৫৮ বর্ষ ২২শ সংখ্যা / ১৫ জানুয়ারি ২০২১ / ১ মাঘ ১৪২৭
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পঠন-পাঠনের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে কলকাতায় ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান বিক্ষোভে এসএফআই কর্মীরা
ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খোলা, পঠন-পাঠনের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ১৩ জানুয়ারি দুপুর থেকে, সংক্রমণের আবহে উপযুক্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনেই আটচল্লিশ ঘণ্টার অবস্থান বিক্ষোভে বসলেন এসএফআই কর্মীরা। অবস্থানে শামিল হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পড়ুয়ারাও। এসএফআই’র আন্দোলনের চাপে পড়ে ইতিমধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তার অধীনস্থ কলেজগুলিতে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রায় এক বছরের কাছাকাছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে সারা দেশের মতো পড়ুয়াদের পঠন-পাঠনের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত। এই পরিস্থিতিতে অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে পঠন-পাঠন চললেও সেই ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণে বেজায় সমস্যার মধ্যে সাধারণ গরিব, নিম্ন, মধ্য বিত্ত পরিবারের পড়ুয়ারা। কারণ - অনলাইন ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এনড্রয়েড ফোন, ট্যাব, কিংবা কম্পিউটার নেই একটা বড়ো অংশের পড়ুয়াদের। ফলত এই ব্যবস্থা শিক্ষাক্ষেত্রে একটা বিভাজনের সমীকরণ তৈরি করছে পড়ুয়াদের মধ্যে। কেউ পড়বে, কেউ পড়তে পারবে না, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা আদতে সেই সমীকরণটাকেই তুলে ধরছে। পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে এই বিভাজন মেনে নেবেন না বলেই এদিন অবস্থান বিক্ষোভ থেকে সাফ জানিয়েছেন এসএফআই কর্মীরা। ছাত্র নেতাদের কথায় পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে হবে।
১৩ তারিখ দুপুর থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে এই দাবি নিয়ে আটচল্লিশ ঘণ্টা অবস্থানে বসা ছাত্র ছাত্রীরা জানাচ্ছেন - ‘‘মূল দাবিই হলো দ্রুত ক্যাম্পাস চালু এবং পঠন-পাঠনের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে এই অবস্থান বিক্ষোভ থেকে আমাদের আরও দাবি - করোনা আবহের কারণে ভরতি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়েছে, সে কারণে পিইউ কোটা, ওপেন কোটায় সব আসন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ভরতি প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের সফল ছাত্র ছাত্রীদের মার্কশিটের হার্ড কপি দিতে হবে, সব ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে হবে, প্রকাশ করতে হবে আগামী সেমেস্টারগুলির সময় সূচি।’’
দ্রুত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে পঠন-পাঠনের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী। পড়ুয়াদের স্বার্থের এই দাবির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেছেন - যদি সিনেমা হল খোলা যায়, মিটিং, মিছিলে জমায়েত করা যায়, মেলা, খেলার উৎসব করা যায় তবে পড়ুয়াদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করা যাবেনা কেন? ছাত্র ছাত্রীদের স্বার্থে অবিলম্বে পঠন-পাঠনের স্বাভাবিক পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে।
একই দাবিতে গত ৭ জানুয়ারি থেকে কলকাতার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এসএফআই কর্মীরা। এই দাবি নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় অবস্থান বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছিল এসএফআই'র কলকাতা জেলা কমিটি। এসএফআই কর্মী সমর্থক সহ বিভিন্ন অংশের ছাত্র ছাত্রীরা। বেলা ১টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত চলে টানা অবস্থান বিক্ষোভ। পড়ুয়াদের স্বার্থে দ্রুত স্কুল, কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় খোলার যুক্তিগুলো তুলে ধরে বিক্ষোভ অবস্থানে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক পার্থ প্রতিম বিশ্বাস, এসএফআই কলকাতা জেলার সম্পাদক সমন্বয় রাহা, সহ এসএফআই’র জেলা ও রাজ্যস্তরের নেতারা। বিক্ষোভ সভা পরিচালনা করেন - অর্জুন রায়। সংক্রমণের আবহে উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার দাবি নিয়ে কলকাতা জুড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে লাগাতার বিক্ষোভ, সভা করছেন এসএফআই কর্মীরা।