৬১ বর্ষ ৬ সংখ্যা / ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ২৮ ভাদ্র, ১৪৩০
ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য নিয়েই মোদি সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড
লড়াই তার বিরুদ্ধেই
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ‘এক দেশ-এক ভোট’-এর প্রস্তাব, ‘ইন্ডিয়া’ নাম পালটে ‘ভারত’ করার প্রক্রিয়া এবং সদ্যসমাপ্ত জি২০ সম্মেলনের আয়োজনে বিপুল অর্থ খরচ করে নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তি নির্মাণের উদ্যোগ ইত্যাদির নেপথ্যে যে সুপ্ত যোগসূত্র রয়েছে তা হলো - আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া। এছাড়া ‘এক দেশ-এক ভোট’ এবং ‘ইন্ডিয়া’ নাম পালটে ‘ভারত’ করার প্রচেষ্টার মধ্যে রয়েছে শাসকদল বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের সুদূরপ্রসারী ভাবনা। ওদের লক্ষ্য হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গড়ার মধ্য দিয়ে একনায়কতন্ত্রী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
বিশেষভাবে লক্ষণীয়, দেশ বিরোধী ও জনবিরোধী ফ্যাসিস্টধর্মী সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকারকে দেশের শাসন ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করতে যখন দেশের সমস্ত বিরোধী গণতন্ত্রকামী-ধর্মনিরপেক্ষ দল ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে শামিল হয়ে দেশে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে; বিশেষ করে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সর্বশেষ মুম্বাই বৈঠকের সাফল্য বিজেপি’র সামনে যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে এবং আরও নতুন নতুন দল এমনকী এনডিএ ভেঙে কয়েকটি দলের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে যোগ দেবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে - তাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোদি-শাহদের স্নায়ুর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। আতঙ্কিত করে তুলেছে আরএসএস-বিজেপি’কে। এরকম একটি পরিস্থিতিতে ‘এক দেশ-এক ভোট’-এর স্লোগান ও ‘ইন্ডিয়া’ নাম পালটে ‘ভারত’ করার উদ্যোগ নিয়ে আরএসএস-বিজেপি এক ভিন্ন রাজনৈতিক আবহ তৈরি করে আগামী লোকসভা ভোটে ফায়দা নিতে চাইছে।
বিজেপি’র দীর্ঘদিনের অ্যাজেন্ডা ‘এক দেশ-এক ভোট’; অর্থাৎ একই সঙ্গে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। এবারে এই লক্ষ্যেই ওরা জোরালোভাবে নেমেছে। এই লক্ষ্যকে কার্যকর করতে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করেছে কেন্দ্রের সরকার। এই কমিটিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই বিজেপি-ঘনিষ্ঠ। কাজেই এই কমিটির সুপারিশ কী হবে তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। তবে এই কমিটির সদস্য হিসেবে লোকসভার বিরোধী দলের নেতা কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী তাঁর সদস্যপদ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন একই সময়ে হয়েছে। তারপর থেকে রাজ্যগুলিতে বিধানসভার স্থায়িত্ব, সরকার গঠন ও সরকার ভেঙে যাওয়ার সময়কাল পৃথক হয়ে যায়। ফলে একইসঙ্গে একইদিনে সারা দেশে লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচন করার আর বাস্তবতা থাকে না।
আরও একটি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একই সময়ে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করাতে হলে এখন প্রয়োজন হবে সংবিধানের বহু ধারার সংশোধন করা। পরিবর্তন করতে হবে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন। আসলে এক সঙ্গে লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের ধারণা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। কিন্তু রাজ্যের এবং রাজ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন জনঅংশের অর্থনৈতিক-সামাজিক প্রশ্নগুলিকে পিছনে ঠেলে দিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে উত্থাপিত সাময়িক আবেগ জড়ানো ইস্যুকে সামনে এনে ভোট করানোই বিজেপি’র লক্ষ্য।
এই ‘এক দেশ-এক ভোট’ ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসেই তড়িঘড়ি ১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। কোন্ বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং কোন্ কোন্ বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে তা ঘোষণা করা হয়নি। অথচ বিরোধী দল, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এমনকী দেশের মানুষকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, লোকসভার এই বিশেষ অধিবেশন ডেকে ‘এক দেশ-এক ভোট’ সংক্রান্ত বিল পাশ করাতে চাইছে কেন্দ্রের সরকার। একইসঙ্গে মনে করা হচ্ছে আগামী লোকসভা নির্বাচনে ফায়দা তুলতে বিদ্বেষের রাজনীতিকে আরও শান দিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল এই অধিবেশনে পেশ করা হবে। এছাড়া দেশের অপরাধ দমনে যে ফৌজদারি আইন বা ইন্ডিয়ান পেনাল কোড (আইপিসি) অ্যাক্ট রয়েছে, তা বদলাতে আনা হয়েছে ‘ভারতীয় নয়া সংহিতা বিল’, ফৌজদারি প্রক্রিয়া আইন বা ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট (সিআরপিসি) বদলাতে আনা হয়েছে ‘নাগরিক সুরক্ষা বিল’ এবং এভিডেন্স অ্যাক্ট পরিবর্তন করতে নিয়ে আসা হয়েছে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য বিল’ - এই তিনটি ‘সংহিতা’ বিলকে সংসদের উভয় কক্ষে পাশ করানোর উদ্দেশ্য এই বিশেষ অধিবেশনে রয়েছে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছে।
