E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৯ সংখ্যা / ১৪ অক্টোবর, ২০২২ / ২৭ আশ্বিন, ১৪২৯

মাল নদীতে প্রাণ কেড়ে নেওয়া বিপর্যয়

দায়ী শাসকের সীমাহীন দুনীতি এবং জৌলুসের রাজনীতি

কৌশিক ভট্টাচার্য


মাল নদীতে হরপা বানে ভেসে যাচ্ছে মানুষ।

৫ অক্টোবর দশমীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জনের উৎসবমুখর পরিবেশ নিমেষে বিষাদের সুরে পর্যবসিত হলো। ডুয়ার্সের মেটেলি থেকে পশ্চিম দিকে জাতীয় সড়ক ধরে কিছুদূর এগোলেই পরিমল মিত্র স্মৃতি মহাবিদ্যালয়। মহাবিদ্যালয় ছেড়ে একটু এগিয়ে গেলেই মালবাজার শহরে ঢোকার মুখে মাল নদী। বিসর্জনের রাতে এই নদীতেই হঠাৎ জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ ভেসে যান।সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা আট। যার মধ্যে শিশু, যুবক, মহিলা, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা রয়েছেন। বহু মানুষ আহত। যদিও সরকারি হিসাবের সাথে বাস্তব মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। মুঠো ফোনের যুগে মুহূর্তে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। ভিডিয়োতে দেখা যায় অগুনতি মানুষ পিঁপড়ের মতো ভেসে যাচ্ছেন। অসংখ্য নিখোঁজ।

মালবাজারের পূর্ব দিক দিয়ে মাল নদী বয়ে চলেছে। পাহাড় ও ডুয়ার্সের নদী খরস্রোতা হবে, এটাই স্বাভাবিক। জাতীয় সড়কের উপর মাল সেতুর নিচেই প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা হয়েছিল। মাল শহরের বিভিন্ন প্রতিমা ছাড়াও বেশ কিছু চা বাগানের পুজোর প্রতিমাও এখানে বিসর্জন দেওয়া হয়। ফলে জনসমাগম ছিল যথেষ্ট পরিমাণে। রাত আটটার পর থেকে কিছু মানুষ নজর করলেন, নদীতে জলের স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ প্রশাসন হয়তো বুঝতে পেরেছিল বিপদ আসন্ন। কিন্তু ততক্ষণে নদী রূদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। দেখতে দেখতে বহু মানুষ ভেসে যেতে লাগলেন। প্রকৃতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের লাইভ টেলিকাস্ট ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। মাল নদীতে বিসর্জন নতুন নয়, প্রতিবারই হয়। ডুয়ার্সের নদীগুলিতে ‘হড়পা বান’ কোনো নতুন ঘটনা নয়। কিছুদিন আগেও এই মাল নদীতে হড়পা বানে পাথর বোঝাই লরি ভেসে যেতে দেখা গিয়েছিল। প্রশ্ন হলো - নদীর চরিত্র, নদীর স্রোতের তীব্রতা সম্পর্কে প্রায় সকলেই ওয়াকিবহাল থাকা সত্ত্বেও এত বড়ো বিপর্যয় ঘটলো কী করে? কী কারণে এত মানুষের প্রাণ চলে গেল? কী কারণে এতগুলো পরিবার সর্বস্বান্ত হলো চিরতরে? এই সকল প্রশ্নের গভীরেই আসল কারণ লুকিয়ে আছে।

আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস ছিল বৃষ্টিপাতের। ষষ্ঠীর দিনেও আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা পুজোর দিনগুলির জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শেষলগ্নে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা জানিয়েছিলেন। গোপীনাথ বাবুর দাদা শুভাশিস রাহা এই দুর্ঘটনায় মৃত আটজনের একজন। উত্তরবঙ্গের বহুল প্রচারিত স্থানীয় বাংলা দৈনিকের ২৩ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবরের সংখ্যায় বিপদের সম্ভাবনার আশঙ্কা করে খবর করা হয়েছিল। এমনকী ২৪ সেপ্টেম্বরের সংখ্যায় মাল নদী ভাঙনের আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছিল। অর্থাৎ আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে নদীতে সম্ভাব্য বিপদের সমস্ত আগাম খবর জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ছিল। তার পরেও এত বড়ো বিপদের মুখে মানুষকে ঠে‍লে দেওয়া হলো।

