৫৮ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৬ এপ্রিল, ২০২১ / ২ বৈশাখ, ১৪২৮
বারাকপুর কেন্দ্রে প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন সংযুক্ত মোর্চার সিপিআই(এম) প্রার্থী দেবাশিস ভৌমিক
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বারাকপুরের মানুষ এবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন কোনো দোলাচলে নয়, তারা এবার সিদ্ধান্ত নেবেন বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে। তারা চাইছেন এমন মানুষ বিধায়ক হিসেবে তাদের পাশে থাকুন যাঁকে দূর থেকে দেখতে হবে না, ডাকলে পাশে পাবেন, সাথে পাবেন, প্রয়োজনে যাঁর কাছে সাহায্যের জন্য পৌঁছতে পারবেন - এমন মানুষ। তাই সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী ঋষি বঙ্কিম কলেজের সান্ধ্যকালীন বিভাগের অধ্যক্ষ দেবাশিস ভৌমিক বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় প্রচার পরিক্রমায় গেলে মানুষের আকুতি আর আশ্বাসের পাশাপাশি দৃঢ় উচ্চারণে শুনছেন, এবার কিন্তু আপনারাই আসছেন।
দেশে বিজেপি’র ৭ বছর আর রাজ্যের তৃণমূলের ১০-বছর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। যেখানে কেউ কোনো প্রতিশ্রুতি রাখেননি। সবচেয়ে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন এখানকার মানুষ কে তৃণমূল, কে বিজেপি এইটা বোঝার ক্ষেত্রে। গত মাস অবধি যিনি বারাকপুরে তৃণমূলের বিধায়ক ছিলেন সেই শীলভদ্র দত্ত এখন হাওয়া প্রতিকূল বুঝে বিজেপি’র টিকিট নিয়ে লড়ছেন খড়দহ থেকে। তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী বিজেপি-তে। সঙ্গে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ অর্জুন সিং। আর বারাকপুর-টিটাগড় এলাকা জুড়ে অবাধে চলছে খুন সন্ত্রাসের রাজনীতি। কিছুদিন আগেই টিটাগড়ের এক দর্জির দোকানের মালিক যিনি এলাকায় ভাড়া খাটা বাহুবলী নামে পরিচিত ছিলেন তিনি দোকানের মধ্যেই প্রকাশ্যে খুন হলেন। আর কয়েক মাস আগে বিজেপি’র বাহুবলী নেতা মনীশ শুক্লা খুন হয়েছেন। এবারে মনীশ শুক্লার বাবাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। উল্লিখিত দু’টি খুনের ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীর তৃণমূলের দিকে, তাই লাশের রাজনীতি চলছেই।
কিন্তু তৃণমূল-বিজেপি কর্মীদের একটা অংশ যারা সৎভাবে নিজেদের পার্টিটা করতে চান, এই খুনোখুনিতে তাঁরা আতঙ্কিত। তাঁরাও সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীকে কাছে পেয়ে বলছেন আপনারা আসুন এবার, না হলে রাজ্যটা শেষ হয়ে যাবে।
হিন্দিভাষী বাংলাভাষী মিলিয়ে গোটা বারাকপুর বিধানসভা এলাকাই শ্রমজীবী মানুষদের মহল্লাগুলো এক একটা মিনি ভারত। তাঁরা শান্তি চাইছেন। খেটে দু’পয়সা রোজগার করে সংসার চালাতে চাইছেন। রাতে সমাজবিরোধীদের দাপাদাপিতে সিঁটিয়ে থাকা নয়, শান্তিতে ঘুমোতে চাইছেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রের এই শ্রমিকদের রুজির সমস্যা এবারের ভোটের অন্যতম নির্ণায়ক ইস্যু। কাজ না থাকা, কাজ হারানো থেকে জিনিসপত্রের দাম এসমস্ত নিয়েই বারাকপুরের মানুষ দেশ-রাজ্যের অন্যান্য অংশের মতোই চিন্তিত। বিজেমূলের দ্বারা রুজি রোজগারের ব্যবস্থা হবে না এটা মানুষ বুঝেছেন। তাই অধ্যাপক প্রার্থীর হয়ে তাঁরা পথে নেমেছেন বাঁচার মতো বাঁচাকে নিশ্চিত করতে।
বারাকপুর জুড়ে নতুন কর্মসংস্থান থেকে হিংসা কাটমানি তোলাবাজি এবং এনআরসি - অন্যতম আলোচনার বিষয়বস্তু মানুষের মধ্যে। অধ্যাপক দেবাশিস ভৌমিক সহ সংযুক্ত মোর্চার নেতৃত্ব মানুষের কাছে তুলে ধরছেন ইতিবাচক দিকগুলি। সংযুক্ত মোর্চা ক্ষমতায় এলে এনআরসি হবে না বাংলায়। বলছেন, কাটমানি আর তোলাবাজির জন্য দাদাগিরি বন্ধ করা হবে চিরতরে। নতুন বাড়ি ভাড়া নিচ্ছেন এমন মানুষ থেকে ব্যবসা না চললেও নিয়মিত তোলা দেওয়া ব্যবসায়ী সবক্ষেত্রেই তোলাবাজির এই বিস্তৃত জাল নিয়ে আতঙ্কিত বারাকপুর টিটাগড়ের মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝার চেষ্টা করছেন। এবং তারা বুঝছেন।
লকডাউনের সময় শুরু থেকেই বামপন্থীরা রাস্তায় নেমেছেন। দীর্ঘ ৫৬ দিন ধরে শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালিয়েছেন এলাকায়। কিন্তু বেরোজগার মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেবার ব্যবস্থাতেও বাদ সেধেছে তৃণমূল আর রেলওয়ে প্রশাসন। তারা বাধা দিয়েছেন, উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেছেন বারাকপুর স্টেশন চত্বর থেকে শ্রমজীবী ক্যান্টিনের কার্যক্রমকে। সে সময় বর্ধমান দুর্গাপুর থেকে বিহার পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে যারা আটকা পড়েছিলেন বারাকপুরে তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে পেরেছেন বামপন্থীরা। ক্যান্টিনের খাবার খেয়ে রোজা ভেঙেছেন তাঁরা - রয়েছে এমন নজিরও। সেই কর্মসূচির অন্যতম নেতা অধ্যাপক ভৌমিক।
করোনাকালে যখন বিজেপি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মানুষের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন তখন বামপন্থীরা বারাকপুরের স্টেশনের ৪ নম্বর প্লাটফর্মে যে ক্যান্টিন চালাচ্ছিলেন তা তৃণমূল প্রশাসন মিলে ভেঙে দিয়েছে। পার্টিকর্মী মোহাম্মদ সহ অন্যান্যদের মারধর করা হয়েছে। তবু থামানো যায়নি মানুষের পাশে থাকা বামপন্থীদের। বারাকপুর সংস্কৃতিকেন্দ্রের পক্ষ থেকে আম্ফান বিধ্বস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চাল ডাল ত্রিপল সহ ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দেবাশিস বাবুর নেতৃত্বে। দিল্লির কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বের হাতে ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে তিন লক্ষ টাকা। এই সময় রোগগ্রস্ত মানুষকে ওষুধ কিনে দেওয়া থেকে বাড়িগুলিকে স্যানিটাইজ করে দেওয়া সহ সমস্ত দায়িত্ব পালন করেছেন বামপন্থীরা। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস থেকে প্রচারে তাঁর পরিচিতির জেরে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বামপ্রার্থী দেবাশিস ভৌমিক।
এলাকায় বড়ো বড়ো কারখানা বন্ধ। ধুঁকছে চট শিল্প। সেখানে কমছে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা। ঠিকা শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তারা ঠিকমতো মজুরি পাচ্ছেন না। করোনার সময় তারা তিন মাস বেতন পাননি। এই ক্ষোভ থেকেই তারা তাদের বঞ্চনার কারণ খুঁজে বার করেছেন। তাই অসংগঠিত ক্ষেত্রের বহু মানুষ শামিল হয়েছেন সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর মিছিলে। যোগ দিচ্ছেন অটো চালকরাও।
শিক্ষক দেবাশিস ভৌমিকের ছাত্রছাত্রীরাও পথে নেমেছেন। স্মার্ট ফোন না থাকায় তাদের ক্লাস করা বা পরীক্ষা দেওয়ার অসুবিধা সম্পর্কে বলছেন স্যারকে।
বিশিষ্ট বামপন্থী অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী, মানসী সিনহা, চন্দন সেন, শ্রীলেখা মিত্র প্রমুখ দেবাশিস ভৌমিকের সমর্থনে তাঁর প্রচার পরিক্রমা মিছিলে হেঁটেছেন, বক্তব্য রেখেছেন।
সবমিলিয়ে বারাকপুর এবার কোনো মায়ানগরীর বাসিন্দা নন, বেছে নিতে চাইছেন পাশে থাকা মাস্টারমশাই দেবাশিস ভৌমিককেই।