E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৬ এপ্রিল, ২০২১ / ২ বৈশাখ, ১৪২৮

শিল্পনগরীর পুনরুজ্জীবন ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে সংযুক্ত মোর্চার প্রচার দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে সাড়া জাগাচ্ছে

সন্দীপ দে


দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরী কাঁকসায় প্রচারে।

শিল্পনগরী দুর্গাপুরের পুনরুজ্জীবন ও ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি এখানকার শান্তি সুস্থিতি ও উন্নয়নের পরিবেশকে ফিরিয়ে আনার সংকল্প নিয়ে চলছে সংযুক্ত মোর্চার প্রচার। দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হয়েছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায় চৌধুরী। এই কেন্দ্রে প্রচারে কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

দুর্গাপুরের মানুষদের অভিজ্ঞতায় রয়েছে, ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচনে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস কয়েক হাজার দুষ্কৃতী ঢুকিয়ে সাতদিন দুর্গাপুরকে অবরুদ্ধ করে রেখে কীভাবে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছিল। এই কুৎসিত ঘটনা আজও ভুলতে পারেন নি এখানকার মানুষ। সেদিন যার নেতৃত্বে এই জঘন্য ঘটনা ঘটেছিল, সেদিনের সেই তৃণমূল নেতা জীতেন্দ্র তেওয়ারি নির্বাচনের আগে তৃণমূলের ডুবন্ত তরী ছেড়ে দিয়ে পাণ্ডবেশ্বরে বিজেপি’র প্রার্থী হয়েছে। তার নেতৃত্বেই জেলা জুড়ে তৃণমূলের সন্ত্রাস এবং বেপরোয়া লুঠ ও কাটমানির কারবার চলেছে। তার সাথে শাসক দলের আরও বেশকিছু মাফিয়াও হাওয়া বুঝে বিজেপি-তে ভিড়ে গিয়ে নিজেদের অপরাধ আড়াল করতে চাইছে। কেবল দুর্গাপুরে পুর নির্বাচনেই নয়, এই কেন্দ্রের অন্তর্গত কাঁকসা ও অন্যান্য জায়গায় পঞ্চায়েত ভোটের সময়েও একই চিত্র দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতারাও সেদিন সর্বত্র ভোট দিতে পারেনি। ছাত্র সংসদ নির্বাচন থেকে সমবায় কোনো নির্বাচনই হতে দেয়নি ওরা। ওই সময়ে বামপন্থী দল ও গণ সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং দপ্তর সব কিছুই আক্রান্ত হয়েছে। অজস্র বামপন্থী নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের দৌরাত্ম্যে ডিএসপি, ডিপিএল-এর ঠিকা শ্রমিক সহ বিভিন্ন শপিং মল, বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী মিলিয়ে প্রায় চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে উৎখাত হতে হয়েছে। তৃণমূলের এসব অপকীর্তি ও কুৎসিত কার্যকলাপ এই কেন্দ্রের মানুষের অভিজ্ঞতায় জমা হয়ে আছে। মানুষ চাইছে এই পরিবেশ থেকে মুক্তি।

এভাবে গণতান্ত্রিক পরিবেশকে বিনষ্ট করাই শুধু নয়, ঐতিহ্যমণ্ডিত শিল্প শহর দুর্গাপুরকে ধীরে ধীরে শুকিয়ে মারার কেন্দ্রের চক্রান্তের দোসর হয়েছে রাজ্যের সরকার। এখানে এমএএমসি, বিওজিএল, এইচএফসি-র মতো শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এএসপি-র মতো সংস্থাকেও বিলগ্নিকরণ করতে উদ্যত মোদী সরকার। ডিসিএল-র উৎপাদন বন্ধ করে ধীরে ধীরে বিলগ্নিকরণের পথ প্রশস্ত করছে মমতা সরকার। ডিপিএল-র ভবিষ্যৎও অন্ধকার এই রাজ্য সরকারের হাতে। বন্ধ হয়ে গেছে রাজ্য সরকারের সংস্থা কোকওভেন। বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে তৈরি হওয়া ২০টিরও বেশি কারখানা তৃণমূলের দশ বছরের শাসনে বন্ধ হয়ে গেছে।

