৫৮ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৬ এপ্রিল, ২০২১ / ২ বৈশাখ, ১৪২৮
নির্বাচকদের দরবারে-৫
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
এখনও পর্যন্ত রাজ্যে যে চার দফার ভোট হয়ে গেছে তার মধ্যে সবথেকে রক্তাক্ত পর্ব অবশ্যই গত ১০ এপ্রিল, অর্থাৎ চতুর্থ দফা। কে ভালো, কে খারাপ, কার দোষ, কার ব্যর্থতা, কার অকর্মণ্যতা এসব আকচা-আকচির পরে মূল যে নির্যাস পড়ে থাকে তা হলো, পাঁচজন জলজ্যান্ত মানুষের মৃত্যু। যে মানুষগুলোকে আর কোনোদিনই কোনো কমিশন, কোনো প্রশাসন, কোনো রাজনৈতিক দল তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। যে যে পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের কাছে কিছু স্মৃতি, কিছু যন্ত্রণা, কিছু ডোল, কিছু স্তোকবাক্য ছাড়া দিনের শেষে প্রাপ্তির ঘর শূন্য হয়েই থেকে যাবে। আর হয়তো থেকে যাবে মরদেহ নিয়ে রাজনীতি করতে অভ্যস্ত কিছু রাজনৈতিক দলের দড়ি টানাটানি। মৃতদেহ - তুমি কোন্ দলের?
কোচবিহারের শীতলকুচিতে গত ১০ এপ্রিল যা যা ঘটেছে তার কোনো ঘটনাই এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। কী হয়েছিলো, কেন গুলি চালানো হলো, পায়ে না চালিয়ে কেন শরীর লক্ষ্য করে গুলি, গুলি চালানোর আগে কেন টিয়ার গ্যাস বা লাঠির ব্যবহার করা হয়নি - এসব প্রশ্ন একাধিক রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে। বোধসম্পন্ন আম নাগরিকের মনেও যে এইসব প্রশ্ন ওঠেনি তেমনটা নয়। তবে এ পোড়া দেশে প্রশ্নের উত্তর পাবার চেয়ে চাপান উতোরের খেলাই যেহেতু মানুষ ভালো খায়, তাই প্রায় ধামাচাপাই পড়ে গেছে বিষয়টা। হয়তো বাকি চার দফা ভোটের তাগিদে, মেরুকরণের তাগিদে ইস্যুটাকে জিইয়ে রাখতে হবে। তাই শীতলকুচি ইস্যু খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। তারপর কীভাবে তাপসী মালিক, রাজকুমার ভুলের মূর্তিতে জঙ্গল হয়, আর কীভাবে নন্দীগ্রামের ভরত মণ্ডল ‘ভারত মণ্ডল’ হয়ে যায় আমরা সবাই জানি। সুব্রত সামন্তের স্ত্রীর ছবি ছাপিয়ে কলকাতার বুকে বই বিক্রি করা বুদ্ধিজীবীরা সাথে সাথে আরও কী কী বিক্রি করে বসেন সে প্রশ্নের উত্তরও আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আজও তাঁদের ইস্যুভিত্তিক বিবেকের ঘুম ভাঙা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয় বৈকি!