সংসদীয় প্রথা অনুযায়ী বছরে সংসদের তিনটি অধিবেশন বসে - বাজেট অধিবেশন, বর্ষাকালীন অধিবেশন এবং শীতকালীন অধিবেশন। মাত্র কিছুদিন আগে শেষ হয়েছে বর্ষাকালীন অধিবেশন। এরপর হবে শীতকালীন অধিবেশন। কিন্তু তার মাঝখানে হঠাৎ করেই ডাকা হয়েছে বিশেষ অধিবেশন। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যে বিষয়গুলিতে বিরোধীদের পক্ষ থেকে প্রবল সমালোচনা ও বিরোধিতার সম্ভাবনা থাকে সে সমস্ত বিল আচমকা পেশ করে কার্যত কোনোরকম আলোচনার সুযোগ না দিয়েই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং করোনার সময়কালে তিনটি ক্ষতিকারক কৃষি আইনও একইভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় পাশ করিয়ে নিয়েছিল কেন্দ্রের সরকার।
কিন্তু সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো বিল পেশ করার আগেই বিলের কপি সদস্যদের দেওয়া হয় যাতে তারা বিলটি নিয়ে প্রয়োজনীয় চর্চা করে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। কিন্তু এবারের বিশেষ অধিবেশনে সেসব নিয়মের ধার দিয়ে যাচ্ছে না কেন্দ্রের সরকার। আসলে এই সরকার চাইছে নরেন্দ্র মোদিকে সামনে রেখে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শকে চাপিয়ে দিতে রাষ্ট্রপতি-প্রধান শাসন ব্যবস্থার দিকে যেতে। এই সরকারের শাসনে লক্ষ করা গেছে, সংসদের অধিকার ছাঁটাই হয়েছে, সেখানে বিরোধীদের আলোচনা বা প্রশ্ন তোলার অধিকার ক্রমশ খর্ব করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে দিনের পর দিন সংসদে না এসে প্রমাণ করতে চান যে, তিনি সংসদের ঊর্ধ্বে। মণিপুরের মতো একটি জ্বলন্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল মুখে গণতন্ত্রের বড়াই করে আসলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকেই ধ্বংস করতে চাইছে। ফ্যাসিস্ট ধর্মী শাসনের এটাই পথ।
দেশবাসীর অভিজ্ঞতায় রয়েছে, নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষের জীবনজীবিকার জরুরি বিষয়গুলোকে দূরে সরিয়ে আরএসএস-র হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচি ও অভিসন্ধিপুষ্ট অপ্রয়োজনীয়, অবাঞ্ছনীয় ও জনস্বার্থ-বহির্ভূত বিষয়গুলিকে সামনে নিয়ে এসে বিতর্ক তৈরি করে বিজেপি। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মিজোরাম, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা এবং রাজস্থান বিধানসভার নির্বাচন। তারপরেই মে-জুন মাসে লোকসভার ভোট। মোদি-অমিত শাহ বাহিনী সহজেই বুঝে গেছে এই নির্বাচনপর্বগুলি সহজে উতরানো তো দূরের কথা, তাদের কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। তাই এই অবস্থায় ‘এক দেশ-এক ভোট’-এর তৎপরতা ও সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা এবং হঠাৎ করেই ‘ইন্ডিয়া ’ নাম পালটে ‘ভারত’ করার উদ্যোগ।
দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘জি২০’ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির নামে নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে হঠাৎ করেই ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ লিখে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে কেন্দ্রের সরকার তথা বিজেপি। সঙ্ঘ পরিবারের তরফে প্রচার করা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া’ নাকি ইংরেজদের দেওয়া নাম। এমনকী বিজেপি’র সাংসদ কেউ কেউ বলেছেন, ইন্ডিয়া নাকি গালিসূচক। এই শব্দ সংবিধানে রেখে সংবিধান প্রণেতারা ভুল করেছেন। লক্ষণীয় বিষয় হলো গত ১ সেপ্টেম্বর আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত দাবি করেন, দেশের নাম ভারত। প্রাচীনকাল থেকেই তা চলে আসছে। যে ভাষাতেই উচ্চারিত হোক, দেশের নাম ভারতই। তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। বোঝাই যাচ্ছে মোহন ভাগবতের বক্তব্যকেই প্রথম ধাপে বাস্তবায়িত করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার জি২০ সম্মেলনে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতিকে সামনে রেখে।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত শ্যাল বি এ ইউনিয়ন অব স্টেটস।’’ রাষ্ট্রপতি সংক্রান্ত ধারা ৫২ নম্বরে বলা হয়েছে, ‘‘দেয়ার শ্যাল বি এ প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া।’’ এমনকী এই ধারায় বাধ্যতামূলকভাবেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইংরেজিতে তৈরি সব নথিতে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ শব্দই ব্যবহার করতে হবে। সংবিধানের ৬০ নম্বর ধারায় রাষ্ট্রপতি যে শপথ পাঠ করেন সেখানেও ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ শব্দই ব্যবহার করা হয়।
