৬০ বর্ষ ১৮ সংখ্যা / ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২ / ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
গুজরাটে ক্ষমতায় ফিরলেও হিমাচল প্রদেশ সহ বাকি নির্বাচনে বিপর্যস্ত বিজেপি
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশে গুজরাট ছাড়া বাকি নির্বাচনের ফলাফল বিজেপি’র অনুকূলে নয়। গুজরাট, হিমাচল প্রদেশের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচন, দিল্লি পুরসভার নির্বাচন এবং লোকসভা, বিধানসভার আসনে উপনির্বাচনের ফলে ইঙ্গিত এমনটাই। দেখা যাচ্ছে, বিজেপি’র পক্ষে অগ্রগতির নতুন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ওই দুই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীপদে শপথ নিয়েছেন ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল (গুজরাট), ও সুখবিন্দর সিং সুকু (হিমাচল প্রদেশ)।
গুজরাটে মোট ১৮২টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১৫৬টিতে, কংগ্রেস ১৭ এবং আপ পাঁচটি আসনে এবং অন্যান্যরা চারটি আসনে জিতেছে। এই নিয়ে গুজরাটে টানা সাতবার বিধানসভা ভোটে জয় পেয়েছে বিজেপি। গুজরাট বিধানসভায় এবারের ভোটে মাত্র একজন মুসলিম বিধায়ক কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন।
হিমাচল প্রদেশে ৬৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস জয়ী হয়েছে ৪০টিতে, ২৫টিতে বিজেপি এবং অন্যান্যরা ৩টি আসনে জয়ী হয়েছে।
প্রায় ২ লাখ ভোটে মইনপুরী লোকসভার উপনির্বাচনে জয়ী সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী ডিম্পল যাদব।
দিল্লি পৌর নিগম নির্বাচনে পর্যুদস্ত হয়েছে বিজেপি। এই তিন নির্বাচনের ফলাফল থেকে প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে সমস্ত শক্তিকে একজোট করে বিজেপি’র বিরুদ্ধে সার্বিক বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে সিপিআই(এম)। এক বিবৃতিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, বিপুল পরিমাণ অর্থবল এবং সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বিজেপি’র দুর্বলতা স্পষ্ট করে দিয়েছে হিমাচল প্রদেশ এবং দিল্লি পৌর নির্বাচনের ফলাফল।
মোদি ঝড় গুজরাটের বাইরে কাজ করেনি, তার প্রমাণ হিমাচল প্রদেশ। এখানে ১৯৮৫ সাল থেকে প্রতি পাঁচ বছর পর পর সরকার বদলের নজির রয়েছে। মোদি ঝড় বা তাঁর ডেপুটি অমিত শাহ’র ভোট ম্যানেজমেন্ট কোনোটাই এখানে কাজে আসেনি। তবে দেশের অন্যান্য বেশ কিছু রাজ্যের মতো হিমাচল প্রদেশে বিধায়ক কিনে সরকার ফেলে দেবার আশঙ্কাও রয়েছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে ২৫০টি আসনের মধ্যে আপ (আম আদমি পার্টি) জিতেছে ১৩৪টিতে, বিজেপি’র জয় ১০৪ টি আসনে। কংগ্রেস জিতেছে ন’টি আসন এবং অন্যান্যরা তিনটি আসন। ২০১৭ সালে মোট আসন সংখ্যা ছিল ২৭২ এবং বিজেপি জিতেছিল ১৮১টিতে। এবারে আপ-এর প্রাপ্ত ভোট শতাংশ ৪২ যেখানে বিজেপি পেয়েছে ৩৯.১ শতাংশ ভোট। ডিলিমিটেশনের পর এটাই দিল্লির যেকোনো পর্যায়ের প্রথম ভোট।
পলিট ব্যুরো বলেছে, তিনটি নির্বাচনের মধ্যে গুজরাটে জয় পেয়েছে বিজেপি। কিন্তু হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা এবং দিল্লি পৌরনিগম ভোটে পরাস্ত হয়েছে বিজেপি। গুজরাটে ৩ দশক ধরে বিজেপি-আরএসএস কীভাবে গভীর সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তৈরি করতে পেরেছে তার প্রমাণ বিজেপি’র পর পর সাতবার বিধানসভা ভোটে জয়। মূল্যবৃদ্ধি বেকারত্ব কিংবা শিক্ষার সুযোগের মতো জ্বলন্ত বিষয়কে এড়িয়ে বড়ো করে তুলে ধরা হয়েছে সার্বিক হিন্দু পরিচিতির সঙ্গে গুজরাটি অস্মিতা।
পলিট ব্যুরো হিমাচল প্রদেশ প্রসঙ্গে বলেছে, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সব ধরনের প্রশাসনিক ক্ষমতা এবং সম্পদ ব্যবহার করেছিল বিজেপি। আসলে বিজেপি’র দুঃশাসনের প্রতিফলন ঘটেছে মানুষের তীব্র ক্ষোভের মধ্য দিয়ে। দিল্লির পৌরনিগম নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো বলেছে, বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় ছলচাতুরি এবং চাটুকারিতাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন দিল্লির মানুষ।
উত্তরপ্রদেশের দু’টি বিধানসভা উপনির্বাচনেও হেরেছে বিজেপি। বিহারের একটি বিধানসভা ক্ষেত্রে কোনওক্রমে জিতলেও রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং ওডিশার উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি।
হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস পেয়েছে ৪৩.০৯ শতাংশ ভোট। যেখানে বিজেপি পেয়েছে ৪৩ শতাংশ ভোট। গুজরাটে বিজেপি’র প্রাপ্ত ভোট ৫২.৫ শতাংশ, কংগ্রেস পেয়েছে ২৭.২৮ শতাংশ, আপ ১২.৯২ শতাংশ।