E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৫ এপ্রিল, ২০২২ / ১ বৈশাখ, ১৪২৯

এসএসসি নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার


কলকাতায় আন্দোলনরত এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের কাছে মহম্মদ সেলিম।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ তৃণমূলী জমানায় রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে ঘটছে একের পর এক লজ্জাজনক ঘটনা। ৩৪ বছরের বাম জমানায় আদালতে কোনো শিক্ষককে কখনও শুনতে হয়নি যে, কীভাবে চাকরি পেলেন সে সম্পর্কে হলফনামা জমা দিন। হাইকোর্টে ইদানীং সে কথাও শুনতে হচ্ছে সরকারি স্কুলের বিধি ব‍‌‍‌হির্ভূতভাবে চাকরি পাওয়া শিক্ষকদের। বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়ার অভি‍যোগ প্রকাশ্যে আসে ২০১৯ থেকে। প্রথমে ইতিহাস বিষয়ে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। টেট না দিয়েই চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে মেধা তালিকায় নাম থাকা উত্তীর্ণ বেকারদের মধ্যে। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মামলা ওঠে একের পর এক। পরে এমনও দেখা যায় মেধা তালিকায় নাম নেই অথচ বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন এমন ‘বিশেষ’ যোগ্যতাসম্পন্নদের সংখ্যা কম নয়। বিধি ব‍‌‍‌হির্ভূতভাবে নিয়োগের গ্রহণযোগ্য কোনো জবাব এসএসসি কর্তৃপক্ষ দিতে পা‍রে নি আদালতে। এমনকী ঘটেছে প্যানেলের মেয়াদ শেষ হবার পর নিয়োগের ঘটনাও। নবম দশমের শিক্ষক থেকে গ্রুপ সি-গ্রুপ ডি পদেও নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগও ক্রমশ সামনে আসে। জানা যায় শিক্ষামন্ত্রী দপ্তর নিয়োজিত কমিটির সদস্যরাও কেউ দায় এড়াতে পারছে না এই দুর্নীতির। অসংখ্য মামলা হয়। হবু চাকরি প্রার্থীরা চাকরির দাবিতে পথে নেমে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। যা পুলিশ তুলে দিতে চেষ্টা করে।

এ প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দিনের পর দিন মামলা চলছে বলে মন্তব্য করে বলেন, কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। চাকরি বিক্রি হয়েছে। এসএসসি দুর্নীতিতে শেষ পর্যন্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জোরালো হয়েছে। তবে আদালতের স্থগিতাদেশে এই মামলায় শিক্ষামন্ত্রী আপাতত স্বস্তি পেলেন বলে জানা গেছে। কিন্তু স্বস্তি তো সাধারণ মানুষের দরকার। নেতা মন্ত্রীরা মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্যেই কাজ করবেন - এটাই দস্তুর। এ তো দেখলাম উলটে মন্ত্রী স্বস্তি পেলেন। তাহলেই সবাই বুঝছেন যে, মন্ত্রী এমন কাজ করেছেন যে, তাঁর স্বস্তির দরকার হয়ে পড়েছে। আমরা কিন্তু স্বস্তিতে থাকতে দেব না। এসএসসি’র উপদেষ্টা, শিক্ষামন্ত্রী - সব মিলিয়ে একটা চক্র তৈরি হয়েছে। হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ড তো তৈরি হয়েছে চোর জোচ্চরদের বাঁচানোর জন্য। কিন্তু কেউ বাঁচাতে পারবে না।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৬ সালে নবম থেকে দ্বাদশে শিক্ষক নিয়োগে বেনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়ে। মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগ না করে তালিকার পেছনে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়। এই বেনজির বেনিয়মের প্রতিবাদে নবম থেকে দ্বাদশের অপেক্ষমান শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রার্থীরা ধর্মতলায় ধরনায় বসেন ২০১৯ সালে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের অনশন মঞ্চে গিয়ে স্বচ্ছ নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন চাকরি প্রার্থীরা। গত ২ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, এসএসসি’র চেয়ারম্যান, শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভাবী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু কোনও সুরাহা না মেলায় চাকরির দাবিতে এখনো টানা রাস্তায় রয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে বিধাননগর থেকে কলেজস্ট্রিট, শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ি সহ নানা স্থানে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন তাঁরা। পুলিশের অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

এদিন মহম্মদ সেলিম তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। ছিলেন, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, কলতান দাশগুপ্ত, পৌলবী মজুমদার, বিকাশ ঝা প্রমুখ। প্রথমে তাঁরা যান গান্ধী মূর্তির নিচে, সেখানে বিক্ষোভরত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পাশেই ছাত্র-যুব অধিকার মঞ্চে নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক পদের চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন। শেষে তিনি যান মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তি সংলগ্ন এলাকায় যেখানে শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষার ভাবী শিক্ষক-শিক্ষিকারা আন্দোলনরত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেন মহম্মদ সেলিম।

মহম্মদ সেলিম ছাড়াও এদিন এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি, সিআইটিইউ নেতা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী, আসাদুল্লা গায়েন প্রমুখ। সুভাষ মুখার্জি বলেন, যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সেই মন্ত্রী কেন এখনো পদত্যাগ করছেন না - এটাই আমাদের প্রশ্ন। এবিটিএ নেতৃবৃন্দও এই দিন গিয়েছিলেন এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে। ১৪ এপ্রিল বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির মিছিল হবে লেনিন মূর্তির নিচ থেকে গান্ধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত।