E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৬ এপ্রিল, ২০২১ / ২ বৈশাখ, ১৪২৮

তৃণমূল-বিজেপি’র প্ররোচনা ও বিভাজনের রাজনীতিতে রক্তাক্ত চতুর্থ দফার নির্বাচন

শীতলকুচিতে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি সংযুক্ত মোর্চার


শিলিগুড়িতে সংযুক্ত মোর্চার সিপিআই (এম) প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যের সমর্থনে সুবিশাল মিছিল।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী সহ তৃণমূল-বিজেপি নেতাদের প্ররোচনামূলক প্রচার, উত্তেজক মন্তব্য এবং বিভাজনের রাজনীতির পরিণামে রাজ্যের চতুর্থ দফার নির্বাচন রক্তাক্ত হয়েছে। ১০ এপ্রিলের এই ভোটপর্বে কোচবিহার জেলার শীতলকুচিতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি’র সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। বাকি চারজনের মৃত্যু হয়েছে সিআইএসএফ’র গুলিতে।

শীতলকুচিতে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সংযুক্ত মোর্চার নেতৃবৃন্দ। সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে বিমান বসু এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাজ্যে চতুর্থ দফার নির্বাচনে কোচবিহারের শীতলকুচি বিধানসভায় পাঁচজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সকালে একটি ঘটনায় এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আরেকটি ঘটনায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন। কোন্‌ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী এভাবে গুলি চালালো তা এখনও সবটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু এই কাজ অন্যায় হয়েছে, এভাবে গুলি চালনায় চারজনের মৃত্যুর ঘটনাকে আমরা তীব্রভাবে নিন্দা করছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের দাবি, এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করতে হবে, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

বাগুইহাটি মোড়ে সভায় বলছেন সুজন চক্রবর্তী।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রধানমন্ত্রী, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারের নামে হিংসার প্ররোচনা দিচ্ছেন। তেমনভাবেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার জন্য দলের কর্মীদের প্ররোচনা জুগিয়েছেন। রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতিকে উসকে দিতে এই পথ নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদল। তারা পরিস্থিতিকে কলুষিত করছে। তারই পরিণতিতে রাজ্যে হিংসার ও বিভাজনের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে। হিংসার রাজনীতির বিরুদ্ধে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্য গড়ে তুলতে রাজ্যের জনগণের কাছে আমরা আবেদন করছি।

সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ট্যুইট করে বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। বিচারবিভাগীয় তত্ত্বাবধানে এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে, দায়ী কারা তা খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

কেন্দ্রের ও রাজ্যের শাসকদলের বিভাজনের রাজনীতিতে কোচবিহারে আধা সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংযুক্ত মোর্চার ডাকে জেলায় জেলায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।

নির্বাচন চলাকালীন বেশ কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ এবং হিংসার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১২ এপ্রিল সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও মোর্চা নেতৃবৃন্দ তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। এদিন স্মারকলিপি প্রদান শেষে কমিশন দপ্তরে মোর্চার পক্ষে বিমান বসু বলেন, শীতলকুচির ঘটনায় গুলিতে ৫ জনের মৃত্যুর পরেও নির্বাচন কমিশনের কোনো হেলদোল নেই। কোথায় গেল ঘটনার ছবি বা আসল বিবরণ - তার জবাব নেই কমিশনের কাছে। যাঁরা বলছেন, আরও অনেক শীতলকুচির মতো ঘটনা ঘটবে তারা দিব্ব্যি পার পেয়ে যাচ্ছেন কীভাবে? ওদিকে নির্বাচন চলতে চলতেই প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন শুধু তাই নয়, নানা উসকানিমূলক মন্তব্য করছেন ও নানা ইন্ধন দিয়ে চলেছেন, ধর্মীয় মেরুকরণ করছেন, তাতেও নিশ্চুপ নির্বাচন কমিশন। নানাভাবে নির্বাচন বিধিভঙ্গ হচ্ছে দেখেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কমিশন। বাকি নির্বাচনগুলিতে কমিশনকে এবিষয়ে নজর দেবার দাবি জানান তাঁরা। সেইসঙ্গে শীতলকুচির ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেন তাঁরা।

শীতলকুচিকাণ্ডে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে বুধবার দিনহাটা শহরে মিছিল সংযুক্ত মোর্চার।

এদিন সংযুক্ত মোর্চার পক্ষে প্রতিনিধিদলে বিমান বসু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, আইএসএফ নেতা নৌসাদ সিদ্দিকি, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, সিপিআই নেতা প্রবীর দে, সিপিআই(এম) নেতা রবীন দেব প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, চতুর্থ দফার নির্বাচনের আগে শীতলকুচিতে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের গাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে। একইদিনে কোচবিহারে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী সিআরপিএফ-কে ঘেরাওয়ের ডাক দেন। দিলীপ ঘোষও সেদিন খুবই উত্তেজক বক্তব্য রাখেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এদিকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের সুরে ভাষণ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে উসকানি ছড়ানোর অভিযোগে ১২ এপ্রিল রাত ৮টা থেকে ১৩ এপ্রিল রাত ৮টা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কমিশন। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারে নিষেধাজ্ঞা - অতীতে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। আবার হাবড়া কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহার প্রচারেও ৪৮ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করে নির্বাচন কমিশন। তিনি ১১এপ্রিল প্রচারে বেরিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, শীতলকুচিতে ৪ জনের বদলে ৮জনকে মারা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর। কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী ৪জনকে মারলো, তারজন্য তাদের শো-কজ করা উচিত। অন্যদিকে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও মন্তব্য করেন, আরও এমন শীতলকুচি হবে। এই মন্তব্যের জন্যও তাকে শো-কজ নোটিশ দেয় নির্বাচন কমিশন। উসকানিমূলক মন্তব্যের জন্য তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকেও শো-কজ নোটিশ ধরিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এভাবেই তৃণমূল-বিজেপি’র নেতারা সাধারণ মানুষের জীবনযন্ত্রণা, রুটি-রুজির সমস্যাকে আড়াল করে হিংসায় প্ররোচনা দিচ্ছেন। উত্তেজনা ছড়িয়ে নির্বাচনী পরিস্থিতিকে কলুষিত করছেন। এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন রুটি-রুজির সমস্যা মেটাতে, কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে, রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নকে অব্যাহত রাখার জরুরি বিষয়গুলি তুলে ধরে জোরালো প্রচার সংগঠিত করছে সংযুক্ত মোর্চা। এই প্রচারে অগণিত মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সর্বত্রই সাড়া ফেলছে।