E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬১ বর্ষ ৬ সংখ্যা / ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ২৮ ভাদ্র, ১৪৩০

চিত্র সাংবাদিক অলোক গুহর জীবনাবসান


বিশিষ্ট চিত্র সাংবাদিক অলোক গুহর জীবনাবসান হয়েছে। ৮ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আজীবন কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ অলোক গুহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে সাংবাদিক মহল।

অলোক গুহর জন্ম ১৯৩৬-এর ১২ অক্টোবর। কলেজে পড়ার সময়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশনের সান্নিধ্যে আসেন। পরবর্তীতে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ফটোগ্রাফি চর্চাও শুরু সেই সময়ে। ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকার চিত্র সাংবাদিক হিসাবে কাজ শুরু করেন। ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় তোলা ছবির জন্যই ১৯৫৭ সালে সর্বভারতীয় চিত্র সাংবাদিক প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পান। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক ছাত্র ইউনিয়নের মুখপত্র ‘ওয়ার্ল্ড স্টুডেন্টস নিউজ’-এর ভারতীয় উপমহাদেশের করেসপন্ডেন্ট বা সংবাদদাতা। ১৯৫৯ সালে এই পত্রিকাটি তাঁকে আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁদের শ্রেষ্ঠ সংবাদদাতার পুরস্কার দেয়। ১৯৬৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর সাংবাদিকতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আইওজে-তে উচ্চতর সাংবাদিকতার বৃত্তি নিয়ে ‘এক্সেলেন্ট’ মান অর্জন করেন তিনি। কলকাতায় ফিরে আসার পর তাঁরই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের প্রথম রেজিস্ট্রিকৃত সর্বভারতীয় সংবাদচিত্র সংস্থা ‘ল্যান্ড অ্যান্ড লাইফ ফটো নিউজ এজেন্সি’। বামপন্থী সাংবাদিক মূল্যবোধের দ্বারা পরিচালিত অলোক গুহ এটিকে সম্পূর্ণ অলাভজনক একটি সংস্থা হিসাবেই গড়ে তোলেন। ১৯৭৩ সালে তাঁরই উদ্যোগে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় প্রথম সর্বভারতীয় পেশাগত চিত্রসাংবাদিকতা সম্মেলন। আমস্টারডামে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ষিক ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো’ প্রতিযোগিতায় ১৯৭৪ সালে তিনি জুরি সদস্য হিসাবে যোগ দেন। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে এই সম্মান প্রথম তিনিই পান। অলোক গুহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ১৩ বছর অতিথি অধ্যাপক ছিলেন। কলকাতার রাজপথে বহু ঐতিহাসিক আন্দোলনের ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন। ষাটের দশকের খাদ্য আন্দোলন সহ পরবর্তী সত্তর ও আশির দশকে বামপন্থীদের বহু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন-সংগ্রামের তাঁর তোলা আলোকচিত্র দেশহিতৈষী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। দেশহিতৈষী’র শারদ সংখ্যায় তাঁর প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে। দেশহিতৈষী পত্রিকার সঙ্গে কমরেড অলোক গুহর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। গণশক্তি পত্রিকাতেও দীর্ঘ সময় তাঁর তোলা ছবি প্রকাশিত হয়েছে। ‘কল টু ইয়েনান’ বইটির বাংলা অনুবাদ করেছিলেন তিনি।

আজীবন অবিচল ছিলেন কমিউনিস্ট আদর্শ, মূল্যবোধের প্রতি। যুক্তিবাদ এবং বিজ্ঞান মনস্কতা প্রচারের কাজে ছিলেন নিরলস। ‘গণদর্পণ’-এর গুরুত্বপূর্ণ কর্মী হিসাবে মরণোত্তর চক্ষু ও দেহদানের জন্য সকলকে উৎসাহিত করা ও উদ্যোগ গ্রহণে তিনি ছিলেন সদাসচেষ্ট। বয়স এবং অসুস্থতাকে অস্বীকার করে দীর্ঘ দিন সিপিআই(এম)’র প্রায় সমস্ত আন্দোলনের কর্মসূচিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন তিনি। কোভিড-পরবর্তী সময়ে অসুস্থতা বাড়ায় শেষ কয়েক বছর প্রায় গৃহবন্দিই ছিলেন। অবশেষে এদিন বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ পুত্রের বাসভবনে তিনি মারা যান। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহা্য্যার্থে ৯ সেপ্টেম্বর পি জি হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে কমরেড অলোক গুহর দেহ দান করা হয়।