৫৮ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা / ১৬ এপ্রিল, ২০২১ / ২ বৈশাখ, ১৪২৮
হায়রে ভারত, হায়রে গণতন্ত্র!
কৌশিক মুখোপাধ্যায়
এ কথা এখন আর আলাদা করে দাবি করতে হয় না যে, ভারতে বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক পরিসরগুলো সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। বরং মোদীর ভারতে তা যেন প্রতিষ্ঠিত সত্য। গণতান্ত্রিক চেতনা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে স্বৈরতান্ত্রিকতার বিবিধ প্রকাশ এ দেশের বুকে আজ অতিশয় সুলভ। আন্তর্জাতিক নানা সমীক্ষায় বিশ্বের তথাকথিত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটির স্থান গণতান্ত্রিক সূচকের (ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্স) নিরিখে দ্রুততার সাথে নিম্নমুখী। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত ২০২০ সালের ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্স অনুযায়ী ভারতে তার আগের বছরের তুলনায় আরও দু-ধাপ পিছিয়ে ৫৩তম স্থানে। এই সূচকের ভিত্তিতে ২০১৪ সালে অর্থাৎ মোদী সরকার ক্ষমতাসীন হবার পূর্বে ভারত ছিল এই তালিকার ২৭তম স্থানে (৭.৯২ মান), আর মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে ২৬ ধাপ পিছিয়ে নরেন্দ্র মোদীর ভারত আজ ৫৩তম (৬.৬১ মান)। ইআইইউ-র রিপোর্টের মতামত অনুযায়ী শাসকের গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব আর নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকারের উপর রাষ্ট্রের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের কারণেই গণতান্ত্রিক সূচকের মান আজ এমন নিম্নমুখী। বিশ্বের ১৬৭টি দেশের নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতের সূচকের মানের এই পতন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, একমাত্র নিকারাগুয়ার আগে। আর সবথেকে আশঙ্কার ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্স যেখানে উন্নীত হয়েছিল ১.০২ পয়েন্ট, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তা ধারাবাহিকভাবে পতনের মুখোমুখি (মোট পতন ১.৩১)। এই সূচকের বর্তমান মান কেবলমাত্র ভারতের জরুরি অবস্থার সময়ের সাথে তুলনীয়। অর্থাৎ ১৯৭৭ সালের পর থেকে ভারতে গণতান্ত্রিক পরিসরের এমন তুলনাহীন পতনের কোনো উদাহরণ নেই যা মোদী-শাহের জমানায় লক্ষণীয়। ফ্রিডম হাউস নামের এক মার্কিন সংস্থার এক গবেষণার ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের প্রশ্নে ভারত যা ছিল ‘মুক্ত’ দেশের তালিকার অনেক উপরে, তা আজ সেই তালিকার বাইরে ‘আংশিক মুক্ত’ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ২০১৪ সালের অব্যবহিত পর থেকেই বিশেষত, ২০১৯ সালের পর থেকে আরও তীব্রতায় মানবাধিকারের পক্ষে লড়াই করা ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোর উপর বর্ধিত চাপ, সাধারণ প্রতিবাদী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এবং সাংবাদিকদের উপর ধারাবাহিক আক্রমণ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর লাগাতার হিংসা এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মনে গড়ে ওঠা আতঙ্ক আজ এ দেশের রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতাকে যে বিপর্যস্ত করে তুলছে তাও এই রিপোর্টে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিগত সময়কালে পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন রাষ্ট্রে যত বেশি করে ধনী-দরিদ্রের অসাম্য বৃদ্ধি পেয়েছে, একচেটিয়া পুঁজির কারবার, নির্দিষ্ট কয়েকটি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর লাগামছাড়া মুনাফার বহর যত বেড়েছে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে নানা দেশে চরম দক্ষিণপন্থী, উগ্র ধর্মান্ধ বা বর্ণান্ধ জনবাদী রাজনীতির রমরমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর যত বেশি করে এ কাজ সংগঠিত হয়েছে, সাধারণ মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতাকে ততো বেশি করে খর্ব করার উদাহরণগুলোও দীর্ঘায়িত হয়েছে। আন্তর্জাতিক নানা সমীক্ষাতেও এই প্রবণতার স্পষ্ট ইঙ্গিত লক্ষণীয়। দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ২০শতাংশেরও কম আজ গণতান্ত্রিকভাবে ‘মুক্ত’ দেশগুলোতে বসবাস করে যা ১৯৯৫ সালের পর সবথেকে কম।
ফ্রিজে গোমাংস রাখার অভিযোগে মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে হত্যা, পুনের ইঞ্জিনিয়ার মহসিন শেখকে ‘জয় শ্রী রাম’ বলতে বলতে খুন করা, ঝাড়খণ্ডের যুবক তাবরেজ আনসারিকে মুসলিম হবার অপরাধে গণপিটুনিতে মেরে ফেলা, হরিয়ানা সীমান্তে মৃত গোরুর চামড়া নিয়ে যাবার কারণে পেহেলু খানকে নারকীয় খুন বা লাভ জেহাদের নামে রাজস্থানে মহম্মদ আফরাজুলকে খুন করে জ্বালিয়ে দেওয়া, কুসংস্কার আর অন্ধ হিন্দুত্ববাদী দর্শনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা নরেন্দ্র দাভোলকার, গোবিন্দ পানসারে, গৌরী লঙ্কেশ, এম কালবুর্গীকে খুন করা - একের পর এক এমন অসংখ্য উদাহরণ গত ছয়-সাত বছরে এ দেশের বুকে রোজনামচা। ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অশীতিপর বৃদ্ধ কবি ভারভারা রাও থেকে সোমা সেন সহ একের পর এক প্রতিবাদীকে ইউএপিএ আইনে বছরের পর বছর জেলবন্দি রাখা, সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের একাধিক প্রতিবাদী মুখকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পোরা, দিল্লি দাঙ্গায় কল্পিত রিপোর্টের ভিত্তিতে বেছে বেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে আটক করা, উত্তরপ্রদেশের চিকিৎসক কাফিল খান, জেএনইউ-র কানহাইয়া কুমার, উমর খলিদ, কেরালার সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান হতে বিনোদ দুয়া সহ একের পর এক সাংবাদিক সহ বেঙ্গালুরুর ছাত্রী দিশা রবিকে সামান্য টুলকিট ফরোয়ার্ড করার অপরাধে গ্রেপ্তার সহ অসংখ্য, অগুণতি মানবাধিকার লঙ্ঘন আর সাংবিধানিক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করার হরেক ঘটনা প্রতিনিয়ত আজকের ভারতে সগর্বে, সজোরে, সোৎসাহে রাষ্ট্রীয় সৌজন্যে গতিশীল। আর তারই অতি স্বাভাবিক প্রতিফলন আন্তর্জাতিক নানা সমীক্ষার রিপোর্টেও আজ প্রতিফলিত।
দেশজুড়ে গণতান্ত্রিকতা হরণের এমন হাজারো উদাহরণের মাঝে এরাজ্যের শাসকও যেন সেই একই পথের যোগ্য অনুসরণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ। পুরুলিয়ার জনসভায় সারের দাম কমানোর দাবিতে কৃষক শিলাদিত্যর মাওবাদী তকমা অর্জন, কামদুনির মর্মান্তিক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে প্রতিবাদী জনতা সহ টুম্পা-মৌসুমীদের উপর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র শ্লেষাত্মক ভর্ৎসনা বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে সামান্য একটা কার্টুন ফরোয়ার্ড করার ‘অপরাধে’ চরম হেনস্তা