদল চৌধুরীরা আক্রান্ত পরিবারের লোকজনের সাথে যখন কথা বলছিলেন তখনও সেই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
এ অবস্থায় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন বাকি বাড়িগুলিতে না গিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসবেন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার মুহূর্তে মানিক সরকার, বাদল চৌধুরীসহ পার্টি নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয় ইট, পাথর, মদের বোতল, জলের বোতল, লাঠি প্রভৃতি। এতে মানিক সরকার হাতে এবং বাদল চৌধুরী মাথায় ব্যথা পান। পুলিশের উপরও সেই ঢিল পড়ে। বিরোধী দলনেতার সরকারি গাড়ির দরজার গ্লাস ভাঙে দুর্বৃত্তরা। উপনেতাকে বহনকারী সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তরের গাড়ির দরজার গ্লাসও ভাঙে। এছাড়াও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পরীক্ষিৎ মুড়াসিং-এর গাড়ির। চালকসহ দুই দেহরক্ষী অল্পবিস্তর আহত হন। তাছাড়া আহত হন এই গাড়িতে থাকা পার্টি নেতা জহর দেবনাথ। মারধর করা হয় আরেক পার্টি নেতা আশুতোষ দেবনাথকে।
হামলা পরিকল্পিত
মানিক সরকার এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আমি শান্তিরবাজারেও বলেছি, এখানেও বলছি, আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। তারপরও বলবো আমার রক্তের বিনিময়ে, জীবনের বিনিময়ে যদি ত্রিপুরায় শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, সুস্থিতি ফিরে আসে, গণতন্ত্র পুনঃস্থাপিত হয় আমি অখুশি হবো না। সাধুবাদ জানাবো। তারপরও বলব শান্তি চাই, সুস্থিতি চাই, সম্প্রীতি চাই, গণতন্ত্র চাই। রাজ্যে এটা কী হচ্ছে? এসব বন্ধ করা দরকার।
মানিক সরকার বলেন, কোন্ রাজত্বে আমরা আছি। জঙ্গলের রাজত্ব আমরা বলছি, এটা শুধু কথার কথা না। এর থেকে বেরিয়ে আসতে আমরা বলব দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সব অংশের মানুষকে সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানানো দরকার। সোচ্চার হওয়া দরকার। সময় অনেক গেছে। আর সময় নষ্ট করা ঠিক না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজ্যটাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আইনের শাসন নেই। জঙ্গলের শাসন চলছে। একদলীয় স্বৈরশাসনে ফ্যাসিস্ট সুলভ কায়দায় ত্রিপুরার মানুষকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। এটা চলবে? চলতে পারে না।
মানিক সরকার বলেন, বিজেপি’র মধ্যে কমিউনিস্ট ভীতি এমনভাবে ঢুকেছে তার থেকে আত্মরক্ষার জন্য তারা আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে। দিনের পর দিন আক্রমণ বাড়িয়ে তুলেছে। এডিসি ভোটে তাদের ভরাডুবি হয়। সাম্প্রতিক অতীতে ভারতের ছোটো বড়ো ৫টা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে আসাম বাদে অন্যত্র ভরাডুবির পর বুঝতে পারছে বিজেপি’র পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। জাতীয় স্তরে এবং ত্রিপুরায়। কমিউনিস্টরা যে ধাতুতে গড়া তাতে সমস্যাপীড়িত মানুষকে তাদের থেকে আলাদা করা যাবে না। মানুষের সঙ্গে কমিউনিস্টরা যোগাযোগ রাখবে। তাদের সমস্যা নিয়ে ভাববে এবং সংগঠিত করবে। রাস্তায় তারা আছে, রাস্তায় থাকবে। তাদের প্রতিহত করা যাবে না।
বিরোধী দলনেতা স্পষ্ট করেই বলেন, শাসনের নামে যে লুটের রাজত্ব চলছে সেই রাজত্ব অব্যাহত রাখার জন্য সন্ত্রাসের পথ তারা বেছে নিয়েছে। এটা ক্রমে ক্রমে বাড়ছে। গত কয়েক দিন ধরে খুব পরিকল্পিতভাবেই সব ঘটনাগুলো ঘটছে। পার্টি অফিসে আগুন ভাঙচুর লুটপাট হচ্ছে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)’র যে সব অফিস বছরের পর বছর বন্ধ ছিল, খোলা যায়নি, সেগুলো ভেঙে ঢুকছে। পুড়িয়ে দিচ্ছে। আগে ৩-৪ বার আক্রান্ত হয়েছে সেই অফিসগুলো আবারও আক্রান্ত হচ্ছে। পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, লুটপাট করা হচ্ছে। যার ফলে দৈহিকভাবে আক্রমণ বাড়ছে।
তিনি বলেন, রাজ্যে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বের মদত ছাড়া, এদের অনুমতি ছাড়া এসব কাণ্ড কারখানা চলতে পারে না। একইসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষের স্মরণশক্তির ভাণ্ডারে এই ঘটনাগুলো জমছে। মানুষ ভুলে যাবেন মনে করার কারণ নেই। ইতিহাসের অভিজ্ঞতায় মানুষ এগুলো ভোলে না। ভুলে যেতে পারে না।
জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহল এবং রাজ্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের ভূমিকা তুলে ধরে মানিক সরকার বলেন, শান্তিরবাজারের ঘটনার পেছনে পূর্ব পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়েছি। কোথায় যাব কেন যাব উল্লেখ করেছি। কে-কে যাব,কখন যাব সবই জানানো হয়েছে। কিন্তু এই ঘটনা যখন ঘটলো আমরা কিন্তু শান্তিরবাজার থানার দারগাবাবু ছাড়া জেলার উচ্চ পর্যায়ের কোনো পুলিশ অফিসারকে যেতে কিংবা কথা বলতে দেখিনি। তাই বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত বলেই মনে করি।
আরও একটি কারণ তুলে মানিক সরকার বলেন, আমরা যখন শান্তিরবাজার থেকে আগরতলায় ফিরে আসলাম তখন জানতে পারলাম সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণের ছবি দেখে পার্টির রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ ডিজির সঙ্গে, ডিআইজি’র সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। কেউ ফোন তুলছিলেন না। পুলিশের ভূমিকা এবং রাজ্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের ঘটনা দুটো মেলালে যেটা মনে হচ্ছে পুরো বিষয়টা পূর্ব পরিকল্পনা মতো। একজন থানেদারকে সামনে ঠেলে দিয়ে বাকিরা তামাশা দেখার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
বরদাস্ত করা হবে না
ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ওপর বিজেপি দুষ্কৃতীদের হামলার তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। ১০ মে দক্ষিণ ত্রিপুরার শান্তিরবাজার এলাকায় বিজেপি দুষ্কৃতীরা শারীরিকভাবে হামলা চালায় পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য মানিক সরকার সহ বিরোধী প্রতিনিধি দলের ওপর। এই আচরণ বরদাস্ত করা হবে না এবং প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রত্যাখ্যান করা হবে বলে জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।
ত্রিপুরা পুলিশ এবং প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই এদিন শান্তিরবাজার এলাকায় আক্রান্ত পার্টিনেতা, কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি পরিদর্শনে গিয়েছিল মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন বিরোধী প্রতিনিধি দল। কিন্তু এলাকায় পৌঁছাতেই তাদের ওপর হামলা চালায় বিজেপি মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা। পলিট ব্যুরো এদিন এক বিবৃতিতে একথা জানিয়ে বলেছে, এই ঘটনাতেই বিজেপি’র প্রকৃত চরিত্র, তাদের কাজকর্ম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ত্রিপুরায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের কোনোরকম গণতান্ত্রিক কাজকর্মই তারা করতে দিতে চায় না।
লড়াইয়ের বার্তা
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য এবং রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের নেতৃত্বে বিধায়কসহ পার্টি নেতাদের নিয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলের উপর কেন্দ্রের এবং রাজ্যের শাসক দল বিজেপি’র দুর্বৃত্ত বাহিনীর হিংস্র, বর্বর, ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী।
পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী বিবৃতিতে বলেছে, ২০১৮ সালের ৩ মার্চ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন বিকেল থেকেই রাজ্যের অন্যান্য স্থানের সাথে শান্তিরবাজারে বিজেপি’র দুর্বৃত্ত বাহিনী লাগাতার হিংস্র আক্রমণ চালিয়ে আসছে। শান্তিরবাজারের পার্টি অফিসটি তখন থেকেই বন্ধ। গত ৫ মে-ও বর্বর আক্রমণ ঘটেছে।
গত তিন বছর ধরে রাজ্যে গণতন্ত্র, সংবিধান, আইনের শাসনের কোন অস্তিত্বই নেই। জঙ্গলের রাজত্ব চলছে।
শান্তিরবাজারে সিপিআই(এম) নেতাদের ওপর আক্রমণ সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনসমূহে অধিকাংশ রাজ্যে বিজেপি’র শোচনীয় পরাজয়ে হতাশার বহিঃপ্রকাশ। বিজেপি-কে জনবিচ্ছিন্ন করেই এদের বর্বর ফ্যাসিস্টসুলভ আক্রমণ ঠেকাতে হবে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধারে রাজ্যের সমস্ত অংশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণকে সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে সিপিআই(এম) আবেদন জানাচ্ছে।