বিশেষভাবে লক্ষণীয়, বামফ্রন্ট সরকার শিল্প সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে দুর্গাপুর মহকুমায় এডুকেশনাল হাব তৈরি করেছিল। বামপন্থীদের পরিচালিত পৌর বোর্ডের সাহায্যে গড়ে ওঠা এই হাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন ডিগ্রি কলেজ, প্যারা মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সহ বিএড, আইটিআই, বি ফার্ম, ডি ফার্ম ইত্যাদি কোর্সের অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। এছাড়া বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে এখানে আইটি হাব গড়ার জন্য ২৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। সাপুরজি পালানজি গোষ্ঠি এই জমি কিনে দু’বছর ফেলে রাখে। কিন্তু তৃণমূল এই প্রকল্প রূপায়ণ করতে দেয়নি। উলটে এই সংস্থার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ কাটমানি আদায় করে নেয়।

বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে খয়রাশোল, কাঁকসা, লেনিন সরণি, অঙ্গদপুর শিল্পতালুকে ছোটো-বড়ো-মাঝারি মিলিয়ে ৮৫ টির মতো কারখানা গড়ে উঠেছিল। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর ২২টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ওদের নির্বাচনী ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাস্টার হওয়াতো দূরের ব্যাপার, একটিও নতুন শিল্প গড়ে ওঠেনি।

নির্বাচনী সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তৃণমূল সরকারের এই অপদার্থতা, অপশাসন ও দুর্নীতির জবাব দিতে সংযুক্ত মোর্চার জোরালো প্রচারে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও অংশগ্রহণ সর্বত্র সাড়া ফেলছে। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত কাঁকসার গোপালপুর পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকটি গ্রামে আভাস রায় চৌধুরীর প্রচারে তারই আভাস লক্ষ করা গেল। বাঁশকোপা ও বামুনাড়া গ্রামে এক সকালে ছিল প্রার্থীকে নিয়ে এলাকা পরিক্রমার কর্মসূচি। এখানে এসে জানা গেল, বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগে ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে কাঁকসা ও সংলগ্ন অঞ্চলে ৫৫টি নতুন শিল্প তৈরি হয়েছিল। কাঁকসা ব্লকে গড়ে ওঠা সেই সমস্ত কারখানায় প্রায় দশ হাজার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছিল। বাঁশকোপা গ্রামের মানুষেরা জানালেন, ওই সময়ে এই গ্রামের প্রায় ৭০০ যুবকের কাজ জুটেছিল। গ্রামে ১৮ বছর বয়সের বেশি এমন একজনও অবশিষ্ট ছিলনা যে তার কাজ হয়নি। গ্রামে তখন একজন বেকার ছেলেকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তৃণমূলের জমানায় সেই অবস্থা এখন ঘুচে গেছে। সেই কারখানাগুলোর বেশ কয়েকটি তৃণমূলীদের তোলাবাজি আর কাটমানির ঠ্যালায় বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের মানুষদের প্রত্যাশা, আবার সেই সুদিন ফিরে আসুক, বেকার ছেলেমেয়েদের জীবনধারণের সংস্থান হোক। তাই সবাই জোট বেঁধে শামিল হচ্ছেন সংযুক্ত মোর্চার প্রচারে। সেদিন লাল পতাকা,ফেস্টুন আর বাজনার ছন্দে মোর্চার প্রার্থী আভাস রায় চৌধুরীর বর্ণময় প্রচারে অংশ নিলেন বহু মানুষ। প্রখর রোদের মধ্যেও সংসারের কাজ ফেলে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল বাড়ির মহিলাদের। তাঁরা ফুল -মালায় প্রার্থীকে সংবর্ধিত করলেন। মানুষের এই আন্তরিক ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে আভাস বলছেন, নির্বাচন কোনো খেলা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের বেঁচে থাকা,রুটি-রুজির প্রশ্ন। জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কমবে কিনা,আগামীদিনে বন্ধ কারখানার তালা খুলবে কিনা, নতুন শিল্প গড়ে উঠবে কিনা,বেকারদের কাজ মিলবে কিনা,কৃষকেরা ফসলের দাম পাবে কিনা, মহিলাদের সম্মান রক্ষিত হবে কিনা, সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে কিনা,গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবসান হবে কিনা - এসব প্রশ্নের মীমাংসার জন্যই আপনাদের উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

আভাস রায় চৌধুরীর এই কথাগুলিই যেন আজ এই কেন্দ্রের সব অংশের মানুষের অনুভব,অভিব্যক্তির সাথে মিলে যাচ্ছে। তাই সংযুক্ত মোর্চার প্রচার কর্মসূচিগুলিতে বিপুল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সাফল্যের ইঙ্গিতকেই বয়ে আনছে।