থেকে মধ্যমগ্রামে ট্যাক্সিচালক পিতার ধর্ষিতা কন্যার নিদারুণ আত্মহনন ও তৎপরবর্তী ন্যক্কারজনক পুলিশি পদক্ষেপসহ একের পর এক গণতান্ত্রিক মর্যাদা ও মানবাধিকার হননের দৃষ্টান্ত এরাজ্যের বুকেও আজ অতি স্বাভাবিকতায় পর্যবসিত। মানবাধিকার কমিশন হতে নারী, শিশু কমিশনসহ স্বাধীন, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলোকেও গত কয়েক বছরে কার্যত সরকারের লেজুড়ে পরিণত করে তাদের সাংবিধানিক অস্তিত্ব ও মর্যাদাকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছে মমতা ব্যানার্জির প্রশাসন।
কিন্তু আন্তর্জাতিকস্তরে এ দেশের গণতান্ত্রিক পরিসরের এমন বেহাল দশার চিত্র পরিষ্কার হবার পরেও এ দেশের সরকার বা শাসকদল নিজেদের সংশোধন করতে বা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সচেতনতার কোনো নিদর্শন রাখতে পারছে কি? না, বরং তারা যে এমন কাজে আদৌ উৎসাহী নন, তারই সাম্প্রতিকতম নিদর্শন আসামের শিখা শর্মার গ্রেপ্তারির ঘটনা।
অতি সম্প্রতি ছত্তিশগড়ে মাওবাদী আক্রমণে ২২ জন নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে আসামের জনৈক লেখিকা শিখা শর্মা মন্তব্য করেন - ‘চাকুরিরত অবস্থায় বেতনভুক কর্মীর মৃত্যু হলে তাঁকে শহিদ বলে না, তাহলে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত বিদ্যুৎকর্মীও শহিদ’। ফেসবুকে এমন মন্তব্যের জেরে দেশদ্রোহিতা, জনসমক্ষে কুকথা বলা, বদনাম ও মানহানি ঘটানো সহ ভয় দেখানো ও ধমকানো এমন ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় দিসপুর থানার পুলিশ শিখাদেবীকে গ্রেপ্তার করে। মাওবাদী আক্রমণ বা যে কোনো ধরনের শত্রুর আক্রমণে দেশের সেনা জওয়ান বা নিরাপত্তার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিশ্চিতভাবেই দেশবাসীর কর্তব্য। শুধু নিরাপত্তা কর্মীরাই বা কেন, কর্তব্যরত অবস্থায় যে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর প্রতিই এমন দায়বদ্ধতার প্রকাশ সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিসরে অবশ্যই কাম্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। সিআরপিএফ জওয়ানদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিখা দেবীর উক্ত মন্তব্য কারও কারও কাছে অবাঞ্ছিত বা অসম্মানসূচক মনে হতেই পারে। সেটা যেকোনো মানুষের আপন চিন্তার স্বাধীনতা, অধিকার। কিন্তু একইভাবে শহিদের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে শিখাদেবীর দৃষ্টিভঙ্গি বা মন্তব্য তাঁর আপন ব্যক্তিস্বাধীনতা বা চিন্তার স্বাধীনতার প্রশ্নে প্রকৃত অর্থেই কী কোনো অপরাধ বলে মান্যতা পেতে পারে? তাঁর এই মন্তব্য কী এতটাই ভয়ানক, এতটাই বিদ্বেষমূলক বা উগ্র যে, এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো এত গুরুতর অভিযোগ আনা সম্ভব? আমাদের সংবিধানের ১৯নং ধারা অনুযায়ী বাক্-স্বাধীনতার প্রশ্নে একজন ব্যক্তি মানুষের অধিকারের যে সীমা নির্ধারণ করা আছে এমন মন্তব্য কী সত্যিই তা লঙ্ঘন করেছে? এ দেশের সাংবিধানিক নৈতিকতা, তার অন্তর্নিহিত গণতান্ত্রিক মর্মার্থ কী রাষ্ট্রকে একজন সাধারণ নাগরিকের এ হেন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এত কঠোর অবস্থান গ্রহণে মান্যতা দেয়? শিখাদেবী তাঁর প্রশ্নে যে মৌলিক বিষয়টি উত্থাপন করেছেন রাষ্ট্রের কাছে কী তার প্রকৃত উত্তর নেই? নাকি সেনা জওয়ানদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ডিভিডেন্ড পাবার শাসকের