৫৮ বর্ষ ২২শ সংখ্যা / ১৫ জানুয়ারি ২০২১ / ১ মাঘ ১৪২৭
উত্তরপ্রদেশে অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিক দলবদ্ধ ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার মহিলা সংগঠনগুলি
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশের ছ’টি মহিলা সংগঠন এআইডিডব্লিউএ, এনএফআইডব্লিউ, এআইপিডব্লিউএ, পিএমএস, এআইএমএসএস এবং এআইএএমএস ৭ জানুয়ারি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উত্তরপ্রদেশের বদায়ুন জেলায় ঘটা এক অঙ্গনওয়াড়ি শ্রমিকের (৫০) দলবদ্ধ ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি এবং নিহত নির্যাতিতার পরিবারের সুবিচার ও সুরক্ষা দাবি করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে জেলার উঘাইতি এলাকার একটি মন্দিরে। ঘটনায় অভিযুক্ত ওই মন্দিরের মোহন্ত এবং তার দুই সাকরেদ। ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যাবেলায় ওই মন্দিরে গিয়েছিলেন পুজো দিতে। তিনি ওই মন্দিরে নিয়মিতই যেতেন। ৩ জানুয়ারি ওই মন্দিরে যাবার পর দীর্ঘক্ষণ ফিরে না আসায় ওই মহিলার পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজাখুঁজি করা শুরু হয়। পরে ওই মহিলার রক্তাক্ত শরীর একটি গাড়িতে করে তাঁর বাড়ির সামনে এনে ফেলে রেখে দিয়ে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ সত্ত্বেও পুলিশ প্রথমে অকুস্থলে যায়নি। এই সুযোগে মূল অভিযুক্ত ফেরার হয়ে যায়। এই জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে সর্বত্র।
ওই মহিলার পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনায় একটি এফআইআর রুজু করার জন্য পুলিশকে বলা হলে পুলিশ তা অগ্রাহ্য করে। পরে রাজ্যজুড়ে প্রবল সমালোচনা এবং মহিলা সংগঠনগুলির সক্রিয়তায় চাপে পড়ে ৫ জানুয়ারি পুলিশ এফআইআর করতে বাধ্য হয়। মহিলা সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি হাথরসের ঘটনার মতোই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের আরও একটি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার নজির।
রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যাবার ১৮ ঘণ্টা পরে নৃশংস অত্যাচারের শিকার ওই মহিলার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। নির্যাতিতার পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে উঠে আসে শরীরের বিভিন্ন অংশে ভয়ঙ্কর আঘাতের চিহ্নের কথা। নির্যাতিতার শরীরে রড ঢুকিয়ে দেওয়া, পাঁজর এবং পা ভেঙে দেওয়া, ফুসফুসে আঘাতজনিত কারণে প্রচুর রক্ত ক্ষরণে মৃত্যুর মতো বিষয়গুলি সামনে আসে। এরপরই পুলিশ নড়েচড়ে বসে। ঘটনার দু’দিন পর এফআইআর লেখা হয়। মূল অভিযুক্ত ওই মোহন্তর সঙ্গী দুই দুষ্কৃতীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা এবং অসহযোগিতার কথা চাউর হতেই পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বদায়ুনের পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককে সাময়িকভাবে তার কর্তব্য থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের সময়ে ঘটা অত্যাচারের ঘটনাসমূহের তদন্তের গতিপ্রকৃতির প্রেক্ষিতে কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনাটিকে চেপে দেওয়া হতে পারে। ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার সুবিচার নাও পেতে পারেন।
প্রসঙ্গত, ঐ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর আক্রমণের এই ধরনের ঘৃণ্য একাধিক ঘটনা তখনই ঘটছে যখন উত্তরপ্রদেশ সরকার মহিলাদের কাজ এবং খাদ্যের জন্য ন্যায্য দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান বা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে বাধা দিচ্ছে। আর এটা দ্বিগুণ লজ্জাজনক যে রাজ্যে ধার্মিকতাকে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, সেখানে মন্দিরগুলিতে অপরাধের ঘটনা ঘটে চলেছে এবং পূজারী মোহন্তরা অপরাধীর ভূমিকা পালন করছে।
জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন চন্দ্রমুখি দেবী বদায়ুনের ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, ঘটনায় ধর্ষিতা ও নিহত অঙ্গনওয়াড়ি মহিলা শ্রমিকের সন্ধ্যাবেলায় মন্দিরে যাওয়া উচিত হয়নি। ওই মহিলার উচিত ছিল সঙ্গে তার কোনো শিশু সন্তানকে নিয়ে যাওয়া। তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে মহিলা সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে। বিজেপি জমানায় মহিলাদের যে ধরনের বিপদের মুখোমুখি সর্বদাই হতে হচ্ছে তা প্রচারের মধ্য দিয়ে ফাঁস করে দেবার প্রশ্নে মহিলা সংগঠনগুলির কর্মীরা প্রচার আন্দোলন সংগঠিত করছেন দেশজুড়ে।
মহিলা সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে আক্রান্ত এবং মৃত মহিলার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত পুলিশি এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং দ্রুত ন্যায় বিচার দাবি করা হয়েছে।
সমালোচনায় জেরবার উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন জানিয়েছে, ধর্ষণের এই ঘটনার বিচার হবে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে।