৫৮ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৬ এপ্রিল, ২০২১ / ২ বৈশাখ, ১৪২৮
করোনায় বিনা চিকিৎসায় অধ্যাপিকা ইন্দ্রাণীর মৃত্যু
কোভিডে মৃতদের গণচিতা জ্বলছে সুরাটে।
বিশেষ সংবাদদাতাঃ এদেশে করোনার থাবায় গত এক বছরে এক লক্ষ সত্তর হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। গুজরাটের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু সে অর্থে আর একটি অবাঞ্ছিত মৃত্যু। মৃত্যুর কাছে বিজ্ঞানী বা শ্রমিক আলাদা নয়। কিন্তু যে গুজরাট মডেলের কারিগর আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সেই মডেলটা কেমন, এই মেধাবী বাঙালি বিজ্ঞানী ইন্দ্রাণীর মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। যেখানে একজন স্বনামধন্য অধ্যাপিকা হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাননা, সেখানে নিশ্চিতভাবে অ্যাম্বুলেন্স পাবার আগেই মৃত্যু হয় অনেক সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের।
যারা গুজরাট মডেলের কথা জাহির করে, এরাজ্যে এসে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখায় এবং ২০১৪ থেকে যারা ভারতে রামরাজ্য গড়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ইন্দ্রাণীর মৃত্যুকে তারা করোনা আক্রান্ত আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর মতোই দেখতে চান। সরকারি অক্ষমতার কারণে বিনা চিকিৎসায় কি করুণ অবস্থায় ইন্দ্রাণীর মৃত্যু হলো তা সবার জানা।
ইন্দ্রাণী গান্ধীনগরে গুজরাট কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ন্যানো সায়েন্স (অতি ক্ষুদ্র কণার বিজ্ঞান)-এর ডিন এবং একজন কৃতি অধ্যাপিকা। ন্যানো সায়েন্স এক আধুনিক বিজ্ঞানের ধারা, যার ব্যবহারিক প্রয়োগের কোনো সীমা নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে শুরু করে পদার্থ বিজ্ঞান এমনকি জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারায় এর প্রয়োগ এখন অবধারিত। অনেক ভারতীয় বিজ্ঞানী ন্যানো সায়েন্সের গবেষণা দেশে করতে না পেরে বিদেশে বেশি গবেষণার সুযোগের জন্য চলে যাচ্ছেন। এই ধারায় একজন কৃতি গবেষক হিসাবে অনেকগুলি স্কলারশিপ পেয়েছেন ইন্দ্রাণী। তিনি এক সময়ে কমনওয়েলথ গবেষক হিসাবে এবং লন্ডনের ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রায় ৯৩ টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রবন্ধের তিনি লেখিকা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন।
কিন্তু মোদীর গুজরাট মডেলে এই মৃত্যুর কোনো মূল্য নেই। দেখা যাক এই মডেলে কি আছে যার জন্য ইন্দ্রাণীর মৃত্যু অবধারিত হয়ে পড়ে। দু’দিন ধরে তাঁর ছাত্র-ছাত্রী এবং সহকর্মীদের সঙ্গী হয়ে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোতে হয়েছে ইন্দ্রাণীকে। গুজরাট মডেলে কোভিড রুগীকে নির্দিষ্ট অ্যাম্বুলেন্সে না নিয়ে গেলে যতো মরণাপন্ন হননা কেন তার চিকিৎসা হয়না। এই মডেলে বেসরকারি হাসপাতালকে মরণাপন্ন রুগীদের জন্য বাইপ্যাপ (BIPAP) রাখতে বাধ্য করা হয়না। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে কমতে ৬০ শতাংশ হলেও রুগী চিকিৎসার সুযোগ পায়না। গান্ধী নগর গুজরাটের রাজধানী এবং তার ৩০ কিলোমিটার দুরে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ শহর আহমেদাবাদ। এই দুই শহরের মধ্যে দু’দিন ধরে বেশ কয়েকবার ঘুরতে হয়েছে গুরুতর অসুস্থ ইন্দ্রাণীকে। গুজরাট মডেলে এই দুই শহরের কোথাও ইন্দ্রাণীর চিকিৎসার সুযোগ হয়নি।
বাঙালি বা অবাঙালি হিসাবে নয়, বিজ্ঞানী বা একজন শ্রমিক সেই বিচারে নয়, গুজরাট মডেলে কারো কোনো গুরুত্ব নেই। পশ্চিমবাংলায় যে ভেঙে পড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা তাকে আরও দুর্বল করবে গুজরাট মডেল। গুজরাট মডেলের চশমা পরে যারা সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখছেন তাদের এমন এক অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।