৫৯ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৫ এপ্রিল, ২০২২ / ১ বৈশাখ, ১৪২৯
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ
চারটি ধর্ষণ মামলায় দময়ন্তী সেনের নজরদারিতে তদন্ত
খড়্গপুর শহরে ছাত্র, যুব, মহিলাদের বিক্ষোভ মিছিল।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ রাজ্যের ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রেক্ষিতে তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সাম্প্রতিককালে ঘটা চারটি ধর্ষণ মামলায় তদন্তের ক্ষেত্রে জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এবার তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের নাম ঠিক করে দিল। মুখ্যমন্ত্রীর অপছন্দের তালিকায় থাকা ১৯৯৬ ব্যাচের আইপিএস দময়ন্তী সেনের নাম সুপারিশ করা হয়েছে ওই ডিভিশন বেঞ্চের পক্ষ থেকে। দময়ন্তী সেন বর্তমানে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (২) পদে রয়েছেন। ১২ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিসন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, দেগঙ্গা, মাটিয়া, ইংরেজবাজার, বাঁশদ্রোণীতে ধর্ষণকাণ্ডের মামলায় আইপিএস দময়ন্তী সেনের নজরদারিতে বিশেষ তদন্ত দল গড়ে তদন্ত হবে। রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, মাটিয়া, ইংরেজবাজার, বাঁশদ্রোণী এবং দেগঙ্গা ধর্ষণ-কাণ্ডের ঘটনায় হাইকোর্টের নজরদারিতে গঠিত স্পেশাল টিম তদন্ত করবে। তার জন্য একটি সিট গঠন করা হয়েছে। সেই সিটের দায়িত্বে থাকবেন দময়ন্তী সেন। দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, বিগত দিনের অভিজ্ঞতা বলছে, দময়ন্তী সেন নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেছেন। রায়কে ঘিরে অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ কার্যত পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর দপ্তরের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে দময়ন্তী সেনকে তদন্তের দায়িত্ব ভার নিতে নির্দেশ দিয়ে। আগামী ২০ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
প্রসঙ্গত, এই রাজ্যে চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ ১৫ দিনে ১১টি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে বলে হাইকোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বসিরহাটের মাটিয়ায় ১১ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। ১৫ মার্চ মালদহ জেলার ইংরেজবাজার থানার কাজি গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীরামপুর এলাকায় ধর্ষিতা হন এক গৃহবধূ তাঁর নিকট আত্মীয়দের দ্বারা। এই সবকটি ঘটনায়ই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের প্রধান বিচারপতি।
বেলঘরিয়া স্টেশনের সামনে সিপিআই(এম)'র প্রতিবাদ কর্মসূচি।
এই মামলাগুলির শুনানির সময় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব সরাসরি বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনার অভিযোগ আগে আমরা দিল্লি বা অন্য রাজ্য থেকে শুনতাম। এখন এ রাজ্যেও ওই ধরনের ঘটনা ঘটছে। রাজ্যে পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও বারবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটছে! দুই থেকে তিনটি ঘটনা পর পর ঘটলো। কী হচ্ছে ? কেন এমন ঘটনা ? আমি বাকরুদ্ধ।’’
প্রসঙ্গত, এক দশক আগে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের বিপরীতে গিয়ে দময়ন্তী সেন ওই ঘটনায় ‘ধর্ষণ হয়েছে’ বলে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, লালবাজারে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি তা সর্বসমক্ষে জানিয়েও দিয়েছিলেন। ২০১২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটা ধর্ষণের মামলা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সাজানো ঘটনা’, ‘আমার সরকারকে ম্যালাইন করার চেষ্টা’ ইত্যাদি বলে মন্তব্য করেছিলেন। ওই সময় দময়ন্তী সেন ছিলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তাল না মেলানোর জন্য অবশ্য পরে ওই পুলিশ আধিকারিককে সরিয়ে দেওয়া হয় জেলা পুলিশে। প্রধান বিচারপতির এদিনের ওই বক্তব্য ফের দময়ন্তী সেনের নিরপেক্ষ ভূমিকাকে সামনে নিয়ে এলো। তবে আদালত এদিন জানিয়েছে, দময়ন্তী সেন ওই নজরদারির দায়িত্ব নিতে না চাইলে তিনি যেন তা সরাসরি আদালতে জানান।