৬০ বর্ষ ৯ সংখ্যা / ১৪ অক্টোবর, ২০২২ / ২৭ আশ্বিন, ১৪২৯
মুলায়াম সিং যাদবের জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উত্তর প্রদেশের তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, সমাজবাদী পার্টির বরিষ্ঠতম নেতা মুলায়াম সিং যাদব ১০ অক্টোবর, সোমবার গুরগাওঁয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন, বয়স হয়েছিল ৮২। সন্ধ্যায় তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় উত্তর প্রদেশের এটাওয়া জেলার সাইফাইয়ে, যেখানে তাঁর জন্ম হয়েছিল। সেখানে শ্রদ্ধা জানান হাজার হাজার মানুষ, পুত্র অখিলেশ ছাড়াও মুলায়ামের ভাই শিবপাল সিং যাদব, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ১১ অক্টোবর, মঙ্গলবার বিকাল তিনটেয় সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য হয়। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা, কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে, সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, তেলেগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু, এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, লোকদল নেতা জয়ন্ত চৌধুরী, কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত প্রমুখ। উত্তর প্রদেশে পাঁচ দশক ধরে মুলায়াম ছিলেন অন্যতম মুখ্য রাজনৈতিক নেতা। বহু উত্থান পতনের মধ্যেই মুলায়াম ছিলেন সামাজিক বর্গভিত্তিক আন্দোলনের অগ্রণী নেতা, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সাহসী বিরোধী। জোট রাজনীতির অনেকগুলি পর্বের মধ্যে দিয়ে তিনি নিয়ে গেছেন সমাজবাদী রাজনীতিকে। রামমনোহর লোহিয়ার হাত ধরে যে যাত্রা শুরু, তা কখনও দেখেছে কংগ্রেস-বিরোধিতা, কখনও ‘রাম লহরের’ মোকাবিলা, কখনও বহুজন দলিত রাজনীতির সঙ্গ। জাতীয় রাজনীতিতেও মুলায়াম ছিলেন অন্যতম নির্ধারক।
তাঁর মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছে দেশের রাজনীতির প্রায় সব মহলই। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছে, সামাজিক ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে মুলায়াম সিং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। গত তিন দশকে রাজনৈতিক নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তিনি সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলায় এবং ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় বড়ো অবদান রেখেছেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ব্যাপক ঐক্য গড়ে তুলতে তিনি সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, তিনি পশ্চাদপদ ও প্রান্তিক মানুষের স্বার্থরক্ষায় তৎপর ছিলেন। ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে ভূমিকা পালন করেছেন। বিজেপি’র রথযাত্রার সময় থেকে মুলায়াম ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দৃঢ় ভূমিকা নিয়েছিলেন। বামপন্থীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও গভীর হয়। পার্টি নেতা হরকিষান সিং সুরজিতের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক ছিল তাঁর।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু মুলায়ামকে অভিহিত করেছেন ‘ধরতী পুত্র’ হিসাবে। বলেছেন, তিনি সব দলের লোকদের কাছেই শ্রদ্ধার আসনে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, জয়প্রকাশ নারায়ণ ও রামমনোহর লোহিয়ার আদর্শকে জনপ্রিয় করার কাজ করেছেন মুলায়াম সিং। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর লড়াইয়ের কথা বলেছেন। উত্তর প্রদেশে তিনদিনের সরকারি শোক পালনের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী শোকবার্তায় বলেছেন, নিপীড়িত মানুষের জন্য তাঁর লড়াই চিরকাল স্মরণে থাকবে। দেশের সাংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষায় যখনই প্রয়োজন হয়েছে কংগ্রেস তাঁর সমর্থন পেয়েছে। ভারত জোড়ো যাত্রার মধ্যেই কর্ণাটকের চিত্রদুর্গ জেলায় দুপুরবেলা শোকসভা করে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধী নিজে ছিলেন সেই সভায়।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, যখন বামপন্থীরা ও অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী পুনরায় জাতীয় স্তরে যৌথ ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা করছে তখন মুলায়ামের অনুপস্থিতি বড়ো ক্ষতি। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা বলেছেন, মুলায়াম সিং ছিলেন জনগণের নেতা।
শোকপ্রকাশ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের
মুলায়াম সিং যাদবের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ১০ অক্টোবর এক শোকবিবৃতিতে তিনি বলেছেন, সমাজবাদী পার্টির প্রবীণ নেতা প্রয়াত মুলায়াম সিং যাদব পুরোনো সমাজবাদী ধারার নেতা ছিলেন, অতীতে সমাজবাদী ধারার দলসমূহকে একত্রিত করতে তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন। উত্তর প্রদেশে এবং জাতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।