৫৮ বর্ষ ২২শ সংখ্যা / ১৫ জানুয়ারি ২০২১ / ১ মাঘ ১৪২৭
আলো আছে আবডালে - পর্ব ২
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘দেশ কে গদ্দারোকো গোলি মারো শালো কো’ দিয়ে শেষ হওয়া জানুয়ারির পর গত বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুটাই হয়েছিল সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এক রেকর্ড সৃষ্টিকারী ভাষণ দিয়ে। দেশে সেইসময় পেঁয়াজের আগুনে দামের মাঝেই অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন তিনি যেহেতু পেঁয়াজ খান না তাই পেঁয়াজের বর্ধিত দাম নিয়ে তাঁর বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। ১ ফেব্রুয়ারি ২ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের ভাষণের শেষের দিকে অসুস্থ হয়ে দু’পাতা বক্তৃতাও তাঁর পক্ষে পাঠ করা সম্ভব হয়নি। যদিও যেটুকু বলেছিলেন সেখানেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন - শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ নেমেছে ৩.২ শতাংশে। একশো দিনের কাজে বরাদ্দ কমেছে ৯,৫০০ কোটি টাকা। রেলে বরাদ্দ কমেছে ৪,০০০ কোটি টাকা। সারে ৮,৬৮৯ কোটির ভরতুকি কমলেও ২০২২ সালের মধ্যে দেশের কৃষকদের অবস্থা ফিরে যাবে। ওই বাজেটেই ছিল কর্পোরেট কর কমিয়ে বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো কিংবা জীবনবিমাকে শেয়ার বাজারে তোলার ঘোষণা।
অবশ্য এর আগেও একটা আগে ছিল। ৩১ জানুয়ারি বিএসএনএল-এর প্রায় ১ লক্ষ কর্মচারীকে দু’মাসের বেতন না মিটিয়েই অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তখনই ১০ মাসের বেতন বাকি ছিল সংস্থার ঠিকাকর্মীদের। ৫ ফেব্রুয়ারি সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং জানিয়েছিলেন ২০১৮-র ১ মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে শূন্যপদের সংখ্যা ৬,৮৩,৮২৩ লাখ। ওই সময়েই কেন্দ্রীয় কৃষি উন্নয়ন মন্ত্রকের পরিসংখ্যান জানিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কিষান স্কিমে দেশের প্রায় ৯ কোটি নথিভুক্ত কৃষকের মধ্যে ২.৫১ কোটি কৃষক দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাননি। তৃতীয় কিস্তির টাকা পাননি ৫.১৬ কোটি কৃষক। ‘আচ্ছে দিন’-এ পৌঁছোনোর পথে এসব যদিও নিতান্তই ছোটো ঘটনা। কারণ ওই ৫ ফেব্রুয়ারিই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে রামমন্দির ট্রাস্টের ঘোষণা করে দেন। যে ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছিলেন - রামমন্দির বিষয়টি তাঁর এবং লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীর প্রিয় বিষয়।
৮ ফেব্রুয়ারি হয়েছিল দিল্লি বিধানসভার ভোট। যে নির্বাচনের প্রচারে বিজেপি’র ২৭০ সাংসদ, ৭০ জন মন্ত্রী, অসংখ্য ছোটো বড়ো নেতা বিভিন্ন মাপের সভা করেছিলেন। ওই নির্বাচনের সময় ৫০-এর কাছাকাছি জনসভা করা দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি সব জনসভাতেই বলেছিলেন - ‘ইসবার হামকো ভোট দিজিয়ে’। আর ভাষণ শুনতে আসা মানুষজন নাকি বলেছিল - ‘ইসবার আপ-কোই ভোট দেঙ্গে’। ‘গোলি মারো শালোকো’ স্লোগান তুলে কিংবা ‘ওরা আপনাদের মা বোনকে ধর্ষণ করবে’ অথবা প্রধানমন্ত্রীর ‘পোশাক দেখে মানুষ চেনা যায়’ গোছের প্রচারের পরেও ঝাড়ু মেরে পদ্ম বিদায় করেছিল দিল্লিবাসী। ২০২০-র আলোচনায় অবশ্যই মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের কাছের ছোটো এক গ্রাম ‘ইসলাক’-এর নামও মনে রেখে দিতে হবে। কমবেশি ২০০০ মানুষের গ্রাম ‘ইসলাক’ই দেশের মধ্যে প্রথম গ্রাম হিসেবে সিএএ বিরোধী প্রস্তাব নিয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। যে গ্রামে একজনও মুসলিম বসবাস করেন না।
গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি পেশ করা রাজ্য বাজেটে বলা হয় ৯ লক্ষ ১১ হাজার কর্মসংস্থানের কথা। বিস্তারিত তথ্য ছাড়াই জানানো হয় বেকারত্ব কমেছে ৪০ শতাংশ। যদিও সেই সময় সারা দেশে বেকারত্ব শেষ ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বাধিক জায়গায় পৌঁছেছে বলে জানা গেছিল। প্রায় শিল্পহীন রাজ্য কোন্ জাদুবলে উল্টোপথে হেঁটেছিল তা আজও স্পষ্ট হয়নি। ১১ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভায় শ্রমমন্ত্রী জানিয়েছিলেন ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন ৩৪ লক্ষ ৫ হাজার ৫৮২ জন কর্মপ্রার্থী। এঁদের কতজন চাকরি পেয়েছেন সেই প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন এই তথ্য জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই। এর পাশাপাশি একধাক্কায় শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমে ২২,২৬০ কোটি টাকা। উচ্চশিক্ষায়, কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ কমে দাঁড়ায় ৭০০ কোটি ও ৯০০ কোটি। আগের বাজেটে যা ছিল ৩,৯৬৪ কোটি ও ১১০৬ কোটি। তখনই জানা গেছিল এই অর্থবর্ষের শেষে রাজ্যের মোট ঋণ দাঁড়াবে ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা।
৩০ জানুয়ারি কেরলে ভারতের প্রথম করোনা সংক্রমিতের খোঁজ পাওয়া যায়। বিদেশ ফেরত ২০ বছর বয়সী এক যুবতীর শরীরে। ১০ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমিতের মৃত্যু হয় কর্ণাটকে। দেশে মাত্র ৪ ঘণ্টার নোটিশে লকডাউন শুরু হয়েছিল ২৪ মার্চ রাত ৮ টার ঘোষণায়। তার আগে থালা বাজানো টাজানো হয়ে গেছে। ৩০ জানুয়ারি থেকে ১০ মার্চ বা লকডাউন যেদিন ঘোষণা হলো - ২৪ মার্চ রাত ৮টা। মাঝের এই ৫৪ দিন আমরা কী করেছিলাম? করেছি তো অবশ্যই। কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে ২৪ ফেব্রুয়ারি মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ মানুষের সমাবেশ থেকে সংবর্ধনা দিয়েছি। যার পোশাকি নাম ছিল ‘নমস্তে ট্রাম্প’। ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখ এক ট্যুইটে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী করোনা নিয়ে সাবধান করে news.harvard.edu-র ‘‘Coronavirus cases hit 17,400 and are likely to surge’’ শীর্ষক প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে লিখেছিলেন - ‘‘করোনা ভাইরাস আমাদের দেশের মানুষ এবং দেশের অর্থনীতির জন্য এক ভয়ঙ্কর বিপদ। আমার মনে হয় সরকার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ যার উত্তরে ১৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে বিকেল ৫.৩১ মিনিটে এক ট্যুইট বার্তায় সংবাদসংস্থা পিটিআই জানায় - ‘‘Coronavirus is not a health emergency’’. অর্থাৎ করোনা বিষয়টা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় একেবারেই।
এইসব ডামাডোলের মধ্যেই ২০ মার্চ মধ্যপ্রদেশে ঘোড়া কেনাবেচা করে নির্বাচিত কংগ্রেস সরকার ফেলে দেওয়া হয়। ভারতের মাটিতে আন্তর্জাতিক উড়ান নামা নিষিদ্ধ হয় ২২ মার্চ। এই দিনই দেশে পালিত হয় ১৪ ঘণ্টার জনতা কারফিউ। আর ওইদিনই বিকেলে দেশজুড়ে থালা বাজিয়ে পালিত হয় ‘গো করোনা’ উৎসব। ২৩ মার্চ মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন বিজেপি’র শিবরাজ সিং চৌহান। কাজেই ৩০ জানুয়ারি থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত করোনা মোকাবিলায় আমরা কিছুই করিনি বলে কোন্ শা...? পরবর্তী সময়ে তাবলিগি জামাত নিয়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি যদিও বেমালুম চেপে গেছিল যে, ১৪ থেকে ১৯ মার্চ শুধু তিরুপতি মন্দিরেই দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষের বেশি। ২৫ মার্চ ভোরবেলা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ দলবল নিয়ে পৌঁছে গেছিলেন অযোধ্যা, বিশেষ আরতি করতে। দেশে যেদিন করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৩,৫৭৭ এবং মৃতের সংখ্যা ৮৩ সেই ৫ এপ্রিল রাত ৯ টায় ৯ মিনিটের জন্য সারা দেশে বিদ্যুৎ বন্ধ করে পালিত হয় মোমবাতি জ্বালানো উৎসব।
অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে আমাদের অধিকাংশ যখন থালা বাজিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে করোনার সঙ্গে টুকি টুকি খেলে টাইম পাস করছি সেই সময়ে দেশজুড়ে কাজ হারিয়ে, রোজগার হারিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য হেঁটে চলেছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। আর অপরিকল্পিত লকডাউনে অনাহার এবং অর্থনৈতিক দুর্দশায় - ৪৭ জন, হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে - ২৬ জন, পুলিশি নৃশংসতায় - ১২ জন, চিকিৎসা না পেয়ে - ৪০ জন, আতঙ্কে আত্মহত্যা - ৮৩, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় - ৭৪ জন, হিংসার ঘটনায় - ১৪ জন মারা গেছেন।
১২ মে সন্ধ্যেয় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন - ‘‘এখন একটাই রাস্তা, আত্মনির্ভর ভারত। রাষ্ট্র হিসেবে আমরা বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে। এই ভাইরাস থেকে এগোনোর একটাই উপায়, আত্মনির্ভর ভারত। এটা একটা সুযোগও।’’ করোনা সত্যিই অতিমারী, মহামারী অথবা অন্য কিছু তা এখনও পর্যন্ত মাথায় না ঢুকলেও করোনা যে বেশ কিছু অপকর্মের বড়ো ঢাল তা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। করোনার ভয়ে সাধারণ মানুষকে জুজু করে দিয়ে এই সময়ে অনেক কাজই বেশ নির্বিঘ্নে করে নেওয়া গেছে। যেমন, এক আরটিআই-এর উত্তরে গত বছরের ২৪ এপ্রিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানায় ৫০ জন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীর ৬৮,৬০৭ কোটি টাকা ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছে। যার প্রথমেই ছিলেন গীতাঞ্জলি জেমস্ লিমিটেডের কর্ণধার মেহুল চোকসি, ঋণের পরিমাণ ৫,৪৯২ কোটি টাকা। চোকসির দুই সহযোগী কোম্পানি গিলি ইন্ডিয়া এবং নক্ষত্র ব্র্যান্ডস-এর ২,৫৫৬ কোটি টাকা। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আরইআই অ্যাগ্রো লিমিটেড, যার ঋণের পরিমাণ ৪,৩১৪ কোটি টাকা। ডিরেক্টর সন্দীপ ও সঞ্জয় ঝুনঝুনওয়ালা। ৪,০৭৬ কোটি ঋণ নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে যতীন মেহতার উইনসোম হীরা এবং জুয়েলারি কোম্পানি। রোটোম্যাকক গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ২,৮৫০ কোটি টাকা। পাঞ্জাবের কুদোস চেমি(২৩২৬ কোটি), রামদেব ও বালকৃষ্ণের রুচি সোয়া ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড (২,২১২ কোটি), গোয়ালিয়রের জুম ডেভেলপার্স প্রাইভেট লিমিটেড (২,০১২ কোটি টাকা)। এই সময়েই ৪১টা কয়লা ব্লক বেসরকারি সংস্থার কাছে নীলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত ১৮ জুন। যে ৪১টা কয়লা ব্লকের মধ্যে ১১টা মধ্যপ্রদেশে, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড় ও ওডিশায় ৯টা করে এবং মহারাষ্ট্রে ৩টে। যার ৪৯ শতাংশ ছড়িয়ে আছে ঘন জঙ্গলে ঘেরা ‘নো গো জোন’-এর মধ্যে। প্রায় ৬ লক্ষ হেক্টর। এরমধ্যে আছে ছত্তিশগড়ের হাসদেও আরান্ড ফরেস্ট (১,৭০,০০০ হেক্টর)। যেখানে খনন শুরু হলে একদিকে যেমন জঙ্গল কাটা পড়বে অবাধে, তেমনই বাস্তুচ্যুত হতে হবে কমপক্ষে ৩০ হাজার স্থানীয় মানুষকে। একইভাবে ঝাড়খন্ডের চাকলা ব্লকে প্রায় ৫৫ শতাংশ ঘন জঙ্গল। ছোড়িটাড় তিলাইয়াতে ৫০ শতাংশ জঙ্গল এবং সেরেগারাতে ৪০ শতাংশ জঙ্গল। মধ্যপ্রদেশের গোটিটোরিয়া কোল ব্লকের প্রায় ৮০ শতাংশ জঙ্গল।
