৬০ বর্ষ ৯ সংখ্যা / ১৪ অক্টোবর, ২০২২ / ২৭ আশ্বিন, ১৪২৯
কমরেড কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দীর্ঘদিন ক্যানসারের সাথে লড়াই করার পর গত ১ অক্টোবর কমরেড কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন চেন্নাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। পার্টির এক অনন্যসাধারণ নেতা কমরেড কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের মৃত্যুতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো গভীর শোকপ্রকাশ করেছে। কমরেড কোডিয়ারি পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ছিলেন, এবং কিছুদিন আগে পর্যন্ত তিনি পার্টির কেরালা রাজ্য কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৩ অক্টোবর বিকেলে কান্নুরের পায়ামবালাম সমুদ্রতটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। কমরেড কোডিয়ারির শেষযাত্রায় কান্নুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নিয়ে তাদের প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানান। কমরেড কোডিয়ারির স্ত্রী এবং দুই পুত্র বর্তমান।
কমরেড কোডিয়ারির মৃতদেহ নিয়ে শেষযাত্রা শুরু হয় পার্টির কান্নুর জেলা কমিটির দপ্তর থেকে। শেষযাত্রা তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পায়ামবালাম সমুদ্রতটে পৌঁছায়। এই শেষযাত্রায় যেমন হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন, তেমনি এই দীর্যপথের দুধারে লক্ষ লক্ষ মানুষ সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁদের প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। শেষযাত্রায় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন সহ পার্টির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। শেষকৃত্যস্থলে কমরেড কোডিয়ারির মরদেহ বয়ে নিয়ে যান সীতারাম ইয়েচুরি, পিনারাই বিজয়ন, প্রকাশ কারাত এবং এম এ বেবি। প্রসঙ্গত, পায়ামবালাম সমুদ্রতটের এই শেষকৃত্যস্থলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ই কে নায়ানার, প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সি গোবিন্দন এবং শহিদ আঝিক্কোডন রাঘবনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল। ২ অক্টোবর কমরেড কোডিয়ারির মরদেহ চেন্নাই থেকে কান্নুরে আসে।
পলিট ব্যুরোর এক বিবৃতিতে বলা হয়ঃ খুব তরুণ বয়সে কমরেড বালকৃষ্ণন ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন এবং ছাত্রনেতা হিসেবে চিহ্ন রাখেন। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত তিনি এসএফআই’র কেরালা রাজ্য কমিটির সম্পাদক ছিলেন। ওই সময়ে কেরালায় এসএফআই-কে সবচেয়ে শক্তিশালী বামপন্থী ছাত্র সংগঠনে পরিণত করতে তাঁর বিরাট অবদান ছিল। তিনি সংগঠনের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি যুব সংগঠনে সক্রিয় হন। ১৯৮০-৮২ সময়পর্বে কমরেড কোডিয়ারি ডিওয়াইএফআই’র কান্নুর জেলার সম্পাদক হন। তিনি কেরালা করসকা সঙ্ঘমের রাজ্য সম্পাদকও ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই কমরেড বালকৃষ্ণন পার্টি সংগঠনে অসাধারণ সক্ষমতা দেখিয়ে এসেছেন। তিনি ১৯৮৮ সালে কেরালা রাজ্য কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন ১৯৯৫ সালে। কমরেড বালকৃষ্ণন কেরালায় পার্টির সবচেয় বৃহৎ জেলা শাখা কান্নুরের জেলা সম্পাদক ছিলেন ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। তিনি সেসময়ে জেলায় পার্টির হাল ধরেছিলেন যখন জেলায় পার্টি আরএসএস’র আক্রমণের মুখে পড়েছিল এবং তাদের লক্ষ্য ছিল জেলায় পার্টিকে দুর্বল করা।
২০০২ সালে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত সিপিআই(এম)’র সপ্তদশ কংগ্রেসে কমরেড বালকৃষ্ণন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে কোয়েম্বাটুরে পার্টির ঊনবিংশতিতম কংগ্রেসে তিনি পলিট ব্যুরো সদস্য হন। কমরেড বালকৃষ্ণন ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পার্টির কেরালা রাজ্য কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এটাই হচ্ছে সেসময় যখন পার্টির ধারাবাহিক বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। কমরেড কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন থালাস্সেরি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে পাঁচবার নির্বাচিত হন। তিনি একজন কার্যকরী বিধায়ক এবং দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। ২০০৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এলডিএফ সরকারের গৃহ ও পর্যটন মন্ত্রী থাকাকালীন সময় তাঁর সেই দক্ষতার পরিচয় মেলে।
অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থার সময় ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে কমরেড কোডিয়ারি ১৮ মাস জেলে ছিলেন।
সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে একরোখা লড়াকু ছিলেন কমরেড কোডিয়ারি। ১৯৭১ সালে থালাস্সেরিতে দাঙ্গার সময়ে তিনি সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করেছেন। এরপরেও তিনি সংহতিনাশক কার্যকলাপে সাম্প্রদায়িক শক্তি যেখানেই যুক্ত থেকেছে সেখানেই তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’’
কমরেড কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের জন্ম ১৯৫৩ সালে কান্নুর জেলার কোডিয়েরির মোট্রুমাল গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। কমরেড কোডিয়ারি জুনিয়র বেসিক স্কুল ও ওনিয়ন সরকারি স্কুল থেকে শিক্ষা লাভ করেন। প্রি ডিগ্রি করেন মাহের মহাত্মা গান্ধী কলেজ ও স্নাতক হন তিরুবনন্তপুরমের ইউনিভারসিটি কলেজ থেকে। নবম শ্রেণির ছাত্র থাকার সময়েই তিনি কেরালা স্টুডেন্টস ফেডারেশনের শাখা গঠন করেন। এই শাখার সম্পাদকও হন তিনি।
১৯৭০ সালে কমরেড কোডিয়ারি সিপিআই(এম)’র সদস্যপদ লাভ করেন। তিনি তখন পার্টির ইনগালি পিরিকা শাখার সম্পাদক ছিলেন। অভ্যন্তরীণ জরুরি অবস্থার সময়ে কান্নুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তাঁর ওপর নির্মম শারীরিক অত্যাচার হয়।