E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪৮ সংখ্যা / ১৫ জুলাই, ২০২২ / ৩০ আষাঢ়, ১৪২৯

ডেয়ারি শিল্পে জিএসটি চাপানোর বিরুদ্ধে ২৭ জুলাই দেশজুড়ে প্রতিবাদ দুধচাষিদের


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নরেন্দ্র মোদি সরকার দুগ্ধজাত পণ্য ও দুগ্ধশিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ওপর জিএসটি বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে সারা দেশে আগামী ২৭ জুলাই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে ডেয়ারি ফারমার্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া । ফেডারেশন সমস্ত কৃষক সংগঠন এবং সংযুক্ত কৃষক মোর্চাকে এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শামিল হবার আবেদন জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ এবং কৃষিমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ারও পরিকল্পনা আছে ফেডারেশনের। প্রসঙ্গত, গত ২৮-২৯ জুন জিএসটি কাউন্সিলের ৪৭তম বৈঠকে প্যাকেটজাত ও ব্যান্ডেড দই, লস্যি ও বাটার মিল্কের ওপর ৫ শতাংশ এবং ডেয়ারি শিল্পের যন্ত্রপাতি ও দুগ্ধদোহন যন্ত্রের ওপর জিএসটি ১২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১৮ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়। এর বিরুদ্ধেই ২৭ জুলাই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের গ্রাম-তালুকগুলিতে কৃষকদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হবে। এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ডেয়ারি শিল্পের ছোটো উদ্যোগ ও দুগ্ধ সমবায়গুলিকেও যুক্ত করা হবে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের কৃষক-বিরোধী স্বরূপকে প্রকাশ্যে তুলে ধরতে লিফলেট বিলি এবং ব্যাপক প্রচার সংগঠিত করা হবে বলেও ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অবিলম্বে জিএসটি কাউন্সিলের এই সুপারিশসূমহ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ফেডারেশন।

দুধ উৎপাদনকারীদের সিংহভাগই হচ্ছে ক্ষুদ্রচাষি। এটা হচ্ছে এই শিল্পের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ঠ্য। এই ক্ষুদ্রচাষিদের ৭৫ শতাংশই গ্রামে থাকেন এবং তাঁরা মাত্র ২ থেকে ৪ টি গোরুর মালিক। সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে থাকা মহিলা ও কৃষকরা খুব বেশিমাত্রায় এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। কেন্দ্রের সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হতে পারে এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি দুধচাষিদের। তাঁরা এই ক্ষেত্র ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন। ডেয়ারি শিল্পের বড়ো বড়ো সংস্থাগুলি দেশের বহু জায়গায় ব্যবসা শুরু করায় ইতিমধ্যে ওই ছোটো চাষিদের সর্বনাশ শুরু হয়ে গেছে। ২০১৪ সাল থেকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং লাভজনক দাম না মেলায় ৫৫ লক্ষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি এই শিল্প ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।

খোলাবাজারে দুধের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। লক্ষ লক্ষ উপভোক্তা বাধ্য হচ্ছেন বেশি দামে দুধ এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য কিনতে। মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি অবশ্যই অর্থনীতিকে ক্ষতি করছে। একইভাবে, তা পিছিয়ে-পড়া শ্রেণি ও বর্ণের মানুষদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগানেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ডেয়ারি শিল্পের যন্ত্রপাতি এবং দুগ্ধদোহনের যন্ত্রের ওপর জিএসটি বৃদ্ধি বিরূপ প্রভাব ফেলবে সমবায় ও ক্ষুদ্র ডেয়ারি উদ্যোগপতিদের উৎপাদনে। এমনিতেই সমবায়গুলি কেন্দ্রের আর্থিক নীতির কারণে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়েছে। জিএসটি বৃদ্ধির ফলে যা ঘটতে পারে তা হলো,ডেয়ারি শিল্পের ক্ষুদ্ধ ও মাঝারি উদ্যোগপতিদের হয় তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে, নচেৎ বড়ো সংস্থাগুলি তাদের গিলে নেবে। পরিষ্কারই বোঝা যাচ্ছে, মোদি সরকারের সম্প্রতি গৃহীত নীতিগুলি ডেয়ারি শিল্পের বৃহৎ পুঁজির স্বার্থের দিকে নজর রেখেই নেওয়া হয়েছে। এরফলে বিপদে পড়বে সমবায় ও ক্ষুদ্রউদ্যোগপতিরা। ডেয়ারি শিল্পে উচ্চ উৎপাদন ব্যয় এবং অধিক পরিমাণে কার্যকরী মূলধনের প্রয়োজন বৃহৎ পুঁজিরই পক্ষে যাবে।

কৃষিক্ষেত্রের আয়ের এক চতুর্থাংশ আসে গৃহপালিত পশুপালন থেকে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পশুপালনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কতোটা। জীবন-জীবিকা পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল এরকম আমাদের দেশের ৯ কোটি পরিবারের আর্থিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত।দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর পুষ্টি নির্ভরশীল এরকম লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষকেও বিরাটভাবে আঘাত করবে এই মূল্যবৃদ্ধি।

ধনীদের ওপর কর বসানোর পরিবর্তে কৃষক, শ্রমিক ও শোষিত মানুষের ওপর যথেচ্ছভাবে অপ্রত্যক্ষ কর বসাচ্ছে মোদি সরকার। করছাড় ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা প্রদানের মধ্যদিয়ে করপোরেট সংস্থাগুলি সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছে। এই করপোরেট-মুখী নীতির কারণেই লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে গরিব মেহনতি মানুষ। কৃষক-শ্রমিক সহ সমস্ত মেহনতি মানুষের ঐক্য গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে একে প্রতিহত করতে হবে।