প্রকৃতপক্ষে বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সাফল্য লক্ষ্য করে শুরু থেকেই মোদি ও তাঁর বাহিনী নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। এখন ‘ইন্ডিয়া’ নামটিকেই মুছে ফেলতে তৎপর তারা হয়েছে। বিরোধী নেতৃবৃন্দ এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে স্পষ্টতই বলেছেন, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’ নামের চমক দিয়ে যিনি দেশের মানুষের সামনে নিজেকে নিউ ইন্ডিয়ার অবতার রূপে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, সেই নরেন্দ্র মোদিই এখন বিজেপি-বিরোধী ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ ‘ইন্ডিয়ার’-র জুজু দেখছেন। এর পাশাপাশি বিরোধীরা বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের মতো জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতেই মোদি সরকার এভাবে ‘ভারত’ নামটিকে আলোচনায় টেনে নিয়ে এল। উল্লেখ্য, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময়ে ‘সাইনিং ইন্ডিয়া’, ‘নিউ ইন্ডিয়া’, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ সহ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়েছে। ‘ইন্ডিয়া‘’ নামের মঞ্চ তৈরির পরই এই নামের প্রতি বিজেপি’র বিদ্বেষ জন্মালো কিনা - এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের তরফ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু নিজের মাতৃভূমির নাম কি বদলে দেওয়া যায়?
সিপিআই(এম)-র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, দেশের গর্বের বহু প্রতিষ্ঠানই, যেমন ইসরো, আইআইটি ইন্ডিয়া দিয়ে শুরু। এই নামে আমরা বহু শতাব্দী ধরে পরিচিত। এখন এই নাম বদলের ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এদিকে দেশের প্রোথিতযশা ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, ‘ইন্ডিয়া’ নামের সঙ্গে ব্রিটিশের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক রয়েছে গ্রিসের এবং সেটাও খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক থেকে। ‘ইন্ডিয়া’ নাম ব্রিটিশের দেওয়া বলে যে প্রচার চালানো হচ্ছে, তা সর্বৈব মিথ্যা। তাঁরা বলেছেন, সংবিধানে যেভাবে বলা আছে ‘ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারত’ ...তা যথার্থ। কারণ ইন্ডিয়া এবং ভারত দু’টি নামই ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর সঙ্গে ঔপনিবেশিক অতীতের কোনো সম্পর্ক নেই।
ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব বলেছেন, মেগাস্থিনিস এবং আরও অনেক পর্যটক, যাঁরা ভারতে এসেছিলেন তাঁরা ‘ইন্ডিয়া’ বলেছেন। তাই ভারতের মতোই ইন্ডিয়াও আমাদের ইতিহাসের অংশ। ইন্ডিয়া নামকে ব্রিটিশের সঙ্গে যুক্ত করাকে তিনি ভয়ংকর মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন।
আর একজন ইতিহাসবিদ সলিল মিশ্র বলেছেন, ভারত, ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান, জম্মুদ্বীপ এবং আর্যাবর্ত - এই পাঁচটি নাম একইভূমির ভৌগোলিক, বাস্তুসংস্থান, আদিবাসী এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক একই জায়গাকে চিহ্নিত করে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে ইন্ডিয়া এবং ভারত দু’টি নামই বহুলাংশে ব্যবহৃত হয় এবং দু’টিরই ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত রয়েছে।
কাজেই সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে বিজেপি’র সামনে এখন একটাই লক্ষ্য - আসন্ন নির্বাচন পর্ব যে কোনো মূল্যে পার হয়ে দেশের শাসন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখা। তাই অপ্রয়োজনীয় জনজীবনের স্বার্থ-বহির্ভূত এবং গুরুত্বহীন বিষয়গুলিকে সামনে নিয়ে আসতে চাইছে। একই লক্ষ্যে ওরা ইতিহাসকে বিকৃত করে মিথ্যাকে উপজীব্য করতে উদ্যত হয়েছে। সব ক’টি সরকারি তহবিল উজাড় করে চলছে লাগামহীন মোদি-বন্দনা। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্যসমাপ্ত জি২০ সম্মেলনে ভারতবাসীর উপকার আদৌ হলো কিনা - তা বিবেচনা না করে আন্তর্জাতিক মঞ্চকে ব্যবহার করে নির্লজ্জভাবে মোদির ঢাক পেটানো হচ্ছে। পিছনে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জ্বলন্ত সমস্যা। এই মানুষদেরই লড়াই আরএসএস-বিজেপি’র হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে একনায়কতন্ত্র শাসন প্রতিষ্ঠাকে রোখা। বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ গঠন এই লক্ষ্যেই।