পরিচিত ছকে এমন প্রশ্ন বিড়ম্বনা তৈরি করতে পারে বলেই এ আয়োজন? শুধু সেনা জওয়ানরাই কেন, বিপদঘন, জরুরি পরিস্থিতিতে নানা ক্ষেত্রে নানা পেশার মানুষজনই অবিচল কর্তব্যে দেশের বিবিধ বিষয়ে তাঁদের পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। সেই কর্তব্য পালনের পথে তাঁদের অবাঞ্ছিত, অনভিপ্রেত মৃত্যুর ঘটনাও আমাদের সকলের কাছেই বেদনাঘন। কিন্তু সেই সব মৃত্যুকেই কী এ সমাজ বা রাষ্ট্র শহিদ বলে আখ্যায়িত করে? এমনকি খোদ সেনাবাহিনীতেও ব্যবহারিকভাবে কর্তব্যরত জওয়ানের মৃত্যুকে ‘ব্যাটল ক্যাজুয়ালিটি’ বা ‘অপারেশন ক্যাজুয়ালিটি’ শব্দ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে, ‘শহিদ’ শব্দের কোনো প্রয়োগ সেখানে নেই। শহিদ শব্দটির উৎপত্তিগত ইতিহাস দেখলে দেখা যায় এর সাথে মূলত ধর্মীয় কারণই সংযুক্ত। ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে বিপরীত চিন্তাধারার কারও দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিকেই শহিদ বলে আখ্যায়িত করা হতো। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক কারণে মৃত্যু বরণ করা ব্যক্তিত্বদেরও শহিদ বলে চিহ্নিত করা শুরু হয়। অর্থাৎ সামরিক কারণে বা নিরাপত্তা রক্ষার্থে মৃত ব্যক্তিদের শহিদ শব্দে চিহ্নিত করার নজির ঐতিহাসিকভাবেও স্বীকৃত সত্য নয়।
এ দেশের বর্তমান শাসকদলের কাছে আজ শিখা শর্মার প্রেপ্তারির উদাহরণ তৈরি করা, এহেন আচরণে দেশদ্রোহিতা সহ নানা ধারায় রাষ্ট্র কর্তৃক চিহ্নিত করা এক রাজনৈতিক প্রকল্পেরই অংশ। সেনা-জওয়ানের মৃত্যু এবং তাকে কেন্দ্র করে জনমোহিনী উগ্র জাতীয়তাবাদের দর্শনকে পুষ্ট করতেই যে এমন আয়োজন তা বিগত কয়েক বছরে এ দেশের শাসকপক্ষের নানা পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে বারে বারেই প্রতিফলিত হয়েছে। তাই বেঙ্গালুরুর ছাত্রী দিশা রবি থেকে আসামের শিখা শর্মার গ্রেপ্তারের ঘটনা বা ভীমা কোরেগাঁও মামলায় ভারভারা রাও-দের জামিন না পাওয়া বা একের পর এক সাংবাদিক যাঁরা এমন প্রশ্ন তুলে শাসকের প্রকৃত রূপকে উন্মোচিত করতে চায়, তাঁদের উপর নানা ধরনের আক্রমণ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি শাসকের দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ নয়, তা কার্যত বৃহত্তর সমাজের কাছেও দৃষ্টান্ত স্বরূপ এক আখ্যান রূপে তুলে ধরতে চাইছে আজকের শাসককুল। ‘রাষ্ট্রের চাহিদা মাফিক না চললে এমন হাল তোমার জন্যও অপেক্ষা করছে’ - এই বার্তা প্রতিষ্ঠাই আজকের শাসকের মূল লক্ষ্য। তাদের সমস্ত ঘৃণ্য অপকৌশল সে লক্ষ্যেই সুনির্দিষ্ট। এ সমাজের একাংশকে তারা আজ জীবন যন্ত্রণার সব উপাদানকে ভুলিয়ে দিয়ে উগ্র ধর্মান্ধ জাতীয়তাবাদের হুজুগে মাতিয়ে তুলতে চাইছে, আর অপর অংশ যারা এ পথ মাড়াতে নারাজ তাদের সামনে ক্রমান্বয়ে এই ভীতির দর্শনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপিত করে আপন রাজনৈতিক ভিত্তিভূমিকে শক্তিশালী করতে চাইছে। আজকে ভারতে শিখা শর্মার এমন নির্বিষ মন্তব্যও তাই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে কারাবাসের কারণ হতে পারে। কিন্তু দেশ-রাজ্যে শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের প্রতিনিয়ত চরম হিংস্র ভাষা ও ভঙ্গিমায় সরাসরি ঘৃণা ও বিদ্বেষের বাণীকে মান্যতা দিতে তথাকথিত গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রের কোনো অসুবিধা হয় না! হায় রে ভারত, হায় রে গণতন্ত্র!