আবারও একবার শীতলকুচিতেই ফিরি। গত ১০ এপ্রিল ভোটের দিন সকালে সেখানে গুলিবিদ্ধ হন এবারই প্রথম ভোটার হওয়া আনন্দ বর্মণ। তিনি কোন্ রাজনীতি করতেন, কোন্ দলের সমর্থক ছিলেন আমার জানা নেই। তবে আপাতত তাঁর পরিবার বিজেপি’র জিম্মায়। তাঁদের অভিযোগ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের গুলিতে আনন্দের মৃত্যু হয়েছে। ওইদিন শীতলকুচির পাঠানটুলি এলাকার ২৬৫ নম্বর বুথের সামনে তৃণমূল-বিজেপি’র সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আনন্দ বর্মণের। এটা সকালের ঘটনা।
পরবর্তী ঘটনা ঘটে বেলা প্রায় দশটা নাগাদ। শীতলকুচি কেন্দ্রেরই ১২৬ নম্বর বুথে। জোড়পাটকি অঞ্চলের বেলতলি গ্রামের এই বুথে এক গণ্ডগোলকে কেন্দ্র করে নাকি সিআইএসএফ বাহিনী গুলি চালায় এবং ৪ জনের মৃত্যু হয়। তাঁরা হলেন - নূর আলম, হাবিবুর মিয়াঁ, সামিউল মিয়াঁ এবং মণিরুল মিয়াঁ। এদেরও সকলের বয়স ২২ থেকে ২৫-এর মধ্যে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এখানেও অভিযোগ, তৃণমূল-বিজেপি’র মধ্যে গণ্ডগোলের জেরে হাঙ্গামা ছড়ায়। একটি দল জওয়ানদের ঘিরে ধরায় তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। ইভিএম লুঠ হতে পারে এই আশঙ্কা করেন এবং ১৫ রাউন্ড গুলি চালায়। যদিও আশ্চর্যজনকভাবে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনার কোনো ভিডিয়ো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। সিআইএসএফ জানায় - আত্মরক্ষার স্বার্থে তাঁরা গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান আর এই বয়ান মিলছে না। প্রশ্ন করাই যেত যে, কীভাবে মৃতদের পায়ে গুলি না লেগে বুকের আশপাশে গুলি লাগলো, গুলি চালানোর আগে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছিলো কিনা, লাঠিচার্জ করা হয়েছিলো কিনা, গুলি চালনার আদেশ কে দিলেন। কিন্তু যেহেতু তদন্তাধীন বিষয়, তাই এই বিষয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য বা প্রশ্ন করা উচিত নয়।
এ তো গেল পাঁচটা মানুষের লাশ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু গল্পের আগের গল্প যাই থাকুক না কেন, পরের গল্পটা আরও ভয়ঙ্কর। এবং এই পরের গল্প আর আগের গল্পের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজতে গেলে যা বেরিয়ে আসে তা অবশ্যই চিন্তার, উদ্বেগের।
এই ঘটনার পরের দিন, অর্থাৎ ১১ এপ্রিল প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী, বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী শীতলকুচির ঘটনা প্রসঙ্গে এক ট্যুইট করেন। রাত ১১.২৮ মিনিটে করা ওই ট্যুইটে জনৈক সিআইএসএফ জওয়ানের এক বীভৎস ছবি দিয়ে তিনি দাবি করেন ওই ব্যক্তি শীতলকুচিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরেই ওই ছবি ট্যুইট করেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, অর্জুন সিং সহ একাধিক বিজেপি নেতা। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবি। নিজের ট্যুইটে বিজেপি নেতা লেখেন - ‘‘চতুর্থ দফার ভোটের দিন কোচবিহারের শীতলকুচিতে @CISFHQrs সিআইএসএফ জওয়ানদের উপর হামলা চালায় @AITCofficial তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। গুরুতর জখম হন এক জওয়ান। তাই আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।’’
শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে কোন্ বিজেপি নেতা কী ট্যুইট করলেন, সেই ট্যুইট কতটা ভাইরাল হলো সেটা নিয়ে বেশি শব্দ খরচ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু লেখার কারণ একটাই। শুভেন্দু অধিকারী সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা পোস্ট করে যে ছবি ভাইরাল করেছেন, শীতলকুচির ঘটনায় আহত জওয়ান বলে দাবি করে তা আসলে ‘ফেক’। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এক ভুয়ো ছবি ব্যবহার করে জনমত নিজেদের পক্ষে আনার জন্যেই এই ঘটনা। এই বিষয়ে ফ্যাক্ট চেক করে অলট নিউজ জানিয়েছে-এই ছবিটি আদৌ শীতলকুচিতে আক্রান্ত কোনো সিআইএসএফ জওয়ানের ছবি নয়। এই ছবি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো গত ১০ এপ্রিল দৈনিক জাগরণ সংবাদপত্রে। যে প্রতিবেদন অনুসারে আহত এএসআই এস পি শর্মা ঝাড়খণ্ডের বাঘমারা অঞ্চলের ভীমাকরণ সিআইএসএফ ক্যাম্পে বন্য জন্তু লঙ্গুরের আক্রমণে আহত হন। চারটি লঙ্গুর তাঁকে একসঙ্গে আক্রমণ করে এবং তাঁর গালে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়।
ঘটনাটা হয়তো ছোটো। আপাত গুরুত্বহীন। কিন্তু এই ছবি তো এতক্ষণে ঘুরছে হোয়াটস অ্যাপে, মেসেঞ্জারে, ট্যুইটারে। নেতারা কোনো কিছু পোস্ট করলেই সেটা তাঁর অনুগামীরা ধ্রুব সত্য বলে মেনে নিয়ে সারকুলেট করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। কতজন আর অলট নিউজের ফ্যাক্ট চেকের খবর রাখেন। প্রচারটা যে ভুয়ো সে খবর আর কতজন রাখেন? এরকমভাবেই তো বিজেপি’র পক্ষ থেকে উত্তরপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে হোয়াটস অ্যাপে মুলায়ম সিং যাদবকে অখিলেশ যাদবের চড় মারার ভুয়ো গল্প ছড়ানো হয়েছিলো। দলীয় কর্মী বৈঠকে সে কথা স্বীকার করেছিলেন খোদ অমিত শাহ। কিন্তু মানুষকে ‘খাইয়ে দেওয়া’ গেছিল যে ছেলে বাবাকে চড় মেরেছে। এই ছেলের হাতে রাজ্য নিরাপদ নয়। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে গেছিল সেই হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ। উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল আমরা সবাই জানি। হয়তো এই একটা ঘটনাতেই নির্বাচনী ফলের সম্পূর্ণ হেরফের হয়নি। কিন্তু যে যে কারণে উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী সরকার উল্টে বিজেপি সরকার এসেছিল তার মধ্যে একটা বড়ো কারণ ছিল এই ভুয়ো প্রচার।
শুধু এই একটা ঘটনাই নয়। শীতলকুচিতে গুলি চালনার পরেই এই ঘটনা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন অমিত শাহ থেকে শুরু করে রাহুল সিন্হা, দিলীপ ঘোষ সহ বহু বিজেপি নেতা। যাঁদের বক্তব্যে হুমকি, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, বিভাজনের রাজনীতি - কোনোটাই বাদ যায়নি। গত ১১ এপ্রিল শান্তিপুরে রোড শো-র পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অমিত শাহ বলেন-‘‘শীতলকুচির ঘটনা নিয়ে তোষণের রাজনীতি করছেন তৃণমূল নেত্রী। দিদি ৪ জনকে শ্রদ্ধা জানালেন। কিন্তু আনন্দর মৃত্যু নিয়ে কোনও মন্তব্য করলেন না। কারণ, আনন্দ রাজবংশী সম্প্রদায়ের যুবক। দিদির ভোটব্যাঙ্ক নয়।’’ এক্ষেত্রে অমিত শাহের বক্তব্য অসত্য এবং উদ্দেশ্য স্পষ্ট। রাজনীতিটা বিভাজনের, সাম্প্রদায়িকতার।
ওইদিনই বরানগরে এক সভায় এই ঘটনা প্রসঙ্গে হুঙ্কার দিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘শীতলকুচিতে দুষ্টু ছেলেরা গুলি খেয়েছে। এত দুষ্টু ছেলে কোথা থেকে এলো? ওই দুষ্টু ছেলেরা কেউ থাকবে না বাংলায়। ভয় দেখিয়ে রাজনীতি করার দিন চলে গিয়েছে। ভয় উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিচ্ছেন। ১৭ তারিখ সকালেও লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিন। বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। কেউ লাল চোখ দেখাতে পারবে না। আমরা আছি। আর যদি বাড়াবাড়ি করে, শীতলকুচিতে দেখেছেন তো কী হয়েছেন। জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।’’ বিজেপি নেতা তথা নির্বাচনের প্রার্থী রাহুল সিনহা এক জনসভায় বলেন - ‘শীতলকুচিতে চারজন নয়, আটজনকে গুলি করে মারা উচিত ছিল।’ অন্যদিকে তৃণমূলের দিক থেকেও একইভাবে এই ঘটনায় রাজনীতির চেষ্টা চালানো হয়েছে। অর্থাৎ শীতলকুচিকে সামনে রেখে বিভাজনের রাজনীতি, হিন্দু মুসলমানের রাজনীতি উসকে দিয়ে বাকি চার পর্বে উতরে যাবার ঘৃণ্য চেষ্টা। সেখানে বিজেপি-তৃণমূল কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ। তাৎপর্যপূর্ণভাবেই এই দুই দলের নির্বাচনী প্রচারে একবারের জন্যও রাজ্যের সমস্যা, মানুষের সমস্যার কথা উঠে আসেনি। সেখানে একদল দাপিয়ে গেছে ‘খেলা হবে’ বলে, আর অন্যদল দাপিয়েছে ‘রাম কার্ড’ নিয়ে, মানুষে মানুষে বিভাজনের রাজনীতি উসকে দেবার ছকে। যাঁদের জন্য নির্বাচন, যাঁরা ভোট দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার নির্বাচন করবেন, পুরো নির্বাচনী প্রচার পর্বে মিডিয়া বাইনারিতে থাকা এই দুই দলের প্রচারে একবারের জন্য সেই মানুষের কোনো কথা নেই। তবু এই বিষময় সময়ে একটু অন্যরকম কথা বলেছেন কোচবিহারের মহারাজা অনন্ত রায়। নামের সঙ্গে একাধিক রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা জুড়ে থাকা রাজার বক্তব্য - ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষরা কখনও এইভাবে ধর্মের বিভাজন করতেন না। মনে করা হতো, রাজত্বের সব প্রজাই নিজের লোক। সবাই রাজবংশী।’’
এই প্রসঙ্গে গত ১১ এপ্রিল এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম বলেন - নির্বাচন গণতন্ত্রের উৎসব। নির্বিঘ্নে, নিরাপদে মানুষ যাতে তাঁর মত ব্যক্ত করতে পারে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু গত কয়েক ধাপে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছেন, হিংসাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন আর কমিশন শুধু স্তোকবাক্য দিয়ে থেমে যাচ্ছেন - এই হত্যার দায়িত্ব কে নেবে? তিনি আরও বলেন - ধর্মের নামে উসকানি দিয়ে ধর্মীয় বিভাজন বাড়ানো হচ্ছে। আমরা গত এক দশক ধরে এর বিরুদ্ধে বলছি। মানুষের জীবন যন্ত্রণার কথা বলছি। এর মধ্যে সারের দাম বাড়িয়েছে। পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছে, ওষুধের দাম বাড়ছে আর অন্যদিকে মানুষের আয় কমছে। কিন্তু নির্বাচনে এইসব বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে ধর্মীয় জিগির তুলে মানুষকে আবেগমথিত করে ভোট লুঠের চেষ্টা করছে তৃণমূল-বিজেপি। এই প্রচেষ্টা বাংলাকে অশান্ত করার জন্য। আমরা এর বিরোধিতা করছি।
লেখাটা যেহেতু শীতলকুচি নিয়ে, বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে তাই এখানেই শেষ করে দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু অন্তত একটা বিষয় এই মুহূর্তে উল্লেখ করা জরুরি। তা হলো, দেশের করোনা পরিস্থিতি। ১৪ এপ্রিল সকালে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমিত হয়েছেন ১,৮৪,৩৭২জন। হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। গত বছরের মোটামুটি এই সময়েই করোনা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছিলো দেশ। তবলিগি জামাতিদের জন্য সংক্রমণ বাড়ছে প্রচার ঘিরেও ছিল সেই বিভাজনের রাজনীতিই। এই বছর এই মুহূর্তে হরিদ্বারে চলছে মহাকুম্ভ মেলা। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশে করোনা বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গত সোমবার হয়েছে দ্বিতীয় শাহি স্নান এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তীরথ সিং রাওয়াত জানিয়েছেন - ‘‘মানুষের স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ বটে। কিন্তু ধর্মকে কোনোভাবেই অবহেলা করতে পারবো না।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, কুম্ভ মেলা ও তবলিগি জামাতকে কোনোভাবেই এক করা যায় না।
আর কথা নয়। এবার সিদ্ধান্ত নেবার সময়। রাজ্যে চার পর্বে প্রায় অর্ধেক আসনে ভোট হয়ে গেছে। এখনও বাকি আরও অর্ধেক আসনের ভোট। সাধারণ মানুষের রুটি রুজির লড়াই জয়ী হবে নাকি বিভাজনের রাজনীতি তা জানা যাবে ২ মে। ইভিএম-এর বোতাম টেপার আগে তাই আরও একবার সচল হোক মাথা। লাল ফেরানোর, হাল ফেরানোর লড়াইতে সম্বল হোক মগজাস্ত্র।