৫৮ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা / ১৪ মে, ২০২১ / ৩০ বৈশাখ, ১৪২৮
কমরেড গৌরী আম্মার জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কিংবদন্তি কমিউনিস্ট কমরেড কে আর গৌরী আম্মার জীবনাবসান হয়েছে। বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ১১ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা নাগাদ তিরুবনন্তপুরমের একটি বেসরকারি হাসপাতালে জীবনাবসান হয় তাঁর। সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কমরেড গৌরী আম্মার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘কেরালার গণআন্দোলনের অনবদ্য নেত্রী কমরেড গৌরী আম্মার মৃত্যুতে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছি।’’ কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, কমরেড কে আর গৌরী ছিলেন সাহসী যোদ্ধা। শোষণের বিরুদ্ধে এবং সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা তাঁকে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম মহিলা নেত্রী বলে চিহ্নিত করেছেন। শতবর্ষ পার করা কমরেড গৌরী আম্মার মৃত্যুতে কেরালা জুড়েই শোকের আবহ ছড়িয়েছে।
দেশে প্রথম কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৭ সালে কেরালায় কমরেড ই এম এস নাম্বুদিরিপাদের নেতৃত্বে। প্রথম কমিউনিস্ট সরকারের একমাত্র মহিলা মন্ত্রী ছিলেন কমরেড কে আর গৌরী। তাঁর জীবনাবসানের সঙ্গেই ইতিহাসের একটি অধ্যায় শেষ হলো। তবে শুধুমাত্র এই পরিচয়ে তাঁর বিশাল অবদানের কিছুই উপলব্ধি করা যায় না। কেরালার রাজনীতিতে অন্যতম শক্তিশালী নেত্রী ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ শাসনাধীন সময় থেকে তিনি ভয়ঙ্কর পুলিশি নির্যাতন সহ্য করেই কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। উদ্দীপনাময় রাজনৈতিক জীবনে তিনি তীব্র লড়াই করেছেন সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে। মহিলাদের বিষয় নিয়ে দৃঢ় অবস্থান এবং প্রশাসক হিসেবে তীক্ষ্ণ বিচারবুদ্ধি তাঁকে কেরালার সমাজে ‘লৌহ মানবী’ আখ্যা দেয়। কেরালার পুরুষ প্রধান রাজনীতিকদের মধ্যে তিনি ব্যতিক্রমীভাবে উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন।
আলাপুঝা জেলার পাত্তানাক্কাড গ্রামে ১৯১৯ সালের ১৪ জুলাই জন্ম কে আর গৌরীর। কে আর রামানন ও পার্বতী আম্মার সপ্তম কন্যা গৌরী। এর্নাকুলামের মহারাজা কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে এর্নাকুলামের সরকারি আইন কলেজ থেকে আইনের ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি। পিছিয়ে থাকা অংশের ইঝাভা সম্প্রদায়ের তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি আইনে ডিগ্রি লাভ করেন। বড়ো দাদা এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতা সুকুমারনের প্রভাবে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এমন সময়ে, যখন হাতে গোনা মহিলাদের রাজনীতিতে দেখা মিলত। ১৯৪৬ সালে ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নজরে আসেন গৌরী। তৎকালীন রাজন্য প্রদেশ ত্রাভাঙ্কোরকে ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করার দাবিতে ছিল সেই আন্দোলন। ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন।
ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এসেছিলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে। তখন পার্টি বেআইনি। গ্রেপ্তার হয়ে জেলেও গিয়েছিলেন। গোটা রাজনৈতিক জীবনে বহু বার জেলবন্দি থেকেছেন গৌরী। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে অকল্পনীয় পুলিশি অত্যাচার সহ্য করেছেন। তাঁর স্বামী টিভি টমাসও ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা। তিনিও ইএমএস মন্ত্রীসভায় ছিলেন। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হলে কমরেড কে আর গৌরী সিপিআই(এম)-এ যোগ দেন। তাঁর স্বামী টি ভি টমাস থেকে যান সিপিআই-তেই। তিনি কেরালা মহিলা সমিতির সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। কেরালা রাজ্য কৃষক সভার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৬০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। এইভাবেই একসময়ে কে আর গৌরী হয়ে ওঠেন কেরালার মানুষের আপনজন ‘গৌরী আম্মা’।