E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৮ সংখ্যা / ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ / ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

সারা ভারত কৃষক সভার সম্মেলন

প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে আসছে কৃষি-কৃষকের সংকট ও প্রতিবাদী আন্দোলনের কথা

সুপ্রতীপ রায়, ত্রিচূড়


২০১৪ সালে মোদি সরকারে আসার পর কৃষি সংকট বেড়েছে। করপোরেট হাঙরদের কাছে কৃষি ক্ষেত্রকে তুলে দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত আন্দোলন গড়ে তুলেছে রাজ্যে রাজ্যে কৃষক সভা। তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে মোদি সরকারকে এবং বিভিন্ন রাজ্যের করপোরেট প্রেমী সরকারকে। ১৪ ডিসেম্বর সারা ভারত কৃষক সভার ৩৫তম সর্বভারতীয় সম্মেলনে খসড়া প্রতিবেদনের উপর প্রতিনিধিদের আলোচনায় এ তথ্যগুলি উঠে এসেছে। ১৪ ডিসেম্বর মোট সাতাশ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেছেন।

ওডিশার প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে এসেছে সে রাজ্যের বর্তমান সরকার করপোরেটমুখী নীতি নিয়ে চলেছে। কার্যত বিজেপি’র নয়া উদারবাদী নীতিতেই বিজু জনতা দল হাঁটছে। জমি জঙ্গলের অধিকার থেকে আদিবাসীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এই নীতির বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে ধারাবাহিক আন্দোলন করছে কৃষক সভা। করপোরেট মিডিয়া এসব খবর প্রচার করে না।

তামিলনাডুর প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে এসেছে জমি সমস্যা। করপোরেট স্বার্থে কৃষক জমিচ্যুত হচ্ছেন। জমি হারানো কৃষকদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। কেরালা বাদ দিয়ে গোটা দেশের একই চিত্র। ফলে জমিচ্যুত হওয়া আজ জাতীয় সমস্যা। সামাজিক সমস্যাগুলিতে কৃষকসভার হস্তক্ষেপ বেড়েছে।

তামিলনাড়ু সহ সমস্ত রাজ্যের প্রতিনিধিরা মনে করেন সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্বে কৃষক সংগঠনগুলির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন কৃষক আন্দোলনে বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে।

হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের প্রতিনিধিদের আলোচনায় দিল্লির কৃষক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে। দিল্লির বিভিন্ন সীমান্তে কৃষক আন্দোলনের কর্মীরা সমস্ত রাষ্ট্রীয় বাধা অতিক্রম করে পরিবার পরিজন সহ দিনের পর দিন অবস্থানে ছিলেন।

উত্তর প্রদেশের প্রতিনিধিরা ওই রাজ্যে যোগী সরকারের ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী, গণতন্ত্র বিরোধী চরিত্র তুলে ধরেন। তিন কালা কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে একবছরেরও বেশি সময় যে আন্দোলন হয়েছে সেই আন্দোলনকে ভাঙার জন্য যোগী সরকার আক্রমণ নামিয়ে এনেছেন। যোগী কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যাহৃত ভূমি অধিগ্রহণ আইনকে পিছনের দরজা দিয়ে পুনরায় এনেছেন।

গুজরাট সহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার টাকা কৃষকদের কাজে আসেনি। বিমার টাকা লুট হচ্ছে।

প্রতিনিধিদের আলোচনায় যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে সেগুলি হলোঃ জমি করপোরেটদের হাতে গেলেও কৃষক ক্ষতিপূরণ পান না, আদিবাসীরা জমিচ্যুত হচ্ছেন, বিভিন্ন রাজ্যে ফড়েরাজ কায়েম হয়েছে। কেরালা এগুলির বাইরে।

মোদি আসার পর অসমের মানুষ বিপন্ন। এনআরসি’র নাম করে মানুষের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে, প্রচুর মানুষের ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গেছে। বড়ো অংশের মানুষ সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত।

ঝাড়খণ্ডের প্রতিনিধিদের আলোচনায় উঠে এসেছে, ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী মুখ্যমন্ত্রী হলেও তিনি আদিবাসীদের স্বার্থবিরোধী কাজ করছেন। সারা ভারত কৃষক সভার নেতৃত্বে দুমকা, চাইবাসা, জামশেদপুর সহ ছোটোনাগপুর এলাকায় জমির আন্দোলন পরিচালনা করছে কৃষকরা। আদিবাসীদের মধ্যে বিভাজনের খেলায় মেতেছে বিজেপি।

অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা, কর্নাটকের প্রতিনিধিদের আলোচনায় কৃষি সংকটের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে।

মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের প্রতিনিধিরা এই দুই রাজ্যে সারা ভারত কৃষক সভার নেতৃত্বে গত পাঁচ বছরে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন কীভাবে পরিচালিত হয়েছে তা তুলে ধরেছেন। আন্দোলনের চাপে ওই দুই রাজ্যের সরকার কিছু দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।

কেরালার বাম-গণতান্ত্রিক সরকার কৃষি ক্ষেত্রে কীভাবে বিকল্প নীতি রূপায়ণ করছেন তা কেরালার প্রতিনিধিরা তুলে ধরেছেন। গোটা দেশের মধ্যে কেরালায় এমএসপি অনেক বেশি। কৃষিতে রাজ্য সরকারের ভরতুকির পরিমাণ বেড়েছে। চাষি যাতে বাজার পান তা রাজ্য সরকার দেখে। কেরালাই একমাত্র রাজ্য যেখানে বেশ কিছু সবজিতে এমএসপি দেয় রাজ্য সরকার। রাবার চাষিদের পাশে রাজ্য সরকার আছে। কেরালায় মহিলা কৃষকদের মজুরি দেশের যেকোনো রাজ্যের থেকে বেশি। সবরীমালা মন্দিরকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে প্রচুর মহিলা চাষি যুক্ত ছিলেন।

পশ্চিমবাংলার প্রতিনিধিরা বিজেপি-তৃণমূলের বোঝাপড়া স্পষ্ট করে তুলে ধরেন। ২০১১ সালের পর গণতন্ত্রের উপর যে আক্রমণ নেমে এসেছে তা তুলে ধরেন। উত্তরবঙ্গের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলনের পিছনে বিজেপি-তৃণমূল উভয়েই আছে বলে উল্লেখ করা হয়।

ত্রিপুরা উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের পক্ষ থেকে আলোচনায় উঠে এসেছে বিজেপি সরকারের কৃষক বিরোধী, আদিবাসী বিরোধী নীতির কথা।

এদিন সম্মেলনে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী নীতিসমূহ প্রত্যাহারের দাবিতে, কৃষি ঋণ মকুবের দাবিতে, এমএসপি নিয়ে নির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের দাবিতে, মহিলা কৃষক ও মহিলা কৃষি শ্রমিকদের অবস্থা উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে ও গৃহীত হয়েছে।