গত বছরের ২৯ মার্চ লকডাউন শুরু হবার পর কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রদপ্তর এক নির্দেশ দিয়েছিল। যে নির্দেশ অনুসারে, লকডাউন চলাকালীন কোনো সংস্থা কোনো কর্মচারীর বেতন কাটতে পারবে না। যাকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় কিছু সংস্থা। ১৮টা পিটিশন জমা পরে এর বিরোধিতায়। ১৮ মে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ৪ জুন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, দেশে লকডাউন-মধ্যবর্তী সময়ে কর্মচারীদের বেতন না দিলেও নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে ১২ জুন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। বিচারপতি অশোক ভূষণ, বিচারপতি এস কে কাউল এবং বিচারপতি এম আর শাহ-র বেঞ্চ জানায় - বিভিন্ন সংস্থা বাধ্য হয়েছে কাজকর্ম বন্ধ রাখতে। সেই অবস্থায় তাঁদের সম্পূর্ণ মজুরি দিতে বলা কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা দরকার। এরপর ১২ জুন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত এই সমস্ত নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবেনা। লকডাউনের জন্য কোনো সংস্থার ১০ শতাংশ, কোনো সংস্থার ১৫ শতাংশ মুনাফা কমেছিল। আর শ্রমিকদের বেতন বহু জায়গাতেই কেটে নেওয়া হয় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। মালিক পি এম কেয়ারস ফান্ডে মোটা টাকা ডোনেশন দিয়েছেন। একদিনের বেতন দিয়ে দায় বহন করেছে শ্রমিকরা, এরকম উদাহরণও আছে। ছাঁটাইয়ের কথা না’হয় বাদই দেওয়া গেল। সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছিলেন, কাজ হারানো শ্রমিকের সংখ্যাটা ১৪ কোটির আশেপাশে। অবশ্য, এই সময়েই আদানি আম্বানিরা একের পর এক বাণিজ্যিক ‘ডিল’ করেছেন, আম্বানি বিশ্বের সর্বাধিক ধনী মানুষ হয়েছেন।
গত বছরের ২৪ মার্চ রাত ৮ টায় করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন ২১ দিন। লকডাউনের প্রথম দিন, গত ২৫ মার্চ, বুধবার তাঁর নিজের কেন্দ্রের ভোটদাতাদের এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন - মহাভারতের যুদ্ধে ১৮ দিনে জয়ী হয়েছিল পাণ্ডবরা, আমরা ২১ দিনে করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে জয়লাভ করবো। অবশ্য এরকম চার ঘণ্টার নোটিশে ঘোষণা বা দিন চাওয়ার অভ্যেস আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আছে। এর আগেও তিনি নোট বাতিলের সময় পঞ্চাশ দিন চেয়েছিলেন। ফলাফল আমাদের জানা। তবু আশায় মরাই আমাদের অভ্যাস। জুনের মাঝামাঝি সময়ে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লাখ, মৃত প্রায় ৩০ হাজার।
লেখাটার নাম আলো আছে আবডালে। ঘটনাময় ২০২০টা ঠিক যেভাবে আমাদের সামনে ধরা দিয়েছে। তাই এই অন্ধকারের সময়েও শতকরার হিসেব মনে না রেখেই ‘দেশদ্রোহী’ ‘চীনের দালাল’ বামপন্থীরাই সেই আলোর দিশারী। যারা পাড়ায় পাড়ায় কমিউনিটি কিচেন করে মানুষের পাশে, হেল্পলাইন খুলে জল-খাবার নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে, জনস্বাস্থ্য অনলাইন খুলে এই দুঃসময়ে মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে মানুষের পাশে, অসহায় মানুষকে রেশন পৌঁছে দিতে মানুষের পাশে। আর এসবের পরেও রেশন দুর্নীতির প্রতিবাদ করে, মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো, আরও বেশি টেস্ট, মানুষের চিকিৎসার দাবি নিয়ে শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তাকেই বেছে নিয়েছিল।