কারণ হিসাবে বলা যায়, রাজ্য শাসকদলের পক্ষ থেকে জৌলুসের রাজনীতি অন্যতম প্রধান। মেলা, খেলা, মোচ্ছবের রাজনীতি বঙ্গের রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক-বিকাশের ক্ষেত্রে বারবার বিপদসংকুল পরিবেশ তৈরি করছে। এক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এক্ষেত্রে জৌলুসের রাজনীতি সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে। জাতীয় সড়কের উপর নির্মিত মাল নদীর সেতু এবং সেতুর উত্তর দিকে প্রায় একশ মিটার দূরত্বে রেল সেতু রয়েছে। বিসর্জনের দিন ব্যাপক লোক সমাগম, মেলা ইত্যাদির লক্ষ্যে মাল পৌরসভার প্রত্যক্ষ তদারকিতে দুইটি সেতুর মধ্যবর্তী অংশে মাল নদীর মূল গতিপথকে রদ করার জন্য সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে অস্থায়ী বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। এই বাঁধ তৈরির কাজে মাল পুরসভার চেয়ারম্যানকে পুজোর মধ্যেও তদারকি করতে দেখা যায়। নদীর গতিপথকে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে ঘুরিয়ে দিয়ে নদীবক্ষে কৃত্রিম ময়দান তৈরি করে বিসর্জনের সময় হাজারো মানুষকে নদীবক্ষে প্রবেশ করিয়ে, নদীবক্ষে মেলা বসানোয় সীমাহীন ঔদ্ধত্যের জৌলুসের রাজনীতির শিকার হলেন হাজারো সাধারণ মানুষ। মৃত্যু ঘটলো শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, বৃদ্ধার। চিরতরে নিঃস্ব হলো বহু পরিবার।

দ্বিতীয়ত, উত্তরবঙ্গের প্রায় প্রতিটি নদীতেই চলছে বালি, নুড়ি, পাথরের অবৈধ উত্তোলন। মাল নদীতেও রীতিমতো আর্থমুভার, জেসিবি, বুলডোজার নামিয়ে বহুদিন ধরেই অবাধে বালি, পাথর লুট চলছে। অথচ মাল নদীতে যেখানে অবৈধ বাঁধ নির্মাণ চলছিল, অবৈধভাবে বালি, পাথর উত্তোলন চলছিল - সেই জায়গাটি হলো সেচ দপ্তরের ঠিক পেছনে। সেচ দপ্তরের চোখের সামনে দিনের পর দিন শাসক দলের ঘনিষ্ঠ নির্দিষ্ট কয়েকজন ঠিকাদার এই কাজ করছিল বলে স্থানীয় মানুষ প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন। এক্ষেত্রেও‍‌ উঠে আসছে পৌরসভার চেয়ারম্যান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের নাম।

হড়পা বান, অতিবৃষ্টি - ইত্যাদি সম্পর্কে উত্তরবঙ্গের বিশেষত পাহাড় ও ডুয়ার্সের মানুষ যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। হড়পা বান আগেও বহু হয়েছে। বলা যায় প্রায় প্রতি বছরই এক বা একাধিকবার হয়। ৫ অক্টোবর এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার দু-দিন পর ৮ অক্টোবর আবারও হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন কী ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এত মানুষের মৃত্যু, এত মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, পরিবারগুলি সর্বস্বান্ত হওয়ার কারণ - হড়পা বান কিংবা অতিবৃষ্টি নয়। সীমাহীন দুর্নীতি ও জৌলুসের রাজনীতি হলো প্রধান কারণ। যদিও জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন, রাজ্য শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগকেই এই দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করছেন। ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা হলেও সাধারণ মানুষ থেকে পরিবেশবিদ, বিশিষ্টজন সকলেই সরকারি বাহানাকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করছেন।

৫ অক্টোবর ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার সময় প্রশাসনের সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থাই চোখে পড়েনি। সিভিল ডিফেন্সের মাত্র ৮ জন কর্মী নদীবক্ষে কর্তব্যরত ছিলেন - যাঁদের হাতে বিপদের সময় মানুষকে বাঁচানোর জন্য ন্যূনতম উপকরণও ছিল না। স্থানীয়দের মধ্যে মহম্মদ মানিক, মনোজ মুণ্ডা, তরিফুল ইসলাম সহ বেশ কয়েকজন যুবক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহু মানুষকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন।

