৫৯ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৫ এপ্রিল, ২০২২ / ১ বৈশাখ, ১৪২৯
তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের বাধায় ব্যাহত হাইকোর্টের বিচার প্রক্রিয়া
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গণতন্ত্রে যে তাঁদের আস্থা নেই তা আরেক বার প্রমাণ করলো তৃণমূল। তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের বাধার ফলে নজিরবিহীনভাবে ব্যাহত হলো কলকাতা হাইকোর্টের বিচার প্রক্রিয়া। আদালতকক্ষে আইনজীবীদের প্রবেশ করতে দিলেন না একদল আইনজীবী। ঘটনাটি ঘটেছে ১৩ এপ্রিল। এদিন ১৭ নম্বর এজলাসের সামনে বয়কটপন্থী এবং বয়কটবিরোধী আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি হতে দেখা গেছে। ঘটনার সুত্রপাত আইনজীবীদের একাংশের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কটের সিদ্ধান্ত ঘিরে। তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট করার দাবি জানিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে বলপূর্বক হেনস্তা করে। শুধু বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য নন, বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আইনজীবী কল্যাণ মণ্ডল, অ্যাসিস্ট্যান্ট সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্যসহ কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁদের আটকানো হয়।
প্রসঙ্গত এসএসসি দুর্নীতি, বগটুই গণহত্যাকাণ্ড সহ একাধিক মামলায় এপর্যন্ত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আর তাতেই অস্বস্তি বাড়ছে তৃণমূল সরকার থেকে তাদের আইনজীবীদের। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার জেরে বেশ কয়েকটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এ পর্যন্ত চারটি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশে দেশ এবং রাজ্যজুড়ে সমালোচনার মুখে পরে তৃণমূলের সরকার। এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতির মামলা সহ বীরভূমের বগটুই গ্রামে গণহত্যা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই তৃণমূল নেতাকর্মীদের সক্রিয় ভূমিকার কথা প্রকাশ্যে আসার পর তাদের সঙ্গে দলের ওপরতলার যোগাযোগ ফাঁস হয়ে যাবার উপক্রম ঘটে। এই সমস্ত ঘটনার তদন্ত ভার কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দেওয়ায়। ক্রমশ কোণঠাসা হতে থাকা তৃণমূল এবার রাজ্যের বিচার প্রক্রিয়াকেই তাই স্তব্ধ করে দেওয়ার দিকে এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। বীরভূমের বিতর্কিত তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল থেকে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি, তৃণমূলী অভিযুক্তদের তালিকা দীর্ঘ। এই অভিযুক্তদের সিবিআই-এর জিজ্ঞাসাবাদ থেকে দূরে রাখতে দলীয় তৎপরতার এটি একটি অন্যতম নজির বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
কলকাতা হাইকোর্টে যদিও এই গণ্ডগোল চলছে আগে থেকেই। ১২ এপ্রিল থেকেই। বার অ্যাসোসিয়েশনের সভায় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কটের প্রস্তাব পাস করাতে চান আইনজীবীদের একাংশ। বিরোধিতা করেন বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আইনজীবী অরুনাভ ঘোষ। সেই নিয়ে দু’পক্ষের আইজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। শেষে বর্ষীয়ান আইনজীবী চণ্ডীচরণ দাসের নেতৃত্বে আইনজীবীদের একাংশ বৈঠক করেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একটি চিঠিতে সই করে প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া হয়।