E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৬ এপ্রিল, ২০২১ / ২ বৈশাখ, ১৪২৮

উত্তর দমদম সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্যকে আবার বিধানসভায় পাঠাতে প্রস্তুত

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়


উত্তর দমদম কেন্দ্রের মহাজাতিনগরে প্রচারে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্য।

তৃণমূল-বিজেপি’র বাইনারি উত্তর দমদমে মোটেই সুবিধে দিচ্ছে না খোদ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে, বিজেপি’র প্রার্থী তো অনেক দূরের ব্যাপার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির স্নেহের মন্ত্রীর বেহাল দশার কারণ কি? কারণ তিনি নিজেই। ২০১৬ সালে তন্ময় ভট্টাচার্যের কাছে হেরে গিয়ে সেই যে রাজ্যের প্রাক্তন আইনমন্ত্রী হিসেবে এলাকা ছাড়লেন, আর ফিরেও তাকাননি গত পাঁচ বছরে। মাঝে অবশ্য কাঁথির অধিকারী পরিবারের ছোটো ছেলে দিব্যেন্দু’র ছেড়ে যাওয়া আসনে উপনির্বাচন থেকে জিতে আসার পর আবার মন্ত্রী হয়েছেন। ‘উনি আবার এখানে কেন?’ - প্রশ্ন তুলে উত্তর দমদম এলাকার তৃণমূলীরাই অনেকে বসে গেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাই সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর সঙ্গে লড়বেন কি, পারস্পরিক সন্দেহ আর অবিশ্বাসের বাতাবরণ সামলাতেই নাজেহাল চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মুশকিলের ব্যাপার হলো, উনি আর নিজের দলের কর্মীদেরও বিশ্বাস করছেন না। উত্তর দমদম বিধানসভা ঘুরলেই প্রকাশ্যে শোনা যাচ্ছে এসব অভিযোগ। শোনা যাচ্ছে কোন্‌ ষড়যন্ত্রে ২০১৬-র নির্বাচনের দিন তন্ময় ভট্টাচার্য আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল। মোদ্দা কথা হলো, স্বাস্থ্যদপ্তর ইত্যাদি সামলাতে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের এতদিন যে নাজেহাল দশা ছিল, নিজের পুরনো কেন্দ্রেও তেমনই বেকায়দায় তিনি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে পানীয় জলের, নিকাশির সমস্যা থেকে অবৈধ নির্মাণের যোগসাজশ, পুরসভাগুলির ব্যর্থতা তাঁর যন্ত্রণা আরও বা‌ড়িয়েছে।

রাজ্য সরকারের বিরোধী দলের বিধায়ক মানেই তাকে নানা ফিকিরে জনস্বার্থে কাজ করা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হবে। নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের জন্য রাজ্য সরকারের বরাদ্দ কার্যকর করা এবং নোডাল অথরিটি হিসেবে তার শংসাপত্র দেওয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রেই পাহাড়প্রমাণ বাধা তৈরি করা হয়। এটা করা হয় শুধু বিরোধী বিধায়ককে নাজেহাল করতে নয়, ওই কেন্দ্রের ভোটারদের বিরোধী বিধায়ককে ভোট দেওয়ার জন্য ‘সবক’ শেখাতে। কিন্তু তিনি তন্ময় ভট্টাচার্য, যুব আন্দোলন থেকে উঠে আসা উত্তর দমদমের বামফ্রন্টের বিধায়ক, পার্টি নেতা, তিনি জানেন কিভাবে বাধার প্রাচীর ডিঙোতে হয়। গত ৫ বছর ধরেই তিনি তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্রে সেই বাধা ঠেলে এগিয়েছেন। তাঁর তহবিলের টাকা নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করেছেন। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হিসেবে প্রচার পরিক্রমার ফাঁকে ফাঁকে মহাজাতি নগরে সাধারণ নাগরিকদের অভিনন্দনের বন্যায় ভেসে যেতে যেতে তিনি বলছিলেন সে কথাই। মহাজাতি নগরে, তরুণ সেনগুপ্ত নগরে কারও তিনি জেঠু বা কাকু, কারও দাদা কারও বন্ধু। উদ্বাস্তু আন্দোলনের বহু কঠিন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা উত্তর দমদম এলাকার এই অংশে তিনি যেমন জনপ্রিয় তেমনই সহজ তাঁর কাছে পৌঁছানো - এটা বোঝা যাচ্ছিল প্রতিটি গলি বাঁকেই। তাঁকে ঘিরে প্রচারের অন্যান্য দিনের মতোই তরুণ নাগরিকদের, বাম কর্মীদের স্লোগানের অভিনবত্ব এমনকি প্রবীণ প্রবীণাদেরও অন্দরমহল থেকে দোরগোড়ায় টেনে আনছিল। অপরিসর গলির পাশের দশ ফুট বাই দশ ফুট বাড়ির সদস্য থেকে কুড়ি ফুট চওড়া রাস্তার ধারের পাঁচিল ঘেরা বাড়ির বাসিন্দা - তন্ময় ভট্টাচার্যকে দেখলেই তাঁদের মুখে ফুটে উঠছিল স্বতঃস্ফুর্ত চওড়া হাসি। ফুল মালায় ভরিয়ে দিচ্ছিলেন ওঁরা বাম প্রার্থীকে। কারণ, এখানকার নাগরিকরা তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি-কে কোনোরকম বিপদে কোনো সময় পাননি, পেয়েছেন তন্ময় ভট্টাচার্যকে। এক কথায় পেয়েছেন বামপন্থীদের।

এলাকার উন্নয়ন প্রসঙ্গে তন্ময় ভট্টাচার্য বলছিলেন, পাঁচ বছর দু’টি পৌরসভার প্রচণ্ড প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা খরচ করে তার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পকেটে নিয়ে আমি মানুষের কাছে যাচ্ছি। বেশিরভাগ স্কুলকে সাউন্ডপ্রুফ জেনারেটর, সোলার লাইট, কোথাও নতুন ক্লাসরুম, কোথাও স্মার্ট ক্লাসরুম, কোথাও স্কুলের টয়লেট ভেঙে গেছে সেখানে টয়লেট তৈরি করে দেওয়া, স্কুলের পেইন্টিং-এই সব খাতেই অর্থাৎ মূলত শিক্ষা ক্ষেত্রেই আমি আমার বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের বরাদ্দ টাকা খরচ করেছি। টাকার অঙ্কে সেটা প্রায় আড়াই কোটি।

প্রসঙ্গত, উত্তর দমদম একমাত্র বিধানসভা ক্ষেত্র যেখানে অতিমারীর সময়ে শুরু হওয়া শ্যামল চক্রবর্তী কোভিড পরিষেবা সেন্টার আজও চলছে তন্ময় ভট্টাচার্যের উৎসাহ এবং উদ্যোগে। এ পর্যন্ত এই পরিষেবা কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০০৮ জনকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছে। বিধায়কের পৃষ্ঠপোষকতায় বামপন্থীদের পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার আর্ত মানুষকে বিভিন্নভাবে পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। পালস অক্সিমিটার, কাউকে গ্লুকোমিটার, কাউকে ইসিজি করিয়ে দেওয়া, অসুস্থদের কেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্সে করে হসপিটালে ভর্তি করানো, কাউকে ডাক্তার দেখিয়ে দেওয়া বা কাউকে টেস্ট করিয়ে দেওয়া - এ সমস্ত কাজই করা হয়েছে, হচ্ছে নিয়মিত, লাগাতার।

লকডাউনের পরিস্থিতিতে বেরোজগার মানুষের জন্য জননেতা জ্যোতি বসু’র নামে একটি শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালু হয়েছে তন্ময় ভট্টাচার্য সহ এলাকার পার্টি নেতৃত্বের উদ্যোগে অংশগ্রহণের পাশাপাশি উত্তর দমদমে ৭ থেকে ১৫ দিনের বিভিন্ন মেয়াদে বিধানসভা এলাকায় ৫টি ‘জনতার বাজার’ সংগঠিত করা হয়েছে। না, স্বাস্থ্যদপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী তৃণমূল প্রার্থী তখন মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান নি। প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী সম্পর্কে তন্ময় ভট্টাচার্যের মুল্যায়ন, ‘আগের পাঁচ বছর (২০১১ থেকে ২০১৬) এলাকার মানুষকে পরিষেবা দেননি। মানুষ ওনাকে তাই প্রত্যাখ্যান করেছে। নতুন করে এই এলাকার মানুষের ওকে প্রয়োজন নেই। প্রতিশ্রুতি রাখেন না উনি, তাই লোকে ওকে ধাপ্পাবাজ, মিথ্যাবাদী, প্রতিহিংসাপরায়ণ বলেন। এটা গত এক দশক ধরে উত্তর দমদমের মানুষের কাছে পরিষ্কার।

‘‘২০১৬ সালে যে তন্ময় ভট্টাচার্য উত্তর দমদমের মানুষের কাছে তাঁদের প্রতিনিধি হবার আবেদন নিয়ে পৌঁছেছিলেন তিনি ছিলেন নতুন প্রার্থী মানুষের কাছে। ‘বিগত পাঁচ বছরে উত্তর দমদম বিধানসভা এলাকার বিধায়ক হিসেবে নির্দিষ্ট এলাকায় সপ্তাহের নির্দিষ্ট পাঁচটা দিন মানুষের কথা শুনেছি। মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস যেখানেই বামপন্থী তথা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করেছে বা হুমকি দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা সেখানে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলেছি। কোনো কিছুই একপেশে হয়নি এই বিধানসভা কেন্দ্রে’’, বলছিলেন তন্ময় ভট্টাচার্য। তার কথায়, এখন চেনা তন্ময় ভট্টাচার্য মানুষের বিচার প্রার্থী। মানুষ আমার কাজের ভিত্তিতে আমার মূল্যায়ন করবেন। আমি বিশ্বাস করি বিচারের রায় আমার পক্ষে আসবে। শুধু তিনি নন, শুধু উত্তর দমদম নয়, একথা জানে গোটা পশ্চিমবঙ্গ।