৫৯ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৫ এপ্রিল, ২০২২ / ১ বৈশাখ, ১৪২৯
সিপিআই(এম) ২৩তম পার্টি কংগ্রেস
দেশের মারাত্মক বেকার সমস্যার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী শ্রেণি ও বেকারদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ডাক
দেশে বেকারত্বের মারাত্মক সংকট প্রসঙ্গে প্রস্তাব সিপিআই(এম)’র ২৩তম কংগ্রেসে গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বেকারত্বের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শ্রমজীবী শ্রেণির বিভিন্ন অংশ এবং বেকার যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে পরিচালিত হবে। বেকার, অনিশ্চিত ধরনের কাজে নিয়োজিত জনগণ এবং আংশিক বেকারদের বিষয়গুলির বস্তুনিষ্ঠ অধ্যয়ন ও ইস্যুগুলিকে তুলে ধরেই পার্টি এক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। প্রস্তাবে এমজিএন রেগা প্রকল্পে শ্রমদিন বৃদ্ধি করে বছরে ২০০ দিন এবং দেশের সমস্ত শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পের সূচনা করার দাবি জানানো হয়েছে। বাঁচার মতো সবার মজুরি এবং মর্যাদাপূর্ণ কাজ সৃষ্টি করতে নয়াউদারবাদী নীতির পরিবর্তন এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যে সংগ্রামকে তীব্র করার আহ্বান জানিয়েছে পার্টি কংগ্রেস। গণতান্ত্রিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজনীয় পূর্বশর্তই হলো সুসংহত ভূমি সংস্কার।
এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে কমবেশি হারে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিমুদ্রাকরণের বিপর্যয়কর প্রভাব এবং খুব বাজেভাবে জিএসটি'র নকশা তৈরি ও প্রয়োগের ফলে অর্থনীতির প্রথাগত ক্ষেত্রের গুরুতর পশ্চাদগমন ঘটেছে। এরসঙ্গে রয়েছে অর্থনীতির অধোগতি। পর্যায়কাল ভিত্তিক শ্রমশক্তি সমীক্ষায় বেকারত্ব ২০১১-১২ সালে ২.২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-১৮ সালে হয়েছে ৬.১ শতাংশ। ২০২০ সালের প্রথমদিকে শুরু হওয়া কোভিড ১৯ মহামারী এই বেকারত্বের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই মহামারী মোকাবিলায় যেভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে পথ গ্রহণ করেছে এবং নয়াউদারবাদী নীতি অনুসারে আয়করের বাইরে থাকা জনগণকে নগদ ও বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দিতে অস্বীকার করেছে তাতে বেকারি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।যদি নগদ অর্থ ও বিনামূল্যে খাদ্যশস্য প্রদান করা যেত তাহলে চাহিদা বাড়ত এবং গতি সঞ্চারিত হতে পারত অর্থনীতিতে।
১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সসীমায়, যাঁদের কিছুটা প্রথাগত পড়াশুনো আছে তাঁদের মধ্যে বেকারত্বের হার খুব বেশি। ২০২০-২১ সালে বেকারত্বের হার ছিল ২০-২৪ বছর বয়সী বিভাগে ৩৯ শতাংশ এবং ২৫-২৯ বছর বয়সী বিভাগে ১৩ শতাংশ। এই হার উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি এবং স্নাতকদের মধ্যে ২০.৪ শতাংশ। এই তথ্য দ্বারাও দেশের অর্থনীতিতে বেকারত্বের মারাত্মক সমস্যাকে সঠিকভাবে বোঝা যাবে না।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনিশ্চিত চরিত্রের কাজ তৈরি করা হয়েছে। যে কাজগুলিতে বাঁচার মতো মজুরিও মেলে না, আবার কাজেরও কোনো নিশ্চয়তা নেই। গত তিন দশকে নয়াউদারবাদী নীতি কৃষি সংকটকে গভীর করেছে। ফলে কৃষিতে কর্মসংস্থান কমেছে। কৃষিতে কাজ না হওয়া শ্রমশক্তি বাঁচার জন্য বিভিন্ন রকমের অস্থায়ী কাজে যুক্ত হচ্ছে। এঁদের মধ্যে অভাবের ছবিটা খুবই প্রকট। উদ্ভূত এই বেকারত্বের পরিস্থিতি এবং কৃষি সংকট এটাই বোঝায় যে, কৃষি প্রশ্নই এখনও ভারতের সর্বপ্রধান জাতীয় প্রশ্ন।