দুর্ঘটনা ঘটার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বামপন্থী ছাত্র-যুব-রেড ভলান্টিয়ার মানুষকে উদ্ধারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সিপিআই(এম)-র অসংখ্য কর্মী হাতে হাত মিলিয়ে সমস্তরকম সহযোগিতার ব্যবস্থা করেন। পার্টির মাল এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্ত, জেলা নেতৃত্ব পার্থ দাস, সমীর ঘোষের নেতৃত্বে একদিকে পার্টির কর্মী ও ছাত্র-যুবদের টিম উদ্ধার কাজ, আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজ দক্ষতার সাথে করতে থাকেন। ইতিমধ্যেই পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সামাজিক মাধ্যমে সমস্ত কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন।

রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম স্থানীয় কর্মী ও নেতৃত্বের ১৫-২০ জনের একটি টিম দ্রুততার সাথে তৈরি করে নদীবক্ষে সার্চ অপারেশনের পরিকল্পনা করেন। ইতিমধ্যে মালবাজারে শুরু হয় তীব্র বৃষ্টি। প্রশাসন কিছুক্ষণ সার্চ অপারেশন করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ দেখিয়ে যখন সার্চ অপারেশন বন্ধ করে দেয় তখন জিয়াউল আলম-এর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন অকুতোভয় কর্মী সারা রাত সার্চ অপারেশন চালায়। অপর দিকে জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যের সাথে দ্রুত পরামর্শ সেরে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য পীযূষ মিশ্র, কৌশিক ভট্টাচার্য রাতেই মালবাজারে পৌঁছায়। রাত ২টায় মাল হাসপাতালে আহত, নিহতদের পরিবারের মানুষদের সাথে কথা বলেই তাঁরা পুলিশ প্রশাসনের সাথে সর্ব‍‌শেষ পরিস্থিতি, সার্চ অপারেশন, উদ্ধার কাজ ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলে জানার চেষ্টা করেন। আলোচনাকালেই বোঝা যায় প্রশাসন মৃত্যুর সংখ্যা, নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। রাত ৩টায় মালবাজার পার্টি নেতৃত্বের সাথে দ্রুত সামগ্রিক আলোচনা সেরে সদ্য দুর্ঘটনায় মৃতদের বাড়ি পৌঁছে যাওয়া হয়। এদিকে ভোরের আলো ফুটতে ফুটতেই জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আ‍‌শিস সরকার সহ একটি টিম মালবাজারে পৌঁছে যায়। এদিকে মাল হাসপাতাল থেকে একটি একটি করে মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য জলপাইগুড়িতে পাঠানো হতে থাকে। পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা যুব নেতা প্রদীপ দে’র নেতৃত্বে একটি টিম ময়না তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কাজ থেকে শুরু করে দুর্ঘটনার কেন্দ্রস্থল থেকে ১০/১২ কিলোমিটার পার্টির নেতৃত্ব, কর্মীবাহিনীর সার্চ অপারেশন চলাকালীন ৬ অক্টোবর সকাল ৯.৩০ পর্যন্ত প্রশাসনের কাউকে চোখে পড়েনি। অথচ পার্টির নেতৃত্ব বারংবার জেলা প্রশাসনকে রাত থেকে মেসেজ করে অপারেশন চালানোর অনুরোধ করেন, কিন্তু জেলা প্রশাসন এই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি থেকে শাসকদলের নেতৃত্ব-কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। যদিও জনমনের ক্ষোভ ও ঘৃণার মুখে ঘটনার একদিন পর সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলাশাসক নির্লজ্জের মতো, পৌরসভার সকল অন্যায়কে ধামাচাপা দিতে শত চেষ্টা করলেও একজন নদী বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ওইদিনের ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। এত মানুষের মৃত্যুর কারণ যে শাসকদলের জৌলুসের রাজনীতি ও সীমাহীন লুট - এটা সাধারণ মানুষের কাছে স্বচ্ছ জলের মতো পরিষ্কার হয়ে পড়েছে। শাসকদলের নেতাদের ভাবমূর্তি উদ্ধারে দুর্ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন সক্রিয় থাকলেও মৃতদের পরিবার পরিজনদের তরফ থেকে পৌরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পার্টির রাজ্য কমিটি পক্ষে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম জেলার দুই সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৌশিক ভট্টাচার্য ও পীযূষ মিশ্রকে নিয়ে জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে দৃঢ়তার সাথে স্পষ্টত যে বিষয় ও দাবিগুলি জনসমক্ষে হাজির করেন তা হলো -

১) অবিলম্বে মাল পৌরসভার চেয়ারম্যানের পদত্যাগ।
২) এই ঘটনার দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি।
৩) ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ।
৪) সামনের কালী পূজো ও ছট উৎসবে যেখানে নদীঘাট ব্যবহার অনিবার্য, সেক্ষেত্রে সমস্ত ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে পুজো পরবকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসকদলের তরফে সরকারি টাকা লুটের জৌলুসি রাজনীতির মেলা-খেলার উদ্দীপনায় মানুষের জীবন নিয়ে আর কোনো অঘটন না ঘটে।

এর সাথে স্বাভাবিক প্রশ্ন উঠে আসে -

১) রেল ব্রিজ ও জাতীয় সড়কের ব্রিজের সংযোগস্থলে আর্থমুভার, জে সি বি দিয়ে অবৈধ অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার কী আগাম অনুমতি মাল পৌরসভাকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এবং রেল দপ্তর দিয়েছিল? যদি না দিয়ে থাকে, তবে কী এই অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? কারণ এর ফলে রেল ব্রিজ ও জাতীয় সড়কের বড়ো রকম ক্ষতির সম্ভাবনা আছে।
২) দুর্ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন ঘণ্টা সার্চ অপারেশন করার পর বন্ধ করে রাখা হলো কেন, সেখানে বারবার জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করার পরেও প্রশাসন নির্লিপ্ত থাকল - অথচ স্থানীয় বাসিন্দারা বহু মানুষকে ভেসে যেতে দেখেছিলেন। স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন কেন উদ্ধার কাজে চরম গাফিলতি করলেন?
৩) সেচ দপ্তরের চোখের সামনে দিনের পর দিন মাল নদী থেকে বালি, নুড়ি, পাথরের অবৈধ উত্তোলন চললেও সেচ দপ্তর এই অবৈধ উত্তোলন রদ করা নিয়ে কোনোপ্রকার পদক্ষেপ নিয়েছে? এই অবৈধ খননে সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের ভূমিকা কী?
৪) প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় এনডিআরএফ কর্মীদের দেখা যায়নি কেন?
৫) হড়পা বানপ্রবণ নদী হওয়া সত্ত্বেও এনডিআরএফ, এসডিআরএফ কর্মীদের যুক্ত না করে কেন শুধুমাত্র কয়েকজন সিভিল ডিফেন্স কর্মী রাখা হলো?
৬) যে সামান্য সিভিল ডিফেন্স কর্মী ছিলেন, তাঁদের হাতে আগে থেকেই বিপদের আশঙ্কার কথা চিন্তা করে যথেষ্ট পরিমাণ প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখা হলো না কেন?

এই সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মালবাজার সহ রাজ্যের মানুষ। প্রশাসনিক ব্যর্থতা, গাফিলতির ফলে যে পরিবারগুলি চিরদিনের মতো স্বজন হারিয়েছেন, তাঁদের চোখের জল ক্ষোভের আগুনে পর্যবসিত হচ্ছে। পরদিন এই ঘটনার প্রতিবাদে ও শোকে মাল শহর সহ আশপাশের গ্রামীণ এলাকায় নীরব বনধ্‌ পালিত হয়। জলপাইগুড়ি সহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় মমতা ব্যানার্জির কার্নিভালের রাজনীতি বন্ধ হয়ে পড়ে। আমাদের ছাত্র, যুব, রেড ভলান্টিয়ার, বিভিন্ন গণসংগঠন, পার্টি কর্মী, নেতৃত্ব স্বজনহারা মানুষদের দুই হাতে আগলে রেখে সার্বিকভাবে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। পাশাপাশি দাবি আদায় করার তীব্র সংগ্রাম সংগঠিত করে ঠিকাদার, তোলাবাজদের সাথে সরকারের প্রত্যক্ষ যোগসাজসের ঘৃণ্য রাজনীতি বন্ধ করার লড়াই আরও জোরদার করার ডাক দেন।